Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৬ | bangla sed story

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_১৬

Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_১৬ | bangla sed story
Bangla choti golpo | শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_১৬ | bangla sed story


বিকেলে আনিতা আর আরোহী ছাদে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। মূলত আহিয়ানকে নিয়েই কথা হচ্ছে দুজনের। কিছুক্ষণ বাদেই আহিয়ান আসে আনিতাদের ছাদে। আনিতা আহিয়ানকে দেখে চুপ করে রইলো। আরোহী আর আহিয়ান টুকিটাকি কথা বলছে। আরোহীর সাথে কথা বলা শেষে আহিয়ান আরোহীর পাশ থেকে সরে আনিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আনিতাকে বলে,


--"কথা বলবে না আমার সাথে? আনিতা ভুল হয়েছে আমার। আমি স্বীকার করছি আমি মিথ্যে বলেছি তোমাকে। ঠকিয়েছি তোমায়। কিন্তু এখন তো আমার করা সেসব কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত আনিতা। আমি সত্যিই ভালোবাসি তোমাকে। এবারে আর কোনো মিথ্যে নেই এতে বিশ্বাস করো।"


আনিতা কিছু না বলে সামনের মাঠের দিকে তাকিয়ে রইলো। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,


--"সন্ধ্যার বাসেই ঢাকা ফিরছি আনিতা।"


আহিয়ানের কথায় আনিতার ক্ষানিকটা কষ্ট অনুভব হলো। চলে যাবে আহিয়ান? ভাবতেই আনিতার বুক ধক করে উঠে। আনিতা ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলে,


--"এ ক'দিনেই হাঁপিয়ে গেলেন? আমার এই কয়েকটা দিনের করা অবহেলা ইগনোর সহ্য হচ্ছে না আপনার? আর আমি যে পুরো একটা বছর আপনার অবহেলা অপমান মানসিক যন্ত্রণা সব সহ্য করেছি। আমি কিভাবে সহ্য করেছিলাম? আর আপনি? এই ক'টা দিনের অবহেলাই সহ্য করতে পারছেন না। হাল ছেড়ে দিয়ে মাঠ থেকে পালাচ্ছেন আপনি?"


আনিতার কথায় আহিয়ান মৃদু হাসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঠোঁটের কোনে সেই হাসিটা রেখেই আহিয়ান বলে,


--"পালাচ্ছি না আনি। অফিস থেকে ইমারজেন্সি কল এসেছে। আজকেই যেতে হবে সেখানে। নয়তো তোমার রাগ অভিমান যাই বলো না কেন সেটা না ভাঙিয়ে আমি এখান থেকে কিছুতেই যেতাম না।"


--"আজকেই যেতে হবে যান এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?"


--"তোমাকে জানিয়ে গেলাম। পরে তো আবার এইটা নিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবা। তুমি তো আবার একটা কোনো অযুহাত পেলেই হলো গাল ফুলানোর সু্যোগটা আবার হাতছাড়া করতে চাও না।"


--"যাবেন আপনি এখান থেকে। আমার চোখের সামনে আর কোনোদিন আসবেন না আপনি বলে দিলাম।"


--"যাচ্ছি বাবা। এইভাবে রেগে চিৎকার করার কি আছে? যখন একদম সারাজীবনের জন্য চলে যাবো তোমার থেকে ইভেন শুধু তুমি কেন? এই পৃথিবী ছেড়ে যখন চলে যাবো তখন বুঝবা কেমন লাগে।"


আহিয়ানের কথায় আনিতার বুক কেঁপে উঠলো। খুব করে ইচ্ছে হলো আহিয়ানকে বকে দিতে। কিন্তু সেটা পারলো না। ছলছলে চোখে শুধু আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহিয়ান মুচকি হেসে বলে,


--"আরেহ মজা করছিলাম। এখন কি কান্নাকাটি শুরু করে দিবা নাকি?"


আনিতা কিছু না বলে আবারো সামনের মাঠটার দিকে চোখ রাখলো। খুব করে চাইছে আনিতা চোখের পানিটা যেন বেরিয়ে না আসে। সামনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে আনিতা। আহিয়ান টাইম দেখে নিলো। তারপর আনিতাকে বলল,


--"এখন না বেরোলে খুব লেট হয়ে যাবে। আসছি আনি।"


আনিতা তাকালো শুধু একবার। কিন্তু কিছুই বলল না। আরোহী ওদের থেকে ক্ষানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনকেই দেখছে। আহিয়ান আবারো আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, 


--"আবার যদি শুনেছি না তুমি জয় বা অন্য কোনো ছেলের সাথে ওরকম ভাবে মিশেছো তাহলে কিন্তু___"


--"তাহলে কি হ্যাঁ?"


