Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_৩০ - bangla choti

 


শুধু তোমারই জন্য

পর্ব_৩০

Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_৩০ - bangla choti
Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_৩০ - bangla choti 


পরদিন সকাল আটটা থেকে আনিতার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাই ওকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু আনিতা কিছুতেই সারা দিচ্ছে না। সাড়ে আটটা নাগাদ আনিতা একবার দরজা না খুলেই বলেছে ওকে যাতে কেউ ডাকাডাকি না করে। ঘুমোবে ও। আনিতার আম্মু পা ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার কথা বললে জানায় ও নাকি ব্যান্ডেজ করে নিবে।


সাড়ে দশটা নাগাদ আনিতা দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়। ফাইয়াজ আনিতাকে দেখেই চমকে উঠে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে চোখমুখের কি হাল করেছে মেয়েটা। আনিতার তন্ময়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। আনিতা এলোমেলো পায়ে গিয়ে সোফায় বসে। কিছুক্ষণ বাদে আনিতার দাদু সোফায় এসে বসতেই আনিতা তার কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে। আনিতার দাদু আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য কপালে হাত রাখতেই তিনি চমকে উঠেন। জ্বরে মেয়েটার গাঁ পুড়ে যাচ্ছে। আনিতার দাদু জারাফের আম্মুকে ডেকে একটা বাটিতে করে পানি আর রুমাল আনতে বললেন। আনিতার আম্মু আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,


--"জ্বর এলো কিভাবে? বলেছিলাম কাল এত রাত করে গোসল করিস না। তবুও শুনলি না আমার কথা। ঠিকই গোসল করে জ্বর বাধিয়ে ফেললি। ইশ্ জ্বরে শরীর হাত পা একেবারে পুড়ে যাচ্ছে।"


--"আহ! আম্মু এত চিন্তা করছো কেন? ওই পায়ের ব্যাথা থেকেই ভোররাতে জ্বর এসেছে। একটু পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।"


--"চুপ আর একটাও কথা বলবি না।"


আনিতার আম্মু ফাস্ট এইড বক্স এনে ওর পায়ের ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আনিতার দাদু ওর মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছেন। এভাবে বেশ ক্ষানিকটা সময় পানি পট্টি দেওয়ার ফলে আনিতার শরীরের জ্বর কিছুটা হালকা হয়। এখন কিছুটা ভালো লাগায় আনিতা উঠে বসলো। আনিতার আম্মু কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে খাবার এনে আনিতার পাশে বসলো। আনিতা খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখে ধোঁয়া উঠা সাদা ভাত আর ঝাল ঝাল কষা গরুর মাংস। এটা আনিতার বেশ পছন্দের খাবার। আনিতার আম্মু ভাত লোকমা করে কয়েক বার খাইয়ে দেয় আনিতাকে। এরপর অনেক জোরাজোরি করলেও আনিতা খায়নি। তাই প্লেট হাতে কিচেনে চলে গেলেন উনি। আনিতার দাদুও ততক্ষণে চলে গিয়েছেন বিয়ে বাড়ি বলে কথা কাজ তো আর কম নয়। আনিতা সোফায় একা একাই বসে ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে ফাইয়াজ এসে আনিতার পাশে বসে বলে,


--"চল ডক্টর এর কাছে যাবি আমার সাথে।"


আনিতা একপলক ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে দিকে মুখ সরিয়ে নিলো। আনিতার কাজে ফাইয়াজের খারাপ লাগলো কিছুটা। ফাইয়াজ আবারো আনিতাকে ডক্টরের কাছে যাওয়ার কথা বললেই আনিতা বলে,


--"অনেক ভেবেছো আমায় নিয়ে। আর ভাবতে হবে না প্লিজ।"


--"এভাবে কথা বলছিস কেন আনি বুড়ি?"


