Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২০ | bangla choti golpo

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_২০

Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২০ | bangla choti golpo
Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২০ | bangla choti golpo 


সিটের উপর দু পা তুলে গুটিশুটি মেরে আহিয়ানের হাটুর উপর মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আনিতা। আহিয়ান বসে বসে আনিতার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি যেতেই আয়াহিয়ান আনিতাকে ডেকে তুলে। আনিতা আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। প্রায় সারাটা রাস্তা এভাবে আহিয়ানের পায়ের উপর শুয়ে ছিলো ভাবতেই আনিতার মুখটা ছোট হয়ে গেলো। আহিয়ানের দিকে অসহায় ফেস করে তাকিয়ে বলে,


--"আমি কি সারাটা সময় এভাবেই শুয়ে ছিলাম?"


--"কেন বলতো?"


--"আপনার পা খুব ব্যাথা করছে না? অনেকটা সময় যাবত একই ভাবে বসে ছিলেন পা তো মনে হয় প্রচুর ব্যাথা করছে।"


--"তা তো একটু আধটু ব্যাথা করছেই বাট ব্যাপার না।"


--"আমাকে ডাকলেই তো পারতেন।"


--"তোমার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করেনি।"


পরবর্তীতে আনিতা আর কিছু বলল না। গাড়ি থেকে নেমে সবাই প্রথম গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বেশ ক্ষানিকটা সময় পর ফাইয়াজের ফোন বেজে উঠলো। ফোনে কথা বলা শেষ করে ফাইয়াজ বলে,


--"দ্বিতীয় গেট দিয়ে বের হবে ওদিকটা যেতে হবে।"


সবাই দ্বিতীয় গেটের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। ফাইয়াজ আর তন্ময় আগে হাঁটছে। ওদের থেকে একটু পিছেই আনিতা। আহিয়ান আনিতার পিছনে হাঁটছে আর মানুষের ভীর দেখলেই আনিতার দু-পাশে হাত দিয়ে ওকে সামলাচ্ছে অন্যের সাথে যাতে টাচ না লাগে সেজন্য। আহিয়ানের কান্ডে আনিতা মুচকি হাসে। দ্বিতীয় গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মিনিট দুয়েক বাদেই আনিতার চাচ্চু ট্রলি টেনে সামনে এগিয়ে আসে। দীর্ঘ চার বছর পর ওর চাচ্চু দেশে ফিরলো। আনিতা গিয়ে ওর চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরতেই ওর চাচ্চুও ওকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,


--"কেমন আছো আম্মু?"


--"ভালো তুমি কেমন আছো?" 


--"আলহামদুলিল্লাহ। ফাইয়াজ কেমন আছিস? আর তোমরা কেমন আছো সবাই?"


শেষ কথাটা আনিতার চাচ্চু ফাইয়াজ আহিয়ান আর তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে। ওরা তিনজনেই সৌজন্যমূলক হেসে কথার জবাব দেয়। ফাইয়াজ ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি কিছুটা এগিয়ে আনতে বলে। ফাইয়াজ ওর মামার হাত থেকে ট্রলি নিজের হাতে নিয়ে এগোতে থাকে গাড়ির দিকে। সাথে বাকী সবাইও এগিয়ে যাচ্ছে। আনিতার চাচ্চু ড্রাইভারের পাশের সিটে গিয়ে বসে। ফাইয়াজ তন্ময় গিয়ে গাড়ির ডিকি খুলে তাতে প্রথমে লাগেজ তুলে নেয়। তারপর ট্রলি গাড়ি থেকে পরপর দুটো কার্টন নামিয়ে ডিকিতে রেখে ডিকি আটকে সামনে গিয়ে দেখে মাঝের সিটে আনিতা বসেছে জানালার পাশে তারপর আহিয়ান বসা। ফাইয়াজ তন্ময়কে একদম শেষের সিটে গিয়ে বসতে বললেই তন্ময় বলে,


--"তুই যা আমি সামনে বসে আসছি সামনে বসেই যাবো।"


--"তুই সবসময় এত ত্যাড়ামি করস কেন?"


