Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৪ | bangla golpo pdf

 

শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_২৪

Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২৪ | bangla golpo pdf
Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২৪ | bangla golpo pdf 


কিছুক্ষণ বাদে দরজায় খটখট শব্দ হতেই রোদেলা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। ফাইয়াজকে দেখেই রোদেলা দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। ফাইয়াজ ভিতরে ঢুকে সবাইকে বলল,


--"কোনোপ্রকার শব্দ না করে পা টিপে টিপে বের হও রুম থেকে। ফাস্ট।"


--"কিন্তু কেন? কোথায় যাবো?"


--"বাইকে করে লং ড্রাইভে।"


রোদেলা পালটা আর কোনো প্রশ্ন করলো না। ফাইয়াজকে দেখে রোদেলা তাসকিয়া জেরিন তিনজনেই দাঁড়িয়ে পড়েছে। আনিতাকে দেখতে না পেয়ে ফাইয়াজ জিজ্ঞেস করলো,


--"বুড়িটা কোথায়? ওকে দেখছি না যে।"


--"ও তো সেই কখন কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছে। ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে মনে হয়।"


জেরিনের কথায় ফাইয়াজ বিস্মিত চোখে তাকালো। ওর যেন জেরিনের কথাটা ঠিক হজম হলো না। যে কিনা লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য লাফালাফি করলো। লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য ফাইয়াজকে এভাবে রাজি করালো সে-ই কিনা এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে? কি এক আশ্চর্য কথা! ভাবা যায় এ-সব?


--"ওরে ডেকে তুলে রাস্তায় এসো তোমরা। ওখানেই ওয়েট করছি আমরা তোমাদের জন্য।"


কথাটা বলে ফাইয়াজ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জেরিন ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"তোরা যা আমি আনিতাকে নিয়ে আসছি।"


জেরিনের কথায় ওরা দুজন নিঃশব্দে পা টিপে টিপে বাসা থেকে বের হয় গেলো। জেরিন বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে নিচ্ছিলো আনিতাকে ডাকতে সে-সময়ই আহিয়ান উপস্থিত হয় সেখানে। আহিয়ানকে দেখে অবাক হয়ে জেরিন বলে,


--"তুমি? এখানে? ফাইয়াজ ভাইয়া বা অন্য কেউ দেখলে সমস্যা হবে তো।"


--"দেখবে না কেউ। আনিতা কোথায়? এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?"


--"নাহ মাত্রই ওকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।"


--"আচ্ছা তুমি সরো আমিই ডেকে তুলছি ওকে।"


জেরিন কিছু না বলে বিছানার দিক থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ালো। আহিয়ান বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে আনিতার মুখের উপর থেকে কাঁথা সরালো। আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আনিতাকে ডাকলো বার কয়েক। কিন্তু আনিতা উঠবে তো দূরে থাক সারাও দিচ্ছে না। জেরিনও এগিয়ে গিয়ে ডাকতে শুরু করলো আনিতাকে। আনিতা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। কাল অনেক রাত অব্দি জেগে থাকায় আজ এই অবস্থা। জেরিন আবারো বলে,


--"আনিতা লং ড্রাইভে যাবি না? সব্বাই চলে গিয়েছে কিন্তু। উঠ না জানু প্লিজ।"


--"উঠছি।"


ঘুম কাতুরে কন্ঠে আনিতা চোখ বন্ধ রেখেই কথাটা বলল। একটু নড়েচড়ে গায়ে থেকে কাঁথা সরিয়ে ফেলল আনিতা। আনিতাকে এভাবে এলোমেলো ভাবে দেখে আহিয়ান অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সাথে জেরিনও। আহিয়ান হালকা কেঁশে সরে দাঁড়ালো ওখান থেকে। দ্বিতীয় বারের মতো আহিয়ান আনিতাকে এভাবে এলোমেলো অবস্থায় দেখলো। আনিতার পরনের কালো টি-শার্ট কিছুটা উপরে উঠে আছে যার ফলে পেটের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। কাঁধের দিক থেকেও টি-শার্ট কিছুটা সরে গিয়েছে। আহিয়ান অন্যদিকে ঘুরে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। জেরিন তড়িঘড়ি করে আনিতার পাশে গিয়ে বসে ওর টি-শার্ট ঠিক করে দিয়ে আনিতাকে ডেকে বলে,


--"এই আনিতা, জানু উঠ না। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছিস তুই।"


--"প্রবলেম কি? তুই আর আমিই তো।"


--"আজ্ঞে না। তুই আর আমি না। আহিয়ানও আছে।"


--"কিইইই? আগে বলবি তো আমায়।"


কিছুটা চিৎকার করে কথাগুলো বলেই আনিতা উঠে বসলো। কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে আনিতার খুব। সাথে জেরিনও বেশ লজ্জা পেয়েছে। আহিয়ান উলটো দিকে ঘুরে থেকেই বলে,