--"ঠিক ভাবেই তো কথা বলছি।"


পরবর্তীতে ফাইয়াজ কিছু বলার আগেই আনিতা ওখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাইয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ক্ষানিকটা সময়। সেখানেই থম মেরে বসে থেকে তন্ময় আহিয়ান আনিতার বলা কথাগুলো নিয়ে বেশ ভাবলো ফাইয়াজ। কাল সবাই মিলে ওকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ও কিছুতেই শোনেনি কারো কথা। 


--"আচ্ছা আমি অন্যায় করছি না তো আহিয়ান আর আনিতার সাথে? ওরা দুজনেই আমার লাইফের একটা পার্ট। আমি চাই ওরা দুজন সারাজীবন ভালো থাকুক। কিন্তু আমিই কি ওদের ভালো থাকায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালাম? আহিয়ান আর আনিতা কি একসাথেই ভালো থাকবে? কিন্তু আহিয়ান যদি অন্য সব মেয়েদের মতো করে আনিতাকেও ছুঁড়ে ফেলে দেয় তখন? না না এ আমি কি ভাবছি? আহিয়ান আনিতার সাথে এমনটা করতে পারে না। ওকে খুব ভালো করে চিনি আমি। এই দেড় বছরে আমিও বেশ পরিবর্তন দেখেছি ওর মাঝে। আর আহিয়ানকেও দেখে মনে হচ্ছে ও আনিতাকে সত্যিই ভালোবাসে। তাহলে কেন আমি ওদের সম্পর্কটাকে মেনে নিতে পারছি না? কি কারনে আমি ওদের দুজনকে আলদা করে দিতে চাচ্ছি? আহিয়ান এখন না হয় পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ও যদি আবার আগের মতো হয়ে যায়? তখন? তখন কি হবে আনিতার? ও যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও তো ভালো নেই আনিতা। না আনিতা ভালো আছে আর না আহিয়ান। কেন করছি আমি ওদের সাথে এমনটা? কেন?"


নিজেকেই নিজে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ফাইয়াজ। কিন্তু সেসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না ও। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আনিতার রুমে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ফাইয়াজ। আনিতা একটা শার্ট বুকে জড়িয়ে কান্না করছে। ফাইয়াজের বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলো না ওটা আহিয়ানের শার্ট। নিঃশব্দে দরজার সামনে থেকে সরে গেলো ফাইয়াজ। তন্ময়ের সাথে দেখা হতেই তন্ময় ফাইয়াজকে দাঁড় করিয়ে ওর ফোন থেকে কিছু ছবি দেখালো ও। ফাইয়াজ তন্ময়ের ফোন হাতে নিয়ে একের পর এক ছবিগুলো দেখে গেলো। আহিয়ানের রুমে বেডের উপর দেয়ালে বেশ বড়সড় ভাবে আনিতার একটা ছবি ঝুলানো। আহিয়ানের ওয়ালপেপার এমনকি ওয়ালেটেও আনিতার ছবি। ফাইয়াজ ছবি গুলো দেখে ফোনটা তন্ময়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো। তন্ময় নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,


--"আহিয়ান যে সত্যিই আনিতাকে ভালোবাসে এই কথাটা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোর? ওয়েট আরো একটা জিনিস দেখাচ্ছি তোকে।"


