Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৮ | bangla choti golpo


শুধু তোমারই জন্য

পর্ব_২৮

Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৮ | bangla choti golpo
Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৮ | bangla choti golpo


--"কি হলো? উত্তর দিচ্ছিস না কেন আনি বুড়ি? তুই এই অবস্থায় আহিয়ানের সাথে কি করছিস?"


লাস্টের কথাগুলো ফাইয়াজ বেশ জোরে ধমক দিয়েই আনিতা কে জিজ্ঞেস করে। ভয়ে কিছুটা কেঁপে উঠে। ভয় পেয়ে আনিতা নিজের শাড়ি খামচে ধরে। আনিতা বা আহিয়ান কেউ-ই কথা বলছে না। ওদেরকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ফাইয়াজের মাথা আরো গরম হচ্ছে। ফাইয়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে তন্ময় আর তাসকিয়া দুজনকেই ম্যাসেজ করে ছাদে আসতে বলে। মিনিট তিনেকের ব্যবধানে সকলেই ছাদে এসে উপস্থিত হয়। তন্ময় ফাইয়াজের কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"কিরে এত জরুরি তলব? সবাইকে নিয়ে দ্রুত ছাদে আসতে বললি কেন? কিছু বল____"


পুরো কথা শেষ করার আগেই তন্ময়ের চোখ যায় ওদের থেকে কিছুটা দূরত্বে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকা আনিতা আর আহিয়ানের দিকে। তন্ময়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই সামনে তাকাতেই ওদের দুজনকে দেখতে পায়। তন্ময় ফাইয়াজের দিকে তাকাতে দেখে ফাইয়াজ থমথমে মুখে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝতে কারোরই বেশি বেগ পেতে হলো না। তাসকিয়া ভয়ে একটা ঢোক গিললো। সবাই মনে মনে একই কথা ভেবে চলছে, 'কি হবে এবার?'


তন্ময় আহিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে,


--"ফাইয়াজ বল কি বলবি? আমরা সকলেই তো এখানে উপস্থিত আছি।"


ফাইয়াজ ঘুরে তন্ময়ের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,


--"আহিয়ান আর আনিতা একা একা এখানে কি করছিলো তন্ময়? তোদের সবার তো একসাথে নিচে থাকার কথা। তাহলে ওরা দুজন তোদের থেকে আলাদা হয়ে একান্তে এখানে কি করছে?"


--"ক্ কি আর করবে বল? ক্ কথা ব্ বলছিলো মেবি।"


--"কেন তোদের সামনে কথা বলা যেতো না? নিচে কথা বললে কি এমন সমস্যা হতো শুনি? এত রাতে ছাদে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কি এমনি এমনি কথা বলতে এসেছে বলে তোর মনে হয়?"


--"তা্ তাছাড়া আর কি হবে বল?"


রাতুলের কথায় ফাইয়াজ ওর দিকে তাকায় একবার। তারপর আবার আহিয়ান আনিতার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,


--"বাচ্চা পাইছিস আমাকে? তোরা যা বুঝাবি আমি তাই বুঝে নিবো? আমার কি কোনো কমনসেন্স নেই? আমি বুঝি না এত রাতে একা একটা ছেলে আর মেয়ে সবার আড়ালে ছাদে দাঁড়িয়ে কিসের কথা বলতে পারে? কি সম্পর্ক থাকতে পারে তাদের মাঝে।"


--"ত্ তুমি ভ্ ভুল ভাবছো ফাইয়াজ। তুমি যা ভা্ ভাবছো সেরকম ক্ কিচ্ছু না।"


তাসকিয়ার কথা শুনে ফাইয়াজ এবার বড় বড় পা ফেলে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তাসকিয়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে কিছুটা চিৎকার করে বলে,


--"সেরকম কোনো সম্পর্ক না হলে ওরা পারসোনালি দুজনে এখানে কি করছিলো? আহিয়ান কেন আনিতাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো বলো আমায়?"


