Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৩১-৩২ | bangla choti golpo

 


শুধু তোমারই জন্য

পর্ব ৩১-৩২

Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব ৩১-৩২ | bangla choti golpo
Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব ৩১-৩২ | bangla choti golpo 


আনিতা দুম করে উঠে বসলো। সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিতা সেদিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ড্রেস নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আহিয়ান কিছুক্ষণ আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ফাইয়াজকে বলে,


--"দেখলি তো তোর বোনের কান্ড? দোষ করলি তুই আর তেজ দেখাচ্ছে আমার উপর।"


--"বাহ রে! আমি আবার কি করলাম? সব দোষ তো তোরই। তুই তো ওর সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলি। তাহলে তেজ তোর উপর দেখাবে না তো আমার উপর দেখাবে?"


--"কেন ভেঙেছিলাম আমি? তুই তো মাঝখান থেকে আমায় বন্ধুত্বের দিব্যি দিয়ে দিলি। তাহলে আর কি করতাম আমি?"


--"আমি তোকে দিব্যি দিয়েছি বলেই তুই সম্পর্ক ভেঙে দিবি? কেমন ভালোবাসলি তাহলে আমার বোনকে?"


--"ফাইয়াজ তো ঠিকই বলেছে আহিয়ান। ও তোকে দিব্যি দিলো আর তুইও সবকিছু শেষ করে দিলি। তাহলে এখন আনিতার তেজ তো তোকে সহ্য করতেই হবে।"


ফাইয়াজের সাথে সহমত প্রকাশ করে তন্ময় কথাটি বলে। আহিয়ান চোখ বড় বড় করে তন্ময়ের দিকে তাকালো। আহিয়ানের তাকানো দেখে তন্ময় আর ফাইয়াজ দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আহিয়ান তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,


--"ফাইয়াজের মতো করে এখন আপনিও দেখছি দল বদল করলেন।"


এভাবে একের পর এক বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো ওদের মাঝে। তারপর সবাই চলে গেলো গোসল করে রেডি হতে। বারোটার উপরে বাজে আবার বরযাত্রী যেতে হবে তো। কিছুক্ষণ বাদে আনিতা বের হয় রুম থেকে। তন্ময় ফাইয়াজ আহিয়ান ওরা সকলেই সোফায় বসে কথা বলছিলো। রোদেলা তাসকিয়া জেরিন আনিতা আরোহী পাঁচজনেই এখন পার্লারে সাজতে যাবে। ফাইয়াজকে আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছিলো ওদের নিয়ে যেতে। তাই ওরা বের হতেই ফাইয়াজ ওরা ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। রাস্তায় গিয়ে যথারীতি ফাইয়াজের পিছনে তাসকিয়া, তন্ময়ের পিছনে রোদেলা, রাতুলের সাথে জেরিন আর শুভর সাথে আরোহী বসলো। আনিতা বাইকে না উঠে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। তা দেখে আহিয়ান বলে,


--"তা ম্যাডাম আপনাকে কি এখন বাইকে উঠে বসার জন্য ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে?"


তবুও আনিতা বাইকে উঠলো না। এমন ভাব নিয়ে দাঁড়ালো যেন ও কিছু শুনতেই পাইনি। তখনই আনিতার সামনে ওর আব্বুর বন্ধুর ছেলে তুষার বাইক থামালো। আনিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,


--"কোথাও যাবে তুমি?"


--"হ্যাঁ ভাইয়া৷ একটু পার্লারে যেতাম এই আরকি।"


--"ওহহ! তাহলে চলো আমি তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি।"


আনিতা কিছু না বলে আহিয়ানের দিকে তাকালো। আনিতা তুষারকে না বলতেই যাচ্ছিলো কিন্তু আহিয়ানের ফেস এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো বেশ চঁটে আছে। তাই ওকে আরো রাগানোর জন্য আনিতা ঠিক করলো তুষারের বাইকেই যাবে। 


--"বন্ধুর কথায় আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দেওয়া তাই না? এখন আমার কাছে এসে যতই ভালোবাসি বলুন না কেন? এত সহজে তো মানবো না আমি। এখন দেখুন আপনার সামনে আমি কি করে তুষার ভাইয়ার সাথে ভাব নেই। একটুও পাত্তা দিবো না আপনাকে আমি।  জাস্ট একটুও না। হুহ! আপনি শুধু দেখে যান আমি কি কি করি। আমাকে কষ্ট দেওয়া তাই না? আমি আজ সারাটা সময় আপনাকে ইগনোর করবো আহিয়ান। আমিও দেখি কতক্ষণ সহ্য করতে পারেন আপনি। একটু তো জ্বলতে আপনাকেও হবে মিস্টার আহিয়ান আদৃত। বি রেডি।"