এই বলে তন্ময় ওর বা হাতে রাখা ডাইরিটা ফাইয়জের হাতে দিলো। ফাইয়াজ দেখলো ওটা আহিয়ানের ডাইরি। অনেক আগে থেকেই আহিয়ানের ডাইরি লিখার অভ্যেস। প্রতিদিনের স্পেশাল স্পেশাল মূহুর্তগুলো আহিয়ান ডাইরিতে লিখে রাখে। কখনো খুব বেশি কষ্ট পেলে বা কখনো খুব বেশি খুশি হলে প্রত্যেকটা মোমেন্ট ও ডাইরিতে লিখে রাখবে। ফাইয়াজ ডাইরিটা খুলে সবগুলো পাতা পড়ে দেখলো। সেখানে আনিতার সাথে পরিচয় হওয়া থেকে শুরু করে পরশু অব্দি সকল স্পেশাল মোমেন্টগুলোর কথা আহিয়ান ডাইরি তে লিখে রেখেছে। ডাইরির শুরুতে আহিয়ানের বাবাকে নিয়ে কিছু পেজ লিখা ছিলো মাঝে কয়েকটা কথা মিলিকে নিয়েও লিখা হয়েছে। কিন্তু তারপর পুরো পেজ জুড়ে আনিতার কথাই লিখা আছে। আনিতার সাথে কাটানো ওর স্পেশাল মোমেন্ট গুলো লিখে রেখেছে ও। একটা মানুষ তার কাছের মানুষগুলোকে নিয়েই ডাইরি লিখে। আহিয়ানও তাই করেছে। ফাইয়াজের আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না। ডাইরিটা তন্ময়ের হাতে দিয়ে দিলো। তন্ময়েরও আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না ফাইয়াজের ফেস এক্সপ্রেশন দেখে। তন্ময় মৃদু হেসে বলে,


--"এখন বিশ্বাস হলো তো? নাকি আরো কিছু বলতে বা করতে হবে?"


--"আহিয়ান কোথায়?"


--"ঘন্টা খানেক আগে একবার দেখেছিলাম। এরপর আর দেখিনি। কোথায় আছে সেটাও জানিনা।"


--"আমিই খুঁজে নিচ্ছি।"


কথাটা বলেই ফাইয়াজ চলে এলো ওখান থেকে। ফাইয়াজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তন্ময় মুচকি হাসলো। ফাইয়াজ এদিক ওদিক তাকিয়ে আহিয়ানকে খুঁজে চলছে। অনেকটা সময় যাবত আহিয়ানের দেখা পাচ্ছে না ও। তাই আহিয়ানকে খুঁজতে খুঁজতে ওদের বাসা থেকে মিনিট পাঁচেক দূরত্বে বড় সেই পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ালো ফাইয়াজ। সিড়ি বাধাই করা বড় পুকুর। পানি থেকে উপরের তিন নাম্বার সিড়িতে বসে আছে আহিয়ান। ফাইয়াজ গিয়ে নিঃশব্দে আহিয়ানের পাশে দাঁড়ালো। আহিয়ান খেয়াল করেনি যে ওর পাশে কেউ আছে। ফাইয়াজ দেখে আহিয়ান ফোনের স্ক্রিনে আনিতার আর ওর দুজনেরই হাসিমাখা একটা কাপল পিক দেখছে। কালকে হলুদের পিক এটা। নিশ্চয়ই তন্ময় তুলে দিয়েছে। কেননা ও অনেক ভালো ছবি তুলতে পারে। হঠাৎই ফোনের স্ক্রিনে কয়েক ফোঁটা পানি পড়লো। আহিয়ান কাঁদছে। বুকে চাপা কষ্ট অনুভব করলো ফাইয়াজ। ওর জন্য ওরই কাছের দুটো মানুষ এভাবে কষ্ট পাচ্ছে। ভাবতেই নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে ফাইয়াজের। ফাইয়াজ আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই আহিয়ান চোখের পানি মুছে পাশে ফিরে তাকায়। ফাইয়াজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহিয়ানও উঠে দাঁড়ায়। ফাইয়াজ আহিয়ানের দু কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"আ'ম সরি ভাই। আমার জন্য আজ তোদের এতটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমি সত্যি বুঝে উঠতে পারিনি তোরা দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসিস। যদি আগেই বুঝতাম তাহলে আমার দ্বারা এই ভুলটা হতো না। তোর আনিতা তোরই থাকবে। ফ্যামিলির কেউ যদি তোদের সম্পর্কে রাজি না থাকে আমি রাজি করাবো। যেভাবেই হোক তোদের দুজনকে আমি এক করবো।"


--"ফাইয়াজ কি বলছিস?"


