শুধু তোমারই জন্য
পর্ব_১৭+১৮
Bangla love story | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৭+১৮ | bangla choti golpo |
মাঠের এক কোনে আনিতা তাসকিয়া আর রোদেলা বসে আছে। অনেকটা সময় যাবত আনিতা অন্যমনস্ক হয়ে আছে। আসার পর থেকেই কি যেন একটা ভেবে চলছে। ক্লাসেও গেলো না। এসে থেকেই এখানে বসা। রোদেলা আনিতার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
--"কিরে আনিতা কি হয়েছে তোর? এসে থেকেই এভাবে বসে আছিস কোনো কথা বলছিস না। চোখ দুটোও কেমন অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে আছে। আবার কেঁদেছিস তুই?"
আনিতা এখনো চুপ করেই আছে। রোদেলা যে ওকে এতগুলো কথা বলল সেদিকে ওর কোনো হেলদোল নেই। সেই একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে। রোদেলা আর তাসকিয়া একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তাসকিয়া আনিতার দিকে কিছুটা এগিয়ে বসে বলে,
--"কি হয়েছে বল না? এভাবে চুপ করে থাকলে বুঝবো কিভাবে?"
আনিতা এবারে তাকালো ওদের দিকে। আনিতার চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠেছে। টলমল চোখেই ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"আহিয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে কাল বিকেলে।"
কথাটা বলতে বলতেই আনিতার গাল বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তৎক্ষনাৎ আনিতা চোখের পানিটা মুছে নিলো। রোদেলা আর তাসকিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রোদেলা বলে,
--"এখন কি খবর ওর?"
--"জানি না। ফাইয়াজ ভাইয়ার ফোন অফ আর তন্ময় বা রাতুল ওরা কেউই ফোন রিসিভ করেনি।"
--"ঝামেলায় ছিলো মনে হয়। আজকে ফোন দিয়েছিলি?"
তাসকিয়ার কথায় মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। রোদেলা বলে,
--"এখন আবার ফোন দিয়ে দেখ।"
--"আমি যা...যাবো আহিয়ানের কাছে।"
--"কি বলছিস? যেতে প্রায় দু/তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে আবার বাসায় ফিরতে হবে। তারউপর আমরা কেউই রাস্তাঘাট তেমন ভাবে চিনি না। যাবো কি করে?"
রোদেলার প্রশ্নের জবাবে আনিতা বলে,
--"তোদের যেতে হবে না তোরা বাসায় যা আমি একাই যাবো।"
তাসকিয়া আর রোদেলা দুজনেই অবাক চোখে তাকায় ওর দিকে। তাসকিয়া কিছুটা রেগেই বলে,
--"তোর মাথা ঠিক আছে তো? কি বলছিস তুই এসব? আমাদের এখানে হলে একটা কথা ছিলো কিন্তু ও তো ঢাকায় আছে। ঢাকার রাস্তাঘাট চিনিস কিছু? রাস্তায় কোনো বিপদ-আপদ হয়ে গেলে?"
--"আর তুই ভাবলি কি করে তোকে আমরা একা ছাড়বো? যা-ই হোক আমরা যাবো তোর সাথে তুই রাতুল বা তন্ময় ভাইয়াকে ফোন দিয়ে হসপিটালের নাম আর হসপিটাল কোথায় সেটা জিজ্ঞেস কর।"
রোদেলার কথায় তাসকিয়া সহমত প্রকাশ করে। আনিতা কান্নাভেজা চোখে একবার ওদের দুজনের দিকে তাকালো। তারপর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তন্ময়ের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। আবার ডায়াল করলো কিন্তু এবারে ব্যস্ত দেখাচ্ছে। আনিতা ফোনটা রেখে দিতেই ফোন বেজে উঠলো। তন্ময়ের ফোন দেখে সাথে সাথেই রিসিভ করলো আনিতা,
--"হ্যাঁ আনিতা বলো।"
--"আহিয়ান কেমন আছে ভাইয়া? ও ঠিক আছে তো?"
--"চিন্তার কিছু নেই আনিতা ও এখন ঠিক আছে।"
--"ওর সাথে কথা বলা যাবে একটু?"
--"আধ ঘন্টা আগে ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করা হয়েছে। ঘুমোচ্ছে এখন ও। ঘুম ভাঙলে কথা বলিয়ে দেই?"
--"আচ্ছা ঢাকা কোথায় আছো তোমরা? হসপিটালের নাম কি?"
--"কেন বলো তো?"