মনে মনে এসব ভেবে আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। আহিয়ান রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। আবার তুষারের দিকেও তাকাচ্ছে। আনিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাইয়াজ বলে,


--"আর কতক্ষণ এভাবে সঙের দাঁড়িয়ে থাকবি? আহিয়ান ওয়েট করছে তো। বাইকে উঠ।"


--"আমি তুষার ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি। আহিয়ান ভাইয়াকে আমায় নিয়ে যেতে হবে না।"


এইটুকু বলে আনিতা তুষারের বাইকে উঠে বসলো। মাঝে বেশ দূরত্ব রেখেই বসেছে আনিতা। লেহেঙ্গা আর গহনার ব্যাগটা আনিতা ওর আর তুষারের মাঝে রেখেছে। আহিয়ান চোখ লাল করে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আনিতা উঠে বসতেই তুষার বাইক চালিয়ে চলে গেলো। ফাইয়াজ ওরা সকলেই অসহায় ফেস করে আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ানের হাতে থাকা ফোনটা আহিয়ান ফাইয়াজের দিকে ছুড়ে মেরে বলে,


--"সব তোর জন্য হলো। মেনেই যখন নিবি তাহলে কে বলেছিলো কয়েক ঘন্টার জন্য এমন নাটক করতে? কাল যখন এত করে সবাই বুঝালাম তখন বুঝলি না। এখন সবকিছু গোলমাল করে দিয়ে বুঝে লাভ হলো কি? দেখলি তোর বোন এখন আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। অন্য ছেলের বাইকে উঠে দিব্যি চলে গেলো সে। ওর সাহস হলো কি করে ওই ছেলের বাইকে উঠার?  আই উইল কিল হার।"


তন্ময় আহিয়ানের ফোনটা আগেই ধরে নেয়। আহিয়ানের কথা শেষ হতেই ফাইয়াজ তীব্র প্রতিবাদের সুরে বলে,


--"একদম না। আমার আনি বুড়ির কিচ্ছু হলে তোকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?"


--"তাহলে তোর আনি বুড়ির সাহস কি করে অন্য ছেলের বাইকে উঠার?"


--"তাতে তোর কি? তুই নিজেই তো সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলি।"


--"তোর বোনের সাথে সাথে আমি তোকেও খুন করবো। তারপর নিজেও মরবো। তাহলেই সব ঝামেলা মিটে যাবে।"


--"তোমরা দুজনে মারামারি খুনাখুনি পরে করো প্লিজ। এখন চলো। লেট হয়ে যাবে তো আমাদের।"


জেরিনের কথায় সবাই বাইক স্টার্ট করে। ফাইয়াজ বাইক স্টার্ট করার আগে আহিয়ানের দিকে ওর ফোন এগিয়ে দিলে আহিয়ান বলে,


--"রাখ তোর কাছে। পরে নিয়ে নিবো।"


এই বলেই আহিয়ান বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। ফাইয়াজও বাইক স্টার্ট দেয়।


ওরা সবাই পার্লারে গিয়ে দেখে আনিতা অলরেডি সাজার জন্য বসে পড়েছে। আনিতাদের পরিচিত পার্লার এইটা। ওরা আসবে আগেই জানিয়ে রেখেছিলো তাই এখন অন্যকোনো মানুষ সাজতে আসেনি। আরো দুটো চেয়ার খালি থাকায় রোদেলা আর আরোহী বসে পড়ে। জেরিনের কাছে একটা ম্যাসেজ আসাতে ও বের হয়ে গেলো পার্লার থেকে। জেরিন নিচে নামতেই আহিয়ান এগিয়ে এসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে,


--"এটা আনিতাকে দিয়ে দিও।"


--"কি আছে এতে?"


--"বেলি ফুলের মালা। খোঁপায় লাগাতে বলো।"


--"বাব্বাহ! ওর জন্য একাই নিয়ে এলে। আর আমাদেরটা কোথায় হুম?"


--"সবার জন্যই আছে।"


--"তোমার তরফ থেকে?"


