শুধু তোমারই জন্য
পর্ব_২৭
Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব ২৭ - bangla choti |
আর কিছুক্ষণ আহিয়ানের সাথে ছাদে থেকে নিচে নেমে আসে আনিতা। বিয়ে বাড়ি প্রচুর লোকজন কখন কার চোখে পড়ে যায় ঠিক নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও দুজনে একসাথে বেশি সময় কাটালো না।
সাড়ে বারোটার মতো বাজে তখন। আনিতা নিচে নেমে প্যান্ডেলে যেতেই রোদেলা তন্ময় ওরা সবাই মিলে ঘিরে ধরে আনিতাকে। সবাই মিলে নানান ধরনের প্রশ্ন করে পাগল বানিয়ে ফেলে প্রায়। আনিতা কিছুটা চিৎকার করে সবাইকে থামতে বলে,
--"কি সমস্যা কি? এভাবে আমার পিছু লেগেছিস কেন?"
--"আমাদের প্রথম প্রশ্ন, তুই ভিতরে গেলি শাড়ি চেঞ্জ করতে। কিন্তু তুই শাড়ি চেঞ্জ না করে উলটো কুচি দিয়ে শাড়ি পড়ে আসলি কেন?"
জেরিনের প্রশ্নে আনিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে। আনিতা কোনো ভণিতা না করে বলে,
--"ইচ্ছে হলো তাই।"
এবার রাতুল বলে,
--"আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন, তুমি এই রাতের বেলা বেলি ফুল পেলে কোথায়?"
--"ক্ কোথায় আর পাবো? বেলি ফুলের গাছ আছে আমার সেখান থেকেই ফুল ছিড়ে মালা বানিয়েছি"
--"মিথ্যে বলে লাভ নেই বেবি। আমি জানি তোর বেলি ফুলের গাছ আছে। কিন্তু সেটাতে এখনো ফুল আসেনি। আর আমি যতটুকু জানি আমাদের এখানে সচারাচর বেলি ফুলের মালা পাওয়া যায় না।"
শুভর কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করে। ধরা পড়ে গিয়ে চুপসে যায় আনিতা। আনিতা আমতা আমতা করে বলে,
--"অন্ অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিলাম আমি।"
আনিতার কথায় সব্বাই মিলে উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আনিতা এদিক ওদিক তাকিয়ে পালানোর রাস্তা খুঁজছে। আরোহী কিছু বলবে তার আগেই তাসকিয়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
--"ওক্কেহ জানু মানলাম আমরা তুই ফুলগুলো অনলানে অর্ডার দিয়েছিস। কিন্তু আধ ঘন্টা আগে তো তোকে আমরা খালি হাতে ছাদে যেতে দেখলাম। তখন তো তোর চুলে বা হাতে ফুল ছিলো না। তাহলে ছাদে থেকে নামতেই চুলে ফুল এলো কোত্থেকে?"
--"হ্যাঁ সেই। অনেকটা সময় যাবত আমরা আহিয়ানকেও দেখছি না।"
তন্ময়ের কথায় আনিতার এবার গলা শুকিয়ে এলো। এরা আবার ওর পিছু নিয়ে ছাদে যায়নি তো? কিচ্ছু দেখে ফেলেনি তো সবাই? রোদেলা এগিয়ে এসে আনিতার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
--"তা সোনা তোমার ঘাড়ে এমন লালচে দাগ এলো কোত্থেকে? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ কামড়ে দিয়েছে।"
রোদেলার কথায় আনিতা চটজলদি ঘাড়ে হাত দিলো। আনিতার কান্ডে সবাই তাল মিলিয়ে হেসে দিলো। আর এদিকে বেচারি আনিতা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। আর মনে মনে আহিয়ানকে বকে যাচ্ছে। সেই মূহুর্তেই আনিতার ছোট চাচ্চুর বন্ধুরা আনিতাকে ডেকে বলে,
--"চাচ্চু__"
ডাক শুনে আনিতার মনে পালানোর আশা জেগে উঠলো। মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ জানালো ওর চাচ্চুর বন্ধুদের এই সময় ডাকার জন্য। এখানে আর একটু থাকলে আনিতা বোধহয় লজ্জায় মরেই যেতো। আনিতা লাফিয়ে উঠে বলে,
--"ইয়েস চাচ্চু।"
--"নাচবে না?"