ফাইয়াজ কথাটা বলে তন্ময়ের উত্তরের অপেক্ষা না করেই মাঝের সিট নামিয়ে পিছনের সিটে গিয়ে বসে। তন্ময়ও বাঁকা হেসে সিট আবার উঠিয়ে সেখানে বসে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেয়। গাড়ি চলতে শুরু করে তার আপন গতিতে।


রাত তিনটা সাড়ে-তিনটার দিকে আনিতাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামে। গাড়ির শব্দে আনিতার মেজো চাচ্চু দাদু ফুপ্পি সকলেই বেরিয়ে আসে। আনিতার ছোট চাচ্চু গাড়ি থেকে নেমে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে। দীর্ঘ চারটা বছর পর আদরের ছোট্ট ছেলেকে বুকে জড়িয়ে খুশির অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে আনিতার দাদু। সকলেই এখন আনিতার ছোট চাচ্চুকে নিয়ে ব্যস্ত। ফাইয়াজ আহিয়ান তন্ময় আনিতা ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ির ডিকি খুলে সেখান থেকে লাগেজ আর কার্টন দুটো তিনজনে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। আনিতা এলোমেলো পায়ে ভিতরে গিয়েই নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়। আহিয়ান ড্রয়িংরুমে লাগেজটা রেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে আনিতার রুমে ঢুকে দেখে এলোমেলো ভাবে আনিতা বিছানায় শুয়ে আছে। গলায় ঝুলানো স্কার্ফটা খুলে বিছানার একপাশে রেখেছে। আর পড়নে কূর্তিটা বেশ ক্ষানিকটা উপরে উঠে আছে। জিন্সটাও কিছুটা তুলে রেখেছে যার ফলে পায়ের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। আনিতাকে এভাবে দেখে আহিয়ান প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সাথে সাথেই উলটো ঘুরে আনিতাকে ডাকে। আনিতা আহিয়ানের গলার স্বর পেয়েই তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। পাশ থেকে স্কার্ফটা নিয়ে গলা ঝুলিয়ে নিজের জামা-কাপড় ঠিক করে নেয়। 


--"ঘু___ঘুরতে পারেন এবার এ___এদিকে।"


আনিতার কাঁপা-কাঁপা কন্ঠস্বর শুনে আহিয়ান আনিতার দিকে ঘুরে তাকায়। আনিতা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান বিষয়টি বুঝে সে প্রসঙ্গে আর কথা বাড়ালো না। কথা ঘুরানোর জন্য বলে,


--"দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে খুব। ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।"


আনিতা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই আহিয়ান মৃদু হেসে উলটো ঘুরে। দরজার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আনিতা বলে,


--"কেন এসেছিলেন সেটা না বলেই চলে যাচ্ছেন যে?"


আনিতার কথায় থেমে যায় আহিয়ান। গুটি গুটি পায়ে আনিতার দিকে এগিয়ে আসে। আনিতার দু-গাল ধরে বলে,


--"বলতে এসেছিলাম কাল আমার সারাটা দিন আপনার জন্য বরাদ্দ। কাল সারাদিন একসাথে থাকবো ওকে? আপনার সাথে কলেজ যাবো ঘুরবো আপনার যা যা ইচ্ছে করবো হ্যাপি?"


--"সত্যি বলছেন?"


--"হ্যাঁ, কিছুদিন আগে আপনি খুব মন খারাপ করেছিলেন অনেকদিন যাবত আমার সাথে সময় কাটাতে না পেরে। আপনার খুব ইচ্ছে না সম্পূর্ণ একটা দিন আমার সাথে কাটাবেন? আপনার ইচ্ছে কাল পূর্ন হচ্ছে। রেডি থাকবেন ম্যাডাম ওকে?"


--"আচ্ছা। কিন্তু কলেজ টাইমে যদি ঘুম না ভাঙে তাহলে কি হবে?"


--"ব্যাপার না ঠিক টাইমে আমি তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিবো।"


--"আচ্ছা।"


--"হুম এখন তাহলে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ওকে?"


এই বলে আহিয়ান আনিতার কপালে আলতো ভাবে চুমু দিয়ে বলে,


--"আসছি। আর হ্যাঁ ওভাবে এলোমেলো ভাবে কিন্তু আর শুবে না।"


আহিয়ানের কথায় আনিতা মাথা নিচু করে নিলো। আহিয়ান মুচকি হেসে নিঃশব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। আনিতাও দরজা চাপিয়ে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা লং টি-শার্ট আর প্লাজো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল চেয়ারের হাতলে রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।


সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ ফোনের রিংটোনে আনিতার ঘুম ভাঙে। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ফোন হাতে নিতে নিতেই কল কেটে গেলো। আনিতা ফোনটা রেখে আবারো ঘুমের প্রস্তুতি নিবে এমন সময় আবারো নতুন উদ্যমে ফোন মহাশয় বেজে উঠলো। আনিতা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে আহিয়ান বলে,


--"ঘুম কি ভাঙেনি এখনো?"


