Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৯ | bangla choti golpo

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_২৯

Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৯ | bangla choti golpo
Bangla Golpo pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৯ | bangla choti golpo


কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আনিতাও আহিয়ানের পিছু ছুটতে শুরু করে। হুট করেই আনিতার পায়ে একটা তাড় কাটা বিঁধে যায়। পরবর্তীতে পা ধরে চিৎকার করে ওখানেই বসে পরে ও। আনিতার চিৎকারে আহিয়ান এবং তন্ময় রোদেলা ওরা সকলেই ছুটে আসে। আনিতাকে এভাবে ডান পা চেপে ধরে বসে থাকতে দেখে আহিয়ানও হাটু ভেঙে বসে আনিতার সামনে। যে হাতে আনিতা ডান পায়ের তালু চেপে ধরে রেখেছে সে হাত ভেদ করে রক্ত বের হতে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় আহিয়ান। তন্ময় রোদেলা রাতুল ওরা সকলেই পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওরাও বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছে এভাবে রক্ত বের হতে দেখে। আহিয়ান আনিতার হাত সরাতেই দেখে ডান পায়ের তালুতে অনেক রক্ত। রক্তে আনিতার হাতও ভিজে গিয়েছে পুরো। আর ডান পায়ের তালুতে তাড়কাটা-টা এখনো বিঁধে আছে। আহিয়ান একবার আনিতার দিকে তাকিয়ে জোরে টান দিয়ে তাড়াকাটা বের করে ফেলে। সাথে সাথেই গলগল করে রক্ত বের হতে থাকে। আনিতা চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। অনবরত ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আহিয়ান অস্থির কন্ঠে বলে,


--"কি করে হলো এটা? দেখে চলতে পারো না? ইশ্ কতটা লেগে গিয়েছে। কে বলেছিলো এভাবে অস্থির হয়ে আমার পিছনে ছুটতে?"


--"আহিয়ান বকাবকি পরে কর। অনেকটা লেগেছে আনিতার পায়ে। এত রাতে তো ডক্টর পাওয়া সম্ভব না। আপাতত ওর রক্ত বের হওয়া বন্ধ করতে হবে।"


তন্ময়ের কথায় সকলেই সহমত জানায়। কিন্তু রক্ত পড়া কিভাবে বন্ধ করবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না ওরা। রোদেলা কিছু একটা ভেবে ছাদের যেখানে আনিতার ফুলগাছের টব রাখা ছিলো সেখানে চলে যায়। সেখান থেকে গাঁধা ফুলের কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে আহিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,


--"এটার রস দিলে আপাতত রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এটা দিয়ে দেখতে পারেন।"


আহিয়ান কোনোকিছু না ভেবে রোদেলার হাত থেকে পাতাগুলো হাতের তালুতে নিয়ে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডলে সেটাকে আনিতার পায়ের ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়। আনিতা আহিয়ানের এক হাত খামচে ধরে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আহিয়ান আনিতার হাতের উপর হাত রেখে বলে,


--"ইশ্! ক্ষতটা অনেক গভীর। খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না?"


আহিয়ানের কথা শুনে আনিতার তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। আনিতার মনে হচ্ছে আহিয়ান ওকে কোনো কৌতুক জিজ্ঞেস করেছে। আনিতা ঠোঁটের কোনে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললো,


--"মনের ভিতররের ক্ষতটা যে আরো বেশি গভীর আহিয়ান। মনের ভিতরে যে ক্ষত হয়েছে তার কাছে বাহ্যিক এই ক্ষতটা অতি তুচ্ছ আহিয়ান। আমার ভিতরটা যে জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাইরের এই ক্ষতটা সারিয়ে তুলতে পারবেন কিন্তু আমার মনের ক্ষতটা কিভাবে সারাবেন আপনি? আপনি আমায় ছেড়ে গেলে যে আমার সেই ক্ষতটা গভীর থেকে গভীরতম হবে আহিয়ান।"


আহিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। এখানে উপস্থিত সকলেরই আহিয়ানের উপর বেশ রাগ হচ্ছে। আহিয়ান আনিতার হাত ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাঁড়ায়। শুভকে উদ্দেশ্য করে আহিয়ান বলে,


--"আনিতাকে নিচে ওর রুমে নিয়ে যাও। ক্ষতটা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিও। আর কাল সকালেই ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবে। নয়তো ইনফেকশন হয়ে যাবে।"


