বন্ধন
পর্ব_৫০ - শেষ পর্ব
Bangla Golpo - বন্ধন পর্ব_৫০ - শেষ পর্ব - bangla choti |
দেখতে দেখতে পাঁচটা মাস পেরিয়ে গেছে। আয়ান আর মায়রার দিনগুলো কাটছে খুনসুটিতে। কখনো আয়ান দেরি করে ফিরেছে বলে অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে মায়রা৷ আর আয়ান ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে মায়রার রাগ ভাঙায়। তাওহীদ আর আরিশাও মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে যায়। এখন আবার আরিশা মায়রার বেস্টফ্রেন্ডের চেয়েও সম্ভবত বেশি কিছু হয়ে গেছে৷ ওরা দুজনে মিলে আয়ানের চৌদ্দটা বাজিয়ে দিচ্ছে। বেচারা আয়ান অফিসে কাজ নিয়ে আরিশাকে বকা দিতে পারে না, আর বাসায় মায়রাকে কিছু বললে তো হয়েই গেল। দু রমণী একসাথে আয়ানের উপরে চড়াও হয়। এসব ভেবেই আয়ান হেসে একটু নিচু হয়ে বসে মায়রার শাড়িঁর কুঁচিগুলো গুছিয়ে দিচ্ছে। আর মায়রা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে। আয়ান আলতো করে মায়রার পেটে চুমো খেল।
-কি রে বাবাই? মাম্মাম এমন গাল পেঁচার মতো ফুলিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তুই কি কিছু করেছিস? নাকি আমি কিছু করেছি রে বাবা?
-এই কি বললা তুমি?
-তোমাকে কই কি বললাম? আমি তো আমার বাবাইয়ের সাথে কথা বলছি--। তুমি শুনছ কেন?
-তুমি কথা বলতেই থাকো। আমি থাকবই না। ধুর----।
-ওই? কই যাবা?
-আমি আরুর কাছে চলে যাবো--।
-মায়রা--? তোমরা দুটো মিলে এসব প্ল্যান করো না?
-হি হি। হুম করি তো। তাতে কি হয়েছে?
-তাতে কি না?
আয়ান আলতো করে মায়রার পেটে নাক নিয়ে ঘষা দিলো। তারপর আলতো করে চুমো খেল আরেকবার।
-বাবুই আজকে কিন্তু রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবি কেমন? তোর লাজুক পরী মাম্মাম নাহয় তোকেও লজ্জা পাবে--।
-এই কি বলো এসব?
-কই কিছু না তো। বাবুকে বলছি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে---।
-ওমা কেন? বাবুর সাথে কথা বলবো না আমরা?
আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে মায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবালো।
-কি করছ তুমি?
-আজকে বাবুর সাথে কথা বলতে হবে না। আজকে তুমি আমার আদর খাবা লাজুক পরী---।
-যাহ। কি সব বলো?
-কিছুই বলি না। আদর করবো সেটা বলছি--।
-তিথির বিয়ে সেদিকে হুঁশ নেই জনাবের? দেরি হচ্ছে না?
-ইশ রে! রোমান্সের চৌদ্দটা বাজাতেই হবে সবসময় তোমাকে?
-------------------------------
-আহারে! পরীটা। আমার লাজুক পরীটা গোস্সা করেছে?
-হুম---।
-কেন গো?
-আমার লজ্জা করছে এভাবে বাইরে যেতে--। পেটটা কতোটা বড় হয়েছে---।
-হা হা। পাগলিটা! এসময় পেট বড় হবে সেটা তো স্বাভাবিক রে পাগলী। এতে লজ্জা পাওয়ার কি হলো?