--"হুম ভেঙেছে তো। সেই কোন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি আমি।"


--"হুম তা তো ম্যাডামের ঘুম ঘুম কন্ঠ শুনেই স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে আপনি অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন।"


আহিয়ানের কথায় আনিতা দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলো। আর ওদিকে আহিয়ান মৃদু শব্দ করে হাসলো। আহিয়ানের হাসির শব্দে আনিতা বলে,


--"ফোন রাখুন। লেট হচ্ছে আমার আপনার জন্য।"


এইটুকু বলেই আনিতা ফোন কেটে দিলো। গায়ে থেকে পাতলা কাঁথাটা সরিয়ে উঠে বসলো। মিনিট দুয়েক বসে থেকে বিছানা ঠিক করে ব্রাশ নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে ওর দুই চাচ্চু দাদু সোফায় বসে গল্প করছে। আনিতা সবার সাথে টুকিটাকি কথা বলে কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে রুটি তরকারি নিয়ে এসে টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো। দেড়টা রুটি খেয়ে প্লেট টেবিলে রেখেই উঠে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে আবার রুমে চলে এলো রেডি হতে। 


চুল উচু করে খোপা করে তাতে কাটা লাগিয়ে নিয়ে বোরখা পড়ে নিলো আনিতা। ঠোঁটে হালকা করে ইট কালার লিপস্টিক লাগিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে মাথায় হিজাব বাধার টুপি পড়ে স্কার্ফ বেধে রেডি হয়ে নিলো। বেরোনের আগে আহিয়ানের নাম্বারে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলো। তারপর বা হাতে আহিয়ানের দেয়া ব্রেসলেট পড়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আনিতা কিচেনে গিয়ে ওর আম্মুর কাছে টাকা চাইতেই ওর আম্মু বলল আলমারি থেকে নিয়ে যেতে। আনিতা কিচেন থেকে বের হতেই ওর ছোট চাচ্চু ওকে ডাকে। আনিতা ওর চাচ্চুর দিকে এগিয়ে গেলেই ওর চাচ্চু ওয়ালেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। আনিতা নিতে না চাইলেও একপ্রকার জোর করেই হাতে গুজে দেয়। আনিতার চাচ্চু টাকা দিয়েছে বলে আনিতা আর ওর আম্মুর থেকে টাকা নিলো না। সবাইকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসতে নিলেই ওর ছোট চাচ্চু বলে,


--"আমি নামিয়ে দিয়ে আসবো কলেজে?"


--"নাহ চাচ্চু আমি একাই যেতে পারবো। আর আমার ফ্রেন্ডরা সামনের মোড়ে ওয়েট করবে আমার জন্য।"


--"আচ্ছা তাহলে সাবধানে যেও।"


--"হুম। আর আমি না আসা অব্দি কিন্তু তুমি কার্টন খুলতে পারবে না।"


--"আচ্ছা ঠিকাছে।"


আনিতা আবার ওর আম্মুকে ডেকে কিছুটা চিৎকার করে বলে,


--"মা আজ আমার আসতে বিকেল হতে পারে। ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরবো। লেট হলে চিন্তা করো না। ফাইয়াজ ভাইয়াও থাকতে পারে সমস্যা হবে না।"


আনিতার আম্মু কিছু বলার আগেই আনিতা বের হয়ে যায় বাসা থেকে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে দশটা বেজে চৌদ্দ মিনিট। প্রথম ক্লাস অলরেডি মিস হয়ে গিয়েছে। আর বাকী ক্লাসও যে করা হবে না সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছে ও। আনিতা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। যে মোড়ে থেকে রোদেলারা রোজ আনিতাকে তুলে নেয় সেখানে যেতেই দেখে আহিয়ান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে দাঁড়িয়ে থাকলেও পড়ে আহিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে ওর বাইকের পিছনে উঠে বসে। আহিয়ান বাইক চালাতে শুরু করে। আনিতা মাঝে কিছুটা দূরত্ব রেখেই আহিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বসে আছে। আহিয়ান লুকিং গ্লাসে একবার আনিতাকে দেখে নিয়ে বলে,


--"অস্বস্তি হচ্ছে খুব?"


