Bangla choti golpo - শিশির বিন্দু পর্ব ৬ - love story - life story

 

"শিশির বিন্দু"

পর্ব- ৬

Bangla choti golpo - শিশির বিন্দু পর্ব ৬ - love story - life story
Bangla choti golpo - শিশির বিন্দু পর্ব ৬ - love story - life story 


এতো দূর  ভ্রমণ করে আসায় তারা ক্লান্ত। মামীরা সেই ক্লান্তি নাশের ব্যাবস্থাও করে দিলো। তাদের বিশ্রামের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দিলো। শীতুল তার কাজিনদের সাথে আড্ডা জমিয়েছিলো, আফসানা ফেরদৌসির বকাবকিতে সে বিন্দুর সাথে ঘুমাতে চলে গেলো। ঢাকা ও অন্যান্য দূরদূরান্ত  থেকে যারা গিয়েছে সবাই সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছে।

খুব সকালে বাড়ির পিচ্চিসহ সবাই উঠে পড়েছে। পিচ্চিগুলো জেগেছে স্বভাবের কারণে আর বড়রা জেগেছে কাজের তাড়ায়। কিশোর-কিশোরীরা অন্য সময় এই শীতে দশটার আগে উঠে না কিন্তু আজ জেগে উঠার কারণ অনেক কাজিন একসাথে হয়েছে আর তারা সবাই মিলে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঘুরে বেড়াবে৷ ঢাকার তুলনায় প্রচুর শীত এখানে। কেননা পাশেই হিমালয় পর্বত। তারা শীতের কাপড়চোপড় পরে  কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়লো আশপাশ ঘুরে দেখার জন্য। শীতের শেষ সময়। কুয়াশার উপস্থিতিও তুলনামূলক কম। অন্ধকার মুছে আলো ফুটে গেছে সেই কখন! তবে সূর্যের দেখা মিলেনি এখনো। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা দিবে! আকাশ পরিষ্কার ভুবন ঘোলাটে, বাড়ির পাশের সরু পথ অতিক্রম করে সবাই দল বেধে হেটে চলেছে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত বিশাল মাঠে। চারিপাশে ছোটবড় বৃক্ষ আর মাঝখানে ফাকা জায়গা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে শিশিরের সাথে কথা বলে এসেছে বিন্দু। তখন শিশির জেনেছিলো তারা ঘুরতে যাচ্ছে। এখন বিন্দুর ফোনে মেসেজ এলো, "কুয়াশা বেশি হলে মুখে মাস্ক পড়ে নিও।" বিন্দু মৃদু হাসলো তার মেসেজ দেখে! তখন ফোনেও নানান সতর্কবার্তা শুনিয়েছে এখন আবার মেসেজেও! কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে বিন্দুসহ মেয়েগুলো একপাশে বসে পড়লো। মেয়েগুলো গল্প করছে আর ছেলেগুলো মাঠে ছুটাছুটি করছে বাচ্চাদের নিয়ে। বিন্দু মুগ্ধকে নিষেধ করলো কোনোদিকে যেতে। সকলের গল্পের আড়ালে বিন্দুর মনে উঁকি দিলো শিশির। সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। সোনালী কিরণ এসে উপচে পড়েছে সবুজ ঘাসের বুকে! চিকচিক করছে ঘাসে জমা শিশিরবিন্দু কণা! যেন মুক্তা’র দেখা মিলিছে সবুজের বুকে! বিন্দুর মুখে ফুটে উঠেছে প্রশান্তির হাসি! সে হাত বাড়িয়ে শিশির বিন্দু স্পর্শ করলো আঙুলের অগ্রভাগে! খুব ইচ্ছে করছে শিশিরকে দেখানোর! খুব ইচ্ছে করছে শিশিরকে চিৎকার করে শুনানোর, 

"দেখো তুমি-আমি জমে গেছি সবুজের বুকে। সোনালী কিরণে মিশে যাবো আবার প্রকৃতির আড়ালে ! হয়তোবা জাগ্রত হবো আবারও নতুন কোনো ভোরে!" 

