শুধু তোমারই জন্য
পর্ব ৪১_৪২
Bangla love story - শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৪১_৪২ - choti golpo |
একটা লেকের পাড়ে এসে বসেছে আনিতা আর আহিয়ান। আনিতা ওর হাত থেকে টিফিন বক্সটা আহিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো। আহিয়ান বক্স খুলে প্রথম চামোচ আনিতাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে বেশ কিছুটা সময় বসে থেকে হুট করেই আহিয়ান আনিতার কোলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ে। প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গেলেও পড়ে নিজেকে সামলে নেয় ও। আহিয়ান আনিতার ওড়নার কোনা আঙুলে পেঁচিয়ে আবার খুলে ফেলছে। আর আনিতা আহিয়ানের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। পাশ দিয়ে একটা লোক যাচ্ছিলো বাদাম নিয়ে। আহিয়ান তাকে ডেকে বাদাম কিনে নেয়। আনিতা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে নিজেও খাচ্ছে আর আহিয়ানের মুখেও দিচ্ছে।
বেশ কিছুটা সময় দুজনে এভাবে কাটানোর পর আহিয়ান উঠে আনিতার দিকে ঘুরে বসে। আনিতা হাতদুটো ধরে বলে,
--"রিদমান কিন্তু বেশি ভালো ছেলে না। ও আবারো তোমাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করবে। তুমি ওর থেকে দূরে দূরে থাকবে কিন্তু।"
--"আচ্ছা।"
--"আর এর পর থেকে বাইরে বের হতে হলে ফাইয়াজ তন্ময় অথবা আমাকে নিয়ে বের হবে ওকে?"
--"হুম।"
--"একটা কথা বলবো?"
--"অনুমতি নিচ্ছেন কবে থেকে?"
--"রোদেলাকে বলবে না কিন্তু।"
--"কি এমন বলবেন যে ওকে বলা যাবে না।"
--"আছে সিক্রেট কিছু। ওর জানার সময় হলে ও ঠিক জেনে যাবে। কিন্তু আপাতত ওকে কিছু বলবে না।"
--"আচ্ছা বলবো না।"
--"তন্ময় ভালোবাসে ওকে।"
--"কিইইহ?"
--"চেঁচিয়ে ওঠার কি আছে? যা সত্যি তাই তো বললাম।"
--"কবে থেকে?"
--"শুরু থেকেই ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে সেটা ভালো লাগা থেকে ভালোবাসায় রুপান্তর হয়েছে।"
--"হুম বুঝলাম। তো জানাচ্ছে না কেন ওকে?"
--"ও জানে এখন রোদেলাকে প্রপোজ করলে ও কিছুতেই রাজি হবে না। একবার কাউকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছে রোদেলা। তাই ও আর প্রপোজ করবে না। একেবারে ফ্যামিলিকে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রপোজাল দিবে।"
--"বাহ ভালোই তো! এই আমার না খুব খুশি খুশি লাগছে। রোদেলার বিয়ে নিয়ে আমার অনেক প্ল্যানিং আছে।"
--"কি প্ল্যানিং আছে শুনি।"
--"এখন বলা যাবে না। পরেই দেখবেন।"
এভাবে আরো বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে সাড়ে আটটা নাগাদ ওরা বাসার দিকে রওনা দেয়। মিনিট পনেরো বাদেই ওরা বাসায় পৌঁছে যায়। আনিতা কিচেনে গিয়ে দেখে রোদেলার রাতের রান্না প্রায় শেষের দিকে।
আনিতাকে নামিয়েই দিয়েই আহিয়ান বাসায় চলে যায়। রোদেলার রান্না শেষে আনিতা রোদেলা শুভ তিনজনে মিলে ড্রয়িংরুমে গল্পগুজব করছিলো। কলিংবেল বেজে উঠলে রোদেলা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে আহিয়ান ফাইয়াজ আর তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। রোদেলা সরে আসতেই ওরা ভিতরে ঢুকে। ফাইয়াজ দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে সবার সাথে সোফায় বসলো। তন্ময় রোদেলার দিকে দুটো পলিথিনের প্যাকেট এগিয়ে দিলো। রোদেলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে তন্ময় বলে,
--"ফুচকা আছে সবার জন্য।"
ফুচকার কথা শুনেই আনিতা আর রোদেলার জিভে জল চলে এলো। ওরা দুজনেই কিচেনে চলে গেলো। মিনিট পাঁচেক এর মাঝেই প্লেটে করে ফুচকা আর একটা বাটিতে করে টক পানি এনে টি-টেবিলের উপর রাখলো। সবাই ধীরে সুস্থে খেলেও আনিতা আর শুভ পাল্লা লেগে গেলো কে কতগুলা খেতে পারে। সবার থেকে আনিতা আর শুভই বেশি ফুচকা খেয়েছে। আনিতা শূন্য প্লেটের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
--"যাহ বাবা! শেষ হয়ে গেলো?"