--"আমাকে যেহেতু আপনি ছেড়েই যাচ্ছেন আহিয়ান তাহলে আমায় নিয়ে আর আপনার ভাবতে হবে না। আমাকে নিয়ে ভাবাটা আপনার জন্য আর শোভা পায় না।"


কথাটা বলে আনিতা উঠে দাঁড়াতে নেয়। পায়ে ব্যাথা পেয়ে পড়ে যেতে নিলেই আহিয়ান ওকে ধরার জন্য হাত বাড়ায়। আনিতা হাত দিয়ে আহিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,


--"বাকিটা জীবন আমায় আগলে রাখার জন্য তো আপনি থাকবেন না আহিয়ান। তাহলে এইটুকু সময়ও আমায় আগলে নিতে হবে না। বাকিটা পথ যখন আমার একাই চলতে হবে তাহলে এই পথটুকুও আমি একা চলতে পারবো।"


কথাগুলো বলে আনিতা খোঁড়াতে খোঁড়াতেই সিড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো। বার কয়েক সবাই মিলে ডেকেও কোনো লাভ হলো না। আনিতার পিছু পিছু রোদেলা তাসকিয়াও চলে গেলো। জেরিন আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


--"ফাইয়াজ ভাইয়ার সাথে সাথে তুমিও চরম ভুল করছো আহিয়ান। চরম ভুল করছো।"


কথাটা বলে জেরিন আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না। হনহনিয়ে নেমে গেলো ছাদ থেকে। শুভ একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে এলো। রাতুল আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই আহিয়ান তাকালো ওর দিকে। রাতুল মলিন হেসে বলে,


--"নিচে চল।"


--"তোরা যা আমি এক্ষুনি আসছি।"


রাতুল আর আরহান চলে যেতেই আহিয়ান ছাদের এক কোনে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো। দৃষ্টি অন্ধকার ওই দূর আকাশের দিকে। তন্ময় এসে আহিয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,


--"এখনো সময় আছে আহিয়ান। সবটা ঠিক করে নে। আমরা সবাই মিলে ফাইয়াজকে ম্যানেজ করে নিবো। আমরা বুঝাবো ওকে যে তুই ঠিক কতটা ভালোবাসিস আনিতাকে। তোরা দুজন যে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে ভালো থাকতে পারবি না এটা আমরা ঠিক বুঝাবো ওকে। প্লিজ তুই আনিতার সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করে নে।"


--"আর সম্ভব না তন্ময়। আমি ফাইয়াজকে কথা দিয়ে ফেলেছি।"


--"একটা দুটো কথা ব্রেক করলে কিচ্ছু হয় না আহিয়ান। তুই ফাইয়াজের কথায় আনিতার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে না তুই ভালো থাকবি আর না আনিতা ভালো থাকবে। তোদের দুজনের ভালো থাকার জন্য হলেও এই কথাটা ব্রেক কর তুই। তোর জন্য না হলেও অন্তত আনিতার কথা ভেবে? অন্তত আনিতার জন্য? প্লিজ।"


বিনিময়ে আহিয়ান কিছুই বলল না। মলিন হাসলো শুধু। আহিয়ান আবার আগের মতোই দূর আকাশে তাকিয়ে আছে। তন্ময় আহিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে,


--"দেখ আহিয়ান আমি জানি তুইও ভালো থাকতে পারবি না। আনিতা যতটা কষ্ট পাচ্ছে তুইও ঠিক ততটাই কষ্ট পাচ্ছিস। কেন শুধু শুধু আনিতাকে কষ্ট দিচ্ছিস আর নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস? একটা সময় তো খুব কষ্ট পেয়েছিলি। বিচ্ছেদের যন্ত্রণা কতটা সেটা তুই একবার অনুভব করেছিলি আহিয়ান। তাহলে আবারো সেই সেম যন্ত্রণাটা তুই কেন পেতে চাচ্ছিস?"