--"কি__কিছুটা।"


--"একটু সময় দাও কেটে যাবে।"


--"আপনি এখানে একা? ফাইয়াজ আর তন্ময় ভাইয়া কোথায়?"


--"ওরা দুজন আগেই তোমার ফ্রেন্ড দের সাথে চলে গিয়েছে। আমাকে যদিওবা সাথে যেতে বলেছিলো তন্ময় কিছু একটা বলে ফাইয়াজকে নিয়ে চলে যায়।"


--"ফাইয়াজ ভাইয়া যদি কোনোদিন জানতে পারে এসব ভাবতে পারছেন কি হবে?"


--"প্রথমে কিছুটা রাগ দেখালেও পরে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিবো। ফাইয়াজ রাগ করে থাকতেই পারবে না।"


--"কেন?"


--"অনেকগুলো বছর ফাইয়াজ আমাকে চিনে। আমার ব্যাপারে সবই জানে ও। আর ওর কথামতে, আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। সো রাগ করে থাকার প্রশ্নই আসে না। আর আমি ছেলে হিসেবে অতটাও খারাপ না। কিছুটা তো ভালো আছি।"


আহিয়ানের কথার পিঠে আনিতা আর কিছু বলল না। আনিতার ফোন বেজে উঠতেই আনিতা আহিয়ানের কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে রোদেলার ফোন। আনিতা ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ করে দিলো যে,


--"আসছি আমি কলেজের কাছাকাছিই আছি বেশি একটা সময় লাগবে না।" 


ম্যাসেজ সেন্ড করে আনিতা আবার ফোন ব্যাগে রেখে আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখলো। কিছুক্ষণ বাদেই কলেজের সামনে পৌঁছে গেলো ওরা। আহিয়ান আনিতাকে নিয়েই কলেজের পার্কিং সাইডে গিয়ে বাইক থামালো। আনিতা বাইক থেকে নেমে গেলেই আহিয়ানও নেমে বাইক লক করে দুজনে একসাথেই কলেজের ভিতর ঢুকলো। কেউ কেউ বেশ কৌতূহল চোখেই তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। কেননা আহিয়ান এই কলেজ/ভার্সিটির স্টুডেন্ট না। ফাইয়াজের বন্ধু কিন্তু প্রায় সময়ই আনিতা আর আহিয়ানকে একসাথে দেখা যায় কলেজে। আনিতারা ক্যাম্পাসে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরই জারা এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে। জারা একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আনিতাকে বলে,


--"কিছু কথা ছিলো তোর সাথে।"


জারার কথা শুনে আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"ফাইয়াজ ভাইয়ারা সিড়ির দিয়ে উঠলে সেকেন্ড ফ্লোরের বা দিকের রুমটাতে আছে। আপনি যান আমি আসছি।"


আহিয়ান চোখের ইশারায় হ্যাঁ বলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জারা বলে,


--"ভাইয়া থাকুক এখানে সমস্যা নেই।"


জারার কথায় আহিয়ান থেমে যায়। আনিতাও বেশ অবাক জারার মুখ থেকে আহিয়ানকে ভাইয়া বলতে শুনে। কেননা জারা কোনোকালেই আহিয়ানকে ভাইয়া বলতো না। বরাবরই নাম ধরে ডাকতো। আর দু'মাস আগে যখন জানতে পেরেছিলো আহিয়ান আর আনিতা দুজন দুজনকে ভালোবাসে তখন থেকেই আনিতার সাথে কথা বলা অফ করে দিয়েছিলো। একপ্রকার এড়িয়েই চলেছে এ'কদিন। আনিতাও জারার ব্যাপারে তেমন একটা মাথা ঘামায়নি। এতক্ষণ জারার মুখে বেশ সিরিয়াস সিরিয়াস ভাব থাকলেও এখন হাসি হাসি মুখে বলে,


--"আমার ক্রাশটাকে এভাবে নিয়ে নিলি তুই? দিস ইজ নট ফেয়ার আনিতা। একটু ভাগ তো আমাদেরও বসাতে দিতে পারতি তাই না? জানিস আমাদের কলেজের আরো কিছু সিনিয়ার জুনিয়র মেয়েরা আহিয়ান ভাইয়ার উপর ক্রাশ। যখন জানতে পেরেছে তার গার্লফ্রেন্ড আছে তখন থেকেই সবগুলোর মুখ একদম ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গিয়েছে।"


--"জানলো কিভাবে? আহিয়ানের গার্লফ্রেন্ড আছে?"