--"তাহলে কাল যে কাজটা করেছিলাম। আবার এসে সে কাজটাই রিপিট করবো। এমনকি তার থেকে বেশি কিছুও করতে পারি।"


আহিয়ানের কথা শুনে সাথে সাথেই আনিতা তাকালো ওর দিকে। আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা হেসে ফেলল। আর কালকের কথা মনে হতেই আনিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ইশ্! এভাবে লজ্জায় না ফেললে কি একদমই হতো না? কালকের কথা ভাবতেই আনিতার গা শিউরে উঠলো। মূহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিলো আনিতা। একদম স্পষ্ট চোখের সামনে কালকের সেই মূহুর্তটা ভেসে উঠলো____


*আহিয়ান আনিতার হাত ধরে টেনে সে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। কিছুদূর যেতেই আনিতা ঝামটা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর বলে,


--"একবার বলেছি না যখন তখন এভাবে হাত ধরে টানাটানি করবেন না। আর একবার হাত ধরলে কিন্তু___"


আনিতার কথায় আহিয়ান আবারো আনিতার হাত চেপে ধরে। তারপর বলে,


--"এই যে আবার হাত ধরলাম। কি করবা?"


--"দেখুন যখন তখন আপনি এভাবে আমার হাত ধরতে পারেন না। কিসের অধিকারে? কোন অধিকারে আপনি আমার হাত ধরেন? আমি আপনাকে কোনো অধিকার দেইনি।"


আনিতা কথাটা বলার সাথে সাথেই আহিয়ান পাশেরই একটা ফাঁকা ক্লাসে টেনে নেয় আনিতাকে। আনিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। কিন্তু আহিয়ান ওকে না ছেড়ে উল্টো আরো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আনিতার চোখের দিকে তাকিয়ে আহিয়ান বলে,


--"তোমায় কোনো অধিকার দিতে হবে না। তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায় তুমি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসো। তোমার চোখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তোমার উপর অধিকারবোধটা তুমি শুধু আমাকেই দিয়ে দিয়েছো। সুতরাং মুখে বলতে হবে না আর।"


--"ভুল বুঝছেন আপনি। না আমি কোনো অধিকার দিয়েছি আপনায় আর না আমার চোখ দিয়েছে।"


--"ব্যাপার না। আমার অধিকার আমি নিজেই আদায় করে নিতে পারি।"


--"অন্য সব ক্ষেত্রে পারলেও আমার ক্ষেত্রে একদমই পারবেন না আপনি।"


--"দেখতে চাও?"


--"ন....না দেখতে___"


হঠাৎই ঘাড়ে আহিয়ানের স্পর্শ পেয়ে আনিতা আর কিছু বলতে পারলো না। চুপ হয়ে গেলো একেবারে। আহিয়ান স্কার্ফের উপর দিয়েই আনিতার ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। আনিতা ব্যাপারটা এখনো ঠিক হজম করতে পারছে না। তার উপর আরো অবাক করে দিয়ে দু গালে দুটো এবং কপালে একটা চুমু খায় আহিয়ান। আনিতা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়ানের দিকে। কি হলো এটা? সেটাই ভাবছে আনিতা। আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে বলে,


--"এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? এখন কি ঠোঁটেও চুমু খেতে ইচ্ছে করছে? আমার কিন্তু খুব ইচ্ছে করছে আনি। এখন তুমি যদি চাও তাহলে___"


কথাটা বলেই আহিয়ান চোখ মারলো আনিতাকে। আনিতা তড়িঘড়ি করে দুহাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,


--"নাহহহহ।"


আনিতার কান্ডে আহিয়ান হেসে দেয়। আনিতা তখনো মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে হাত সরিয়ে ফেললেই বুঝি আহিয়ান আবার চুমু দিয়ে বসবে। আহিয়ান হাসি থামিয়ে বলে,


--"এবার বুঝলে তো কোন অধিকারে আমি তোমার হাত ধরি? আর আমি আমার অধিকার নিজেই বুঝে নিতে পারি। বুঝলে পিচ্ছি পাখি?"


