Bangla Golpo pdf - বোকা প্রেমিকা পার্ট১ - bangla choti golpo - bangla love story - life story

 বোকা প্রেমিকা

পার্ট১

Bangla Golpo pdf - বোকা প্রেমিকা  পার্ট১ - bangla choti golpo - bangla love story - life story
Bangla Golpo pdf - বোকা প্রেমিকা  পার্ট১ - bangla choti golpo - bangla love story - life story 

" আমার বাবার পরনারীর সাথে সম্পর্ক ছিলো।এই নিয়ে বাবা-মায়ের মাঝে খুব ঝামেলা হতো।প্রায়ই দেখতাম মাকে ওই পরনারীর জন্য মারধর করতো বাবা।তারপর আমার মাকে ডিভোর্স দিয়ে বাবা ওই পরনারীটাকে বিয়ে করেন।বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আমি খুব একা হয়েছিলাম।বাবার এই কাজের জন্য পুরুষ জাতটাকে আমি খুব ঘৃণা করতাম।বর্ষণের সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝতে পারি যে সব পুরুষ এক না।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম!আমার বাবার মতো বর্ষণও একজন প্রতারক।সে আমায় ছাড়াও আরো একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে আছে।ভালো থাকার জন্য ওকে বিশ্বাস করেছিলাম।কিন্তু দেখছি ভালো থাকাটা আমার কপালে নেই।"


অনর্গল কথাগুলো বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জল।নুপুর কি বলবে ভেবে পায় না।এত আঘাতের কারণেই হয়তো মেয়েটা এত চুপচাপ!নুপুর আর জল কলেজ জীবনের বন্ধু।ভাগ্যক্রমে দুইজন একই ইউনিভার্সিটিতেও পড়ার সুযোগ পায়।সে কলেজের শুরু থেকে নুপুর দেখে আসছে জল খুব একটা কথা বলে না।কারও সাথে মিশেও না।সবসময় একা থাকে।নুপুর জলের বিপরীত স্বভাবের।সব সময় হাসিখুশি থাকে সবার সাথে মিশতে পারে।বেশ কয়েকদিন ধরেই জল মাত্রাতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে গেছে।এমনকি নুপুরের সাথেও সে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না।ক্যাম্পাসে আসতো।ক্লাস করে আবার চলে যেত।নুপুরের মনে সন্দেহের দানা বাঁধে।কি এমন হলো মেয়েটার যে হঠাৎ করেই এমন চুপচাপ হয়ে গেলো!আজ চেপে ধরায় জল কিছু কথা নুপুরের সাথে শেয়ার করে।মেয়েটার ওপর দিয়ে এত কিছু গেছে!জলের জায়গায় নুপুর হলে ত কেঁদেই ভাসাতো।অথচ জল!যন্ত্র মানবের মতো অনর্গল কথা গুলো বলে গেলো।কন্ঠে,চোখে, মুখে কোনো বিষাদের ছাপ নেই তার।কথায় বলে না?অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর! মেয়েটার ক্ষেত্রে ঠিক তাই ই ঘটেছে।একের পর এক আঘাত মেয়েটাকে অনুভূতিহীন পাথর করে দিয়েছে।


" তো এখন কি করবি?রিলেশটা কান্টিনিউ করবি না ব্রেকাপ করবি?"


" কিছুই না।যেমন চলছে চলতে থাক।আমি এর শেষটা দেখতে চাই।"


নুপুরের কথার জবাবে বলে জল।নুপুর কি বলবে ভেবে পায় না।চুপ করে জলের পাশে বসে থাকে।জল উঠে চলে যায়।বাসায় গিয়ে অন্ধকার ঘরটায় গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় জল।এই ঘরটা প্রায়ই অন্ধকার থাকে।দিনের বেলায় ভেন্টিলেটর দিয়ে দিনের আলো প্রবেশ করলেও রাতের বেলায় ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার।হঠাৎ করে কেউ এই ঘরে ঢুকলে নিশ্চিত তার গা শিউরে উঠবে এর নিস্তব্ধতায়।লকেটে থাকা পারিবারিক ছবিটায় আলতো করে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলিয়ে জল বলে,,