আহিয়ান এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। তন্ময়ের দিকে ঘুরে শক্ত করে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরলো ও। এতক্ষণের আটকে রাখা অশ্রু গুলো এখন বাঁধ ভেঙে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ভাঙা ভাঙা গলায় আহিয়ান বলে,


--"সব যন্ত্রণা আমাকেই কেন সহ্য করতে হবে বল তো? আমার লাইফেই কেন বার বার বিচ্ছেদ নামক যন্ত্রনাটা আসবে? বিধাতা কেন বার বার আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে আমার থেকে কেড়ে নেয়? আমি কি একটুখানি ভালোবাসার সুখ পেতে পারি না? ষোল বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। আমার লাইফের সবথেকে কাছের সবথেকে বেশি ভালোবাসার মানুষটাকে আমি হারিয়ে ফেললাম। মানুষ অনন্তকাল বেঁচে থাকে না ওকে মেনে নিলাম সেটা। কিন্তু এরপর মিলি এসেছিলো আমার লাইফে। প্রচুর ভালোবেসেছিলাম ওকে। কিন্তু মিলি কি করলো? কোনোকালেই ভালোবাসলো না আমায়। দুটো বছর অভিনয় করেই গেলো। অন্যকাউকে বিয়ে করে নিলো। ওর বিয়ের কথাটা আমাকে জানানোর বিন্দু পরিমান প্রয়োজনবোধ করলো না। অথচ আমরা তখন রিলেশনে ছিলাম। ভাগ্যবিধাতা সেখানেও ভুল মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছিলো। তাই একটা সময় আমার সে ভালোবাসার মানুষটাকেও আমি হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আজ? আজ আনিতাকে কেন হারাচ্ছি আমি? ওকে ছেড়ে তো থাকা সম্ভব না আমার। ওই পিচ্চিটাকে সত্যিই প্রচন্ডরকম ভালোবাসি আমি। আমি ওকে যতটা ভালোবাসি তার থেকে অনেক বেশি ও আমাকে ভালোবাসে। সেকেন্ড এন্ড লাস্ট টাইম লাইফে ঠিকঠাক একটা ভালোবাসার মানুষ আমি পেয়েছিলাম তন্ময়। কিন্তু ভাগ্যবিধাতার এখানেও নিষ্ঠুর হতে হলো। একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছি আমি আমার আনিতাকে।"


--"আহিয়ান সামলা নিজেকে। আনিতা হারাবে না তোর থেকে। ও তোর ছিলো এতদিন আর তোরই থাকবে।"


আহিয়ানের পিঠে হাত বুলিয়ে তন্ময় কথাটা বলল। আহিয়ান তন্ময়কে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে আহিয়ান বলে,


--"থাকবে না রে। ও আর আমার থাকবে না। আমি নিজে ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আমি নিজ হাতে আমাদের সম্পর্কটাকে ভেঙে ফেলেছি।"


--"তাতে কি হয়েছে? আনিতা তো সয়ং দেখেছে তুই কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ওর সাথে সম্পর্কটা ভেঙে দিয়েছিস। ও একটু বাচ্চা আছে বাট আ'ম সিউর ও বুঝবে সবটা।"


--"আচ্ছা ফাইয়াজ হঠাৎ করেই এরকম কেন করছে? ও তো জানে আমাকে। ফাইয়াজ নিশ্চয়ই জানে আমি আর যাই করি না কেন ওর বোনের সাথে কখনো ভালোবাসার নাটকটা করতে পারি না। হ্যাঁ আমি নিজেও মানছি একটা সময় আমি অনেক সম্পর্কে জড়াতাম আবার সম্পর্ক ভেঙেও ফেলতাম তাই বলে আনির সাথে? ফাইয়াজকে এত করে বলার পরও ও বিশ্বাস করলো না আমার কথা। ও বুঝলো না আমি আমার পিচ্চি-পাখিটাকে সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসি। দুম করে ও আমাদের এতবছরের বন্ধুত্বের দিব্যি দিয়ে দিলো। এছাড়া আর কি করতাম আমি? বল না কি করতাম? ফাইয়াজ যে আমার লাইফের একটা অংশ। ওকে ছেড়ে কিভাবে আনিতাকে আঁকড়ে ধরি আমি? আর আনিতাকে ছেড়েই বা কিভাবে থাকবো আমি? আম্ আমি সত্যি আর পা্ পারছি না বিশ্বাস কর। এভাবে দ্ দম বন্ধ হয়ে আ্ আসছে আমার।"


--"চিন্তা করিস না। আমরা আছি তো। তোর আনিতাকে তোর থেকে হারাতে দিবো না আমরা। ফাইয়াজের মতামত নিয়েই তোর পিচ্চিকে আবার তোর লাইফে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যা করতে হয় আমরা তাই করবো। তুই একদম নিশ্চিন্তে থাক। একটু আগে কি হয়েছে না হয়েছে সব ভুলে যা। জাস্ট একটা কথাই মনে রাখ আনিতা তোর ছিলো আর ইন ফিউচার ও তোরই থাকবে।"


আহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আহিয়ানের কাঁধে কেউ একজন হাত রাখে। আহিয়ান পাশ ফিরে ফাইয়াজকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানিটা মুছে নেয়। তারপর হাসিমুখেই ফাইয়াজের দিকে ঘুরে বলে,


--"ফাইয়াজ তুই? কিছু বলবি?"