--"বাইরে আছি আমি। তোমরা দুজনে তাড়াতাড়ি আসো। সবাই অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য।"


কথাটা বলে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে আহিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আহিয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনিতা জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ হয়ে ছিলো। জেরিনও যেন এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। আনিতা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর ফোন হাতে নিয়ে দুজনে একসাথেই বের হলো বাইরে যাওয়ার জন্য। 


আনিতা আর জেরিন পা টিপে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আনিতারা বাসা থেকে বের হতেই ফাইয়াজ সেখানে এসে উপস্থিত হলো। ফাইয়াজ ওদের দুজনকে দেখে বলে,


--"এতক্ষণে তোর ঘুম ভাঙলো? যাই হোক রাস্তায় যা তোরা। আমি গেট আটকে আসছি।"


আনিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সেখান থেকে জেরিনের হাত ধরে রাস্তার দিকে হাঁটা লাগালো। আনিতা রাস্তায় বেরোতেই দেখে আহিয়ান তন্ময় শুভ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে ফাইয়াজের বাইকও রাখা। কিছুক্ষণের মাঝেই ফাইয়াজ চলে এলো। ফাইয়াজ এসে বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিতেই তাসকিয়া ওর পিছনে গিয়ে বসলো। আর জেরিন আগেই শুভর বাইকে বসে পড়েছে। দোটানায় পড়ে গেলো আনিতা। আহিয়ানের বাইকে উঠবে নাকি তন্ময়ের? নিজে থেকে আহিয়ানের বাইকে গিয়ে বসলে যদি ফাইয়াজ কিছু ভাবে তখন কি হবে? আনিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহিয়ান তন্ময় রোদেলা তিনজনেই ব্যাপারটা বুঝলো। তন্ময় রোদেলাকে ইশারা করতেই রোদেলা গিয়ে তন্ময়ের বাইকে বসে পড়লো। আনিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাইয়াজ বলে,


--"আনি বুড়ি___কি হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুই? আহিয়ানের বাইকে উঠ।"


--"আহিয়ান ভা্ ভাইয়ার বাইকে?"


--"হ্যাঁ উঠ। আহিয়ানের বাইকটাই তো খালি পড়ে আছে।"


আনিতা আর কিছু না বলে আহিয়ানের বাইকে চেপে বসলো। সবাই বাইক চালাতে শুরু করে। সবার উদ্দেশ্য নদীর পাড়ে যাবে। আনিতাদের বাসা থেকে বাইকে গেলে আনুমানিক এক ঘন্টার মতো লাগতে পারে মৈনটঘাট যেতে। অনেকের কাছে সেটা মিনি কক্সবাজার নামেও পরিচিত। আর এই রাতের বেলা চাঁদের আলোয় নদীর পাড়ে যাওয়াটাই ওদের কাছে বেটার মনে হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আহিয়ান আনিতাকে বলে,


--"আনি___"


--"হুম।"


--"খুউব সুন্দর লাগছিলো আজ তোমায়।"


আনিতা কিছু না বলে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বসলো। আহিয়ানও মৃদু হেসে আনিতার এক হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। আনিতা আহিয়ানের পিঠে মাথা রেখে বলে,


--"আপনি আমার কাছে আজ সারাটা দিন চেয়েছিলেন। সেটা আমি দিতে পারিনি। তার জন্য সত্যিই এত্তগুলা সরি।"


--"আরেহ পাগলী সরি বলছো কেন? তুমি তো ভুল কিছু বলোনি। তাছাড়া শুরুতে একটু খারাপ লাগা কাজ করলেও পরে আমি রিয়ালাইজ করতে পেরেছি তুমি একদম ঠিক ছিলে।"


--"আপনার যে কোনো অভিযোগ নেই এটাই অনেক।"


পরবর্তীতে আহিয়ান আর কিছু বলল না। বেশ ক্ষানিকটা সময় দুজনেই চুপ করে রইলো। আহিয়ান আনিতার হাতের উপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে আবার বাইক চালানোতে মনোযোগ দিলো। আহিয়ান নিজেই নিরবতা ভেঙে বলে,


--"তা ম্যাডামের হঠাৎ করে রাতের বেলা লং ড্রাইভে যাওয়ার ইচ্ছে হলো যে? কারন কি?"


--"আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য।"


--"সেজন্যই বুঝি আমার বাইকে উঠতে আপনি দ্বিধা করছিলেন?"


--"তেমন কিছু না। ফাইয়াজ ভাইয়া ছিলো বলেই উঠিনি।"


--"ফাইয়াজ ছিলো বলে নিজে থেকে বাইকে উঠো নি মানলাম। বাট তাই বলে ভাইয়া ডাকবে?"


