শুধু তোমারই জন্য
পর্ব_১০
Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১০ | bangla love story |
রাত এগারোটা বাজে আদৃত এখনো আনিতাকে আনব্লক করেনি। আর এফবি একাউন্টও নেই যে ম্যাসেজ করবে। এত রাগ দেখানোর কি আছে? রাগ তো আমার করা উচিত উলটো মহারাজ রাগ করে নাম্বার ব্লক করে বসে আছেন। মনে মনে এসবই ভাবছে আনিতা।
আনিতার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হলো। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাতুল ম্যাসেজ করেছে। আনিতা রিপ্লাই করে,
--"হ্যাঁ বলো।"
--"সাইকোদের মতো কাজ কেন করেছো?"
--"বুঝলাম না।"
--"বুঝতে হবে না। কাটা হাতের পিক দাও।"
--"কেন? দিতে পারবো না আমি।"
--"আদৃত দেখতে চেয়েছে কিন্তু। পরে পিক দিবা না আরো রেগে যাবে। তারপর দেখবা আর আনব্লকই করবে না তোমার নাম্বার।"
--"আদৃত তোমার সাথে?"
--"হ্যাঁ এখানেই আছে।"
--"ফোন করি তাহলে?"
--"করো।"
ম্যাসেজটা দেখে সাথে সাথেই আনিতা মেসেঞ্জারে রাতুলকে ফোন করে। একবার রিং হওয়ার পরই রাতুল রিসিভ করে,
--"হ্যাঁ আনিতা বলো।"
--"আদৃত কোথায়? তোমার সাথেই তো আছে তাই না?"
--"হুম দিবো?"
--"হ্যাঁ প্লিজ দাও। ও রাগ করে কথা বলছে না আমার সাথে।"
আনিতার অস্থিরতা দেখে রাতুল মুচকি হাসলো। সাথে আদৃত ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে দিলো নিঃশব্দে। রাতুল লাউডে দিয়ে কথা বলছিলো তাই আনিতার কথা আদৃতও শুনতে পারছে। আদৃতই রাতুলকে বলেছে হাতের পিক চাইতে। আরোহীর কথা শুনে মনে হলো পাগলীটা অনেকটা কেটেছে নিজের হাত। আর ও তো আনিতার উপর রেগে আছে তাই নিজে চায়নি। রাতুলকে দিয়ে চাইয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না রাতুল সেই বলেই দিলো আদৃত চেয়েছে।
রাতুল ফোনটা আদৃতের দিকে এগিয়ে দিলো। আদৃত ফোন না নিয়ে বলে,
--"ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই। আর ওর উপর আমি রেগেও নেই। কেন কথা বলবো ওর সাথে আমি? যেখানে ও আমাকে বিশ্বাসই করে না। অন্য একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস করে নিজের এত ক্ষতি করে তার সাথে তো কথা বলার প্রশ্নই আসে না।"
আনিতা আদৃতের বলা সব কথাই শুনলো। বেশ খারাপ লাগছে ওর। সাথে আরোহীর উপর বেশ রাগও হচ্ছে। কেন বলতে গেলো ওকে কথাটা? রাতুল আনিতাকে বলে,
--"শুনলে তো? আদৃত কথা বলতে চাচ্ছে না তোমার সাথে।"
--"কথা বলতে চাচ্ছে না মানে কি হ্যাঁ? ওকে ফোন দাও বলছি। ও যদি আমার সাথে কথা না বলে তাহলে কিন্তু তোমার আর জেরিনের সম্পর্কটাও আমি কন্টিনিউ করতে দিবো না। প্যাচ লাগামু আমি কইয়া দিলাম।"
--"আরেহ যাহ বাবা! আমি কি করলাম? তোমাদের দুজনের মাঝে আমাকে টানছো কেন?"
--"তো টানবো না? তুমি ওর কেমন ফ্রেন্ড হ্যাঁ? যে ও তোমার কথা শুনছে না। আর এত তো আমাকে হাফ গার্লফ্রেন্ড দাবী করো। তাহলে হাফ গার্লফ্রেন্ড এর এই কথাটুকু রাখতে পারছো না? আদৃত ইচ্ছে করে কথা বলতে না চাইলে মেরে কথা বলাও আমার সাথে। মারো ওকে ইচ্ছেমতো মারো কেন কথা বলবে না ও আমার সাথে?"
--"সত্যি সত্যিই মারবো কিন্তু। পরে আবার কান্নাকাটি করতে পারবা না কিন্তু।"
--"আচ্ছা মারো তারপরও আমার সাথে ওর কথা বলতেই হবে। তবে__"
--"আবার তবে কি?"