কিন্তু সেই সুযোগ যে আর পাওয়া গেলো না! শিশির তো মনে আছে, চোখের সামনে তো আর নেই! গল্পগুজবে একসময় শীতুলের মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো বিন্দু গান গাইতে পারে। সেই শুরু হলো তার কাজিনদের, বিন্দু যেন তাদের গান শুনায়। পরক্ষণে সবাই স্থির করলো সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠানে তাকে গান গাইতে হবে। বিন্দুর মোটেও ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু শীতুলের জন্য ফেসে গেছে!

সন্ধ্যায় বিয়ে বাড়ি জাকজমাক হয়ে উঠেছে। মুগ্ধ এক দিনেই তার বন্ধুবান্ধব তৈরি করে ফেলেছে। আর বিন্দু লজ্জায় সকলের আড়ালেই থাকার চেষ্টা করে। শুধু মাত্র বাড়ির মেয়েগুলোর সাথে একটু ফ্রি হতে পেরেছে। তাছাড়া ভাবিদের সাথেও ফ্রি না! হলুদের প্রোগ্রাম মোটামুটি অনেকটা বড় করেই আয়োজিত হয়েছে। মূল প্রোগ্রাম শেষে এখন তাদের ঘরোয়া প্রোগ্রাম। কারো নাচ, কারো গান আর কারো মজাদার কৌতুক! সময় এসে গেছে বিন্দুর গান গাওয়ার। যদিও এখানে বড়রা অনুপস্থিত, তবুও বিন্দুর অসস্তি লাগছে খুব! হাতে স্পিকার, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বাজতে শুরু করেছে। বিন্দু অসস্তি কাটাতে চোখ বুজে বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে শিশিরকে মনে করে গাইতে শুরু করলো,

"যতনে  রেখেছি তোমায় আমারই বুকে

পারবে না কেড়ে নিতে কেউ তোমাকে.....১ "

দ্বিতীয় সুর আর গাওয়ার সুযোগ হলো না! কেউ টেনে নিয়েছে বিন্দুর মুখের সুর! আর সাথে সাথে শ্রোতাগণ আনন্দে বিমোহিত হয়ে  একসাথে চিৎকার করে উঠেছে!   

"যতনে  রেখেছি তোমায় আমারই বুকে

পারবে না কেড়ে নিতে কেউ তোমাকে..... ২"

সুর টেনে নেওয়া লোকটাকে দেখে বিন্দু অবাক! চোখ টলমল করছে তার! বুকের ভেতর ধুকপুক করছে! মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দ, কষ্ট, অভিমান মিশ্রিত এক অদ্ভুত হাসির রেখা। শিশির গান গাইতে গাইতে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটিয়ে বিন্দুকে ইশারা করলো পরবর্তী সুর টানার জন্য। বাকিরা আবারও চিৎকার করে তাদের অভ্যর্থনা জানালো। বিন্দু শিশিরের ইশারায় পরবর্তী সুর টানলো, 

" কোথায় যাবো আমি, কে আছে আমার! 

তুমি ছাড়া পৃথিবীটা অথৈ আধার!.... ৩"

"এক পৃথিবী প্রেম আমি তোমাকে দিবো, 

জনম জনমও আমি তোমারই রবো.... ৪" 

"এক পৃথিবী প্রেম আমি তোমাকে দিবো, 

জনম জনমও আমি তোমারই রবো.... ৫"

ধাপে ধাপে দুজন মিলে গাইলো সম্পূর্ণ গান। গান শেষ হতেই সবাই উল্লাসিত হয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানালো। সকলের কাছে অতি আশ্চর্যের বিষয় ছিলো হঠাৎ করেই শিশিরের আগমন! তার কাজিনরা এসে তাকে ঘিরে ধরলো। একে একে নানান প্রশ্ন তাদের! আর এদিকে বিন্দু পালালো। সে অতি দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করে নানুর রুমের দিকে চলে এলো। পথ পড়লো আফসানা ফেরদৌসি। বিন্দুকে জিজ্ঞেস করলো, 

- এতো তারাহুরো করে কোথায় যাচ্ছো? শিশির এসেছে, দেখা হয়েছে তোমার সাথে? 