আনিতা মনে মনে আহিয়ানকে গালি দিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে তো জোরে জোরে কয়েকটা গালি দিতে। কিন্তু এর যে মেজাজ। কখন কোনদিকে যায় তা সে মনে হয় সে নিজেও বুঝতে পারে না। সেজন্য আর জোরে গালি দেওয়ার সাহসটা আনিতা করলো না। আপাতত মনে মনে গালি দিয়েই নিজের মনকে শান্ত করলো আনিতা।*


আহিয়ান আনিতার হাত ধরে ঝাকাতেই আনিতা বাস্তবে ফিরে। পরমূহুর্তেই আবার লজ্জায় নুইয়ে যায় এতক্ষণ যাবত কালকের কথা ভাবছিলো বলে। আহিয়ান আনিতার হাত ধরেই বলে,


--"কি ভাবছো তুমি?"


--"কিছু না তো। আর আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?"


--"সত্যিই চলে যাবো?"


--"হ্যাঁ।"


--"লাস্ট টাইম আস্ক করছি, সত্যিই চলে যাবো তো? চলে যাওয়ার পর আবার কান্না করবা না তো? পরে কিন্তু হাজার ডাকলেও আমি আর ফিরবো না।"


আহিয়ানের কথায় এবার আনিতা কিছু বলল না। আনিতার নিরব থাকাই তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছে। আহিয়ান মুচকি হাসলো আনিতার দিকে তাকিয়ে। তারপর আবার আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,


--"খুব শীঘ্রই আবার দেখা হচ্ছে। আসছি।"


--"আমি চাই না আর আপনার সাথে দেখা হোক।"


--"এটা তো মুখে বললে। বাট আমি কিন্তু তোমার মনের কথা ঠিকই পড়তে পারি।"


আনিতা অন্যদিকে তাকালো। আহিয়ান আরোহীর থেকে বিদায় নিয়ে আবার আনিতাকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে ওখান থেকে চলে গেলো। হঠাৎই একরাশ মন খারাপ এসে ছুঁয়ে গেলো আনিতাকে। আনিতা ছুটে ছাদের অপরপাশে চলে গেলো। এখান থেকে ওদের বাসার পিছনের রাস্তাটা স্পষ্ট। আনিতা নিচে উঁকি দিতেই দেখলো আহিয়ান ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাসা থেকে বের হলো। সাথে আরহান আর তন্ময়ও যাচ্ছে। রাতুল ফাইয়াজের সাথে ঢাকায় ফিরবে। আহিয়ান রাস্তায় বের হয়েই প্রথমে আনিতাদের ছাদের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আনিতা টলমলে চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।


--"একটু আগেই বলল আমার সাথে আর দেখা হোক এটা নাকি মহারানী চান না। এখন আবার ঠিকই কান্না মিশ্রিত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাগলী একটা।"


আনিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাটা ভাবলো আহিয়ান। তন্ময় আহিয়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আনিতাও ছাদ থেকে দেখছে আহিয়ানকে। তন্ময় মুচকি হেসে আহিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"পরে দেখার অনেক সময় পাবি ভাই। এখন সত্যিই লেট হচ্ছে।"


--"হুম চল।"


আনিতার থেকে চোখ সরিয়ে আহিয়ান তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল। আহিয়ানের কথা শুনে তন্ময় আর আরহান ততক্ষণে হাঁটতে শুরু করেছে। আহিয়ান আর একবার আনিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উলটো ঘুরে হাঁটা শুরু করলো। যতক্ষণ অব্দি আহিয়ানকে দেখা যাচ্ছিলো ততক্ষণ অব্দি আনিতা এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আহিয়ান চোখের আড়াল হতেই আনিতা চোখের কোনে জমা পানিটা মুছে নিলো। আরোহী আনিতার পাশে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ দুজনকে দেখছিলো। এবার আনিতার কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"ভালোবাসিস তো ওকে। আর ছাড়তেও পারবি না কোনোদিন। তাহলে কেন শুধু শুধু রাগ করে আছিস? ছেলেটা তো অনেক করে মাফ চাইলো আর কত বল? ভালো যেহেতু বাসিসই তাহলে কেন শুধু শুধু নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আর আহিয়ানকেও কষ্ট দিচ্ছিস?"


--"আমি তো কষ্ট পা...পাচ্ছি না।"


--"তাহলে কাঁদছিস কেন?"


