Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২১ | bangla love story pdf

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_২১

Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২১ | bangla love story pdf
Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২১ | bangla love story pdf 



--"কোথায় যাবে বলো?"


--"আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।"


--"ফাইয়াজ ওরা কোনদিকে গিয়েছে জানো?"


--"রোদেলা তো বলেছে ওরা নবাবগঞ্জ বেড়িবাধের ওদিকে যাবে।"


--"তাহলে তো এদিকে যাওয়া যাবে না। আগে বলবে তো।"


এই বলেই আহিয়ান বাইক ঘুরালো। আবার কলেজের দিকেই বাইক এগিয়ে চলছে। কিছুটা স্পিডেই বাইক চালাচ্ছে আহিয়ান। আনিতা শক্ত করে আহিয়ানের কাঁধ চেপে ধরে বসে আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা কলেজ পেড়িয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো। আহিয়ান বলে,


--"শ্রীনগড় বাইপাস দিয়ে হাইওয়ে ধরে মাওয়া পদ্মা রিসোর্টে যাবে?"


--"আপনার ইচ্ছে।"


--"আপাতত কাছে এই জায়গাটাই আছে মোটামুটি সুন্দর। কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ। তোমায় নিয়ে তো আবার দূরে কোথাও যাওয়া যাবে না। রিস্ক হয়ে যেতে পারে। নয়তো অন্য কোথাও নিয়ে যেতাম।"


--"ওখানেই চলুন সমস্যা নেই।"


--"আচ্ছা।"


বলেই আহিয়ান বাইকের স্পিড আগের থেকে আরো বাড়িয়ে দিলো। এতক্ষণ দুজনের মাঝেই যতটুকু দূরত্ব ছিলো এখন সেটাও ঘুচে গেলো। আনিতা শক্ত করে আহিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বসে আছে। লুকিং গ্লাসে আনিতার এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে আহিয়ান বেশ এঞ্জয় করে। দুই ঠোঁট চেপে ধরে আহিয়ান হাসি থামিয়ে বলে,


--"ভয় লাগছে?"


--"কিছুটা। আস্তে চালান বাইক।"


--"ওকে বাট হাইওয়ে-তে উঠে তো আরো স্পিডে বাইক চালাতে হবে। তখন কি করবে? হাইওয়ে-তে তো আর কম স্পিডে বাইক চালানো যাবে না।"


--"সেটা পরে দেখা যাবে। এখন আপনি বাইকের স্পিড কমান।"


আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা শব্দ করেই হেসে দিলো। ধীরে ধীরে বাইকের স্পিড মাঝারিতে নিয়ে আসলো। 


হাইওয়ে-তে উঠে আহিয়ান বাইকের স্পিড আবারো বাড়িয়ে দিলো। হাইওয়ের রাস্তার পাশে ছোট ছোট সাইনবোর্ডে লেখা গতিসীমা ৮০ কিন্তু আহিয়ান এর থেকেও বেশি স্পিডে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। পৌনে এক ঘন্টার মাঝেই আহিয়ান পদ্মা রিসোর্টের পার্কিং-এ এসে বাইক থামালো। আনিতা বাইক থেমে নেমে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আহিয়ান বাইক লক করে আনিতার কাঁধে হাত রাখতেই আনিতা বলে,


--"যাওয়ার সময় এত জোরে বাইক চালাবেন না আগেই বলে দিলাম।"


--"কিন্তু___"


--"হাইওয়ে ধরে যাবো না আমরা। ভিতরের রোড দিয়েই যাবো ওকে? তাহলে তো ধীরে চালাতে পারবেন।"


--"ওকে ম্যাডাম আপনি যা বলবেন তাই হবে।"


এই বলেই আনিতার হাত ধরেই রিসোর্টের টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দুটো টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে দুজনে।


পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখে দুজনে। তারপর রিসোর্টে প্রবেশ করার প্রথমেই যে বড় পুকুরটা ছিলো সেই পুকুরের একদম নিচের সিড়ির উপরের সিড়িতে গিয়ে বসে দুজনে। আহিয়ানের কাঁধে মাথা দিয়ে পুকুরের পানিতে পা ভিজিয়ে বসেছে আনিতা। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই বসে থেকে নানান ধরনের কথা বলল দুজনে। আহিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে একটা বেজে উনপঞ্চাশ মিনিট। আহিয়ান ফোন আবার পকেটে রেখে আনিতাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আনিতার হাত ধরে হেঁটেই রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে এলো দুজনে। আহিয়ান বাইকে উঠে বসতেই আনিতা উঠে বসলো পিছনে। আহিয়ান বাইক চালাতে শুরু করে। আনিতা বলে,


--"এটা তো বাসায় ফেরার রাস্তা না এদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছি আমরা?"