" ছোটবেলাটা কি সুন্দর ছিলো না বাবা-মা?আমরা এক ছিলাম।কোনো অশান্তির ছায়া ছিলো না তখন আমাদের জীবনে।আজ তোমরাও আলাদা আমিও আলাদা।শান্তি সুখ জিনিসটা কি তোমাদের আলাদা হওয়ার সাথে সাথে ভুলে গেছি।"


এই বাড়িটায় জল একা থাকে।তার বাবার দেওয়া জন্মদিনের উপহার এই ছোট্ট বাড়িটা।ব্যবসায়ী হওয়ায় জলের বাবার টাকার অভাব ছিলো না।মেয়ের কিছু প্রয়োজন বোধ করলে মেয়ে মুখ ফুটে বলার আগেই তিনি তা মেয়েকে এনে দিতেন।সেইবার ছিলো জলের বিশতম জন্মদিন।জলই বোধহয় প্রথম সন্তান যে জন্মদিনের উপহার হিসেবে তার বাবার কাছে থাকার জন্য আলাদা বাড়ি চায়।মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন নি জলের বাবা।একমাসের মাথায় জলকে তিনি বাড়ি উপহার দেন।ডুপ্লেক্স বাড়িটির নিচের তলায় বড় এরিয়া জুড়ে  ডাইনিং রুম,কিচেন আর ড্রয়িংরুম।দোতলায় থাকার জন্য চারটি কক্ষ।যার একটিতে জল থাকে।আর বাকী তিনটে রুম ফাঁকাই পরে আছে।সেদিন পাশের ঘরটাতে গিয়েছিলো জল।ভেন্টিলেটরে এক জোড়া চড়ুই পাখি বাসা বেঁধেছে।যাক!এই বিশাল ফাঁকা বাড়িটায় জলের কেউ অন্তত সঙ্গী হলো!শুরুতে মেয়েকে একা একটা বাড়িতে ছাড়তে চাননি জলের বাবা।কেয়ারটেকার হিসেবে এক মহিলাকে রেখেছিলেন।কিন্তু সে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।জলের আচার - আচরণ নাক তার অদ্ভুত ভয়ানক লাগতো। অবশ্য তা স্বাভাবিকই।জল কারও সাথে কথা বলে না।ভার্সিটির প্রোগ্রাম গুলোতে যা যায়।তাছাড়া কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না সে।গেলেই আত্মীয় স্বজনদের টিটকারি দেওয়া কথা শুনতে হয়।যা জলের খুব বিরক্ত লাগে।প্রথম দিকে মহিলার কাছে সব স্বাভাবিকই ছিলো।একটা মানুষ কথা কম বলতেই পারে।কিন্তু যতদিন যায় ততই মহিলা বুঝতে পারে জল আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো না।প্রায় রাতেই সে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠতো।কখনো বা অট্টহাসির শব্দে মহিলাকে ভয় পাইয়ে দিতে।এতবড় বাড়িতে রাতের শুনশান নীরবতার মাঝে জলের কর্মকাণ্ডগুলো ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি করতো।তাই সে চাকরি ছেড়ে দেয়।বর্তমানে জল বাড়িটায় একাই -ই আছে।


ফোনের মৃদুকম্পনে জলের ঘুম ভাঙে।ফোন তুলে স্ক্রিনে বর্ষণের নাম্বার দেখতে পায়।উঠে বসে গলাটা ঝেড়ে নেয় জল।যাতে জলের কিছু বর্ষণের কাছে অস্বাভাবিক না লাগে।


" হ্যালো।"


" ব্যাপার কি জল?বেশ কয়েকদিন হলো তোমায় ক্যাম্পাসে দেখছি না।শরীর ঠিক আছে তো?"


"  Alhamdulillah everything... don't worry..."


" সবকিছু যদি আলহামদুলিল্লাহই থাকে তাহলে ক্যাম্পাসে দেখছি না কেন তোমায়? মেসেজেরও রিপ্লাই দিচ্ছো না! "


" আমি বাইশ ঘন্টা আগে মেসেজ দিয়েছি।তুমি সীনই করো নি।আর আমায় বলছো আমি রিপ্লাই দিচ্ছি না?"