--"অবশ্যই। তাছাড়া এখন তো সে আমার উপর রেগে আছে। একা ওকে দিলে নিতো না। তাই সবার জন্যই নিয়ে এলাম। আর বউকে যখন দিবো তাহলে শালীকাদের আর কেন বাদ রাখবো বলো?"


--"আচ্ছা বুঝলাম। এখন তাহলে আসি।"


আহিয়ান মুচকি হেসে মাথা ঝাকালো। জেরিন ব্যাগ হাতে নিয়ে উপরে চলে গেলো। 


পৌনে তিনটার দিকে ওদের সকলের সাজ শেষ হয়। একসাথে সবাই পার্লার থেকে বের হয়ে আসে। আহিয়ান তো আনিতাকে দেখে পুরো হা হয়ে আছে। ডার্ক মেরুন লেহেঙ্গা পড়েছে আনিতা। গলায় জাস্ট একটা সিম্পল লকেট সহ চেইন। আর কানে বড় ঝুমকো। ঝুমকোর সাথে মিলিয়ে কপালে টিকলি। আর চুলগুলো খোঁপা করে তাতে বেলি ফুলের গাজরা লাগানো। আহিয়ানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনিতা ঠোঁট চেপে হাসলো। ফাইয়াজ আহিয়ানের কাঁধে ধাক্কা মেরে বলে,


--"এমনি দেখিস না ভাই। নজর লেগে যাবে তো।"


--"লাগবে না আমারই তো।"


আনিতা নিচে এসে আহিয়ানের পাশ কাটিয়ে গিয়ে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


--"তুষার ভাইয়া আপনি এখনো এখানে? কখন এলেন?"


--"আর যাইনি।  ভাবলাম একেবারে তোমাকে নিয়েই যাই।"


--"ওহ আচ্ছা।"


আনিতা তুষারের বাইকে উঠতে গেলে আরোহী আনিতার হাত টেনে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়। আনিতাকে আরোহী বলে,


--"কেন শুধু শুধু আহিয়ানকে রাগাচ্ছিস এভাবে?"


--"কই আমি তো কাউকে রাগাচ্ছি না।"


--"আনিতা তুই নিজেই কিন্তু আমাকে একদিন বলেছিলি আহিয়ান ভালো তো খুব ভালো। কিন্তু একবার রেগে গেলে আর রক্ষা নেই। তাহলে কেন শুধু শুধু ওকে রাগিয়ে নিজের বিপদ আনছিস?"


--"ভয় পাই নাকি আমি ওকে? ও যে আমায় কষ্ট দিলো সে বেলায় কিছু না তাই না?"


--"কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ও সম্পর্ক শেষ করেছিলো সেটা কিন্তু তুই জানিস।"


--"হ্যাঁ জানি। আর সেটাই আমার সমস্যা। ও কেন ফাইয়াজ ভাইয়ার কথায় আমার সাথে সব শেষ করে দিলো? ওর লাইফে ওর বন্ধুর মূল্য আছে আর আমার নেই তাই না? ফাইয়াজ ভাইয়া আজ সবটা মেনে না নিলে তো মনে হয় ও আজও আসতো না আমার কাছে।"


--"তাহলে তুই কি চাচ্ছিস এখন?"


--"তেমন কিছুই না। শুধু বিয়ের এই ক'দিন একটু জ্বলুক এটাই।"


--"ফল কিন্তু ভালো হবে না। ঘুমন্ত বাঘকে জাগাস না। আহিয়ান যদি একবার রেগে যায় না রক্ষা থাকবে না কিন্তু।"


--"ইশ্ ওর রাগ দুঃখ কষ্ট আছে আর আমার নেই? আমার সবকিছুও ওকে সহ্য করতে হবে।"


--"যা ভালো বুঝিস কর। পরে আবার আমার কাছে এসে কাঁদতে পারবি না বলে দিলাম।"


--"ওকে।"


আরোহী চলে গেলো। আর আনিতাও তুষারের বাইকে করেই বাসায় ফিরলো। আহিয়ানের মেজাজ তুঙ্গে উঠেছে। বেশ রাগ হচ্ছে ওর তুষার আর আনিতার উপর। 