--"ঠান্ডা মাথায় কিডন্যাপ করেছি তোমায়। এখন মেরে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দিবো। তাই এদিক দিয়ে যাচ্ছি।"


--"ওহ আচ্ছা। বেশ তাহলে চলুন আমি রাজি।"


বলে আনিতা আহিয়ানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসলো। আনিতার এভাবে বসাতে আহিয়ান হুট করেই ব্রেক কষে। আহিয়ানের বুকের ভিতর কেমন যেন উথাল-পাতাল ঢেউ খেলা করছে। কখনো আনিতা নিজ থেকে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরেনি। আজ যে বাইকে করে এসেছে তারপরও এভাবে ধরে বসেনি। হুট করে এভাবে জড়িয়ে ধরে বসাতে আহিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বাইক থামিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে আনিতার দিকে তাকায় আহিয়ান। আহিয়ানকে হুট করে বাইক থামিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে আনিতার দিকে তাকাতে দেখে আনিতা জিজ্ঞেস করে,


--"কি হলো? বাইক থামালেন কেন?"


--"এই যে আমি বললাম তোমায় মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিবো। একটুও ভয় লাগছে না তোমার? তুমি ভয় না পেয়ে উলটো আমাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে বসলে যে?"


--"প্রথমত, একদমই ভয় লাগছে না আমার। আমি জানি আপনি এমন কিছুই করবেন না। করতে পারেন না। কারন আপনি আমাকে খুউব ভালোবাসেন সেটা আমি জানি। তাই আমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার যে কথাটা বললেন সেটা মজা করেই বলেছেন। সুতরাং ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর দ্বিতীয়ত, আমি তাকেই জড়িয়ে ধরেছি যাকে আমি ভালোবাসি যে আমাকে ভালোবাসে। ভালোবাসি আমি আপনাকে সারাজীবন আপনার সাথে কাটাতে চাই আমি। সুতরাং জড়িয়ে ধরতেই পারি।"


--"বুঝলাম।"


--"কি বুঝলেন?"


--"এই যে আমার পিচ্ছি-পাখিটা বেশ বড় হয়ে গিয়েছে।"


--"হুম এতদিনে বুঝলেন তাহলে আমি বড় হয়ে গিয়েছি? তাহলে এখন থেকে আমায় একদম পিচ্চি বলে ডাকবেন না।"


--"তা-তো হবে না। আমি এই নামেই ডাকবো।"


বলেই আহিয়ান সোজা হয়ে বসে আবারো বাইক চালাতে শুরু করে। আনিতা এবারে আর কিছু বলল না। আহিয়ানকে এবার হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বসলো আনিতা। কিছুটা সময় বাদেই আহিয়ান পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠা হোটেলগুলোর সামনে এসে বাইক থামালো। জায়গামতো বাইক রেখে আনিতার হাত ধরে আহিয়ানের পরিচিত একটা হোটেলে গিয়ে বসলো দুজনে। জানালার পাশের একটা টেবিলে মুখোমুখি বসেছে দুজন। জানালা দিয়ে নদীটা দেখা যাচ্ছে আর মাঝে মধ্যেই খোলা হাওয়া আসছে। আনিতাকে বসিয়ে রেখে দোকানীর ওখানে চলে গেলো। বড় একটা ইলিশ কিনে সেটা ভাজতে দিয়ে আবার আনিতার পাশে এসে বসলো। 


পনেরো থেকে বিশ মিনিটের মাঝেই একটা ছেলে এসে টেবিলে খাবার দিলো। ধোঁয়া উঠা গরম ভাত আর সাথে ইলিশ মাছ ভাজ আর বেগুন ভাজা। সাথে ইলিশের লেজ ভর্তা। ইলিশ মাছটাতে ডিম হয়েছে। সেটা আর আলাদা করে বের করা হয়নি। ডিমসহ মাছটা কেটে ভেজেছে। খাবার দিয়ে ছেলেটা চলে যাওয়ার সময় আহিয়ান বলে,


--"ইলিশের আস্ত ডিম ভুনা পাওয়া যাবে?"