--"যারা যারা আহিয়ান ভাইয়ার উপর ক্রাশড ছিলো তাদের আমি পার্সোনালি নিজ দায়িত্বে আহিয়ান ভাইয়ার মিঙ্গেল হওয়ার খবরটা জানিয়েছি। তোর অনেক হেল্প করে দিয়েছি আপাতত আর কেউ ভাইয়ার উপর নজর দিবে না। সো এখন এই খুশিতে ট্রিট দিবি আমাকে চল।"


আনিতা কিছু বলবে তার আগেই আহিয়ান জারাকে বলে,


--"খুউব ভালো কাজ করেছো শালীকা। উমমম চলো আজ আমি তোমাদের ট্রিট দিবো।"


--"সত্যি বলছেন ভাইয়া?"


--"একদম। কি খাবে বলো?"


--"ফুচকা হলেই হবে আর কিচ্ছু লাগবে না।"


--"ওকে ডান। চলো তাহলে?"


শেষ কথাটা আহিয়ান আনিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে। আনিতাও মৃদু হেসে জারাকে নিয়ে এগিয়ে চলে ফুচকার দোকানের সামনে। আনিতা তো একপ্রকার ভয় পেয়ে গিয়েছিলো জারা কি না কি বলবে সেই ভেবে। কিন্তু জারার কথা শুনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আনিতা ভেবেছিলো জারা আপসেট থাকবে ওর সাথে কথা বলবে না। কিন্তু এখন দেখলো সম্পূর্ণ উলটো। আনিতা ফোন বের করে রোদেলাকে ফোন করে বলল সবাইকে নিয়ে ফুচকার দোকানে আসতে। আহিয়ান সবার জন্য ফুচকা অর্ডার দিয়ে আনিতার পাশে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের মাঝে রোদেলা তাসকিয়া জেরিন ফাইয়াজ তন্ময় শুভ ছয়জনে এসে বসে ওদের পাশে।


ফুচকা খাওয়া শেষে সবাই মাঠের এক কোনে গিয়ে বসে। ফাইয়াজ আর তাসকিয়া ফুচকা খেয়েই বাইক নিয়ে ঘুরতে চলে গিয়েছে। ওরা মাঠে এসে বসার কিছুক্ষণ বাদে তন্ময় বলে,


--"এখন আর তোরা বসে আছিস কেন? ফাইয়াজ তো নেই। তোরাও চলে যা ঘুরতে। তবে হ্যাঁ ফাইয়াজ আসার আগে আসতে হবে তোদের।"


তন্ময়ের কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করে। কিন্তু আনিতার এখন যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। যদি ফাইয়াজ আগেই চলে আসে তাহলে কি হবে? সবটা তো ফাইয়াজ জেনে যাবে তখন? এসব ভেবেই আনিতা বলে,


--"যাবো না আমি। বাই এনি চান্স যদি ফাইয়াজ ভাইয়া আগে চলে আসে তাহলে কি হবে?"


--"ভয় পাচ্ছিস কেন? তাসকিয়াকে আমি বলে দিয়েছি ওরা আসার আগে যেন তোকে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেয়।"


রোদেলার কথায় আনিতা মনে কিছুটা সাহস আনলেও আবার ভয়ে কুঁকড়ে উঠে। ওর ছোট চাচ্চু এখন বাসায়। আশে-পাশে তার অনেক পরিচিত ফ্রেন্ড আছে যারা সকলেই আনিতাকে চিনে। যদি কারো চোখে পড়ে যায় একবার তখন? এই ভেবে আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকায় একবার। আহিয়ান উত্তরের আশায় ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আহিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলো না আনিতা। রাজি হয়ে গেলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে আনিতা আর আহিয়ানও পার্কিং এড়িয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। এবার ঢাকা থেকে আসার সময় আহিয়ান আর তন্ময় দুজনেই বাইক নিয়ে এসেছিলো। ফাইয়াজের বাইক বাসায় থাকায় ও তন্ময়ের সাথে করে এসেছে। ফাইয়াজ নিজের বাইকে করেই ঘুরতে বের হয়েছে। আহিয়ান গিয়ে তন্ময়ের বাইকের পাশে থেকে নিজের বাইক বের করে নিলো।


আহিয়ান বাইক বের করে আনিতার সামনে এসে দাঁড়াতেই আনিতা পিছনে উঠে বসে। আহিয়ানের কাঁধে আনিতা হাত রাখতেই আহিয়ান বাইক চালাতে শুরু করে।

Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.