-তবু আমার লজ্জা পায়---।
-তাই তো তুমি আমার লাজুক পরী-।
আয়ান মায়রার গালে একটা চুমো খেয়ে শাড়িটা ঠিক করে মায়রার গায়ে টেনে দিলো যাতে পেট দেখা না যায়। তারপর মায়রাকে নিয়ে স্টেজে গেল। মায়রা স্টেজে গিয়ে তিথিকে জড়িয়ে ধরলো। তিথি মিটিমিটি হাসছে মায়রাকে জড়িয়ে ধরে।
-এই পিচ্চি পরীটা আমার ভাবি হয়ে গেল আজকে--। তা এখন তোমাকে কি বলে ডাকবো গো তিথিমনি? তিথু? নাকি তিথিভাবি?
-ভাবি কি সব বলো? আমি তো তিথি। পিচ্চি তিথি---। হি হি।
তিথির কথা শুনে তিথির পাশে থেকে তিয়াশ, আয়ান, মায়রা, আরিশা, তাওহীদ সবাই হেসে ফেললো। মেয়েটা আজো সেই বাচ্চাদের মতোই ছেলেমানুষটাই রয়ে গেছে। তিয়াশ হেসে তিথির খিলখিল হাসিটা দেখছে। এই দুষ্টু মেয়েটা কি করে যেন তার জীবনের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। আজ এই পিচ্চিটা সত্যি সত্যি ওর পিচ্চি বউ হয়ে আসছে। আজ ওদের ভালোবাসার বন্ধনটা অফিশিয়াল ভাবে বিয়েতে পূর্ণতা পেয়েছে। আজীবন এই পিচ্চিটাকে পাগলামি ভরা ভালোবাসায় মাতাল করে রাখবে তিয়াশ। অন্তত আজকের দিনে এটাই মনে মনে অঙ্গীকার করলো তিয়াশ।
ছয় বছর পর।
মায়রা পুঁচকে একটা বাবুকে কোলে করে আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। আর দুটি ছেলে মেয়ে উঠোনে ছুটোছুটি করছে। একটু পর পর আয়ানের কোলে এসে বসছে একজন। আর সাথে সাথেই আরেকজন টানাটানি করে উঠিয়ে দিয়ে নিজে বসে পড়ছে। আয়ান মায়রা দুজনেই হেসে ফেলছে ওদের কান্ড দেখে। বড় মেয়েটা আবার টুপ করে আয়ানের কোলে বসে পড়লো।
-আমায়া? মামনি? এতো ছুটোছুটি করে না বাবা। ব্যথা পাবা তো?
আমায়া উত্তর দেয়ার আগেই চার বছর বয়সী ছোট্ট ছেলেটা আমায়ার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো।
-আমু আপু। সর সর--। আম্মি বসবো বাবার কোলে---।
-নাহ। আমি বসেছি এখন৷ তুই পরে বসিস---। বাবা? আমানকে মানা করো না? ও মা?
-আমান? বাবা আপু বসেছে? না?
আমান মায়ের পাশে বসে চোখ ডলে কান্না করা শুরু করে দিলো।
-আআআআআআ৷ মা আয়রাকে কোলে করে বসে আছে-। বাবা আমু আপুকে-। আআআআ। আমাকে কেউ আদর করে না। কোলেও নেয় না। আআআআ।
আয়ান কিছু বলার আগেই আমায়া লাফ দিয়ে আয়ানের কোল থেকে নেমে আমানের কাছে গিয়ে চোখ মুছে দিলো।
-আমান? তুই আপুর কোলে আয়? আর আপুকে বাবাই কোলে নিবে। তাহলে তুই কোলে চড়তে পারবি আমিও পারবো। কেমন?