--"আসবো আমি।"
--"পাগল হইছো নাকি? রাস্তাঘাট চিনো তুমি? একা তো রাস্তাই পার হতে পারো না আর তুমি ঢাকায় আসবে একা? আসতে হবে না তোমার আমি বললাম তো ওর সাথে তোমার কথা বলিয়ে দিবো।"
--"প্লিজ ভাইয়া আমি একবার ওকে দেখতে চাই।"
--"তুমি এখানে একা আসবা এটা যদি পরে আহিয়ান জানে তোমাকে তো আস্ত রাখবে না সাথে আমাকেও না। ও সুস্থ হলে ওকে নিয়ে আসবো তোমাদের কলেজে তোমার সাথে দেখা করানোর জন্য ওকে?"
--"আমি এখনই যাবো ওর কাছে প্লিজ। জাস্ট একটুখানি দেখেই চলে আসবো।"
--"আচ্ছা তুমি কি কলেজে আছো এখন?"
--"হ্যাঁ।"
--"তাহলে ওখানেই থাকো আমি আসছি। আমি পৌঁছে ফোন দিলে বের হবা কলেজ থেকে।"
--"আচ্ছা।"
এই বলে আনিতা ফোন রেখে দিলো। রোদেলা আর তাসকিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
--"তন্ময় ভাইয়া আসছে। তোদের আর যেতে হবে না। বাসায় চিন্তা করবে আবার। তোরা শুধু আমার দিকটা একটু ম্যানেজ করে নিস।"
--"কিন্তু তুই একা___"
--"একা কোথায় যাচ্ছি রোদেলা? তন্ময় ভাইয়া আসছে তো। সেই আবার আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে চিন্তা করিস না একদম।"
ওখানে বসেই কথা বলছিলো ওরা। ওদের সাথে জারা আর শুভও যোগ হয়েছে। যবে থেকে প্রথম আহিয়ানকে দেখতে পেয়েছে সেদিন থেকেই জারা একদম আনিতার পিছু লেগে আছে। আহিয়ানের সাথে ওর জাস্ট একটা ফ্রেন্ডশিপ করে দেওয়ার জন্য। বাকীটা নাকি জারা নিজেই করে নিতে পারবে। এরপর থেকে জারা ওদের সাথে এসে প্রায় সময় আড্ডা দেয়। আর ওর আড্ডার টপিক একমাত্র আহিয়ান। বেশ বিরক্ত হয় ওরা সকলে। শুভ তো মাঝে মাঝে কথাও শুনিয়ে দেয়। কিন্তু তবুও আহিয়ান আহিয়ান করবেই।
বেশ ক্ষানিকটা পর জেরিন এসে বসলো আনিতার পাশে। জেরিন জানালো,
--"আমিও যাবো তোর সাথে। তন্ময় এর সাথে রাতুলও আসছে। তুই একা যাবি তাই তন্ময় রাতুলকে বলেছে আমায় ফোন করে বলতে আমিও যাতে যাই।"
--"আচ্ছা আসতে তো লেট হতে পারে। তোর বাসায় কি বলবি? চিন্তা করবে না সবাই?"
--"সেটা আমি কিছু একটা বলে কাটিয়ে নিবো। ওরা কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে।"
আনিতা কিছু বলবে তার আগেই জারা প্রশ্ন করে ওদের,
--"তন্ময় আর রাতুল তো আহিয়ানের বন্ধু রাইট? ওদের সাথে কোথায় যাবি তোরা দুজন?"
জারার কথায় বেশ বিরক্ত হলো সবাই। সবকিছুতে বেশ কৌতূহল এই মেয়েটার। জেরিন বলে,
--"আহিয়ানকে দেখতে।"
--"কেন কি হয়েছে আহিয়ানের?"
জারার কথায় বিরক্ত হয়েই শুভ বলে,
--"এক্সিডেন্ট হয়েছে।"
কথাটা শোনার সাথে সাথেই জারার হাজারো প্রশ্ন আহিয়ান কেমন আছে? কিভাবে এক্সিডেন্ট হলো? আনিতা আর জেরিন কেন দেখতে যাচ্ছে? আহিয়ানের সাথে কি সম্পর্ক ওদের দুজনের? আরো নানান প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলো। তাসকিয়া বলে,
--"জেরিনের বিএফ এর ফ্রেন্ড আহিয়ান। তাই ও যেতেই পারে এতে তোর সমস্যা কি বল তো?"