ফাইয়াজের প্রশ্নে এবার সবাই চুপসে গেলো। এখন তো কোনোমতেই সত্যিটা ওর থেকে লুকানো যাবে না। তন্ময় মনে মনে নিজেকে নিজেই বেশ কয়েকটা গালি দিলো। তখন স্টেজে হওয়া সকল ঘটনাই তন্ময় নোটিশ করেছিলো। আহিয়ানের পিছু পিছু আনিতাও যে ছুটে ছাদে এসেছে তন্ময় সেটাও দেখেছে। তন্ময় একবার ভেবেছিলো যে ও গিয়ে ওদের থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো ওরা দুজনে যখনই দেখা করেছে সবসময়ই সাথে ও ছিলো ওদের দুজনেরও তো ইচ্ছে হয় আলাদা কিছুটা টাইম স্পেন্ড করার। আর তাছাড়া এখন তো সবাই বিজি আর সবকিছুর ব্যবস্থা নিচেই করেছে এসময় কেউ ছাদে যাবে না। এসব ভেবেই পরবর্তীতে তন্ময় আর এখানে আসেনি। কিন্তু কে জানতো? ফাইয়াজ এসময় ছাদে চলে আসবে। আর ওর এই না আসাটাই সবথেকে বড় ভুল হয়েছে। মনে মনে নিজেকেই দোষারোপ করছে তন্ময়। সবাইকে মাথা নিচু করে চুপ থাকতে দেখে ফাইয়াজ কিছুটা চিৎকার করে বলে,


--"এতক্ষণ তো সবাই খুব করে বলছিলি ওদের মাঝে সেরকম কিছু নেই আমি ভুল ভাবছি। তাহলে এখন সবাই মুখে তালা দিয়ে আছিস কেন? হুয়াই? আন্সার মি।"


ফাইয়াজের চিৎকারে আনিতা শক্ত করে শাড়ি খামচে ধরে নিঃশব্দে কান্না করে দিলো। আহিয়ান আনিতার একহাত ধরে আনিতাকে আস্বস্ত করে চোখের ইশারায় বুঝালো,


--"আমি আছি তো। কিচ্ছু হবে না।"


বিনিময়ে আনিতা করুন চোখে তাকালো। আরহান কিছুটা এগিয়ে এসে আমতা আমতা করে ফাইয়াজকে বলে,


--"তোর ম্ মনে হয় দ্ দেখতে কোথাও একটা ভ্ ভুল___"


আহিয়ান আরহানকে কথার মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে বলে,


--"ফাইয়াজ সবটা দেখেছে আরহান। তোরা চাইলেও আর কিচ্ছু লুকোতে পারবি না। আর সত্যি কতদিন লুকিয়ে রাখা যায় বল? একদিন না একদিন তো এই সত্যিটা সবার সামনে আসতোই। আজ ফাইয়াজ জেনেছে কাল পুরো পরিবার জানবে। আর আমিও চাইছি না এভাবে আর লুকোচুরি করতে।"


আহিয়ানের কথায় এবার সবাই চুপ হয়ে গেলো। সত্যিই তো বলেছে আহিয়ান সত্যি কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। সেটা আজ হোক বা কাল সবার সামনে আসবেই। আর ফাইয়াজও তো আহিয়ানের বাহুডোরে আনিতাকে বন্দি অবস্থায় দেখেছে। কি মিথ্যে বলে কাটাবে ফাইয়াজকে? আহিয়ান ছোট ছোট কদম ফেলে ফাইয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে একটা শ্বাস নিলো। ফাইয়াজের চোখে চোখ রেখেই আহিয়ান বলে,


--"ফাইয়াজ তোর বোনকে ভালোবাসি আমি। শুধু আমি একা না ও ভালোবাসে আমায়। আর আমি তোর বোনকে ভালোবাসি এটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই আমার।"


--"মানে?"