--"হ্যাঁ হবে।"


--"আচ্ছা তাহলে বড় দুটো ডিম ভুনা দিয়ে যাও এখানে।"


--"আচ্ছা।"


বলেই ছেলেটা চলে গেলো। কিছুক্ষণের মাঝে আবার ইলিশের ডিম নিয়ে হাজির হলো ছেলেটা। টেবিলে ডিমের প্লেট রেখে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়। ছেলেটা যেতেই আনিতা বলে,


--"এখানে মাছের সাথে ডিম তো ছিলোই। তাহলে আবার আলাদা করে ডিম ভুনা আনালেন যে?"


--"তোমার যে ইলিশ মাছের ডিম খুব পছন্দের সেটা আমি জানি তাই আনালাম।"


--"কিভাবে জানলেন?"


--"লাস্ট টাইম যখন আমরা এখানে খেতে এসেছিলাম তখন ইলিশের ডিম খাওয়ার সময় ফাইয়াজ বলেছিলো। এখন এত কথা বলা অফ করে খাওয়া শুরু করো।"


আনিতা কিছু না বলে মুচকি হাসলো। দুজনেই খাওয়া শুরু করলো। আনিতা দু/তিন লোকমার মতো ভাত খেয়েছে বেগুন ভাজা আর ইলিশের লেজ ভর্তা দিয়ে। এখন বসে শুধু মাছ খাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আহিয়ান নিজের প্লেট থেকে মাছের কাটা বেছে আনিতাকে দিচ্ছে। আর মাছের পেট থেকে ডিম ছাড়িয়ে সেটাও আনিতার প্লেটে তুলে দিচ্ছে। শেষমেশ আনিতা রাগ করে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা বললে আহিয়ান বলে,


--"আচ্ছা রাগ করতে হবে না। আর দিচ্ছি না হ্যাপি তো? এবার নিজের খাবারটা শেষ করো।"


আনিতা এক পিস মাছ আর আহিয়ানের কাটা বেছে দেওয়া মাছ আর ডিমের টুকরোটা খায়। সাথে একটা ভুনা ডিম খায়। আরো খাওয়ার জন্য আহিয়ান বেশ জোর করে আনিতাকে। কিন্তু আর খায়নি ও। এতেই নাকি ওর পেট ভরে গিয়েছে। তাই আহিয়ানও আর জোর করে না। আহিয়ান নিজের খাওয়া শেষ করে। কয়েক পিস মাছ বেশি হয়েছে মাছগুলো আহিয়ান সেই ছেলেটাকে ডেকে দিয়ে দিলো। তারপর বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এলো হোটেল থেকে।


মাওয়া থেকে আসার সময় আহিয়ান রাড়িখালের কাছাকাছি এসে বলে,


--"স্যার জগদীশ চন্দ্রের বাসায় যাবে?"


--"এটাও চিনেন আপনি?"


--"তোমাদের এখানকার বলে যে আমি চিনবো না এমন তো না। একসময় অনেক নাম ছিলো এই জায়গার ফাইয়াজের সাথে এসেছিলাম তাই কিছুটা চিনি-জানি।"


কথাটা বলেই আহিয়ান রাড়িখাল বাজার ছাড়িয়ে একটু সামনে এগিয়েই স্যার জগদীশ চন্দ্রের পুরোনো সেই বাড়ির রাস্তায় ঢুকে পড়ে। বাড়িটার পাশেই রাড়িখাল স্কুল এন্ড কলেজ। আহিয়ান বাড়ির গেটের কাছেই বাইক থামিয়ে দুটো টিকিট কেটে নিয়ে ভিতরে ঢুকে।


পুরোটা জায়গা দুজনে ঘুরেফিরে একটা দোলনায় গিয়ে বসে। এখানে আনিতা এর আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে। রাড়িখাল বাজার থেকে কিছুটা ভিতরে গেলেই আনিতার বড় আন্টির বাসা। ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে এখানে এসেছিলো একবার আর তারপর ফ্রেন্ডরা মিলে এসেছিলো দু/তিনবার। আহিয়ানের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে আনিতা। আহিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তিনটা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট। সময় দেখে আহিয়ান ফোন পকেটে রাখতেই আনিতার ফোনে ম্যাসেজ আসলো। তাসকিয়ার ম্যাসেজ। আনিতা ম্যাসেজ ওপেন করে দেখে সেখানে লিখা,