- হ্যাঁ, মা।

- সেকি! তোমার চোখে পানি কেন! কি হয়েছে? 

বিন্দু পানি মুছে হাসিমুখে বললো,

- কি যেন গিয়েছে চোখে। আমি পানি দিয়ে আসছি।

- ওকে, প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো। 

- আচ্ছা।

বিন্দু ছুটে চলে গেলো নানুর রুমে। দরজা লাগিয়ে সে বসে রইলো খাটে! বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে! সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে! এটা শিশির হতে পারে না! সে দুপুরের আগেও কথা বলেছে তার সাথে। যদি আসার হতো তাহলে তাকে জানাতো! বাবা মা কিংবা শীতুলের কাছেও শুনতো কিছু! এই মুহূর্তে তার অনুভূতির লীলাখেলা সে নিজেই বুঝতে পারছে না! পা ঝুলিয়ে বসে  দু'হাতে  বিছানার চাদর আকড়ে ধরেছে! জমানো কষ্টের বিস্ফোরণ ঘটায় ঠোঁট কামড়ে ধরে কাদতে শুরু করেছে বিন্দু! তিন-চার মিনিটের মতো পাড় হতেই দরজায় টোকা ও শীতুলের কণ্ঠ ভেসে এলো, 

- ভাবি, রুমে আছো? ভাবি? 

বিন্দু কণ্ঠ স্বাভাবিক করে সাড়া দিলো,

- হ্যাঁ, শীতুল। কি জন্য?

- চেঞ্জ করছো তুমি? 

- না, করবো। 

- একটু খোলো তো। আমার জুতো চেঞ্জ করবো। 

বিন্দু চোখ মুছে দরজা খুলতেই শীতুল হনহন করে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বললো, 

- ওফ্! আর পারছি না হাটতে! দেখো কয়টা ঠোসা পড়েছে!

- আগেই তো বলেছিলাম, হাটতে না পারলে পরো না। 

- এই শাড়ির সাথে ম্যাচিং হয় না তো অন্যটা। তাইতো পরলাম! ধুর! টাকা গুলোই আমার জলে গেলো! ভাইয়া আসবে তোমার কাছে আগে বলেছিলো? 

বিন্দু মলিন সুরে জবাব দিলো, 

- না।

- কতো বড় স্টুপিড, দেখেছো! আমি কতবার জিজ্ঞেস করেছি কবে আসবে। কোনো আভাসই দেয়নি! এখন এসে বলে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তখন বলেনি! আর তুমি এখন চেঞ্জ করতে এসেছো কেন! চলো, প্রোগ্রাম শেষ হয়নি এখনো। পরে চেঞ্জ করো। 

- যাও তুমি। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। মুগ্ধর খেয়াল রেখো। কোথাও যেতে দিও না। 

- আরে, তুমিও এসো তো! ভাইয়া এসেছে এখন আরও বেশি মজা হবে। চলো চলো...

- আচ্ছা, তুমি যাও। আমি আসছি।

- ওকে, তারাতাড়ি এসো। 

শীতুল বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রুমে শিশিরের আগমন! সে দরজা লাগিয়ে বিন্দুর দিকে তাকাতেই বিন্দু দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো। শিশির তার দিকে এগিয়ে এলে বিন্দু তার পাশ কাটিয়ে  বেরিয়ে যেতে চাইলো। শিশির হাত ধরে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো! এদিকে বিন্দু নিশব্দে তার হাতের বন্ধন থেকে ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো। শিশির আরও জোরে চেপে ধরে বললো, 

- মেরে ফেলবো একেবারে! এতোগুলো দিন কেটেছে, একটা বার আমাকে ভিডিও কলেও দেখা দাওনি! এখন আবার পালাতে চাইছো!

শিশিরের কথার প্রতুত্তরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেসে এলো,      

- ইতালি যাওয়ার সময়ও তো কেউ আমাকে দেখা দেয়নি, সেটা কি আমি ভুলে গেছি!

শিশির মাথায় চুমু দিয়ে বললো,    

- স্যরি, শিশিরবিন্দু! আর যাচ্ছি না। একেবারে চলে এসেছি। 

- না, আসার প্রয়োজন নেই! কেউ আসুক আর না আসুক তাতে আমার কি!