--"কই কাঁদছি? চোখে কিছু একটা পড়েছে মনে হয়।"


--"কাকে মিথ্যে বলছিস আনিতা? আমি তোর সবটা জানি। তোর থেকেও খুব ভালো করে জানি তোকে আমি। আর তুই সেই আমাকেই মিথ্যে বলছিস?"


আনিতা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো। তা দেখে আরোহী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, 


--"এবার অন্তত সবটা ঠিক করে নে। হ্যাঁ প্রথমে আহিয়ান একটা অন্যায় করেছিলো৷ কিন্তু এখন তো ছেলেটা অনুতপ্ত ওর করা কাজের জন্য। আর ও তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসে। সেটা আমিও জানি আর তুইও খুব ভালো করেই জানিস। সো প্লিজ সবটা ঠিক করে নে। ছেলেটাকে আর কষ্ট দিস না।"


--"আমাকে যে একটা বছর কষ্ট দিয়েছে তার বেলায়? পাক না আরো কিছুদিন কষ্ট তারপর দেখা যাবে। উমমম যা তোর কথাটাই রাখলাম আবার যখন আসবে এখানে তখন সবটা ঠিক করে নিবো প্রমিস।"


--"ততদিনে যদি তোর এই অবহেলা পেয়ে সবকিছু ভুলে যায়? আর যদি এখানে না আসে?"


--"যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকে তাহলে আমার সব অবহেলা সহ্য করেও থেকে যাবে। আর খুব শীঘ্রই ও এখানে আসবে।"


--"তোর যা ইচ্ছে তাই কর।"


--"হ্যাঁ করবো তো। এতদিন ওর যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছে। এবার থেকে আমার যা ইচ্ছে হবে তাই করবো। এতদিন আমি ওর ইচ্ছের মূল্য দিয়েছি। এবার থেকে ও আমার ইচ্ছের মূল্য দিবে।"


রাতে ডিনার করে এসে বিছানায় শুয়ে আছে। একটু পরপরই ফোন চেক করছে আনিতা। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। এতক্ষণে তো আহিয়ানের ঢাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা। তাহলে এখনো একটা ম্যাসেজ বা ফোন কেন করছে না আহিয়ান? শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছে আনিতা। পরমূহুর্তেই আবার বিড়বিড় করে বলে,


--"আমাকে কেন ফোন ম্যাসেজ দিয়ে জানাবে ওর পৌঁছে যাওয়ার কথা কে আমি? আমাকে ভালোবাসে না তো একদমই। এখানে আসলেই যত ভালোবাসা উতলায় পড়ে। যেই ঢাকায় পা রেখেছে অমনি সব ভালোবাসা শেষ। শালা হারামি একটা। একটু ফোন নাহয় না-ই দিলি তাই বলে সামান্য একটা ম্যাসেজ করে জানাতে পারবি না যে পৌঁছে গেছিস তুই?"


একা একা এসব বিড়বিড় করে যাচ্ছে আনিতা। তখনই আনিতার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেজ টোন পেয়ে খুশি হয়ে যায় আনিতা। ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ চেক করতেই দেখে সিম কোম্পানি থেকে ম্যাসেজ এসেছে। মূহুর্তেই আনিতার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, 


--"এদের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই নাকি? যখন তখন ম্যাসেজ দিতেই থাকে যত্তসব।"


কথাটা বলেই ফোনটা পাশেই ছুড়ে মারলো। কোথায় ভাবলো আহিয়ানের ম্যাসেজ ধুর! আবারো একটা ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ফোন হাতে নিতে গিয়েও আবার নিলো না। নিশ্চয়ই আবারো সিম কোম্পানি থেকেই ম্যাসেজ এসেছে। এই ভেবে ফোন ধরলো না আর। কিন্তু আবার কি মনে করে যেন ফোন হাতে তুলে নিলো। দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। আনিতা ম্যাসেজটা ওপেন করে। তাতে লিখা ছিলো,


--"এই যে ম্যাডাম ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছি ঘন্টা খানেক হবে হয়তো। আগে অফিস গিয়েছিলাম তাই তখন জানাতে পারিনি। ভাবলাম একেবারে বাসায় গিয়ে নক করি আপনাকে। বাসায় ফিরে সাথে সাথেই কিন্তু জানালাম আপনাকে। এবার হ্যাপি তো? আর রাগ নেই তো আমার উপর? এই যে পিচ্চি জানাতে একটু দেরী হয়ে গেলো তার জন্য কিন্তু সত্যিই সরি হ্যাঁ? এবার ঘুমান আপনি। ভালোবাসা নিও পিচ্ছিপাখি।"