--"তুই যা শুনেছিস একদম ঠিকই শুনেছিস। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি আজ থেকে না। গত দেড় বছর যাবত আমরা সম্পর্কে আছি। বিশ্বাস কর সত্যিই তোর এই পিচ্চি বোনটাকেই আমি ভালোবাসি।"


কথাগুলো বলে আহিয়ান ফাইয়াজের হাত ধরতেই ফাইয়াজ ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ফাইয়াজের কান্ডে অবাক চোখে আহিয়ান তাকায় ওর দিকে। আহিয়ানের মতো করে সেখানে উপস্থিত সকলেই বেশ অবাক হয়েছে ফাইয়াজ এভাবে হাত সরিয়ে নেওয়াতে। ফাইয়াজ আহিয়ানকে পাশ কেটে আনিতার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,


--"আহিয়ান এসব কি বলছে আনি বুড়ি? তুই ভালোবাসিস ওকে?"


আনিতা কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিলো। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে আনিতা। ওকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ফাইয়াজ ধমকে বলে,


--"কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?"


--"ভা্ ভালোবাসি আমি উ্ উনাকে।"


ফাইয়াজের ধমকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আনিতা। হেঁচকি তুলতে তুলতেই উপরের কথাটা বললো আনিতা। ফাইয়াজ পিছিয়ে গেলো কয়েক পা। আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,


--"ও ছোট আহিয়ান। ওর লাইফ নিয়ে এভাবে খেলিস না তুই। আমি জানি তুই কাউকে ভালোবাসতে পারিস না। অনেক মেয়ের সাথে তুই সম্পর্কে জড়াস শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য। এমন অনেক মেয়ে তোর লাইফে এসেছে আহিয়ান। আবার তোর যখন ইচ্ছে হয়েছে তখন তুই সেসব মেয়েদের ছুঁড়ে ফেলে দিতেও দু বার ভাবতি না। মেয়েদের ইমোশনস ভালোবাসা ভালোলাগা এসব নিয়ে তুই খেলতে ভালোবাসিস। কিন্তু আমার বোনটা ওরকম না। ওর বয়সই বা কত বল? ও্ ওর সাথে এরকমটা করিস না আহিয়ান।"


--"ফাইয়াজ আমি খেলছি না ওর সাথে। ট্রাস্ট মি। আমি সত্যিই আনিতাকে ভালোবাসি।"


--"এসব তুই সব্বাইকেই বলতি। তুই ভালোবাসিস না ওকে। কেন শুধু শুধু ওর লাইফে এসেছিস বল?"


তন্ময় এগিয়ে এসে ফাইয়াজকে বলে,


--"ফাইয়াজ তুই কেন বুঝতে চাইছিস না? আহিয়ান সত্যিই আনিতাকে ভালোবাসে।"


--"না না ওর এখন মনে হতে পারে যে ও আনিতাকে ভালোবাসে কিন্তু একটা সময় ও অন্যসব মেয়েদের মতো করেই আমার বোনটাকেও ছুঁড়ে ফেলে দিবে। আর আমি ভাই হয়ে এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না। আর আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড আমার বোনের লাইফ নষ্ট করবে এটা আমি মানতে পারবো না। আমি চাই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কোনোদিনও আমার চোখে খারাপ হোক। আমি চাই তুই সারাজীবন আমার বেস্ট ফ্রেন্ডই থাক। তোর জায়গাটা আমার লাইফে সারাজীবন থাকুক আহিয়ান। কিন্তু আনিতার সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ করে দিতে হবে। কিছু মাস বা কিছু বছর পর সম্পর্ক ভাঙার যে কষ্টটা পাবে তার থেকে এখন পাওয়াই ভালো। আনিতার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবি না আহিয়ান।"


আনিতা এগিয়ে এসে ফাইয়াজের হাত ধরে বলে,


--"ভাইয়া ভুল ভাবছো তুমি। হ্যাঁ আমিও জানি উনি একসময় অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করো এখন উনি নিজেকে পালটে নিয়েছে। উনার লাইফে এখন আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে নেই।"


--"আনি বুড়ি তুই খুব ছোট। দুনিয়ার কিচ্ছু এখনো দেখিসনি তুই। আর আহিয়ানকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি। ও কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তোর মতো এমন অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে ও।"


--"ভাইয়া আমার কথাটা___"