--"হ্যাঁ যাচ্ছে মানলাম। কিন্তু আনিতা কেন যাচ্ছে? আর জেরিন তো বলল আনিতার যাতে একা যেতে না হয় সেজন্য ও যাচ্ছে। তার মানে আনিতাই প্রথমে যেতে চেয়েছে কিন্তু কেন?"
--"আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি? একটু বল তো? আনিতার যেখানে ইচ্ছে যাক এতে তুই এত মাথা ঘামাচ্ছিস কেন?"
রোদেলার প্রশ্নের জবাবে জারা ফট করেই বলে,
--"আমিও যাবো তোদের সাথে। আহিয়ানের কিছু হলে আমার কি হবে? আমি যে সত্যিই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।"
আনিতা জেরিন ওরা সকলে শুধু শুনছে জারার কথা। কেউই কিছু বলছে না। আনিতা তো শুরু থেকেই চুপ। শুভ কিছুটা তেজ দেখিয়ে বলে,
--"তুই যাবি কেন? আর আহিয়ান ভাই তো তোকে ভালোবাসে না। ইভেন তোর সাথে কোনো দিন কথাও বলেনি তাহলে এত পাগল হচ্ছিস কেন তুই?"
--"তাতে কি? আমি তো ভালোবাসি। আর আহিয়ানও একদিন ঠিকই ভালোবাসবে আমায়। আর আমি যাবো ওদের সাথে।"
এতক্ষণে আনিতা কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু তার আগেই আনিতার ফোন বেজে উঠলো। আনিতা ফোন বের করে দেখে তন্ময় এর ফোন। আনিতা ওদের বলল,
--"ওরা এসে পড়েছে চল।"
এই বলে আনিতা উঠে দাঁড়ালো। ওর সাথে সাথে বাকী সবাইও উঠে দাঁড়ায়। কলেজের বাইরে আসতেই দেখলো রাতুল আর তন্ময় দুজনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা আর জেরিন ওদের সবাইকে বাই বলে বাইকে উঠে বসলো। জেরিন রাতুলের বাইকে গিয়ে বসেছে। আর আনিতা তন্ময়ের বাইকে। জারা এগিয়ে যাচ্ছিলো আনিতার পাশে বসার জন্য। কিন্তু শুভ ওকে আসতে দেয়নি। ওর হাত ধরে আটকে দিয়েছিলো। তারপর তন্ময়কে বলে,
--"ভাই সাবধানে যাইয়েন। আর ওদের আবার এখানেই নিয়ে দিয়ে যাবেন প্লিজ।"
--"সেটা চিন্তা করতে হবে না। আসছি আমরা।"
এই বলেই ওরা বাইক স্টার্ট দিলো। ওরা চোখের আড়াল হতেই শুভ জারার হাত ছেড়ে দিলো। জারা রাগ দেখিয়ে বলে,
--"তুই আমাকে যেতে দিলি না কেন?"
--"কাবাবে হাড্ডি হওয়ার জন্য যেতে দিমু তাই না?"
--"মানে?"
--"মানে খুব সহজ। আমরা চাই না তুই আনিতা বা আহিয়ানের মাঝে আসিস।"
তাসকিয়ার কথায় জারা অবাক চোখে তাকায় ওর দিকে। একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে ও। জারাকে চুপ থাকতে দেখে রোদেলা বলে,
--"আনিতা আর আহিয়ান এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কে আছে। ওরা দুজন দুজনকে খুউব বেশি ভালোবাসে। আর আমরা চাই না তুই তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ওদের মাঝে ঢুকে পড়িস।"
জারা তখনো চুপচাপ ওদের কথা শুনে যাচ্ছে। ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না আহিয়ান আর আনিতা এক বছর ধরে সম্পর্কে আছে। দুজন দুজনকে ভালোবাসে। কিন্তু ওদের দুজনকে দেখে তো সেরকমটা মনে হয়নি। এক বছর আগে একবার আহিয়ান এসেছিলো কয়েকবার কলেজে আবার এবারো। কিন্তু ওদের দুজনের মাঝে এমন কিছুই তো দেখা যায়নি যে বোঝা যাবে ওরা কাপল। জারা মনে মনে এসব ভেবে চলেছে। শুভ অনেকটা সময় জারাকে চুপ থাকতে দেখে বলে,
--"এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস আনিতা কেন আহিয়ানকে দেখতে গেলো আর তোকে আমরা কেন যেতে দিলাম না?"