--"একটু আস্তে মেরো? ব্যাথা যাতে না পায় ওকে?"
--মারতে বলছো মারবো। আদৃত ব্যাথা পেলে পাবে। তাতে তোমার কি? ও যে এখন তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে এর বেলায়?"
--"আদৃত ব্যাথা পেলে তো সেই ঘুরেফিরে আমিই কষ্ট পাবো। ওর ব্যাথা আমার সহ্য হবে নাকি?"
--"তাহলে আবার মারতে বলছো কেন?"
--"বারে বলবো না? ও যে এখন আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমার নাম্বার ব্লক করে রেখেছে। আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না। তাই ওকে মারবা তুমি। তবে আস্তে বেশি ব্যথা যাতে না পায়।"
আনিতার এমন বাচ্চামো কথা শুনে রাতুল আর আদৃত দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে ওদের দুজনের মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। ওদের হাসির শব্দ শুনে আনিতা মুখ ভার করে বলে,
--"হাসছো কেন তোমরা?"
--"তোমার কথা শুনে। আচ্ছা নাও আদৃতের সাথে কথা বলো।"
এই বলে রাতুল ফোনের স্পিকার অফ করে আদৃতের দিকে এগিয়ে দেয়। আদৃতও হেসেই ফোনটা হাতে নেয়। আদৃতের কাছ থেকে সরে আরহান আর ওর বাকী বন্ধুদের ওখানে গিয়ে বসে রাতুল। আদৃত ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই আনিতা বলে,
--"এখনো রাগ করে আছো আমার উপর?"
--"আমি কি আমার পিচ্চি পাখির উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি?"
--"হুম এজন্যই তো এখন অব্দি নাম্বার আনব্লক করলে না। তাই না?"
--"করেছি অনেক আগেই। লাস্ট এক ঘন্টা তো তুমি ফোন দাওনি তাই জানোনা।"
--"একবার ফোন দিলে কি হতো?"
--"ইচ্ছে হয়নি দেইনি। আর এমন করবা বলো? আরো হাত কাটবা?"
--"নাহ।"
--"সত্যি তো?"
আনিতা এবার আর কোনো কথা বলল না। চুপ করে আছে। তা দেখে আদৃত বলে,
--"কি হলো চুপ করে আছো কেন? তার মানে আবারো হাত কাটবা?"
--"না মানে আমি তো ইচ্ছে করে করবো না। কিন্তু আবারো যদি এবারের মতো অনেক রাগ হয়? প্রচন্ডরকম কষ্ট হয় তখন কি করবো?"
--"তখন আমাকে ফোন দিয়ে ইচ্ছে মতো গালি দিবা। ঝাড়ি মারবা আমাকে। মনে যা আসে তাই বলবা। মনের সব রাগ কষ্ট বের করে ফেলবা।তাহলে দেখবা রাগ আর কষ্ট দুটোই চলে গিয়েছে।"
--"পারমিশন পেলাম কিন্তু। পরে উল্টাপাল্টা কিছু বললে রাগ করতে পারবা না।"
--"আচ্ছা বাবা দিলাম পারমিশন। তাছাড়া আমার পিচ্চিটার রাগ কষ্ট কমানোর জন্য না হয় দুটো বারতি কথা শুনলাম। দুটো ঝাড়ি গালি শুনলাম তাতে কি? আমার পিচ্চিটার মন তো ঠিক হবে। রাগের বসে নিজের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু তো আর করবে না। এখন হাতের পিক দাও তো। লাইনে আছি আমি।"
আনিতা হাতের একটা পিক তুলে সেটা রাতুলের আইডিতে সেন্ড করলো। আদৃত সাথে সাথেই সিন করলো সেটা। পিকটা দেখে আদৃত চোখ বন্ধ করে নিলো একবার। পরপর দুটো বড় শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে ভালো করে দেখলো ছবিটা। কুনইয়ের নিচ থেকে হাতের শিড়া অব্দি পুরো হাতটাই কাটা। গভীর ক্ষত হয়ে আছে হাতটা। এমন কেউ করে? মেয়েটা সত্যিই পাগল। এসবই ভাবছে আদৃত। আদৃত আবার ফোন কানে নিয়ে বলে,
--"এসব কি করেছো আনি? এভাবে কেউ কাটে? কত গভীর হয়েছে ক্ষতগুলো। ব্যাথা করছে না হাত?"