--"অবশ্যই।"
--"তো চলো। শুরু করা যাক।"
--"তোমরা স্টেজে উঠো আমি এক্ষুনি আসছি।"
--"ওক্কেহ।"
আনিতা দৌড়ে ওখান থেকে চলে এলো। স্টেজের সামনে এসে দু হাটুতে ভর দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। এতক্ষণে যেন আনিতা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। স্টেজের সামনে সাজানো সাড়ি সাড়ি চেয়ার গুলোর সামনে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লো। আনিতার চাচ্চুর বন্ধুরা সাউন্ড বক্সে নিজেদের পছন্দের মতো গান চালিয়ে একেক জন স্টেজে উঠে গেলো। পুরো উঠোন জুড়ে মানুষ। সবাই নাচ দেখতে এসেছে। নাচের ছেলে-মেয়েরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। এখন রেডি হচ্ছে তারা। তাই এখন আনিতার চাচ্চুর বন্ধুরা স্টেজ কাঁপানোর জন্য উঠেছে। ডিজে গান ছেড়ে একেকজন উড়া ধুরা নাচ শুরু করেছে।
কিছুক্ষণ বাদেই আনিতার সব বন্ধুরা ফাইয়াজের বন্ধুরা আনিতার পাশে এসে বসে পড়লো। আনিতার ডান পাশের চেয়ারটা খালি পড়ে আছে। মনে হয় আহিয়ানের জন্যই এখানে ওরা কেউ বসেনি। মিনিট দুয়েক বাদে আহিয়ানও এসে বসে পড়লো। সবাই মিলে আনিতার চাচ্চুর বন্ধুদের পাগলা ডান্স দেখছে আর হাসছে। হুট করেই আনিতার চাচ্চুর বেস্ট ফ্রেন্ড সৈকত স্টেজ থেকে নেমে এসে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে একহাত বাড়িয়ে বলে,
--"আম্মু চলো__"
আনিতাও মুচকি হেসে সৈকয়ের হাত ধরে স্টেজে উঠে যায়। আহিয়ান আনিতার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। স্টেজে এতগুলো ছেলে আছে সেখানে আনিতার যাওয়ার দরকার কি? আহিয়ান মানছে ওখানে ওর চাচ্চুর ফ্রেন্ডরা আছে বাট আরো অন্যান্য ছেলেও তো আছে। ও কেন যাবে সেখানে সবার সাথে নাচ করতে? রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে আহিয়ান। নাচতে নাচতে হঠাৎই করেই আহিয়ানের উপর চোখ যায় আনিতার। সাথে সাথেই থেমে যায় ও। আহিয়ানের এভাবে রেগে যাওয়ার কারনটা প্রথমে বোধগম্য না হলেও কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পরই বুঝতে পেরেছে আনিতা। একটা ছেলে হঠাৎই আনিতার দিকে এগোতে থাকে। আনিতা বিষয়টা প্রথমে খেয়াল করেনি। ছেলেটা আনিতাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়াতেই আহিয়ান ছেলেটার হাত ধরে ফেলে। ছেলেটাকে আনিতার দিকে এগোতে দেখেই আহিয়ান বুঝেছিলো এর মতলব বেশি ভালো না। তাই দেরী না করে সাথে সাথেই স্টেজে উঠে যায়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আঁতকে উঠে আনিতা। পিছিয়ে যায় কয়েক পা। আমোদ ফুর্তিতে থাকায় অন্য কেউ বিষয়টা খেয়াল না করলেও আহিয়ানের চোখে পড়ে গিয়েছিলো ছেলেটা। আহিয়ান শুরু থেকেই লক্ষ্য করছিলো ছেলেটাকে। আনিতা স্টেজে উঠার পর থেকেই বাজে ভাবে তাকাচ্ছিলো আনিতার দিকে। আনিতা ছেলেটার থেকে বেশ কয়েক পা সরে গিয়ে ভয় ভয় চেহারায় আহিয়ানের দিকে তাকাতেই আহিয়ান ঝামটা মেরে ছেলেটার হাত ছেড়ে দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে যায়। দ্রুত পা ফেলে এখান