--"এভাবে গপাগপ গিললে শেষ তো হবেই তাই না?"
আহিয়ানের কথায় আনিতা মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকালো। আধঘন্টার মতো সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আনিতার ফোন বেজে উঠতেই ও রুমে চলে গেলো ফোন রিসিভ করতে। আনিতা রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ওর আম্মুর ফোন। দ্রুত রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে। একে একে আনিতা বাসার সকলেই সাথেই কথা বলে।
প্রায় মিনিট দশেক হয়ে এলো। আনিতা এখনো আসছে না। আহিয়ান বারবার ওর রুমের দিকে উঁকি মারছে। শেষে ধৈয্য হারা হয়ে আহিয়ান উঠে দাঁড়ালো। সকলের দিকে একবার তাকালো। সবাই গল্পে মগ্ন। আহিয়ান গুটিগুটি পায়ে আনিতার রুমে গেলো। আনিতা রুমের কোথাও নেই। ব্যালকোনি থেকে আনিতার কথার শব্দ আসছে। আহিয়ান ধীরে ধীরে গিয়ে আনিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরায় আনিতা প্রথমে কিছুটা চমকে উঠে। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো ওটা আহিয়ান তখন একটা স্বস্তির শ্বাস নেয়। আহিয়ান পিছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর পেটের উপর হাত রেখেছে। আর আনিতার ঘাড়ে মুখ গুজেছে। আনিতার কেমন একটা ফিল হচ্ছে। বার বার কেঁপে উঠছে ও। আনিতা বা হাতে ফোন কানে নিয়ে ডান হাত আহিয়ানের হাতের উপর রাখলো। আহিয়ান এখনো ওর ঘাড়ে মুখ গুজে আছে। আনিতা সবার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলো। আনিতা পিছন ফিরে আহিয়ানের দিকে ঘুরতে চাইলে আহিয়ান আরো ভালো করে চেপে ধরে ওকে। আনিতা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
--"কি হ্ হচ্ছে এ্ এসব? ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে তো।"
--"কেউ দেখবে না।"
--"কিন্তু ভুল করে ভুল টাইমে এন্ট্রি নিয়ে আমি তো সব দেখে ফেললাম।"
ব্যালকোনির দরজার কাছ থেকে শুভ কথাটা বলে উঠে। আহিয়ান সঙ্গে সঙ্গেই আনিতাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। আনিতা লজ্জায় পড়ে যায়। এখন সারাটা সময় শুভ ওকে এই ব্যাপারটা নিয়ে খুঁচাবে ভাবতেই আনিতার আহিয়ানের উপর বেশ রাগ হলো। আনিতা দ্রুত পায়ে ওখান থেকে সরে যায়। আহিয়ান মুখটা কালো করে বলে,
--"রং টাইমে যখন এন্ট্রি নিয়েছিলে তখন কথা না বলে যে পথ দিয়ে এসেছিলে আবার সেই পথ দিয়ে চলে গেলেই তো পারতে।"
--"আসলে ভাইয়া কি বলুন তো__আমি সিঙ্গেল তো। তাই আমার সামনে কোনো কাপল রোমান্স করবে এই ব্যাপারটা আমার ঠিক সহ্য হয় না। তাই আপনাদের রোমান্সের বারোটা বাজালাম।"
--"হুম বুঝলাম। এখন মনে হচ্ছে আমার শান্তিতে একটু রোমান্স করার জন্য হলেও তোমায় খুব শীঘ্রই একজন খুঁজে দিতে হবে।"