--"কোথায় তোরা? আমি আর ফাইয়াজ কলেজে ফিরে আসছি আসতে ২০/২৫ মিনিট লাগতে পারে। এর আগে তোদের ফিরতে হবে কিন্তু।"


আহিয়ান আনিতার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো দোলনা থেকে। হাঁটা লাগালো দুজনে। যেখানে বাইক রাখা ছিলো সেখানে এসে আহিয়ান বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো। আনিতা গিয়ে বসতেই বাইক চালাতে শুরু করে। 


সতেরো মিনিটের মাথায় আহিয়ান কলেজের পার্কিং সাইডে এসে বাইক থামায়। আনিতা নেমে দাঁড়াতেই আহিয়ান নেমে বাইক লক করে তন্ময়কে ফোন লাগায়। তন্ময় ফোন রিসিভ করতেই আহিয়ান জিজ্ঞেস করে,


--"কোথায় আছিস তোরা?"


--"ভার্সিটির মাঠের বটগাছের নিচে আছি। এখানেই আয়।"


--"ওকে রাখছি।"


আহিয়ান ফোন কেটে পকেটে রেখে দেয়। আনিতাদের কলেজ আর ভার্সিটির মাঝ দিয়ে একটা মাঝারি আকারের রাস্তা গিয়েছে। তাই ভার্সিটি আর কলেজ দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। আনিতা কলেজের মাঠ দিয়েই সেকেন্ড গেইট দিয়ে বের হয়ে রাস্তা পাড় হয়ে ভার্সিটির মাঠে যায়। কলেজ চারিদিকে দেয়াল করা থাকলেও ভার্সিটির মাঠের দক্ষিণ আর পশ্চিম দিক ঘেঁষে ভার্সিটির দেয়াল। পূর্ব আর উত্তর দিকের জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে। দক্ষিণ দিকের দেয়ালের এপাশেই বড় বটগাছটা ঘিরে চারিদিকে গোল করে বসার মতো জায়গা বাঁধানো। সেখানেই তন্ময় শুভ রোদেলা জেরিন আর জারা বসে আছে। আনিতা আর আহিয়ান ওদের কাছে চলে গেলো। আনিতা গিয়ে রোদেলার পাশে বসে পড়লো আর আহিয়ান তন্ময়ের পাশে।


মিনিট ছয় পরেই ফাইয়াজ ওদের সামনে এসে বাইক থামালো। ওদের দুজনকে দেখে তন্ময় বলে,


--"এতক্ষণে আসার সময় হলো?"


--"খুব লেট হয়ে গেলো বুঝি?"


ফাইয়াজের কথায় আনিতা আর আহিয়ান বাদে সবাই একসাথে বলে,


--"একদমই না।"


--"তাহলে এখন বাসায় যাওয়া যাক?"


শুভর কথায় সবাই সম্মতি জানায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সকলেই। কলেজের পাশেই জারার বাসা তাই ও বিদায় নিয়ে চলে গেলো। জেরিন আর শুভর বাসা পাশাপাশি হওয়াতে জেরিন শুভর বাইকে করেই গেলো। তাসকিয়া ফাইয়াজের দিকে কিছুটা চেপে বসে রোদেলাকে বলল বসার জন্য। রোদেলা আর না দাঁড়িয়ে বাইকে উঠে বসলো। ফাইয়াজ আনিতাকে বলে,


--"তোরা থাক এখানে আমি ওদের দুজনকে নামিয়ে দিয়ে আসছি।"


--"নাহ ভাইয়া তুমি বরং বাসায় চলে যেও আমি এখান থেকে রিকশা নিয়েই যাচ্ছি।"


--"রিকশায় যেতে হবে না তাহলে তন্ময়দের সাথেই চলে যা।"


--"কিন্তু ভাইয়া___"


--"আরেহ আনিতা চলো তো। ভাই বলো তো আমাকে তাই না? তাহলে আমি থাকতে তুমি কেন রিকশায় করে যাবে?"


তন্ময়ের কথায় ফাইয়াজ সহমত প্রকাশ করে। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় তাসকিয়া আর রোদেলাকে পৌঁছে দিতে। ফাইয়াজ যেতেই তন্ময় বলে,


--"এত ভয় পাওয়ার কি আছে আনিতা? আহিয়ানের সাথে যাও তুমি আমিও তো সাথে আছি নাকি?"