--"কাঁদছিলি?"


--"নাহ তো। আমি কাঁদবো কেন?"


--"আমার তো মনে হলো তুই কাঁদছিলি। এখনো তোর চোখে আমি স্পষ্ট পানি দেখতে পাচ্ছি।"


আহিয়ান দুহাত দিয়ে নিজের চোখদুটো ভালো করে ডলে নিয়ে হাসিমুখেই বলে,


--"আরেহ না ভুল দেখেছিস তুই। কাঁদছি না আমি।"


--"মিথ্যে বলছিস না?"


--"একদমই না।"


--"মিথ্যে বললেই বা কি ফাইয়াজ? তোকে তো হাজার বার সত্যিটা বলেও আমরা বিশ্বাস করাতে পারিনি। তুই তো নিজের চোখে সত্যিটা দেখেও না দেখার ভান করে আছিস। আচ্ছা ফাইয়াজ তোর কি মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশি বেশিই করছিস? তুই কি সত্যিই বুঝতে পারছিস না আহিয়ান যা বলছে সব সত্যি। আহিয়ান আনিতার জন্য পালটে ফেলেছে নিজেকে ও সত্যি সত্যিই আনিতাকে ভালোবাসে। আচ্ছা তুই তো অনেক বছর ধরে আহিয়ানকে চিনিস। ও তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ফাইয়াজ। আগে না আহিয়ান তোকে কোনো কিছু বলার আগেই তুই সবটা বুঝে ফেলতি? তাহলে আজ আহিয়ান তোকে সবটা বলার পরেও তুই কেন বুঝতে পারছিস না বল তো? আহিয়ানের কষ্টে না তুই নিজেও কষ্ট পেতি? তাহলে আজ তুই নিজেই কি করে ওকে এতটা কষ্ট দিচ্ছিস ফাইয়াজ? শুধুমাত্র তোর সাথে বন্ধুত্ব রক্ষার্থে আহিয়ান নিজের ভালোবাসাকে নিজ হাতে শেষ করে দিলো। শুধুমাত্র তোর জন্য। আর তুই সামান্য আনিতা আর আহিয়ানের সম্পর্কটাকে মেনে নিতে পারছিস না?"


তন্ময় এইটুকু বলতেই আহিয়ান ওর হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে,


--"তন্ময় অফ যা প্লিজ। এসব নিয়ে আর কোনো কথা যাতে না হয়।"


--"এখন আমায় থামাতে আসিস না আহিয়ান। তখন আমি চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এখন আর পারছি না। বলতে দে আমাকে।"


আহিয়ানকে এসব বলে তন্ময় আবার ফাইয়াজের দিকে ঘুরে বলে,


--"আহিয়ান আগে কেমন ছিলো না ছিলো সেসব ভুলে ওদের ভালোবাসাটাকে মেনে নিতে পারছিস না? আচ্ছা ফাইয়াজ সত্যি করে বলতো গত এক থেকে দেড় বছরে তুই কি আহিয়ানের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখিস নি? যে আহিয়ান আগে সবসময় সিগারেট আর মেয়েদের সাথে সম্পর্কের নেশায় মেতে থাকতো সেই আহিয়ানকে কি তুই গত দেড় বছরে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতে দেখেছিস? তেমন ভাবে সিগারেট খেতে দেখেছিস? ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও তুই ওর মাঝে এই পরিবর্তনগুলো খেয়াল করিসনি? যেখানে আহিয়ান তোর জন্য ওর ভালোবাসাকে ছেড়ে দিচ্ছে সেখানে তুই আহিয়ান আর আনিতা দুজনেরই ভালো থাকার জন্য ওদের ভালোবাসাটা মেনে নিতে পারছিস না? তাহলে কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড তুই? দেখ ফাইয়াজ এতে আনিতা বা আহিয়ান কেউ-ই ভালো থাকবে না। ওরা দুজন দুজনকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে। তাহলে আনিতার ভাই হয়ে, আহিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কেন ওদের দুজনকে আলাদা করে দিচ্ছিস তুই?"