কথাগুলো বলে ওরা দুজনে হাসতে হাসতেই রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসলো। আনিতা আর রোদেলা পাশাপাশি বসেছে। আর ওদের দুজনের মুখোমুখি ভাবে আহিয়ান আর তন্ময় বসেছে। আর টেবিলের দুই মাথার চেয়ার দুটোতে শুভ আর ফাইয়াজ বসেছে। রোদেলা আর আনিতা একে একে সবার প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিলো। ডিনারে রোদেলা বড় ইলিশ ভূনা, ডাল চচ্চড়ি আর লাল শাক ভাজি করেছিলো। ডাল চচ্চড়ি আনিতা আর ফাইয়াজের পছন্দের একটা খাবার। আর রোদেলার হাতের ডাল চচ্চড়ি হলে তো আনিতার আর কোনো কথাই নেই। একেবারে আঙুল চেটেপুটে খায়।
এই প্রথম বার আহিয়ান আর তন্ময় রোদেলার হাতের রান্না করা খাবার খেলো। বেশ প্রশংসা করেছে রোদেলার রান্নার। আহিয়ান তো আনিতাকে বলে ফেলল রোদেলার থেকে রান্না শিখে রাখতে। বিশেষ করে ডাল চচ্চড়িটা। এটা নাকি ওদের সকলেরই বেশ ভালো লেগেছে। ডিনার শেষে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে আহিয়ান আর তন্ময় চলে গেলো নিজেদের বাসায়। ফাইয়াজ আর শুভও নিজেদের রুমে চলে গেলো ঘুমোতে। আনিতা আর রোদেলা কিচেনের সবকিছু গোছগাছ করে ওরা দুজনেও ঘুমাতে গেলো।
-
পরদিন সকালে আনিতা আর রোদেলা একটা ক্লাশ করে বের হলো। শুভ একটা কাজে গিয়েছে। মাঠে বসে আছে দুজনেই। আনিতার মুড অফ হয়ে আছে। সকালে যখন রিকশা করে ভার্সিটি আসছিলো তখন রাস্তায় আনিতা আহিয়ানের মতো একজনকে দেখতে পায় একটা মেয়ের সাথে রিকশায় করে যেতে। মেয়েটা ছেলেটার হাত জড়িয়ে ধরে ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে বসে ছিলো। আর ছেলেটাও কি সুন্দরভাবে মেয়েটার হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে রেখেছে। অবিশ্বাস্য চোখে আনিতা কয়েক সেকেন্ড রিকশায় বসা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিকশাটা চোখের আড়াল হতেই আনিতা ফোন করে আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করে। ফোন বেজে বেজে কেটে গেলো। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরও আহিয়ান ফোন রিসিভ করেনি। সেই থেকে আনিতার মুড অফ। রাগ হচ্ছে প্রচুর। কিছুই ভালো লাগছে না।
হঠাৎ করেই আনিতার চোখ যায় ক্যান্টিনের দিকে। একটা মেয়ে আহিয়ানকে টানতে টানতে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো। আনিতা এমনিতেই রেগে ছিলো। তার উপর আবার এখন এই দৃশ্য দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো৷ উঠে দাঁড়ালো আনিতা। বড় বড় কদম ফেলে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেলো ও। রোদেলাও ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। আনিতা ক্যান্টিনে গিয়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা চিৎকার করেই বলে,
--"সমস্যা কি আপনার? আমি সকালে এতবার ফোন করলাম আপনি ফোন রিসিভ করলেন না কেন? আর মেয়েটা কে ছিলো? যার সাথে আপনি সকালে রিকশায় করে ঘুরে বেড়ালেন? আর এই মেয়েটিই বা কে? এখন আমাকে আর ভালো লাগে না তাই না? যার জন্য এখন আমায় রেখে অন্য মেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুরোনো হয়ে গিয়েছি আমি তাই না?"