--"আনিতা আমি চাই না তুই এর মাঝে আর একটাও কথা বলিস।"


রোদেলা এসে আনিতাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। তাসকিয়া ফাইয়াজের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,


--"ভুল করছো ফাইয়াজ। খুব বড় ভুল কর___"


--"আমি তোমার থেকে কিছু শুনতে চাইনি তাসকিয়া।"


তাসকিয়া কিছু না বলে আনিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। শুভ রাতুল তন্ময় আরহান সবাই মিলে ফাইয়াজকে বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফাইয়াজ কারো কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছে না। আহিয়ান ফাইয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে,


--"আচ্ছা ফাইয়াজ কোনো মেয়ের সাথে আমাকে দু/তিন মাসের বেশি সময় ধরে সম্পর্কে জড়াতে দেখেছিস কখনো? দেখিসনি তো। তোরা তো জানতিস আমি একটা মেয়ের সাথে দু/তিন মাসের বেশি সম্পর্ক রাখতাম না। আর সেখানে আনিতার সাথে আমার দেড় বছরের সম্পর্ক। অন্যান্য সব মেয়েদের মতো করেই যদি আনিতার সাথে সময় কাটানোর জন্যই আমি সম্পর্ক করে থাকি তাহলে আনিতার সাথে কেন দু/তিন মাসের মাথাতেই সম্পর্ক শেষ করে দিলাম না? কেন আনিতার সাথে দেড় বছর ধরে সম্পর্কে আছি আমি? বলতে পারিস ফাইয়াজ?"


--"জানি না আমি।"


--"আর তুই আমাকে আনিতার যতটা কাছে দেখেছিস আমি কিন্তু আর কোনো মেয়ের এতটা কাছে যাইনি। ওদের হাত অব্দিও আমি ধরিনি কখনো। আর তোরা কিন্তু খুব ভালো করেই জানিস আমি ভালো না বাসলে কারো এতটা কাছে যাই না। আর কাউকে আমার কাছে আসতেও দেই না।"


এইটুকু বলে আহিয়ান থামলো। ফাইয়াজ তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলে,


--"আমার লাইফে আমি প্রথম মিলির কাছে গিয়েছিলাম। মিলি আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো। ওকেই প্রথম স্পর্শ করেছিলাম ওর হাত ধরেছিলাম হাগ করেছিলাম কপালে চুমু খেয়েছিলাম। মিলিকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম একসময় তাই ওর কিছুটা কাছে গিয়েছিলাম আমি। আর সেকেন্ড এন্ড লাস্ট টাইম আমি আনিতার এতটা কাছে এসেছি। আনিতাকে যদি ভালো না বাসতাম ওর এতটা কাছে আমি আসতাম না। সবার লাইফেই শেষ ভালোবাসা আসে। আর আনিতা হচ্ছে আমার শেষ ভালোবাসা। মিলির পরে আনিতাকে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। কিন্তু আনিতার পরে আর কাউকে আমি ভালোবাসতে পারবো না। আমি আগের আহিয়ান নেই ফাইয়াজ। আনিতার জন্য আমি নিজেকে পালটে নিয়েছি। আমি আনিতাকে সত্যিই ভালোবাসি ফাইয়াজ। বিশ্বাস কর অনেক বেশিই ভালোবাসি ওকে আমি।"


--"আমি এত কিছু শুনতে চাই না আহিয়ান। তোর কারনে আমি আমার বোনকে কষ্ট পেয়ে কাঁদতে দেখতে পারবো না। আর তোকে আমার চোখে খারাপ হওয়াটাও দেখতে পারবো না। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারাতে পারবো না। আমি চাইনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য আমার বোন কাঁদুক। আমি চাইনা আমার বেস্ট কোনোদিনও আমার চোখে খারাপ হোক।"


--"ফাইয়াজ___"


--"তুই আনিতার সাথে আর কোনোরকম সম্পর্ক রাখবি না। ব্যাস এতটুকুই।"


--"বোঝার চেষ্টা কর আনিতাকে ভালোবাসি আমি। আর আনিতাও ভালোবাসে আমায়।"