থেকে চলে যায় ও। আনিতাও তড়িঘড়ি করে স্টেজ থেকে নেমে আহিয়ানের পিছু নেয়। আহিয়ানের পিছু নিয়ে আনিতাও ছাদে উঠে যায়। আহিয়ান ততক্ষণে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়েছে। আকাশের দিকে ভাবলেসহীন ভাবে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে নিজেকে যথাসম্ভব সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আনিতা দ্রুত পায়ে আহিয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
--"আ্ আহিয়ান__"
--"____"
--"কথা বলবেন না আমার সাথে? আমি বুঝতে পারিনি এরকম কিছু হতে পারে। আমি না বুঝেই___"
--"গেট আউট।"
--"আমার কথাটা__"
--"বললাম না এখান থেকে যেতে?"
--"নাহ যা্ যাবো না আমি।"
--"ওকে ডান। তোমার যেতে হবে না আমিই চলে যাচ্ছি।"
কথাটা বলেই আহিয়ান হাতের জলন্ত সিগারেট মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়। ওখান থেকে চলে আসতে নিলেই আনিতা ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,
--"আমার কথা না শুনে যেতে পারবেন না আপনি।"
--"এখন তুমি ঠিক করে দিবে আমি কি করবো আর কি করবো না?"
--"না মানে___"
--"প্লিজ লিভ এলোন। আমি একা থাকতে চাই কিছুটা সময়। তুমি বরং নিচে যাও সবাই ওয়েট করছে তো তোমার জন্য। নিচে গিয়ে স্টেজে উঠে পড়ো যাও। ছেলেটাকে আবার তোমায় ছোঁয়ার সুযোগ করে দাও।"
--"আহিয়ান__"
আহিয়ান রেগে গিয়ে আনিতার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
--"কি আহিয়ান হ্যাঁ? এতগুলো ছেলের সাথে তোর নাচতে কেন হবে? মানলাম ওরা তোর চাচ্চুর ফ্রেন্ড তাই বলে নাচতে চলে যাবি? এখনকার যুগে সুযোগ পেলে কিছু কিছু ভাই তার বোনকে ছাড়ছে না। বাবা তার মেয়েকে ছাড়ছে না। আর ওরা তো তোর চাচ্চুর ফ্রেন্ড।"
কথাটা বলেই আহিয়ান আনিতাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আচমকা এভাবে ধাক্কা দেওয়াতে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো আনিতা। ব্যালেন্স সামলাতে ছাদের রেলিং চেপে ধরলো। রডের সাথে লেগে আনিতার বা হাতের কুনই কিছুটা কেটেও গিয়েছে। রক্ত ঝড়ছে কিছুটা। কিন্তু আনিতা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আবারো আহিয়ানের দিকে এগিয়ে গেলো। আহিয়ানের দু গালে হাত রেখে বলে,
--"আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আপনার রাগ করাটা অহেতুক নয়। কিন্তু সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হতে পারে।"
আহিয়ান আনিতার হাত দুটো সরিয়ে দেয় ওর গাল থেকে। আনিতার দুই কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বলে,
--"ছেলেটা যদি টাচ করে ফেলতো তোকে? তখন কি হতো হ্যাঁ? কি হতো তখন? জানিস ছেলেটার নজর খুব বাজে ছিলো। খুব বাজে ভাবে দেখছিলো তোকে। এদিকে একটা ছেলে তোকে দূর থেকে বাজে নজরে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আর সেদিকে তোর কোনো হেলদোলই নেই? কিচ্ছু টের পেলি না তুই? একটা ছেলের নজর ঠিক কতটা বাজে হলে সে স্পর্শ করতে যায় জানিস তুই? বুঝিস এসব?"