--"আরেহ কে আপনি? এখানে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন কেন?"
--"বাহ! এখন দেখছি আপনি আমাকে চিনতেও পারছেন না। এক দিনেই ভুলে গেলেন কে আমি?"
রোদেলা আনিতাকে সরিয়ে নিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,
--"আহ আনিতা! কি করছিস এসব? হয়তোবা আহিয়ান ভাইয়া কোনো কাজে এসেছে এখানে। পরে সব মিটমাট করে নিস। এখানে পাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করিস না।"
--"সিনক্রিয়েট? সিনক্রিয়েট আমি করছি? আর উনি? উনি কি করছে এসব? সকালে এক মেয়ে এখন আবার অন্য মেয়ে। এত না বলে আমাকে ভালোবাসে তাহলে এখন আমার ফোনও তুলছে না কেন উনি? বুঝেছি আমি। ভালোবাসেন না উনি আমাকে। একটুও ভালোবাসেন না। যদি ভালোবাসতোই তাহলে এভাবে আমাকে ঠকাতে পারতো না। আমাকে চিনতে অস্বীকার করতো না।"
আনিতা আবার ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
--"আপনি আর কোনোদিনও আমার চোখে সামনে আসবেন না। ভালোবাসি না আমি আপনাকে। কেউ হন না আপনি আমার। আজকের পর থেকে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে আমাদের।"
এইটুকু বলেই আনিতা চোখের পানি মুছতে মুছতে ক্যান্টিন থেকে বের হতেই আহিয়ান এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। আনিতা রাগে অভিমানে আহিয়ানের দিকে ভালোভাবে না তাকিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে ওকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে আনিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
--"কি হয়েছে? কাঁদছো কেন এভাবে?"
--"আপনাকে না বললাম আমার চোখের সামনে আপনি আর কোনোদিনও আসবেন না। আপনার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।"
--"মানে? এই কথা তুমি আমাকে কখন বললে?"
--"ছাড়ুন আমায়। আমি আপনার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। ভালোবাসি না আমি আপনাকে।"
--"আরেহ আমি কি করেছি সেটা তো বলবে?"
--'কি করেছেন আপনি? এই কথাটাও আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আপনি? একটু আগেই তো আমাকে চিনতে অস্বীকার করলেন আপনি। এখন আবার কেন এসেছেন আপনি? আপনি ওই মেয়ের কাছেই যান। আমার কাছে একদম আসবেন না বলে দিলাম।"
--"আরেহ কোন মেয়ের কাছে যাবো? আর আমি তোমায় চিনতে কখন অস্বীকার করলাম?"