জারা কিছু না বলে রক্তচক্ষু নিয়ে ওদের তিনজনের দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো। জারার এমন ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাওয়া মুখ দেখে ওরা তিনজনেই হেসে দিলো।
*
মোটামুটি স্পিডে বাইক চালাচ্ছে তন্ময়। ওদের পিছনেই রাতুলের বাইক। আনিতা এক হাত দিয়ে তন্ময়ের কাঁধ ধরে বসে আছে। পাঁচ মিনিট যাবত জ্যামে আটকা পড়েছে ওরা। আনিতা তন্ময়কে জিজ্ঞেস করে,
--"আর কতটা সময় লাগবে পৌঁছাতে?"
--"এখান থেকে হসপিটালে পৌঁছাতে বেশি টাইম লাগবে না। জ্যাম ছাড়লে ১০/১৫ মিনিটের মাঝেই পৌছে যেতে পারবো।"
--"ওহ।"
--হুম।"
--"ফাইয়াজ ভাইয়া দেখলে কিন্তু নানান প্রশ্ন করবে। কি উত্তর দিবো তখন?"
--"চিন্তা করো না। আরহান ফাইয়াজকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হসপিটাল থেকে। আমিই বলেছি আমরা যাওয়ার আগেই যাতে কিছু একটা বলে।ফাইয়াজকে নিয়ে চলে যায় ও। আর একটু আগে ও জানিয়েছে আমায় ওরা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।"
--"আচ্ছা।"
দুই মিনিটের মাথায় জ্যাম ছাড়লেই ওরা আবার বাইক চালাতে শুরু করে। মিনিট দশেকের মাথায় ওরা হসপিটালের সামনে এসে বাইক থামায়। বাইক একসাইডে পার্ক করে ওরা ভিতরে চলে যায়।
লিফটে করে থার্ড ফ্লোরে উঠে তিনশো বারো নাম্বার কেবিনে প্রবেশ করে তন্ময়। আনিতা দরজার সামনে এসেই থেমে যায়। পিছনে রাতুল আর জেরিন দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা যাচ্ছে না দেখে রাতুল বলে,
--"কি হলো? ভিতরে যাও।"
আনিতা মৃদু হেসে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে আহিয়ান বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর সামনেই একটা মেয়ে ওকে জড়িয়ে বসে আছে। চমকে উঠে আনিতা। ও কল্পনাও করতে পারেনি এখানে এসে এভাবে দেখবে আহিয়ানকে। আহিয়ানের মুখ দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ও মেয়েটার জড়িয়ে ধরাতে খুশি হয়েছে নাকি বিরক্তবোধ করছে। হুট করেই আহিয়ান মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। মেয়েটি আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"কি হলো? এভাবে সরিয়ে দিলে কেন?"
--"তোকে কতবার বারন করছি আমাকে এভাবে ধরবি না। একবারে কথা কানে যায়না তোর তাই না বুশরা? যা এখান থেকে।"
--"আমি তোমার কাছে আসলেই এমন করো তুমি। আহিয়ান আমার ভালোবাসাটা____"
--"যেতে বললাম না আমি?"
ক্ষানিকটা জোরেই আহিয়ান কথাটা বলল। আনিতা দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। তন্ময় পিছনে ঘুরে আনিতাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
--"কি হলো আনিতা? ভিতরে আসছো না কেন?"
তন্ময়ের মুখে আনিতার নাম শুনে আহিয়ান চমকে দরজার দিকে তাকায়। আনিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে আবার বুশরার দিকেও তাকাচ্ছে। বুশরা চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে তাকায় আনিতার দিকে। আনিতাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,
--"আনি___তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছু না। ও আমার কাজিন হয়।"
আহিয়ানের কথায় আনিতা মৃদু হাসলো। আনিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে বুশরা নামের মেয়েটা আহিয়ানকে ভালোবাসে। আহিয়ানেরও কি এতে মত আছে? যদি মত থাকে তাহলে বুশরাকে এভাবে সরিয়ে দিলো কেন? আর যদি মত না থেকে থাকে তাহলে বুশরা ওকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথেই কেন সরিয়ে দিলো না? ক্ষানিকটা বাদে কেন সরালো?