--"____"
--"কি হলো? এখন চুপ করে আছিস কেন? এতক্ষণ তো খুব কথা বলছিলি তাহলে এখন চুপ কেন? আন্সার মি।"
আনিতা কিছু না বলে আহিয়ানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। শক্ত করে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--"ভালোবাসি আপনাকে।"
আহিয়ানের রাগ তখনো কমেনি। আহিয়ান আনিতার দু হাত ধরে ওকে নিজের থেকে সরাতে গেলেই আনিতার বা হাতের কুনোইটা ভেজা ভেজা লাগে ওর। তড়িৎ গতিতে আহিয়ান আনিতার বা হাত উঁচু করে ধরে কুনোই এর দিকে তাকায়। বিয়ে উপলক্ষে সারা বাড়ি লাইটিং করা ছিলো। আনিতা আর ফাইয়াজদের দুটো বিল্ডিংই মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। লাল নিল কালারিং বাতিতে আহিয়ান স্পষ্ট দেখতে পেলো আনিতার হাত কেটে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। হঠাৎ রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেলো আহিয়ান। কিভাবে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। পরক্ষণেই মনে পড়লো একটু আগে বেশ জোড়েই ধাক্কা মেরেছিলো ও আনিতাকে। তখনই হয়তোবা কোথাও একটা লেগে গিয়ে এভাবে__। নিজের উপর এবার বেশ রাগ হলো আহিয়ানের। কেন যে নিজের রাগটাকে সামলাতে পারে না ও। ওর ভুলের জন্য আজ কতটা লেগে গেলো আনিতার। ইশ্। এসব ভেবেই ছাদের রেলিঙে সজোরে পাঞ্চ মারে একটা। ঘটনার আকস্মিকতায় আনিতা চমকে উঠে। আহিয়ানের হাত চেপে ধরে বলে,
--"পাগল হয়েছেন? কি করছেন এসব?"
আহিয়ান আনিতার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আনিতার হাত ধরে বলে,
--"খুব লেগেছে তোমার তাই না? এতক্ষণ বলোনি কেন আমাকে? কিভাবে রক্ত বের হচ্ছে দেখেছো?"
--"তেমন কিছুই হয়নি।"
--"তেমন কিছু না হলে রক্ত বের হতো না আনি। আমার জন্য তুমি এতটা ব্যাথা পেলে।"
--"আরেহ বললাম তো তেমন কিছু হয়নি।"
আহিয়ান ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে রুমাল বের করে আনিতার কুনোই তে বেধে দিলো। আনিতাকে দু হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
--"আ'ম সরি আনি। আমি আসলে___মানে তখন মাথা কাজ করছিলো না আমার। জাস্ট একটা কথায় বার বার মনে পড়েছে ওই ছেলেটা তোমাকে বাজে নজরে দেখছিলো তোমাকে বাজে ভাবে টাচ করতে চাইছিলো।"
--"ইট'স ওকে। আমারই ভুল ছিলো। নেক্সট টাইম থেকে খুব কেয়ারফুলি থাকবো।"
--"তোমার পাশে আমি কাউকে জাস্ট সহ্য করতে পারি না। মানতে পারি না তোমার পাশে আমি অন্য কাউকে। আর সেখানে ওই ছেলেটা তোমায় টাচ করতে চেয়েছিলো। আমার তো ইচ্ছে করছিলো ওকে ওখানেই শেষ করে দিতে। নেহাৎ এটা বিয়ে বাড়ি বলে। আর আমাদের সম্পর্কটা কেউ জানে না। আমাদের সম্পর্কটা এসময় সবার সামনে এলে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যাবে বলে চুপ থাকতে হলো আমায়। নয়তো___"
--"হয়েছে তো। এবার মাথাটা ঠান্ডা করুন প্লিজ।"
--"হুম।"