--"একদম নাটক করবেন না। আমি খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।"
--"আরেহ বাবা আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। তুমিই তো কিসব উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছো কখন থেকে।"
--"আমি উল্টাপাল্টা বলছি? আমি? লজ্জা করে না আপনার সকালে এক মেয়ের সাথে রিকশায় ঘুরলেন তা দেখে আমি আপনাকে এতবার ফোন করলাম আপনি রিসিভ করলেন না। এখন আবার আরেক মেয়ের সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছেন আবার আমায় ভালোবাসি বলছেন। লজ্জা করে না এসব___"
--"আরেহ কিসব আবোলতাবোল বলে যাচ্ছো তুমি? এবার কিন্তু আমার সত্যিই রাগ হচ্ছে।"
কিছুটা ধমকের সুরেই কথাগুলো বলল আহিয়ান। আনিতা তখন চুপ হয়ে যায়। কথা থামিয়ে দিয়ে ডুঁকড়ে কেঁদে উঠে আনিতা। পাশ থেকে একজন বলে উঠে,
--"আমি বুঝিয়ে বলছি তোকে।"
আহিয়ান পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পাশে ফিরে তাকায়। পাশে দাঁড়িয়ে আছে এর বড় ভাই নাহিয়ান। এই ভার্সিটির প্রফেসর ও। নাহিয়ান একে একে সবটা আহিয়ানকে খুলে বলে। এবারে আহিয়ান বুঝতে পারলো আনিতার এমন কান্নাকাটি আর ওসব কথার মানে। পাশ থেকে অন্যএকজনকে সবটা বলতে শুনে আনিতা মাথা তুলে তাকায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে। আনিতা আর রোদেলা দুজনেই চোখ বড় বড় করে দেখছে দুজনকে। আনিতা আর রোদেলাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,
--"এটা হচ্ছে আমার বড় ভাই নাহিয়ান। এই ভার্সিটিরই প্রফেসর।"
--"আপনারা দুজনে কি যমজ?"
--"উঁহু। আহিয়ান আমার থেকে গুনে গুনে সাড়ে চার বছরের ছোট।"
রোদেলার প্রশ্নের জবাবে নাহিয়ান বলল কথাটা। আনিতার অবাকের মাত্রা যেন এখনো কমছে না। চোখ বড় বড় করে একবার আহিয়ানকে দেখছে তো একবার নাহিয়ানকে দেখছে। দুটো মানুষের মাঝে চেহারার এতটা মিল কিভাবে থাকতে পারে? যমজ না দুজনে। কিন্তু যে কেউ দুজনকে একসাথে দেখলে গুলিয়ে ফেলবে। দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যাবে এই ভেবে যে কোনটা নাহিয়ান আর কোনটা আহিয়ান? দুজনেই একদম ফর্মাল লুকে আছে। কালো প্যান্ট সাদা শার্ট। আহিয়ানের থেকে নাহিয়ানের গায়ের রংটা সামান্য একটু উজ্জ্বল। দূর থেকে দেখলে কেউ সেটা ধরতেও পারবে না। অতি কাছ থেকে যে দেখবে দুজনকে সেই বুঝতে পারবে ওদের গায়ের রঙে কিছুটা তফাৎ আছে। আর তাছাড়া নাহিয়ান হাসলে বা গালে টোল পড়ে কিন্তু আহিয়ানের টোল পড়ে না। এ দুটো পার্থক্য ছাড়া আর কোনো অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে না দুজনের। আনিতা অবাকের রেশটা এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।
।
।
।
চলবে।
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪২
#Ornisha_Sathi
একটা রেস্তোরাঁয় বসে আছে ওরা চারজনে। আনিতা লজ্জায় মুখ তুলে নাহিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে না অব্দি। কি একটা অস্বস্তিকর অবস্থা। আহিয়ান ভেবে আহিয়ানের বড় ভাইকে যা না তাই বলে দিলো। এখন লজ্জায় একদম নুইয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে নাহিয়ানই প্রথমে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"তোর পিচ্চির চক্করে পড়ে ভার্সিটিতে সকল স্টুডেন্টদের সামনে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেলো।"
--"আর একটু হলে যে তোমার জন্য আমার না হওয়া সংসারটা ভেঙে যাচ্ছিলো। বাসায় যাই একবার তারপর ভাবীকে বলছি মেয়েদের নিয়ে রিকশায় করে ঘুরা আবার ভার্সিটি এসে ওই রুপশার সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খাওয়া তাই না?"
--"আরেহ ভাই সকালে ওটা তোর ভাবীই ছিলো। ওকে ওর বাবার বাসায় নামিয়ে দিয়েই আমি ভার্সিটি এসেছি।"
--"হ্যাঁ সকালে না হয় ভাবী ছিলো। কিন্তু ভার্সিটি এসে রুপশার সাথে কফি খাচ্ছিলে কেন? ভাবী না বলেছে ওর থেকে দূরে দূরে থাকতে?"