।
।
।
চলবে।
[ কালকের পর্ব পইড়া সবাই আমারে যে হুমকি ধমকি দিছো তাতে তো আমি ভয় পাইয়া গেছি🥺
যাও তোমগো কথাই রাখলাম আহিয়ানকে মেরে নতুন নায়ক আনলাম না। কিন্তু আহিয়ানের জন্য নতুন নায়িকা নিয়ে আসছি😁 আনিতার দিন শেষ বুশরার বাংলাদেশ😁😁।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। হ্যাপি রিডিং🥰 ]
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_১৮
#Ornisha_Sathi
বুশরা এগিয়ে আসলো আনিতার দিকে। আনিতার পা থেকে মাথা অব্দি আগাগোড়া দেখে নিলো বুশরা। আনিতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুশরা একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আনিতাকে বলে,
--"তুমিই তাহলে আনিতা? তুমিই সেই মেয়ে যে কিনা আহিয়ানের লাইফে উড়ে এসে জুড়ে বসেছো। দেখো, আহিয়ান শুধু আমার। ওকে ভালোবাসি আমি।"
আনিতা মাথা তুলে একবার আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ান অলস ভঙ্গিতে বসে আছে। আনিতা ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বুশরাকে বলে,
--"এসব আমাকে কেন বলছেন? আমি কি করতে পারি?"
--"তোমাকে বলছি কারন, তুমি আহিয়ানের লাইফ থেকে সরে যাবে।"
--"যার লাইফে কোনোদিন ছিলামই না তার লাইফ থেকে আর কিভাবে সরে যাবো?"
--"মানে? ভালোবাসো না তুমি আহিয়ানকে? সম্পর্ক নেই তোমাদের দুজনের?"
চুপ হয়ে গেলো আনিতা। কি উত্তর দিবে ও? সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। তন্ময় রাতুল আহিয়ান জেরিন ওরা চারজনেই আনিতার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সাথে বুশরা আর আহিয়ানও। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে বুশরা বলে,
--"কি হলো বলছো না কেন? ভালোবাসো না ওকে? সম্পর্ক নেই তোমাদের?"
--"ন...না কোনো স...সম্পর্ক নেই আ...আমাদের।"
--"ওহ তাহলে তো ভালোই। আমার আর আহিয়ানের মাঝে আর কোনো কাটা রইলো না।"
আনিতা কিছু বলল না। জেরিনের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আসতে নিচ্ছিলো। আনিতাকে চলে যেতে দেখে আহিয়ান বলে,
--"আমাকে দেখতে আসলে অথচ না দেখেই চলে যাচ্ছো?"
--"দেখতে এসেছিলাম, দেখা হয়ে গিয়েছে তাই চলে যাচ্ছি।"
--"সাহস থাকে তো বের হয়ে দেখো হসপিটাল থেকে তোমার পা ভেঙে আমি হাতে ধরিয়ে দিবো।"
--"আপনার ভাঙা হাত-পা নিয়ে আর আমার কি করবেন? এর থেকে বরং আমার কথা ভাবা বাদ দিন। বুশরার কথা ভাবুন আপনি। বুশরার সেবাযত্নে অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠুন আই প্রেয়ার ফর ইউ।"
এই বলে আনিতা আবার উলটো ঘুরে জেরিনের হাত ধরে দরজা খুলতে যাচ্ছিলো। তখনই আহিয়ান বুশরা ওরা সকলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আনিতা জেরিনের হাত ছেড়ে পিছু ঘুরলো। আহিয়ান হাসি থামিয়ে বুশরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
--"বুশরা তোর ভাবীকে জিজ্ঞেস কর তো আমাকে যদি ভালো না বাসে তাহলে আমার পাশে তোকে দেখে ও জেলাসি ফিল করছিলো কেন? আবার রাগ দেখিয়ে একা একা চলে যাচ্ছিলো ওর সাহস কত বড়। মুখে বলে ভালোবাসি না কিন্তু ওর কাজে কর্মে তো বোঝাই যায় ও আমাকে ভালোবাসে। সেটা কি ও বুঝতে পারে না?
আনিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আহিয়ানের দিকে। ও কি বলল আনিতা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না৷ তন্ময় রাতুলের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজনেই মুখ টিপে হাসছে। সাথে বুশরাও হাসছে। কিছু বুঝতে না পেরে আহিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,
--"মানে কে ভাবী কার ভাবী?"
আহিয়ান কিছু বলার আগেই বুশরা এসে দাঁড়ালো আনিতার সামনে। একটু আগে যে মেয়েটা আনিতাকে এত কঠিন কঠিন কথা শুনালো এখন সেই মেয়েটাই হাসি হাসি মুখ করে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে। আনিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুশরা বলে,
--"মানে তুমি হলে আমার ভাবী আর আমি তোমার ননদিনী রায় বাঘিনী বুঝলে? এই আহিয়ানকে আমি ভালো-টালো বাসি না। তুমি তো আমার ভাবী হও তাই একটু মজা করলাম। কিন্তু তুমি তো একেবারে সিরিয়াস নিয়ে নিলে সবকিছু।"
--"আমি আবার আপনার কোন ভাইয়ের বউ? আপনার কোনো ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।"
--"আহ ভাবী! তুমি বুঝতে পারছো না।"
--"আচ্ছা তাহলে আপনি আমাকে বুঝিয়ে দিন।"
--"এখানে আমার ভাই একমাত্র আহিয়ানই আছে রাইট?"