--"একদম ঠিক বলছি আমি। কাল থেকে এই অব্দি অনেক ভুল করেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোদের দুজনকে। কিন্তু আর না। আনিতা বা তুই তোরা কেউ-ই আলাদা হয়ে গেলে ভালো থাকবি না। তা আমি এই কয়েক ঘন্টায় বেশ বুঝতে পেরেছি। ওদিকে আনিতা তোকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ডুকরে কাঁদছে আর এদিকে তুই এখানে একা বসে বসে আনিতার ছবি দেখছিস আর কাঁদছিস। আম আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছিলাম তোদের আলাদা করে দিয়ে। কিন্তু আর না। প্লিজ মাফ করে দে আমায়।"


এইগুলো বলেই ফাইয়াজ আহিয়ানের সামনে হাতজোড় করে দাঁড়ায়। আহিয়ান দুহাতে আহিয়ানের হাতজোরা নিজের মুঠোয় নিয়ে তাতে কপাল ঠেকায়। ফাইয়াজ খুব শক্তপোক্ত ভাবে আহিয়ানকে জাপটে ধরে। আহিয়ানও ফাইয়াজকে জড়িয়ে নেয় দুই হাতে। এতক্ষণ একে অপরের প্রতি যে রাগ অভিমান ভুল বুঝাবুঝি ছিলো সব এই মূহুর্তে নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। তন্ময় এগিয়ে এসে বলে,


--"বাহ আমে দুধে মিলেমিশে একাকার আর এইদিকে আমি আঠি হয়ে বাইরে গড়াগড়ি খাচ্ছি।"


তন্ময়ের কথায় ওরা দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে তিনজনেই ফিক করে হেসে দিলো। অতঃপর তিনজনে মিলে একটা গ্রুপ হাগ করে। ফাইয়াজ ওদের ছেড়ে দিয়ে আহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,


--"চল।"


--"কোথায়?"


--"আনিতার কাছে। আনি বুড়ির রাগটাও তো ভাঙাতে হবে নাকি?"


--"এখন আমি কিছু বলতে গেলে তোর বোন আমাকে লবন মশলা ছাড়াই কাঁচা চিবিয়ে খাবে। মেয়ে তো নয় পুরাই ধানী লঙ্কা।"


--"ওয়েট আমি কিউটিপাইকে গিয়ে বলছি তুই ওরে আবার ধানী লঙ্কা বলছিস।"


তন্ময়ের কথায় আহিয়ান চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকায়। আহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই ফাইয়াজ বলে,


--"তোরা দুজনে পরে ঝগড়া মারামারি যা ইচ্ছে করিস। আপাতত আমার সাথে চল।"


ওরা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাসায় দিকে রওয়ানা দিলো। বিয়ে বাড়ি প্রচুর হই হুল্লোড়। তার উপর ফুল ভলিউমে সাউন্ড বক্স তো সাথে আছেই। বাসায় পৌছাঁতেই দেখলো বিয়ের গাড়ি ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করে এখানে আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো আনিতার আম্মু কাকিরা মিলে ওর ছোট চাচ্চুকে গোসল করাচ্ছে৷ ওরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা আনিতার রুমে চলে গেলো। সেখানে রোদেলা আরোহী তাসকিয়া জেরিন শুভ আরহান রাতুল সকলেই আছে। আনিতা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ওরা সকলেই আনিতাকে বলছে উঠে রেডি হয়ে নিতে বরযাত্রীর সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আনিতা উঠছে না। ফাইয়াজ গিয়ে আনিতার মাথার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,


--"আনি বুড়ি কথা বলবি না আমার সাথে?"