আনিতা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানায়। তারপর তিনজনেই কলেজের পার্কিং সাইডে আসে। আহিয়ান আর তন্ময় বাইক বের করে। আহিয়ান আনিতার সামনে এসে দাঁড়াতেই আনিতা বাইকে উঠে বসে। তন্ময় আর আহিয়ান দুজনে একসাথেই বাইক স্টার্ট দেয়। সকালে আনিতা যেখান থেকে আহিয়ানের বাইকে উঠেছিলো সেখানে আসতেই আনিতা বলে,


--"এখানেই নামিয়ে দিন আমায়। আমি এখান থেকে একাই যাবো।"


আনিতার কথা শুনে আহিয়ান বাইক থামিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে আনিতার দিকে তাকায়। তন্ময়ও বাইক থামিয়েছে পাশেই। আহিয়ান বলে,


--"কিন্তু আনি___"


--"প্লিজ। ছোট চাচ্চু বাসায় এখন কিছু বুঝে ফেললে পরে সমস্যা হবে।"


--"কিছু হবে না আনিতা আর তোমার চাচ্চু তো আহিয়ানকে চিনে। জানে তো আমরা ফাইয়াজের বন্ধু। কাল তো গাড়িতে দুজনে একসাথে বসেই এসেছিলে কিছু বলেছিলো?"


তন্ময়ের কথায় আনিতা বলে,


--"কাল আর আজকের একসাথে যাওয়া-আসাটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। যদিওবা তোমাদের দুজনকে আমাদের বাসার সবাই খুব ভালো করেই চিনে তবুও আমি রিস্ক নিতে চাই না।"


এই বলে আনিতা বাইক থেকে নেমে গেলো। আনিতা তন্ময়কে ইশারা করতেই তন্ময় বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় বাসার দিকে। আনিতা আহিয়ানের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাত দুটো ধরে বলে,


--"আপনিও চলে যান। আমি এতটুকু রাস্তা একাই যেতে পারবো।"


--"তোমাকে একা রেখে___"


--"আমি প্রতিদিন এখান দিয়ে কলেজে যাওয়া-আসা করি। আর হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিটের রাস্তা তারপরই তো আমাদের বাসা। যেতে পারবো আমি। আপনি যান প্লিজ।"


আহিয়ান কিছু না বলেই চলে গেলো। আনিতা বেশ বুঝতে পারলো কিছুটা রাগ করেছে জনাব। কিন্তু কিছু করার নেই তো। কিছুটা সাবধানে তো চলতেই হবে। আনিতাও বাসার দিকে হাঁটা ধরলো। 


বাসায় ফিরে আনিতা আহিয়ানের নাম্বারে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেয় ও বাসায় পৌঁছেছে। বোরখা খুলে কিছুটা সময় ফ্যানের নিচে বসে থেকে কাবার্ড থেকে লং টি-শার্ট আর জিন্স নিয়ে টাওয়েল হাতে গোসল করতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আনিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ান কোনো রিপ্লাই করেনি। বুঝলো তার রাগ এখনো পড়েনি। মুচকি হাসে আনিতা। ভেবে নিলো পরে ঠিক রাগ ভাঙিয়ে নিবে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে ছাদে উঠতে ইচ্ছে করলো না তাই অনিমার হাতে জামা-কাপড় দিয়ে দিলো ছাদে দিয়ে দেওয়ার জন্য। যদিওবা রোদ নেই এখন কিন্তু বাতাস আছে তাতে মোটামুটি শুকিয়ে যাবে। রুমে এসে চুল থেকে টাওয়েল খুলে বারান্দায় নিয়ে শুকোতে দিলো। কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফাইয়াজের বারান্দা লক্ষ্য করলো। ফাইয়াজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আহিয়ান সিগারেট টানছে। আনিতাকে দেখেই উল্টো ঘুরে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে শূন্যে। দুটো কারনে বেশ রাগ হলো আনিতার। প্রথমত, আহিয়ান ওকে দেখেও না দেখার ভান করে উলটো ঘুরে গেলো। আর দ্বিতীয়ত, ওকে দেখেও হাত থেকে সিগারেট ফেলল না। আহিয়ান জানে আনিতা সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না তারপরও খাচ্ছে। আনিতা বারান্দায় আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসলো। ঘুম হয়নি কাল খুব ক্লান্ত লাগছে আর রাগটাও আপাতত কমানোর দরকার তাই একটা ঘুম প্রয়োজন। তাই ওভাবেই শুয়ে পড়লো আনিতা। ক্লান্ত থাকায় অল্প কিছু সময়ের মাঝেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.