মেয়ের বাসায় যাওয়ার সময়ও আনিতা আহিয়ানের বাইকে উঠেনি। সবাই বেশ করে বললেও শুনেনি ও। তুষার এবারও বলেছিলো ওর বাইকে উঠতে। কিন্তু আনিতা উঠেনি। আহিয়ান যেভাবে তাকিয়ে ছিলো। এবার বেশ ভয় কাজ করছে ওর। একবার আনিতাকে একা পেলে নিশ্চিত খুন করে ফেলবে। এই ভয়ে ভয়ে আনিতা আর তুষারের বাইকে গেলো না। আহিয়ানের বাইকেও গেলো না। কারন আহিয়ান এখন ওকে পেলেই মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবে। তাই আনিতা ওর ছোট চাচ্চুর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসে আনিতার খেয়াল হলো ও রুমে ফোন ফেলে এসেছে। তাই আবার ওর চাচ্চুকে বলে বের হয়ে গেলো। আনিতা ফোন নিয়ে আবারো গাড়ির দিকে এগুতে গেলেই আহিয়ান বাইক এনে থামালো ওর সামনে। আহিয়ানকে দেখেই ভয়ে কুঁকড়ে গেলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,


--"বাইকে উঠো।"


--"চা্ চাচ্চুর সাথে গাড়িতে করে যাবো আমি।"


--"বললাম না বাইকে উঠতে?"


--"দ্ দেখুন__"


--"বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি কিন্তু। আমাকে আর রাগিয়ে দিও না আনি। তাই যা বলছি চুপচাপ শুনো।"


ফাইয়াজ এসে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


--"আমি মামাকে বলে দিয়েছি। তুই আমাদের সাথে যাবি। এখন চুপচাপ আহিয়ানের সাথেই যা বইন। লেট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনেক।"


--"তোমার বন্ধু আমাকে একা পেলেই জানে মেরে দিবে। যাবো না আমি উনার সাথে।"


--"আর তুমি যদি এখন বাইকে না উঠো তাহলেও কিন্তু জানেই মেরে দিবো।"


আহিয়ানের কথায় আনিতা ফাইয়াজকে বলে,


--"দেখছো তোমার সামনেই কেমন থ্রেট করছে আমায়।"


ফাইয়াজ কিছু না বলে দুহাতে আনিতার কোমড় চেপে ধরে উঁচু করে ওকে আহিয়ানের বাইকের পিছনে বসে দিয়ে বলে,


--"তোদের ঝগড়াঝাটি খুনাখুনি যা করার বাসায় ফিরে করিস? আর একটু হলে কিন্তু ছোট মামা আবার কেঁদে দিবে। বেচারা তোদের জন্য এখনো বউ আনতে যেতে পারলো না।"


আনিতা ফাইয়াজের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে বাইক থেকে নেমে যেতে নিলেই ফাইয়াজ আটকে দেয় ওকে। আহিয়ান পিছন ঘুরে আনিতার দিকে চাইতেই আনিতা মাথা নিচু করে ফেলে। আহিয়ানের দিকে আবারো ভয়ে ভয়ে একপলক তাকিয়ে আনিতা ফাইয়াজকে বলে,


--"আমি যদি আজ মার্ডার হই না তাহলে তোমার বন্ধুর সাথে সাথে তুমিও সমান ভাবে দোষী থাকবে। কাগজে কলমে স্টাম্প করে যাবো আমি।"


--"হ করিস।"


এই বলে ফাইয়াজ নিজের বাইকে উঠে বসলো। ফাইয়াজ বাইকে বসতেই তাসকিয়া বসে ওর পিছে। জয় আর জারাও চলে এসেছে। বরের গাড়ি চলতে শুরু করে। বরের গাড়ির কিছুটা সামনে একটা বাইকে ভিডিওম্যান উলটো ভাবে বসে পিছনের সবটা ভিডিও করছে। আগে বরের গাড়ি চলছে তার পিছনেই ফাইয়াজ ওরা তেরো/চৌদ্দটা বাইক নিয়ে আসছে।


বউ নিয়ে আনিতারা প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ ওদের বাড়ি চলে আসে। ও বাড়িতে গিয়ে আনিতা সবসময় ওর মেজো কাকিমার সাথে সাথে থেকেছে। একদমই আহিয়ানের সামনে পড়েনি। সারাটা সময় আনিতা ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছে এই বুঝি আহিয়ানের সামনে পড়ে গেলো। "যাক বাবা ওখানে একা পায়নি এখন একটু সাবধানে থাকলেই হবে। কোনো ভাবেই উনার সামনে একা পড়া যাবে না।" এইসব ভেবে আনিতা নিজের রুমে যেতে নিচ্ছিলো। তখনই আহিয়ান ওর হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে আসে। এইসময় সবাই বউ নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় এদিকটা তেমন মানুষজন ছিলো না। আর তারই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আহিয়ান আনিতাকে টেনে নিয়ে ছাদে চলে এলো। ছাদে এসে আহিয়ান আগে ছাদের দরজা আটকে দিলো। তারপর আনিতার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আর আনিতাও ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।