--"আমাদের এতবছরের বন্ধুত্বের দিব্যি আহিয়ান। আনিতার সাথে সব সম্পর্ক তুই এখানেই শেষ করে দে। কোনোরকম সম্পর্ক রাখবি না ওর সাথে।"


ফাইয়াজের কথায় আহিয়ান দু পা পিছিয়ে যায়। ও ঠিক কথাটা হজম কর‍তে পারছে না। ওদের এতবছরের বন্ধুত্বকে টেনে আনলো ফাইয়াজ? রাতুল এগিয়ে এসে ফাইয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা চিৎকার করেই বলে,


--"কি বলছিস কি তুই এসব? পাগল হয়ে গেছিস নাকি?"


--"আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি। এতেই ওদের দুজনের জন্য ভালো হবে। এতে আহিয়ান আনিতা দুজনেই ভালো থাকবে। আর আমাদের ফ্রেন্ডশিপও আগের মতোই থাকবে।"


--"এতে ওরা কেউ-ই ভালো থাকবে না ফাইয়াজ ভাইয়া। ওরা দুজন দুজনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আপনি ঠিক করছেন না এসব।"


কথাগুলো বলে রোদেলা থামতেই তন্ময় এসে ফাইয়াজের দু কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে রাগী স্বরে চিৎকার করে বলে,


--"তুই যে দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করে দিচ্ছিস সেটা তুই কি বুঝতে পারছিস না ফাইয়াজ? এতে আনিতা বা আহিয়ান কেউ-ই ভালো থাকবে না। তুই আনিতার ভালো করতে গিয়ে উলটো আনিতার খারাপ করছিস। আনিতার থেকে আহিয়ানকে সরিয়ে তুই ওকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছিস। কেন তুই এটা বুঝতে পার___"


--"তুই যা বলবি ত্ তাই হবে ফাইয়াজ। শেষ করে দিলাম আ্ আনিতার সাথে সব স্ সম্পর্ক। আর কোনোদিনই ওকে ব্ বলবো না ভা্ ভালোবাসি। আজকের পর থেকে ওর সাথে আ্ আমার আর কোনো সম্পর্ক থা্ থাকবে না।"


আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা ধপ করে ছাদের ফ্লোরে বসে পড়লো৷ তন্ময় রাতুল রোদেলা ওরা সবাই অবাক চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইয়াজ খুব খুশি হয় আহিয়ানের কথা শুনে। ফাইয়াজ এগিয়ে এসে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,


--"আমি জানতাম তুই আমার কথা ফেলতে পারবি না। আমি তোর, আনিতার দুজনেরই ভালো চাই। আমি চাই না তুই কোনোদিন আমার চোখে বা আনিতার চোখে খারাপ হোস। আর আমি এটাও চাই না তোর দ্বারা আনিতা কষ্ট পাক। আমি সত্যিই আজ খুব খুশি হয়েছি। আমি জানতাম তুই আমাদের বন্ধুত্ব কিছুতেই নষ্ট হতে দিবি না।"


কথাগুলো বলে ফাইয়াজ আহিয়ানকে ছেড়ে দিলো। নিচে থেকে বেশ কয়েবার ফাইয়াজের ডাক আসাতে ফাইয়াজ ওদের সবাইকে নিচে আসতে বলে নেমে গেলো ছাদ থেকে। জেরিন আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


--"কি করলে তুমি এটা? শেষ করে দিলে সবকিছু? একবার আনিতার কথাটাও ভাবলে না?"


--"এছাড়া আর কি করতাম আমি? তোমরাই বলো না আর কি করার আছে আমার?"


--আমরা সবাই ছিলাম আহিয়ান। ঠিক কোনো না কোনো ভাবে ফাইয়াজকে মানিয়ে নিতাম। তুই হুট করে কেন ওকে কথা দিতে গেলি?