আহিয়ান আর আনিতা দুজনে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়েই রাজ্যের গল্প জুড়ে বসেছে। আশেপাশের কোনোদিকে ধ্যান নেই। আনিতা এক মনে হাত নাড়িয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। আর আহিয়ান মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আহিয়ান কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করে আনিতার অগোচরেই বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। আনিতা কথা বলাতে এতটাই মগ্ন ছিলো যে ও জানতেই পারলো না আহিয়ান ওর বেশ কিছু ছবি তুলেছে। আনিতার কথা বলার ধরন দেখে আহিয়ান মুচকি হাসছে। আনিতা কখনো বেশ উৎফুল্ল মনে কথা বলছে তো কখনো মুখটাকে একদম গোমড়া করে ফেলছে। নানান ধরনের অঙ্গভঙ্গির সাথে কথা বলে যাচ্ছে আনিতা। একেক সময় মুখের একেক রকমের এক্সপ্রেশন করছে। আর খুব মনোযোগ সহকারেই আহিয়ান সেসব শুনছে। আর মাঝে মাঝে আনিতার কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠছে।
হঠাৎ করেই আহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর এক পা দুপা করে আনিতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আনিতা তখনো কথা বলাতেই ব্যাস্ত। আহিয়ান ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আনিতার পিছনে গিয়ে আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে। আলতো ভাবে আহিয়ানের হাত জোড়া আনিতার ফরসা উম্মুক্ত পেট স্পর্শ করতেই আনিতা থেমে গেলো। গলা দিয়ে আর একটা শব্দও বের হচ্ছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আনিতার অবস্থা বুঝতে পেরে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে দিলো। আনিতার ঘাড়ে আহিয়ান থুতনি রেখে বলে,
--"কি হলো চুপ করে গেলে যে? আর কিছু বলবে না?"
--"আ্ আপনি কিছুটা স্ সরে দাঁড়ান প্লিজ।"
--"তা তো হচ্ছে না। আমি এভাবেই আমার পিচ্চিটাকে জড়িয়ে ধরে রাখবো।"
--"কিন্তু___"
--"হুশ কোনো কিন্তু না।"
এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছুটা সময়। আনিতাও এখন নিজেকে সহজ করে নিয়েছে। এখন আগের মতো অতটা অস্বস্তি হচ্ছে না ওর। আহিয়ান পিছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এখন অব্দি। আহিয়ান এখনো আগের মতোই আনিতার কাঁধে থুতনি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর দু-হাতে পেট জড়িয়ে রাখা। আনিতাও আহিয়ানের হাতের উপর হাত রেখে আহিয়ানের বুকের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান একেক সময় একেক কথা বলছে আর তাতে আনিতা খিলখিল করে হেসে উঠছে।
হঠাৎ করেই ছাদের দরজার সামনে কেউ একজন এসে দাঁড়ায়। আনিতা আর আহিয়ানকে এই অবস্থায় দেখে ওই মানুষটা নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। মানুষটা অবাক চোখে দেখছে ওদের দুজনকে। আনিতা বা আহিয়ান কেউ খেয়াল করেনি যে ছাদে ওরা দুজন ব্যাতিত আরো একজন উপস্থিত আছে এখন।
--"আনিতা আহিয়ান___তোরা দুজন এখানে একসাথে এই অবস্থায়?"
কারো গলার স্বর পেয়ে আহিয়ান আর আনিতা উভয়ই ছাদের দরজার দিকে তাকায়। ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে ওরা চমকে দুজন দুজনকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। ওরা ভাবতে পারেনি এসময় নাচ গানের আসর ছেড়ে কেউ ছাদে আসতে পারে। আনিতা এক কোনে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে আনিতার হাত-পা জমে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]