--"হুম।"
--"তুমি আর আহিয়ান এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কে আছো রাইট?"
--"হুম।"
--"আহিয়ান তোমায় ভালোবাসে তাই না?"
--"হ্যাঁ।"
--"তুমিও আহিয়ানকে ভালোবাসো।"
--"হুম।"
--"তাহলে তুমি আমার ভাই মানে আহিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। আর ইন ফিউচার আমার ভাই যখন বিয়ে করবে নিশ্চয়ই তার ভালোবাসার মানুষকেই আই মিন তোমাকেই বিয়ে করবে। তাহলে তুমি তো আমার ভাবীই হলে তাই না?"
--"হুম_____এই না না। আমি আপনার ভাইকে ভালোবাসি না। আর ওকে কোনোদিন বিয়েও করবো না। সুতরাং আপনি আমাকে ভাবী ডাকবেন না।"
আনিতার কথায় সবাই হেসে উঠলো। এতক্ষণ যাবত বুশরার কথার প্যাঁচে পরে সবকিছুতেই আনিতা হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছিলো। যখনই ব্যাপারটা বুঝলো সাথে সাথেই "না না" বলে ক্ষানিকটা চিৎকার করে উঠে। আনিতা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই এখনো মুখ চেপে হাসছে। আর আহিয়ান? সে তো সে-ই। এতক্ষণ মুচকি হাসলেও আনিতা তাকানোর সাথে সাথেই ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা শব্দ করেই হেসে ফেলল। আনিতা কপাল কিছুটা কুঁচকে রাগী চোখে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান হাসি থামিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বসে। একজন নার্স এসে সবাইকে ধমকে গেলেন এভাবে রোগীর কেবিনে বসে হাসাহাসি করার জন্য আর বললেন কেবিন ফাঁকা করতে। তন্ময় রাতুল দুজনেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। বুশরা দরজা অব্দি গিয়ে আবার আনিতার সামনে এসে বলে,
--"আমার ভাইটাকে একা পেয়ে আবার বকা দিও না কিন্তু। বেচারা ভাইটা আমার তোমাকে কিন্তু খুব ভালোবাসে। একটু আধটু পাপ্পি-ঠাপ্পি দিয়ে সুস্থ করে তুলো তো ওকে।"
বুশরার কথায় আনিতা মাথা নিচু করে নিলো। বুশরা আর জেরিন দুজনেই মৃদু হাসলো। আনিতা ইতস্তত করে বলে,
--"এটা কি কোনো মেডিসিন নাকি? যে দিলাম আর অমনি সুস্থ হয়ে গেলো।"
--"আরেহ তুমি আজকালকার রিলেশনগুলোতে দেখো না প্রেমিকের জ্বর হলে প্রেমিকা একটা কিসসি দিলেই প্রেমিক সুস্থ হয়ে যায়? তাইলে আমার ভাইটা কেন তোমায় কিসসি পেয়ে সুস্থ হবে না?"
কথাটা বলেই বুশরা ফিক করে হসে দিলো। সাথে জেরিন আর আহিয়ানও হেসে দেয়। এদিকে আনিতা বেচারি লজ্জায় চোখ-মুখ লাল করে ফেলছে। ভাগ্যিস নিকাব বাঁধা তা না হলে তো সবাই বুঝে যেতো আনিতা লজ্জা পাচ্ছে। আহিয়ান আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
--"আনিতা যদি রাজি হয় তাহলে তো আমি বারবার অসুস্থ হতে রাজি ওর কিসসি পাওয়ার জন্য।"
আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহিয়ান আবারো মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো। বুশরা হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। জেরিনও আহিয়ানের সাথে দু/একটা কথা বলে আনিতাকে বলে,
--"আমি বাইরে আছি। তুই তাড়াতাড়ি কথা বলে আয়। আবার বাসায় ফিরতে হবে কিন্তু।"
আনিতা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিতেই জেরিন বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। যাওয়ার আগে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে গেলো। আনিতা এখনো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। এক দৃষ্টিতে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথাটা ব্যান্ডেজ করা ডান পা-টা ভেঙে যাওয়ার ফলে পায়েও ব্যান্ডেজ। আর পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে দু হাতের কুনইতে বেশ ক্ষানিকটা ছিলে গিয়েছে। আনিতাকে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,
--"কাছে আসবা না? ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা?"