--"ভুল কিছু বলেছিলাম কি?"


--"মানে কি?"


--"মানে খুব সহজ। ফাইয়াজ আমার ভাই হয়। আর ভাইয়ের বন্ধুও তো ভাই-ই হয় তাই না? সেই হিসেবে আমি কোনো ভুল কিছু বলিনি।"


আনিতার কথায় আহিয়ান বাইক থামিয়ে দিলো। ঘাড় ঘুড়িয়ে আনিতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,


--"ভাইয়ের বন্ধু ভাই-ই হয় তাই না? আমি তোমার ভাই হই?"


--"না মানে__"


--"না মানে করছো___""


--"ভা্ ভালোবাসি আপনাকে।"


আনিতার মুখ থেকে "ভালোবাসি আপনাকে" কথাটা শুনে আহিয়ান থেমে গেলো। আচমকা আনিতা যে এখন এই কথাটা বলবে সেটা আহিয়ান ভাবতে পারেনি। আহিয়ানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে আনিতা। আহিয়ান মুচকি হেসে আবারো ঘুরে বাইক চালানো শুরু করলো।


বেশ কিছুটা সময় বাদে একে একে সবাই নদীর পাড়ে এসে বাইক থামালো। জেরিন শুভ রোদেলা তন্ময় চারজনেই নেমে গেলো বাইক থেকে। ফাইয়াজ আর তাসকিয়া নামার আগেই আনিতাদের বাইক এসে থামলো ফাইয়াজের বাইকের পাশে। তন্ময় ফাইয়াজকে বলে,


--"এক কাজ কর ফাইয়াজ___এখানে আমরা আমরা আছি আমরা হই হুল্লোড় করবো এতে তোদের ডিস্টার্ব হতে পারে। তার থেকে বরং তোরা দুজন অন্য দিকটায় যা। ডিস্টার্বও হলো না। আর আলাদা সময়ও কাটাতে পারলি।"


আনিতা এবার লাফ দিয়ে আহিয়ানের বাইকের পিছন থেকে নেমে গেলো। ফাইয়াজের সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে,


--"তন্ময় ভাইয়া কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি। কি সুন্দর রাত। আকাশে থালার মতো বড় চাঁদ। আর এমন জ্যোৎস্না রাতে প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে নদীর পাড়ে সময় কাটানোর ফিলিংস। আহ কি রোমান্টিক! এমন সুযোগ কিন্তু আর পাবে না ভাইয়া।"


আনিতার কথায় আহিয়ান আর ফাইয়াজ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়৷ বাকীরা আনিতার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে। ফাইয়াজ আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,


--"রোমান্টিকের কি বুঝিস রে তুই? আমাকে তুই ফিলিংস রোমান্টিক এসব শিখাচ্ছস? ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই।"


--"তাহলে তুমিও ভুলে যেও না যে তুমি আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশনশিপে আছো।"


আনিতা নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফাইয়াজের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলল। ফাইয়াজ আর কথা না বাড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে নদীর অন্যদিকে চলে গেলো। আহিয়ানও ততক্ষণে বাইক থেকে নেমে পড়েছে। ওরা সবাই মিলে নদীর এক কিনারে ঘাসের উপর বসে পড়ে। আহিয়ান গিয়ে আনিতার পাশ ঘেঁষে বসে ওর কাঁধে মাথা রাখে। আনিতা আহিয়ানের মাথাটা নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,


--"কি হচ্ছেটা কি? সবাই আছে তো এখানে।"


--"থাকুক না সমস্যা কি?"


--"আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার আছে। সরুন তো আপনি।"


কথাটা বলে আনিতা ওখান থেকে ওঠে পড়ে। আহিয়ান যখন আনিতার কাঁধে মাথা রেখেছিলো আনিতা তখন সবার দিকে তাকিয়ে দেখেছে। ওদের দেখে সবাই মুখ টিপে হেসেছে। লজ্জা লাগে না এমন করলে? তাই শেষে বাধ্য হয়েই উঠে পড়লো ওখান থেকে। তন্ময় ইশারা করতে আহিয়ানও উঠে আনিতার পিছু নিলো। কিছুটা দূরে গিয়ে আহিয়ান পিছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো। ক্ষানিকটা কেঁপে উঠলো আনিতা। 


কিছুটা সামনে এগিয়ে নদীর কিনারা ঘেঁষে কিছুটা জায়গায় ঘাস দেখে আহিয়ান আর আনিতা ওখানে গিয়ে বসলো। আহিয়ান আনিতার পিছনে বসে আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো। আনিতাও নিঃশব্দে আহিয়ানের বুকের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলো ক্ষানিকটা সময়। 


--"আনি__"


--"হুম বলুন।"


--"কাল ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।"


আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা পিছন ঘুরে আহিয়ানের মুখোমুখি হয়ে বসলো। মূহুর্তেই আনিতার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। কান্না মিশ্রিত নয়নে আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান আনিতার গালে হাত রেখে বলে,


--"আরেহ পাগলী আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি? আবার আসবো তো কখনো। আর তাছাড়া বারবার এখানে এসে থাকাটা কেমন দেখায় না? ফাইয়াজ যতই আমার বন্ধু হোক তোমরা কিছু না ভাবো আশেপাশের মানুষ তো আর এটাকে ভালো চোখে দেখবে না বলো?"