আনিতা কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলো। ফাইয়াজ আরো কয়েকবার ডাকলো আনিতাকে। কিন্তু আনিতা সারা দিলো না। ফাইয়াজ আহিয়ানকে ইশারা করে উঠে গেলো ওখান থেকে। আহিয়ান গিয়ে আনিতার মাথার কাছে বসে পড়লো। রোদেলা ওরা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে তাকালো ফাইয়াজ আর আহিয়ানের দিকে। ওদের এভাবে অবাক চোখে একবার আহিয়ান তো একবার ফাইয়াজের দিকে তাকাতে দেখে তন্ময় ওদের কাছে গিয়ে বলে,


--"ফাইয়াজ বুঝতে পেরেছে ও ভুল করেছিলো। আনিতা আহিয়ান আলাদা হয়ে ভালো থাকতে পারবে না এটা বুঝতে পেরেই ও সবটা ঠিক করে নিয়েছে। এবং এও বলেছে যে ফ্যামিলির কেউ যদি ওদের সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করে তবে ও তাকে রাজি করাবে।"


তন্ময়ের কথায় সবাই খুব খুশি হয়ে গেলো। রোদেলা খুশিতে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠতে গেলেই তন্ময় ওর মুখ চেপে ধরে। ইশারায় চিৎকার করতে বারন করে। রোদেলাও ইশারায় হ্যাঁ বলে। তাসকিয়া গিয়ে ফাইয়াজের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতেই ফাইয়াজ বলে,


--"কি ম্যাডাম এবার হ্যাপি তো?"


--"খুউউব।"


--"আপনার বেস্টুর রিলেশনশিপ মেনে নেইনি বলে তো আপনি আমার সাথে কথা বলাই অফ করে দিয়েছিলেন।"


--"যতদিন না মেনে নিতে কথা বলা অফই রাখতাম। তবে এখন যেহেতু মেনে নিয়েছো তাহলে আবার আমরাও চুটিয়ে প্রেম করবো কেমন?"


বিনিময়ে ফাইয়াজ কিছু না বলে মুচকি হেসে তাসকিয়াকে এক হাতে জড়িয়ে নিলো। আহিয়ান আনিতার পাশে বসে আছে বেশ কিছুটা সময়। কিন্তু কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারছে না। ফাইয়াজ ওকে ইশারা করছে আনিতাকে ডাকার জন্য। কিন্তু ও বসেই আছে। আহিয়ান মনে মনে ভাবছে, সবার সামনে যদি দু/একটা ঝাড়ি মেরে বসে তাহলে তো প্রেস্টিজের আর কিছু থাকবে না। আর ওর যে বন্ধুরা লেগপুল করতে একচুলও ছাড় দিবে না। ফাইয়াজের দিকে তাকালো আহিয়ান। ফাইয়াজ চোখ গরম করে তাকাতেই আহিয়ান চোখ সরিয়ে নিলো। আহিয়ান আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে,


--"ভালোবাসি পিচ্চি-পাখি।"


কথাটা বলে আহিয়ান ঠিক হয়ে বসলো। আর অন্যদিকে কথাটা শোনার সাথে সাথেই আনিতার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আহিয়ান যখন এখানে এসে বসেছিলো আনিতা তখনই বুঝতে পেরেছে যে ও আহিয়ান। খুউব অভিমান জমা হয়ে আছে ওর উপর। বন্ধুর কথা রাখার জন্য ওকে ছেড়ে দিয়েছিলো কিনা তাই। সেজন্য আনিতা ভাবলো একটুও কথা বলবে না আর আহিয়ানের সাথে। তাই চুপ করে ছিলো। কিন্তু আহিয়ানের ফিসফিস করে বলা, "ভালোবাসি পিচ্চি-পাখি" কথাটাই যথেষ্ট ছিলো আনিতার রাগ অভিমান সবকিছু ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য। কথাটা শুনতেই আনিতার সারা শরীরের শিহরণ বয়ে গেলো। মনের ভিতর প্রশান্তিতে ভরে গেলো। বসন্তের মতো নতুন গাছ ফুল পাখির মতো আনন্দে নেচে উঠে আনিতার মন। নতুন উদ্যমে নতুন ভাবে নিজেকে সাজাতে ইচ্ছে করছে আহিয়ানের ভালোবাসার রঙে।

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.