তন্ময়ের বলা প্রত্যেকটা কথা ফাইয়াজের গাঁয়ে গিয়ে তীরের মতো বিঁধছে। ওর কাছে সবটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ফাইয়াজ ঠিক ভুল কোনোটাই বুঝে উঠতে পারছে না। দোটানার মাঝে পড়ে গেছে। "আচ্ছা ওদের দুজনের ভালো করতে গিয়ে খারাপটা করে ফেলছি না তো আমি?" মনে মনে এসব ভাবছে ফাইয়াজ। এতগুলো মানুষ কি মিথ্যে বলবে? আর আহিয়ান তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। তাহলে কি সবাই ঠিক আর ও ভুল? ফাইয়াজ আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। ওর মাথার ভিতর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। ফাইয়াজ নিজের মাথার চুল টেনে ধরে কিছুটা চিৎকার করে বলে,


--"আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না তন্ময়। আমার যা বলার আমি তা আগেই বলে দিয়েছি।"


--"কিন্তু এসব তো তোকে শুনতে হবে ফাইয়াজ। দুটো ভালোবাসার মানুষকে তুই আলাদা করতে চাইছিস। কিন্তু কেন? বল তো? তুইও তো তাসকিয়াকে ভালোবাসিস। তুই আহিয়ানের সাথে যেরকমটা করছিস এখন ওর ভাইও যদি তোর সাথে সেম কাজটা করে তখন কি করবি? পারবি তো নিজেকে সামলাতে? পারবি তো সবটা এভাবে মুখ বুজে সহ্য করে নিতে? নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে ভালো থাকতে পারবি তো তুই?"


--"নাহ এরকমটা হবে না। তাসকিয়া সবসময় আমারই থাকবে। পারবো না আমি ওকে ছাড়া থাকতে।"


--"তাহলে আহিয়ান আনিতা ওরা দুজন কিভাবে থাকবে নিজেদের ভালোবাসা হারিয়ে? তোর ভালোবাসাটা ভালোবাসা। আর ওদের দুজনের ভালোবাসাটা ভালোবাসা না তাই-না? তুই যদি তাসকিয়াকে ছাড়া থাকতে না পারিস তাহলে আহিয়ান কিভাবে পারবে? একবার বোঝার চেষ্টা কর ফাইয়াজ। আহিয়ান আগের মতো নেই। ও সত্যিই আনিতাকে ভালোবাসে। সেটা আর কেউ না জানলেও আমি খুউব ভালো করে জানি। আর আনিতাও আহিয়ানকে বড্ড ভালোবাসে রে। ওদের দুজনের সকল ভালোবাসাময় মূহুর্ত গুলোর একমাত্র সাক্ষী আমি নিজে। আমি ওদের ভালোবাসার প্রত্যেকটা মোমেন্টে ওদের সাথে ছিলাম। আমি নিজের চোখে দেখেছি ওরা দুজন দুজনকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।"


--"এসব কথা এখন থাক। খাবি নিচে চল।"


কথাটা বলে ফাইয়াজ আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলো ছাদ থেকে। তন্ময় অবাক হয়ে ফাইয়াজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ক্ষানিকটা সময়। এত করে বুঝিয়েও এত কিছু বলেও কোনো লাভ হলো না? তবুও ফাইয়াজ বুঝলো না ওদের ভালোবাসাটা? তন্ময় মনে মনে এইসবই ভাবছিলো। আহিয়ান তন্ময়ের কাঁধে হাত রাখে। তন্ময় আহিয়ানের দিকে ফিরে তাকাতেই আহিয়ান মলিন হেসে বলে,


--"বাদ দে। আল্লাহ আনিতাকে আমার জন্য হয়তো লিখেননি তাই এমনটা হচ্ছে।"


--"আমিও দেখি ফাইয়াজ কিভাবে না মেনে থাকে। আমিও তোকে কথা দিচ্ছি তোর আর আনিতার মিল আমি করাবোই। তুই ফাইয়াজকে কথা দিয়েছিস আনিতার সাথে কোনোরকম সম্পর্ক রাখবি না। কিন্তু আমি তো ফাইয়াজকে কথা দেইনি। আমি সবটা ঠিক করে দিবো। ফাইয়াজকে মানিয়ে আবার আনিতাকে তোর লাইফে ফিরিয়ে দিবো আমি। এর জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি করবো। তোর আনিতাকে তোর থেকে আমি কিছুতেই হারাতে দিবো না। আই প্রমিস।"

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.