- তোমার কিছু না? 

-..... 

- বলো, তোমার কিছু না? 

বিন্দু এতোক্ষণ ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অতি রাগে কথাটা বললেও দ্বিতীয়বার সেটা মুখে উচ্চারিত হচ্ছে না! সে শিশিরের বুকে মুখ লুকিয়ে ব্লেজারের ভেতর দিয়ে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে উঠলো! আর শিশিরের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি! এই ভেবে যে, তার শিশিরবিন্দুর অভিমানের অবসান ঘটেছে! সে ব্লেজার টেনে বিন্দুকে যতটুকু সম্ভব জড়িয়ে নিলো। বিন্দু যেন প্রাণ ভরে কাদছে শিশিরের বুকে ঠাই পেয়ে! ভেতরের জমানো সব রাগ, অভিমান, কষ্ট কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে আজ! আর প্রবাহিত হচ্ছে সুখের তরঙ্গ!

কান্নার বেগ কমে এলে শিশির বললো, 

- বলেছিলাম না, হঠাৎ করেই হাজির হয়ে যাবো তোমার সামনে! কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা!

বিন্দু তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো, 

- ভেবেছেটা কি! না জানিয়ে হঠাৎ করেই চলে যাবে আবার হঠাৎ করেই চলে এসে সারপ্রাইজ দিবে আর আমি সারপ্রাইজড হয়ে যাবো! 

- সারপ্রাইজ হওনি? 

- না, কারো সারপ্রাইজে সারপ্রাইজড হবোও না। আর কাউকে কোনো  সারপ্রাইজ দিবোও না!

শিশির তাকে আবার কাছে টেনে বললো, 

- আচ্ছা! এখন তো সারপ্রাইজড হয়ে গেছো, তা কি সারপ্রাইজ রেখেছো আমার জন্য? বলোতো? 

- আমি কখন বললাম সারপ্রাইজ রেখেছি! 

- বলোনি কিন্তু জেনে গিয়েছি তো আমি! 

- কি জেনেছো!

শিশির বিন্দুর মাথার টিকলি ঠিক করে দিতে দিতে বললো,        

- ওই যে, কাউকে সারপ্রাইজ দিবেও না! 

- বলেছি ই তো, দিবো না।

- এখন না দেওয়া পর্যন্ত যে আমার শান্তি নেই! তারাতাড়ি দাও! 

বিন্দু লজ্জায় নত হয়ে আবারও বললো, 

- উহুম!

- আরে! তুমি নিজেই যদি এমন লজ্জায় মিশে যাও তাহলে আমি সারপ্রাইজড হবো কি করে!

বিন্দু শিশিরকে আবার জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো। শিশির দু'হাতে তার মুখটা তুললে বিন্দু চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখের পাতা তার ঘনঘন কাপছে! শিশির তার রঙিন ঠোঁটে আলতো স্পর্শ দেওয়ার পরপরই বিন্দুর মুখে উচ্চারিত হলো,

"লকেটের বিপরীত পাশটা দখল করতে কেউ আসছে!"

কথার পরপরই শিশিরের হাত দুটো বিন্দুর মুখখানা ছেড়ে দিলো! বিন্দু চোখ খুলে দেখলো শিশিরের মুখে হাসি অনুপস্থিত! চোখ দুটো কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে! তা দেখে বিন্দুর মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে গেলো! দৃষ্টিতে দৃষ্টি পড়ায় স্তব্ধতা কাটিয়ে এবার শিশিরের ঠোঁটের এক কোনে জেগে উঠলো হাসির ঝিলিক! শিশির ছোট শব্দ করে জিজ্ঞেস করলো,

- সত্যি? 

বিন্দুর চোখ ছলছল করছে! সে মাথা নেড়ে "হ্যাঁ" জবাব দিতেই বিন্দুর ঠোঁটে এবার কামড় বসিয়ে দিয়ে শিশির বললো, 

-  শিশিরবিন্দু! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে এখন তোমাকে!


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.