চলবে।


#শুধু_তোমারই_জন্য

#পর্ব_৩২

#Ornisha_Sathi


--"এ্ একি আপনি সা্ সামনে আসছেন কেন এভাবে?"


--"আজ সারাটাদিন তুমি তুষারের সাথে এভাবে চিপকে ছিলে কেন?"


--"আমার লাইফ আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো তাতে আপনার কি?"


--"আমার কি?"


--"হ্যাঁ আপনার কি?"


--"তুমি পুরোটাই তো আমার।"


--"আজ্ঞে না। আমি আপনার না।"


--"অভিয়েসলি তুমি আমার।"


--"সেজন্যই তো বন্ধুর কথায় ছেড়ে দিয়েছিলেন তাই না? আপনার যখন যা খুশি আপনি তাই করতে পারবেন। আর আমি কিছু করলেই দোষ তাই না?"


--"হ্যাঁ দোষ। সবকিছু বিবেচনা করেই আমি তখন বলেছিলাম তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না। তখন যদি ফাইয়াজের কথা না শুনতাম তাহলে হিতে বিপরীত হতো।"


--"এখন ফাইয়াজ ভাইয়ার উপর সব দোষ চাপাবেন না একদম। আমাকে আর এখন আপনার ভালো লাগে না তাই তো ওরকম বলেছিলেন।"


--"আরে গাধী বুঝো না কেন? ফাইয়াজ ভেবেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না। কারন আগেও অনেক সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। তাই ওর মনে কিছুটা ভয় কাজ করেছে যদি ওদের মতো আমি তোমাকেও ছেড়ে দেই। সেজন্য ও আমাদের এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি সেসময়। তখন যদি ওকে হাজারও বুঝাতাম ও বুঝতো না। তাই ওর কথায় আমি সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলাম। আর ভেবেছিলাম বিয়ে শেষে বাসায় ফিরেই আম্মুকে রাজি করিয়ে ভাইয়া আর আম্মুকে পাঠাবো তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে।"


--"বিশ্বাস করি না আমি আপনাকে। যদি এমনই হতো তাহলে আপনি আমায় আগে বললেন না কেন? শুধু শুধু আমি কেঁদে কেটে নিজের বেহাল অবস্থা করেছি।"


--"ভেবেছিলাম বলবো কিন্তু সময় আর সু্যোগ পেলাম কোথায়? তুমি তো সেই যে রুমে গিয়ে দরজা লক করেছিলে। আর তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে ফাইয়াজও সবটা মেনে নিলো। বুঝতে পারলো আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে তন্ময়ের জন্য। ফাইয়াজও নিজে রিয়ালাইজ করতে পেরেছে কিছুটা। তবে বেশি সম্ভব হয়েছে তন্ময়ের জন্য।"


--"শুনুন আমি এত কিছু শুনতে চাই না। কাঁদিয়েছেন তো আপনি আমাকে। সুতরাং আপনাকে চাই না আমি। তুষার ভাইয়ার মনে আমার জন্য কিছু একটা আছে। তুষার ভাইয়া কাল বলেছে আমায় কিছু একটা বলতে চায়। কাল তো শুনতে পারিনি আজ শুনবো। আর আমি সিউর আমাকে প্রপোজ করবে আর আমিও সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করে নিবো।"


--"পারবে না তুমি।"


--"অবশ্যই পারবো।"


--"চ্যালেঞ্জ?"


--"ওকেহ।"


এইটুকু বলে আনিতা চলে আসতে নিলেই আহিয়ান ওর হাত টেনে ধরে রেলিঙের সাথে আটকে দেয়। আনিতার কোমড় চেপে ধরে একদম নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,


--"পায়ের কি অবস্থা এখন?"


--"ভ্ ভালো।"


--"ব্যাথা করছে না?"