--"কিন্তু তাই বলে কাল-ই? এবার এসেছেন তিনদিন হলো মাত্র।"


--"তোমার যখনই আমাকে দেখতে ইচ্ছে করবে আমাকে জাস্ট একটা বার জানাবে তুমি আমি এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবো প্রমিস।"


--"আর কিছুদিন থেকে গেলে হয় না?"


--"বোঝার চেষ্টা করো। অন্যের অফিসে জব করতে হয় এত বার বার ছুটি নিলে বা অফিস মিস দিলে জবটা তো আর থাকবে না আমার।"


আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতার চোখের কোনে জমে থাকা পানিটুকু নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে দেয়। দুহাতে আনিতার গাল ধরে বলে,


--"প্রতি সপ্তাহে একবার করে তোমার কলেজে এসে দেখা করে যাবো তোমার সাথে। এবার হ্যাপি তো?"


এবারেও আনিতা কিছু বলল না। চুপচাপ আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। সাথে সাথে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আনিতার চোখের কার্নিশ বেয়ে। আহিয়ান কিছু না বলে আনিতার মাথায় একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। 


বেশ ক্ষানিকটা পর আনিতা আর আহিয়ান তন্ময়দের ওখানে চলে আসলো। বাসা থেকে অনেকটা দূরে এসেছে ওরা। তার উপর এই রাতের বেলা একা বেশিক্ষণ থাকাটা রিস্ক মনে করেই ওরা সবার কাছে চলে এলো। ফাইয়াজ আর তাসকিয়া এখনো আসেনি। আহিয়ান ফোন বের করে একবার সময় দেখে নিলো। ঘড়ির কাটায় এগারোটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। ফাইয়াজকে ফোন দিলো বেশ কয়েকবার কিন্তু রিসিভ হলো না। চিন্তায় পড়ে গেলো সবাই। এটা শহর না যে অনেক রাত অব্দি মানুষের আনাগোনা থাকবে। এটা গ্রাম যে কোনো মূহুর্তে যে কোনো ধরনের বিপদ হয়ে যেতে পারে। আহিয়ান ফাইয়াজকে ম্যাসেজ করে এখানে চলে আসতে বলল। 


ওরা সবাই মিলে পাশের একটা রেস্তোরাঁ খোলা দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে বসলো। নিজেদের জন্য কফি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ফাইয়াজ আর তাসকিয়া আসার। ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেলে কফি খেতে শুরু করে ওরা। বেশ ক্ষানিকটা বাদে ফাইয়াজ আর তাসকিয়া এসে হাজির হলো রেস্তোরাঁয়। ওদের চোখমুখ দেখে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছিলো। দুজনের চোখমুখ-ই ভার। তাসকিয়ার চোখ তো ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে দিলো মেয়েটা। আনিতা উঠে গিয়ে ফাইয়াজকে জিজ্ঞেস করে,


--"কি হয়েছে ভাইয়া? তোমাদের চোখমুখ এমন লাগছে কেন? কোনো কিছু হয়নি তো?"


ফাইয়াজ চুপ করে রইলো। কোনো প্রকার জবাব দিলো না। ততক্ষণে বাকী সবাইও ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু কেউ-ই কোনো জবাব দিচ্ছে না। আনিতা ফাইয়াজের থেকে উত্তরের আশা ছেড়ে দিয়ে তাসকিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তাসকিয়ার দু কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,


--"কি হয়েছে বল না? তোরা দুজন যদি এভাবে চুপ করে থাকিস তাহলে আমরা বুঝবো কি করে?"


তাসকিয়া কিছু না বলে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আনিতার সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত সকলেই চমকে উঠে তাসকিয়াকে এমন কান্না করতে দেখে। আনিতা তাসকিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,


--"কাঁদছিস কেন জানু? বল না আমাকে কি হয়েছে? ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে নাকি ভাইয়া ঝগড়া করেছে তোর সাথে? বল না আমায়। কিছু না বলে যদি শুধু কেঁদেই যাস তাহলে বুঝবো কি করে আমরা?"


আনিতার প্রশ্নের জবাবে ফাইয়াজ যে কথাটা বলল তা শুনে সবাই চমকে উঠে। ওরা কেউ ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে বা হতে পারে। তাসকিয়া এখনো কিছু না বলে শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.