ম্যাসেজটা পড়ে আনিতা মুচকি হাসে। রিপ্লাই করতে গিয়েও আর করলো না। ফোনটা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লো। আহিয়ানও বড্ড ক্লান্ত ছিলো। তাই ফ্রেশ হয়ে ডিনার না করেই শুয়ে পড়লো বিছানায়। 


আহিয়ান যাওয়ার দুদিন হয়ে গিয়েছে। কাজের ফাঁকেই আহিয়ান আনিতাকে ম্যাসেজ করতো। আনিতা রাগী রাগী ভাব নিয়েই রিপ্লাই করতো ম্যাসেজের। ও আহিয়ানকে বোঝাতে চাইতো যে সে এখনো রেগেই আছে। কিন্তু আহিয়ান আনিতার ম্যাসেজ গুলো পড়ে মুচকি হাসতো।


বিকেলে উঠানে হাঁটছিলো আনিতা। তখন তড়িঘড়ি করে ফাইয়াজ আর রাতুলকে দেখা গেলো বাসা থেকে বের হতে। কাঁধে আবার ব্যাগও ঝুলানো। দুজনকে দেখেই বেশ চিন্তিত লাগছে। ফাইয়াজ আর রাতুলের তো আরো কিছুদিন পর ঢাকায় যাওয়ার কথা। তাহলে আজ এভাবে কোথায় যাচ্ছে দুজনে? মনে এসব ভেবে আনিতা ওদের দিকে দৌড়ে গেলো। পিছন থেকে ফাইয়াজকে ডেকে উঠলো আনিতা,


--"ভাইয়া___"


আনিতার ডাকে পিছু ঘুরলো ফাইয়াজ। রাতুল আর ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে পড়তেই আনিতা ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,


--"কোথায় যাচ্ছো তোমরা? আর তোমাদের দুজনকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কিছু কি হয়েছে?"


ফাইয়াজ কিছু বলার আগেই রাতুল বলে,


--"আমাদের আর্জেন্ট একটু ঢাকায় ফিরতে হবে। রাতে তোমাকে সব জানাচ্ছি ওকে?"


এই বলে রাতুল আবার ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"তাড়াতাড়ি চল।"


আনিতা ফাইয়াজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,


--"ভাইয়া সব কিছু ঠিক আছে তো? তোমাদের দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে খারাপ কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে বলো তো?"


--"আনি বুড়ি আধ ঘন্টা আগেই আহিয়ানের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে। গুরুতর ভাবে আঘাত পেয়েছে ও। লেট হয়ে যাচ্ছে আমাদের আমরা আসছি তুই বাসায় যা।"


এইটুকু বলেই ফাইয়াজ হাঁটা ধরলো। রাতুল আনিতার কাছে এসে বলল,


--"সামলাও নিজেকে ওর কিচ্ছু হবে না। বাসায় যাও এখন তোমায় পরে সব জানাবো আমি।"


কথাটা বলে রাতুলও চলে গেলো। আনিতা এখনো আগের জায়গায় পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না আহিয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে। ঠিক শুনলো তো আনিতা? নাকি ভুল? এসবই ভাবছে দাঁড়িয়ে। ফাইয়াজের বলা,


--"আহিয়ানের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে। গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে ও।"


এই কথাটাই বারবার আনিতার কানে বাজছে। এখনো আনিতা মূর্তির মতো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে খুব জোরে কিছু একটার শব্দ হতেই আনিতার হুশ ফিরে। আহিয়ানের কথা মনে হতেই চোখ জলে ভরে উঠে। দৌড়ে বাসায় চলে যায় আনিতা। রুমে গিয়ে দরজা লক করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় আনিতা। আহিয়ানের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ও থাকবে কি করে? আহিয়ানকে যে ও সত্যিই ভালোবাসে। সেদিন আহিয়ান চলে যাওয়ার সময় ওর বলা একটা কথাই বারবার আনিতার কানে বেজে উঠছে,


--"যখন একেবারে সারাজীবনের জন্য চলে যাবো তোমার থেকে শুধু তুমি কেন? পুরো পৃথিবী ছেড়ে যখন চলে যাবো তখন বুঝবা কেমন লাগে।"


আহিয়ানের বলা এই কথাটা অনবরত আনিতার কানে বাজছে। আনিতা দুহাতে শক্ত করে কান চেপে ধরে কিছুটা শব্দ করেই কেঁদে দেয়।

Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.