--"একটু আধটু আছে। সেটা ব্যাপার না।"


--"এরপর থেকে কেয়ারফুলি হাঁটবা।"


--"হুম। এখন দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ।"


আহিয়ান আনিতাকে ছাড়ার বদলে আরো ভালোভাবে ধরলো। এদিকে আনিতার বেহাল অবস্থা। এই ছেলের সাথে চোখাচোখি হলেই আনিতার হার্টবিট মিস হয়ে যায়। আর এখন এতটা কাছে। ভাবা যায় এসব? আনিতার রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। আনিতার এহেন অবস্থায় আহিয়ানের বেশ মজা লাগছে। দরজার খটখট আওয়াজে আনিতা আহিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আহিয়ান মুচকি হেসে মাথা চুলকে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে। আহিয়ান দরজা খুলে সরে দাঁড়াতেই রাতুল ওরা সকলে ছাদে ঢুকে বলে,


--"জানতাম তোরা দুজনে এখানেই থাকবি। তাই কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার জন্য চলে এলাম সবাই মিলে।"


রাতুল যে ঠিক কি মিনিং করে কথাটা বলেছে আনিতা তা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে নিলো। জেরিন আরোহী রোদেলা আর তাসকিয়া সবাই মিলে আনিতার ওখানে চলে গেলো। রোদেলা গিয়ে আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,


--"বেইব ফাইয়াজ ভাইয়া তো সবটা মেনে নিয়েছে সো সেই খুশিতে এই রাতের বেলা ছাদের দরজা লক করে রোমান্স কেমন করলা দুজনে?"


রোদেলার কথায় জেরিন আর তাসকিয়া হেসে দিলেও আরোহী হাসলো না। আরোহী আনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,


--"রোমান্স টোমান্স বাদ দেও। আমার তো মনে হয় আহিয়ান ওকে এখানে এনে বেশ ঝেড়েছে।"


--"কেন রোমান্স করার মতো এত সুন্দর পরিবেশ পেয়েও রোমান্স না করে ঝাড়বে কেন?"


তাসকিয়ার কথায় জেরিন ও একমত প্রকাশ করে। আরোহী ভাবলেসহীন ভাবে বলে,


--"বাহ রে! আহিয়ানের সামনেই যদি তুষারের সাথে রংঢং করে বেরায় তাহলে ওকে ঝাড়বে না তো কি চুম্মা দিবে?"


--"উনি আমাকে ঝাড়লে তোর বুঝি বেশ মজা লাগে তাই না?"


--"অবশ্যই মজা লাগবে। তোরে বলছিলাম আমি বেশি রাগাস না। শেষে তুই পস্তাবি বাট শুনলি না তো। এবার ওর ঝাড়ি শুনে ভালো লেগেছে না?"


আরোহীর কথায় আনিতা ভেঙচি কেটে বলে,


--"রংঢং করছি বেশ করছি আরো বেশি করে করবো। আহিয়ানকে আমি ভয় পাই নাকি?"


--"একদমই না। আপনি আমাকে কেন ভয় পাবেন? উলটো আমি তো ভয় পাই আপনাকে।"


আনিতার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আহিয়ান কথাটা বলল। আহিয়ানের কথায় সকলে মুখ টিপে হাসছে। সেসময় ছাদে এন্ট্রি নেয় তুষার। তুষার এক কোনে দাঁড়িয়ে আনিতাকে ডাকে। আনিতা যাওয়ার আগে আহিয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,


--"ও যদি এখন আমায় প্রপোজ করে না তাহলে আমি আপনারই চোখের সামনে ওকে এক্সেপ্ট করে আপনাকে দেখিয়ে দিবো।"


--"আমিও দেখি তুমি কিভাবে এই চ্যালেঞ্জে জিতো।"


--"জাস্ট চ্যালেঞ্জ না মিস্টার আহিয়ান আদৃত। আপনাকে আমার আর চাই না সেটাও এখন দেখে নিবেন আপনি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।"


এইটুকু বলেই আনিতা তুষারের ওদিকে চলে গেলো। তন্ময় আহিয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তন্ময় আনিতার দিকে তাকিয়ে আহিয়ানকে প্রশ্ন করলো,


--"আনিতা যাওয়ার আগে বিড়বিড় করে কি বলে গেলো রে?"


--"আমাকে তার লাগবে না। সে এখন তুষারের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবে।"


কথাটা শুনে ওরা সকলে বিস্ময় নিয়ে একবার আহিয়ান তো একবার আনিতার দিকে তাকায়৷ রাতুল অবাক হয়ে বলে,


--"কিইহ? আর তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ওকে যেতে দিলি?"