আহিয়ানের কথায় আনিতা ওর মুখের দিকে তাকালো। আহিয়ানও আনিতার দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিতা গুটিগুটি পায়ে বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে টেনে বেডের একপাশে বসিয়ে মুখের মাস্কটা নিচে নামিয়ে দেয়।
চুপচাপ বসে আছে আনিতা। কি দিয়ে কথা শুরু করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিরবতা ভেঙে আহিয়ানই প্রথমে বলল,
--"চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন?"
--"কই ঠিকই তো আছে।"
--"আনি তুমি মিথ্যে বলবে আর আমি ধরতে পারবো না এটা ভাবলে কি করে?"
আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কান্না করছে। তা দেখে আহিয়ান আনিতার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
--"আরে কাঁদছো কেন? আমি ঠিক আছি তো। দেখো কিচ্ছুই হয়নি আমার।"
--"যদি কিছু হয়ে যেতো আপনার? তখন আমার কি হতো? আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকতাম আমি?"
--"হলে হতো। তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে আমার কিছু হলে তাতে তোমার কি যায় আসে?"
--"যায় আসে। যায় আসে আমার কারন, আমি ভালোবাসি আপনাকে।"
কথাটা বলেই আনিতা আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। আহিয়ানও মুচকি হেসে আনিতাকে বুকে আগলে নেয়। আনিতা তখনো আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো। আহিয়ান আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
--"আরেহ পাগলী কাঁদছো কেন এভাবে? জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো মরে তো আর যাইনি।"
কথাটা শুনেই আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিলো। আনিতা মুখ ফুলিয়ে বলে,
--"এরপর আর একবার যদি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন তাহলে আমিই আপনাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। আর কক্ষনো খুঁজে পাবেন না আমায়।"
আহিয়ান আনিতাকে কাছে টেনে নেয়। আনিতাও আহিয়ানের একহাত নিজের মুঠোয় নিয়ে আহিয়ানের বুকে মাথা রাখে। এই প্রথম আনিতা কোনো ছেলের বুকে মাথা রেখেছে। এই প্রথম আনিতা একটা ছেলের এতটা কাছে একটা ছেলের সাথে একদম মিশে আছে। কেমন যেন লাগছে আনিতার। কিছুটা অস্বস্তি কিছুটা ভয় আর কিছুটা ভালোলাগা। আহিয়ান একহাতে আনিতাকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
--"তোমাকে আমি যেতে দিলে তো যাবে।"
প্রতিত্তোরে আনিতা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো ক্ষানিকটা সময়। আনিতা আহিয়ানের হাতটা ভালো করে ধরে বলে,
--"শুনুন এরপর থেকে আর জোরে বাইক চালাবেন না। আবার যদি শুনেছি না তো আপনার বাইক চালানোই বন্ধ করে দিবো আমি বলে দিলাম হুহ!"
--"আমি বাইক বেশি স্পিডে চালাই না তো ভুল শুনেছো তুমি।"
আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা ওকে ছেড়ে দিয়ে বেডে থেকে নেমে দাঁড়ায়। রাগী চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"একদম মিথ্যে বলবেন না। তন্ময় ভাইয়া, রাতুল ওরা আমাকে বলেছে আপনি অনেক স্পিডে বাইক চালান।"
--"অভ্যেস হয়ে গিয়েছে তো। এতে আমার কোনো দোষ নেই।"
--"চেঞ্জ করুন অভ্যাস। এখন থেকে ধীরে ধীরেই বাইক চালাবেন। নয়তো___"
--"আচ্ছা বাবা আর বেশি স্পিডে বাইক চালাবো না। এখন আপনার শাসন করা শেষ হলে এখানে এসে বসুন তো।"
আনিতা আবারো আহিয়ানের পাশে গিয়ে বসে। হঠাৎই আনিতার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে শুভর ম্যাসেজ। ম্যাসেজটা ওপেন করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো,
--"এবার কিন্তু ফিরতে হবে। দেড় ঘন্টা পরই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তখন বাসায় কিছু বোঝানোটা কঠিন হয়ে যাবে। এখনো যদি হসপিটাল থেকে বের না হয়ে থাকিস তাহলে দ্রুত বের হো। আমরা কলেজেই আছি।"
শুভর ম্যাসেজ দেখে আনিতার বাড়ি ফেরার কথা মনে হলো। "এখনই আসছি" লিখে ম্যাসেজটা শুভকে সেন্ড করে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো আনিতা। বাসার কথা মনে হতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো আনিতার। বাসায় গিয়ে কি বলবে? ভেবেই পাচ্ছে না। আহিয়ান আনিতাকে এভাবে দেখে প্রশ্ন করে,
--"কি ভাবছো?"