-ইয়েএএএএ। আচ্ছা। আমিও কোলে চড়বো--।
চোখের পলকে আবার আমায়া আয়ানের কোলে গিয়ে বসলো। আর আমান উঠে গেল আমায়ার কোলে। আয়ান হেসে দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। আর পাশে বসে মায়রা ওদের পাগলামিগুলো দেখে হাসছে। মায়রা আয়রাকে বুকের উপরে ধরে রেখে ঘুম পাড়ানোর জন্য দোলাচ্ছিল এতোক্ষণ। এখন কোলের উপরে নিতেই দেখলো মেয়েটা ঘুমিয়ে কাদা একেবারে। আয়ান সেটা খেয়াল করেই মায়রার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো। আয়ানের হাসিটা দেখেই মায়রা চোখ বড়বড় করে তাকালো আয়ানের দিকে। ইশারায় আলতো করে মাথা নাড়লো। আয়ান ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে মায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমায়া আর আমানের দিকে ফিরলো।
-মায়রা--? আয়রাকে শুইয়ে দাও যাও। ঘুমিয়ে গেছে--।
-হুম-----।
মায়রা আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে আয়রাকে নিয়ে গিয়ে দোলনায় শুইয়ে দিলো। আমায়ার জেদের কারণে বাগান বাড়িতে এসেছে ওরা। কিছুদিন সবাই মিলে এখানে মজা করবে। মায়রা খাটে পা ঝুলিয়ে দিয়ে ওর নীল মলাটের ডায়েরিটা থেকে চিঠিটা বের করলো। কতো সুন্দর করে ওর এতোদিনের লালন করা স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে ভাবতেই মায়রার চোখে পানি এসে গেল। মায়রার চোখ থেকে পানিটা গড়িয়ে পড়ার আগেই আয়ান মুখটা তুলে ধরে কান্নার বিন্দুটুকু শুষে নিলো।
-কারণ অকারণ, কান্না করা বারণ।
-তুমি?
-হুম আমি--। আর কে এসে এভাবে তোমার চোখ থেকে ঝড়া মুক্তাবিন্দুগুলো ঠোঁটে তুলে নিবে?
-হুম---। কিন্তু বাবুরা কই? আমায়া আমান? ওরা উঠোনে একলা আছে? বাইরে চলে গেলে?
আয়ান পিছন থেকে মায়রাকে জড়িয়ে ধরে কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-ম্যাডাম--। বাইরে মা, বাবা, তিয়াশ ভাইয়া, তিথি, ওদের পুঁচকে মেয়ে তনয়া সবাই আছে--। ভয় নেই--।
-তুমি এভাবে এলে কেন? সবাই কি ভাববে?
-কি ভাববে? আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি--।
-একদম লজ্জা নেই তোমার--। ছাড়ো--। কেউ হুট করে চলে এলে?
-হুম---। ভালো কথা বলেছো--। দাঁড়াও আগে দরজাটা বন্ধ করে নিই--।
-এই এই এই----?
-শশশশশশ। আয়রা ঘুমাচ্ছে--।
-ওপসসস। সরি সরি----।
আয়ান দরজাটা বন্ধ করে এসে মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে এক হাতে কানের নিচে হাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।
-মায়রা? এখন সম্বোধনে কি ডাকবে সেটা ঠিক করতে পেরেছ?
মায়রা লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিতেই আয়ান আবার মায়রার মুখটা তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে গভীর আবেশে চুমো খেল। তারপর মুখটা তুলে ধরে মুখের দিকে তাকালো।
-আহা! আমার লাজুক পরীটা! এই লজ্জা রাঙা মুখটা দেখলেই তো---।
আয়ানের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে দু হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো। আয়ানও সুযোগ পেয়ে মায়রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানায় ফেললো। তারপর দুজনে মিলে হারিয়ে গেল ভালোবাসার অন্য এক দুনিয়ায়। যে দুনিয়ায় খানিক অভিমান থাকবে, খানিকটা পাগলামি থাকবে, অনেকখানি ছেলেমানুষিভরা ভালোবাসা থাকবে। আর সবটুকু জুড়ে থাকবে নিজেদের এই পবিত্র বন্ধনটার উপরে অগাধ বিশ্বাস। যে বিশ্বাস এই বন্ধনটা আরো মজবুত করে আঁকড়ে রাখবে দিনের পর দিন।।
সমাপ্ত