--"আমিও দেখি না ও কিভাবে তুষারকে এক্সেপ্ট করে।"


আহিয়ানের কথা শুনে আরোহী হতাশ দৃষ্টিতে আনিতার দিকে তাকালো। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরোহী বলে,


--"আনিতা আজ তো তুই শেষ। তোকে আজকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না রে।"


আরোহীর কথায় জেরিন রোদেলা আর তাসকিয়া অসহায় চোখে তাকায় আনিতার দিকে। আনিতা আর তুষার ওদের থেকে ছয় সাত হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দুজনে কি বলছে সব কথাই ওরা সকলে শুনতে পাচ্ছে। আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে আবার রক্তচক্ষু নিয়ে তুষারের দিকেও তাকাচ্ছে। আনিতা একবার আহিয়ানের দিকে তাকালো। মূহুর্তেই আবার চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে চাপা হাসলো। আহিয়ানের ফেস রিয়্যাকশন নিয়ে আনিতার যদিও বা বেশ মজা লাগছে কিন্তু আবার মনের ভিতর ভয়ও কাজ করছে। আনিতা একপলক আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে তুষারকে বলে,


--"কিছু একটা বলবেন বলেছিলেন।"


--"হ্যাঁ বলার জন্যই এখানে ডেকেছি।"


--"হুম তো বলুন কি বলবেন।"


--"আসলে আনিতা কিভাবে শুরু করবো ভেবে___"


--"আরেহ এত ভাবাভাবির কিছু নেই তো। নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।"


--"আসলে বলতে চাচ্ছিলাম__"


--"হ্যাঁ বলুন না বলুন আমি শুনছি।"


--"বলে ফেলি তাহলে?"


--"অবশ্যই বলুন আপনার কথা শোনার জন্যই তো আমি এখানে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছি।"


আনিতা মুখে এই কথাটা বললেও মনে মনে বেশ বিরক্ত হচ্ছে। সেই কখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছে। অসহ্য লাগছে জাস্ট। ভিতরে ভিতরে খুব বিরক্ত হলেও বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না আনিতা। খুব হাসিমুখেই তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার একটা ঢোক গিলে বলে,


--"মানে বলছিলাম___"


--"আরেহ ধুর মিয়া রাখেন তো আপনার আসলে নকলে। আপনি এখানে যেটা বলতে এসেছিলেন সেটা বলেন।"


আনিতার আর তুষারের এমন কথায় ওরা সকলেই মুখ টিপে হাসছে। বিশেষ করে আনিতার কান্ডে। বেচারি না পারছে মুখে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। ভিতরে ভিতরে যে আনিতা বিরক্তিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটা ওরা সকলেই বেশ বুঝতে পারলো। তুষার বুঝতে পেরেছে কিনা কে জানে। তন্ময় রাতুল আরহান শুভ ওরা চারজনে একবার আনিতার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে। বিশেষ করে তন্ময় আর রাতুল ওরা দুজনে বেশ মজা পাচ্ছে আহিয়ানকে দেখে। ওরা দুজনে মোটামুটি সিউর আজকে এখানে কিছু একটা ঘটবে। তাই চুপচাপ নিরব দর্শকের মতো সবটা দেখে যাচ্ছে আর মজা নিচ্ছে। ওরা আহিয়ানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আপাতত তুষার আর আনিতার দিকে তাকালো। আনিতা এবার বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,


--"কি হলো? চুপ করে আছেন যে?"


--"ব্ বলছি। দু মিনিট টাইম দাও নিজেকে একটু প্রস্তুত করে বলছি সবটা।"


--"জাস্ট দু মিনিট কেন? আপনার যত সময় লাগে নিজেকে প্রস্তুত করতে আপনি তত সময়ই নেন আমি নিচে যাচ্ছি। আপনার নিজেকে প্রস্তুত করা হয়ে গেলে নিচে গিয়ে আমায় বলে আসবেন কেমন?"