--"বাড়ি ফিরতে হবে এবার।"
আহিয়ান দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে তাকালো একবার। আসলেই অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে। এখন বাসায় না পৌঁছাতে পারলে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আনিতাকে। তাই আনিতাকে বলল,
--"হ্যাঁ অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে। বেরিয়ে পড়ো এবার।"
--"আমি আবার আসবো কিন্তু।"
--"একদম না। এত রিস্ক নিয়ে তোমায় আর আসতে হবে না। সুস্থ হলে আমি নিজে যাবো তোমাদের কলেজে ওকে?"
--"আচ্ছা।"
আনিতা মুখ ভার করে বলল কথাটা। আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে বলে,
--"একটু এদিকে এসো।"
আনিতা এগিয়ে যেতেই আহিয়ান আনিতার কপালে আলতো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। আহিয়ানের এমন স্পর্শ পেতেই আনিতা যেন জমে বরফ হয়ে গেলো। আহিয়ান আনিতার কপাল থেকে ঠোঁট সরাতেই আনিতা ওখান থেকে সরে আসে। পরপর কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আনিতা বলে,
--"নিজের খেয়াল রাখবেন আর সাবধানে থাকবেন কিন্তু। ভাঙা পা নিয়ে একদম বেশি চলাফেরা করবেন না।"
--"যথা আজ্ঞা ম্যাডাম।"
--"আপনার চোখটা একটু বন্ধ করুন তো।"
--"কেন?"
--"আহ! করুন না।"
আনিতার কথায় আহিয়ান চোখ বন্ধ করে নিলো। আনিতা আহিয়ানের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আহিয়ানের চোখের পাতায় একটা চুমু খেয়ে সাথে সাথেই সরে গেলো ওখান থেকে। আহিয়ান চমকে গিয়ে চোখ খুলে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতার এবার বেশ লজ্জা লাগছে। আনিতা ইতস্তত করে বলে,
--"আসছি তাহলে।"
--"হুম সাবধানে যেও।"
আনিতাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আহিয়ান মুচকি হাসলো। আহিয়ান ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি টেনেই তন্ময় ওদের ভিতরে ডাকলো। আহিয়ানের ডাকে ওরা চারজনই ভিতরে আসে। আনিতা তখন আহিয়ানের থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় ভিতরে আসতেই আহিয়ান বলে,
--"সাবধানে পৌঁছে দিস। আর বাইক আস্তে চালাবি কিন্তু।"
--"হ্যাঁ এটা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। তুই রেস্ট নে ওদের পৌঁছে দিয়েই আসছি আমরা।"
তন্ময় এর কথায় আহিয়ান সম্মতি জানালো। জেরিন বুশরা আর আহিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে রাতুলের সাথে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। আনিতাও বুশরার কাছে গিয়ে ওর থেকে বিদায় নিলো। বুশরা আনিতাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা সময় বাদেই ছেড়ে দিয়ে বলে,
--"ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে আমার ভাইয়ের বউ করে নিয়ে আসবো ওকে? তখন আর এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে দেখা করতে হবে না।"
বুশরার কথায় আনিতার লজ্জাটা যেন দ্বিগুণ হলো। বুশরা বুঝতে পেরে টপিক চেঞ্জ করে বলে,
--"সাবধানে যেও ভাবী।"
প্রতিত্তোরে আনিতা মুচকি হাসলো। বেরিয়ে যাওয়ার আগে আর একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"আসছি।"
--"হুম, বোরখা ভালো করে সামলে নিও আর তন্ময়কে ভালো করে ধরে বসবা। টেক কেয়ার।"
--"হুম।"
এই বলেই আনিতা বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। আনিতার পিছু তন্ময়ও চলে আসলো। লিফটে করে নিচে নেমে তন্ময় পার্কিং-এ চলে গেলো বাইক আনতে। ততক্ষণে রাতুল আর জেরিন বাইকে চড়ে বসেছে। তন্ময় এসে বাইক থামাতেই আনিতা বাইকে উঠে বসলো।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। হ্যাপি রিডিং🥰 ]