" দেখেছো?ব্যস্ততার মাঝে একদম হয়ে ওঠে নি।"


" আচ্ছাহ! Anyway... আমার ভালো লাগছে না।আমি রাখছি।"


বর্ষণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জল ফোন কেটে দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।নিজে নিজেই বলতে লাগে,,,


" অভিনয়টা ভালোই পারো তুমি বর্ষণ। তোমার ব্যস্ততা তো আদিবা।আমি জানি তুমি সারাদিন অনলাইনে থাকো।এক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করে চোরের মতো আদিবাকে সময় দাও।আমি তো পুরনো হয়ে গেছি।আমাকে আর ভালো লাগে না।তাই তুমি....."


অট্টহাসি দেয় জল।তারপর মুহুর্তেই কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,


" কেন তুমি এমন করলে?পুরোনো হয়ে গেছি, ভালো লাগছে না বললেই হতো।আমার ছায়াও পরতো না তোমাদের জীবনে।কিন্তু তা না করে দিনের পর দিন এক ভালোবাসার কাঙালিনীর সাথে তুমি ভালোবাসার অভিনয় করে যাচ্ছো।ভুল করেছিলাম তোমায় বিশ্বাস করে।সব পুরুষরাই এমন ঠকবাজ,প্রতারক।"


তিনটে বাজে।আজ জল মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে মামাদের বাসায়।অনেক দিন ধরেই জলকে যেতে বলছিলো ওর মা।

জলের বাবা মায়ের যখন ডিভোর্স হয় জল তখন ক্লাস সেভেনে পড়তো।বয়সন্ধিকালে প্রত্যেকটা সন্তানেরই বাবা-মাকে খুব প্রয়োজন হয়।জল সেই সময়টাতে পুরো একা ছিলো।খুব অল্পবয়সেই নিজেকে সামলাতে শিখে গিয়েছে সে।আলাদা বাসায় আসার পর জল তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।সেখানে থাকতে বাবার ভয়ে তা আর করা হয়ে উঠেনি।কোনো রকমে দুপুরের খাবার খেয়ে জল মামাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।


জল বাসায় ঢুকতেই জলের মামাতো বোন পরী এসে জলকে আপু বলে জড়িয়ে ধরে।পরী জলের ছোট মামার মেয়ে।জলের খুব আদরের।মানুষের কাছে জল আনসোশ্যাল হলেও পরীর কাছে জল তার বেস্টফ্রেন্ড।জল ব্যাগ থেকে বের করে ক্যাডবেরি পরীর হাতে দেয়।পরী খুশীতে গদগদ হয়ে বলে,,,


" থ্যাংক ইউ জল আপুনি।"


জল মুচকী হাসে।জলের মা ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন।জলকে দেখে তিনি আনন্দে কেঁদে দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন।জলের কপালে চুমু খেয়ে বলেন,,,


" এত্ত বড় হয়ে গেছে আমার জলটা?"


" মা সময় থেমে থাকে না।অনেক কিছুই বদলে যায় সময়ের সাথে।আমিও বদলে গেছি।বড় হয়ে গেছি।"


" তা তো দেখতেই পারছি। তুই বস আমি তোর জন্য পায়েস আনছি।"


" অত ঝামেলা তোমার করতে হবে না মা।"


" পায়েস না তোর পছন্দের..."


" ছিলো।এখন আর নেই।"


জলের মা কথা শেষ করার আগেই জল বলে।জলের মায়ের হাসি কিছুটা মলিন হয়।তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন,,,


" তাহলে কি খাবি বল!"


" কড়া করে এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে।চিনি দিও না।"


জলের মা আর কিছু বলেন না।মেয়ের চোখ মুখ দেখেই উনি বুঝে ফেলেছেন মেয়ের মধ্যে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে।সেই ছোট্ট হাসিখুশি চঞ্চল জল অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে।পৃথিবীর সমস্ত নিস্তব্ধতা যেন তার কাছে এসেই ভীড় করেছে।


চলবে,,,ইনশাআল্লাহ 


গল্প সম্পর্কিত আলোচনা সমালোচনায়-


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.