তন্ময়ের কথায় আয়াহিয়ান জবাবে কিছুই বলল না। শুভ এগিয়ে এসে আহিয়ানকে বলে,


--"আপনি এটা ঠিক করলেন না আহিয়ান ভাই। আপনার আর ফাইয়াজ ভাইয়ের বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য আপনি আনিতার সাথে সব শেষ করে দিলেন? ফাইয়াজ ভাইকে কথা দেওয়ার আগে একবারের জন্যও আনিতার কথা ভাবলেন না আপনি?


শুভর কথায় আহিয়ান চুপ করে রইলো। কোনো উত্তরই দিলো না। কি জবাব দিবে? আর সত্যিই তো আহিয়ান ওদের বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য নিজের ভালোবাসাকে শেষ করে দিলো। একটাবারের জন্যও আনিতার কথা ভাবলো না। মেয়েটা যে বড্ড বেশি ভালোবাসে ওকে। আহিয়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে আরহান বলে,


--"আমরা সবটা ম্যানেজ করে নিতাম আহিয়ান। তুই কেন ফাইয়াজকে কথা দিতে গেলি? আনিতার মনের অবস্থাটা একবার ভেবে দেখেছিস?"


আরহানের কথায় আহিয়ান আনিতার দিকে তাকালো। মেয়েটা পাথরের মূর্তির ন্যায় মেঝেতে বসে আছে। অনবরত চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর। আহিয়ান গিয়ে আনিতার দুই বাহু ধরে ওকে বসা থেকে দাঁড় করায়। তারপর আনিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,


--"একদম কাঁদবে না বলে দিলাম। সবসময় হাসতে হবে তোমাকে। হাসলে খুব সুন্দর লাগে তোমায় দেখতে বুঝলে? এরপর থেকে আর নো কান্নাকাটি অনলি স্মাইলিং ওকে?"


--"একটু আগে কি বললেন ওসব আপনি ফাইয়াজ ভাইয়াকে? ওসব মিথ্যে বলেছেন তাই না? বলুন না যা বলেছেন সব মিথ্যে ছিলো।"


আহিয়ান আনিতার গাল দুটো ধরে বলে,


--"কিচ্ছু মিথ্যে ছিলো না। সবটাই সত্যিই ছিলো। কথা দিয়েছি আমি ফাইয়াজকে। আর আজকের পর থেকে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই।"


ঝামটা মেরে আনিতা আহিয়ানের হাত সরিয়ে নেয় নিজের গাল থেকে। আহিয়ানের পাঞ্জাবির কর্লার শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,


--"নাহ। সব মিথ্যে ছিলো। আপনি এমনটা করতে পারেন না আমার সাথে। আপনি আমাদের সম্পর্ক এভাবে ভেঙে দিতে পারেন না। আপনার কাছে কি শুধুমাত্র আপনার বন্ধুত্বেরই মূল্য আছে? আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে? আমার কোনো মূল্য নেই আপনার লাইফে?"


আহিয়ান নিজের পাঞ্জাবির কর্লার থেকে আনিতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,


--"এভাবে কেঁদো না প্লিজ। আসতে আসতে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। ধীরে ধীরেই সবটা মেনে নিতে শিখবে তুমি। আসছি।"


কথাটা বলে আহিয়ান চলে আসতে নিলেই আনিতা সবার সামনেই আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে রেখেই চিৎকার করে বলে,


--"নাহ আপনি যাবেন না। আপনি কোত্থাও যাবেন না আমাকে ছেড়ে। আমি যেতে দিবো না আপনাকে। খুব খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে। আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। এভাবে থাকতে পারবো না আমি। আমায় একা করে দিয়ে চলে যাবেন না আপনি প্লিজ।"


কথাগুলো বলেই আনিতা জোরে জোরেই কাঁদতে শুরু করে দিলো। নিচে ফুল ভলিউমে সাউন্ড বক্স বাজার কারনে এখানকার কথা কেউ-ই শুনতে পাচ্ছে না। আনিতার এভাবে চিৎকার করে কান্না করা এমন আহাজারি কারো কানেই যাচ্ছে না। আহিয়ান আনিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উলটো ঘুরে নিজের চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে নিয়ে দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।"

চলবে।

Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.