--"নাহ তো।"
--"কেন মিথ্যে বলছো? বাসার কেউ তো জানে না এটা আমি নিশ্চিত। কাল কলেজে গিয়ে হাত ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে নিবে আবার।"
--"লাগবে না। এভাবেই ঠিক হয়ে যাবে।"
--"আবার কথা বলে। যা বলেছি চুপচাপ তাই করবে মনে থাকবে?"
--"হুম।"
--"এই তো গুড গার্ল।"
--"আদৃত অনেক ভালোবাসি তোমাকে বিশ্বাস করো।"
--"জানি। কিন্তু আমি ভালোবাসি না তোমাকে।"
--"কিহ? কি বললে?"
--"যা সত্যি তাই বলেছি। তুমি আমারই ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বলবে আমাকে মারতে। তাহলে তোমাকে কেন ভালোবাসবো আমি?"
--"ওটা তো এমনি___"
--"এমনি কি হ্যাঁ? যেভাবেই হোক বলেছো তো।"
--"সরি আর এমন হবে না।"
আনিতার কথা শুনে আদৃত শব্দ করেই হেসে দিলো। আনিতা চুপচাপ আদৃতের হাসির শব্দ শুনছে। কি সুন্দর করে হাসে ছেলেটা। আদৃতের হাসি শুনলেই আনিতা কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে চলে যায়। আদৃত হাসি থামিয়ে বলে,
--"মজা করছিলাম পাগলী।"
--"তুমি হাসলে না খুব ভালো লাগে আমার। সবসময় এমন হাসিখুশি থাকবা কেমন?"
--"আমার পিচ্চিটা যখন আমাকে হাসিখুশি থাকতে বলেছে তাহলে অবশ্যই হাসিখুশি থাকবো। মহারানীর কথা কি আর অমান্য করা যায়? অমান্য করলেই তো আবার মানুষ ঠিক করে আমাকে মার খাওয়াবে তাই না?"
--"উফস আদৃত___"
--"ওকে ওকে আর বলছি না।"
--"হুম মনে থাকে যেন।"
--"অবশ্যই। আনি____"
--"বলো।"
--"জানো আমি না পাগল হয়ে যাচ্ছি।"
--"কেন?"
--"তোমার ভালোবাসার জন্য #শুধু_তোমারই_জন্য।"
--"ধ্যাত।"
--"সত্যি বলছি।"
--"হুম বুঝলাম। এখন বলো বাসায় যাবা কখন?"
--"লেট হবে একটু।"
--"কেন?"
--"অনেকদিন পর সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হয়েছি তাই।"
--"আচ্ছা তাহলে আড্ডা দাও। পরে কথা হবে।"
--"উঁহু পরে কথা হবে না।"
--"কেন?"
--"এখন চুপচাপ ঘুমাবে তুমি। কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো। তার উপর আবার এই অবস্থা। রক্ত গিয়েছে অনেক। শরীর অনেক দূর্বল। সো চুপচাপ ঘুমাবে তুমি।"
--"কে বলেছে আমার শরীর দূর্বল? একদম ফিট আছি আমি।"
--"হ্যাঁ সেটা তোমার কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে। আর একটা কথাও না। এখনই অফলাইন হবে৷ তারপর চুপচাপ ঘুমাবে।"
--"কিন্তু___"
--"কোনো কিন্তু না। কাল কথা বলে একেবারে পুষিয়ে দিবো প্রমিস।"
--"আচ্ছা।"
--"ভালোবাসি পিচ্ছি।"
--"আমিও ভালোবাসি তোমাকে।"
--"তো রাখি?"
--"আচ্ছা।"
এই বলে আনিতা নিজেই ফোন রেখে দিলো। আর অনলাইনে থাকলো না আনিতা। ফোন কাটার সাথে সাথেই অফলাইন হয়ে গেলো।
টেবিলের দিকে চোখ যেতেই দেখে খাবার ঢেকে রাখা আছে। আনিতা রাতের খাবার খেতে যায়নি বলে অনিমা রুমে নিয়ে এসেছিলো। তখন খায়নি আনিতা মন খারাপ ছিলো বলে। এখন আদৃতের সাথে কথা হয়েছে মনটাও বেশ ফুরফুরে। তাই চেয়ার টেনে বসে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে প্লেট কিচেনে রেখে রুমে চলে এলো।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারোটা সতেরো বাজে। তাই লাইট অফ করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো আনিতা।
।
।
।