এই বলে আনিতা চলে আসতে নিলেই তুষার ওর হাত চেপে ধরে। বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হাত চেপে ধরাতে আনিতা বেশ অবাক হয়। আর ওদিকে আহিয়ান তো রেগে গিয়েছে প্রচুর। আহিয়ানের যতটা না তুষারের উপর রাগ হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি আনিতার উপর রাগ হচ্ছে। তন্ময় আহিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে রাতুলকে বলে,


--"মামা খেলা তো পুরো জমে ক্ষীর।"


--"হুম সেটাই তো দেখছি মামা।"


রাতুল আহিয়ান আর আনিতার দিকে পরপর তাকিয়ে কথাটা বলল। আনিতা তুষারের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো তাড়াতাড়ি। আহিয়ানের এমন চাহনি দেখে আনিতা ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পেয়ে গেলেও বাইরে যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। তুষার আনিতার দিকে একটা গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,


--"আনিতা আই লাভ ইউ। যেদিন থেকে ক্লাস ফাইভে পড়া ছোট্ট তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমার প্রতি আমার মনে একটা জায়গা তৈরি হয়। তখনো বুঝিনি ওটা ঠিক কি ছিলো। তখন তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম কিনা আমি জানি না। তখন ভেবেছিলাম এটা জাস্ট অল্প বয়সের একটা আবেগ। তাই তোমাকে ভুলে গিয়ে নিজের লাইফে ফোকাস করার জন্য আন্টির বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছি। তোমার থেকে দূরে থেকেছি। তবুও তোমায় ভুলতে পারিনি আমি। প্রতিনিয়ত তোমার কথা ভাবতাম। তোমার সেসময়ের একটা ছবি ছিলো আমার কাছে। যখনই তোমার কথা মনে হতো তখনই তোমার ছবির সাথে আমার অনুভূতির কথাগুলো শেয়ার করতাম। হাজার চেয়েও ভুলতে পারিনি তোমাকে। লাস্ট তিনবছর আগে যখন গ্রামে আসি তখন আবার তোমাকে দেখে নতুন ভাবে তোমার মায়ায় ডুব দিয়েছি আমি। এতদিনে তোমাকে চেয়েও সবকিছু বলতে পারিনি আমি। তাই ভেবেছিলাম নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তারপরই তোমার সামনে দাঁড়াবো আমি। তোমার কাছেই তোমাকে চাইবো আমি সারাজীবন আমার হওয়ার জন্য। আই রিয়েলি লাভ ইউ আনিতা। উইল ইউ বি মাইন?"


কথাগুলো শুনে আনিতা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এই ছেলে বলে কি? গত সাত বছর যাবত ভালোবাসে আনিতাকে? যে সময় আনিতা ভালোবাসার মানেটাই বুঝতো সেসময় থেকেই নাকি তুষার ওকে ভালোবাসে। আনিতা এটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আনিতার সাথে সাথে বাকী সবাইও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর আহিয়ানের তো রাগের ফলে ঘাড়ের আর কপালের রগ ফুলে উঠেছে। আনিতা এবার ভয়ে ভয়েই তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ানের দিকে তাকাতেই আনিতার তখনকার নেওয়া চ্যালেঞ্জের কথা মনে পড়ে গেলো। তুষার তখনো আনিতার উত্তরের আসার তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো আনিতা। তারপর তুষারকে একপলক দেখে আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ানের দিকে তাকিয়েই আনিতা তুষারের দিকে ধীর গতিতে হাত কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,


--"আমি রা___"


এইটুকু বলতেই আহিয়ান তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর হাতে ক্যামেরা আর ক্যামারার ব্যাগটা কাঁধে ঝুলানো। আহিয়ান তন্ময়ের কাঁধ থেকে ব্যাগটা নিয়ে আনিতার দিকে ছুড়ে মারতেই আনিতা লাফ দিয়ে সরে যায় ওখান থেকে। আনিতা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক সেখানেই ব্যাগটা গিয়ে পড়লো। তুষার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান দৌড়ে আনিতার দিকে আসতেই নিলেই আনিতা দুই হাতে লেহেঙ্গার নিচের পার্ট উঁচু করে ধরে ওখান থেকে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায়। আনিতার পিছু পিছু আহিয়ানও দৌড় লাগায়। ওদের দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুভ আরোহী আরহান তাসকিয়া রোদেলা তন্ময় রাতুল জেরিন সকলেই উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আর এদিকে বেচারা তুষার কোনোকিছুই বুঝতে না পেরে বোকাবোকা চোখে আনিতা আর আহিয়ানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাতুল ওদের দিকে তাকালো।

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.