--"আমাকে তো জোর করে টেনে নিয়ে গেলো।"
--"বুঝেছি আমি। এখন আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।"
--"তোর এইসব ফালতু পেচাল বাদ দিবি? আনিতার সাথে সহজ হতে দে আগে আমায়। মেয়েটা একদম ভয় পেয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে এক কোনে।"
আহিয়ান কিছু না বলে পকেট থেকে ফোন বের করলো। দুপুর দেড়টা বাজে। তাই আহিয়ান একজন ওয়েটারকে ডেকে লাঞ্চের অর্ডার করলো। আহিয়ান আনিতার দিকে চোখ বুলালো একবার। মেয়েটা এখনো আনইজি ফিল করছে৷ করারই তো কথা। আহিয়ান ভেবে আহিয়ানের বড় ভাইকেই হুমকি ধমকি দিয়েছে কিনা? তার উপর আবার ওদের প্রফেসর। অস্বস্তি ভয় লজ্জা তো হবেই। আহিয়ান নাহিয়ান দু ভাই মিলে বেশ কিছুটা সময় ওকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক করেছে। সেদিনের মতো ওরা লাঞ্চ করে বাসায় ফিরে আসে। বাসার সামনে এসে আনিতা এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যায়।
তার কিছু দিন পরের কথা। বিকেলে আনিতা আর আহিয়ান সেই নদীরে পাড়ে গিয়ে বসে সময় কাটাচ্ছিলো। হঠাৎই একটা বাচ্চা মেয়ের উপর আনিতার চোখ যায়। বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে প্রথমেই আনিতার নুজাইরাহ এর কথা মনে পড়ে৷ আনিতা ভাবলো, আহিয়ান আর নুজাইরাহরা তো একই বিল্ডিংয়ে থাকে। তাহলে নিশ্চয়ই আহিয়ান নুজাইরাহকে চিনবে। ওকে একবার নুজাইরাহ এর কথা জিজ্ঞেস করবে? দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে আনিতা আহিয়ানকে বলে,
--"আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?"
--"হুম।"
--"নুজাইরাহকে চিনেন?"
নুজাইরাহ এর নাম শুনতেই আহিয়ান ফোন পকেটে পুড়ে আনিতার দিকে ফিরে বসলো। আনিতার হাত ধরে বলে,
--"কোন নুজাইরাহ?"
--"আপনাদের বিল্ডিংয়েই তো থাকে। কি কিউট করে বাচ্চা একটা মেয়ে। কেন আপনি চিনেন না?"
--"হ্যাঁ চিনি। কেন বলো তো?"
--"ওকে আমার বেশ ভালো লাগে। ইচ্ছে করে সবসময় ওকে আমার সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। কত্তত্ত কিউট। বারবার ওর গাল গুলো টেনে দিতে ইচ্ছে করে। ওর কথা গুলো শুনতে ভালো লাগে।"
--"তাই?"
--"হুম তো। জানেন ও না আমাকে কয়েকবার কাকিয়া বলে ডেকেছিলো। ওর কাকাই এর ফোনে নাকি আমার অনেক ছবি দেখেছে। কিন্তু কে ওর কাকাই সেটাই বুঝলাম না।"
আনিতা ঠোঁট উলটে কথাগুলো বলল। আহিয়ান দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে বলে,
--"কেন জিজ্ঞেস করোনি ওর কাকাই কে? কার এত বড় সাহস আমার পিচ্চিপাখির অনেকগুলো ছবি নিজের ফোনে রাখে।"
--"জিজ্ঞেস করেছিলাম তো। কিন্তু কিছু না বলেই খেলতে চলে গিয়েছিলো।"
--"আচ্ছা চলো।"
--"কোথায়?"
--"আরেহ চলো না। গেলেই দেখতে পাবে।"
এই বলে আহিয়ান আনিতার হাত টেনে ধরে বাইকের কাছে নিয়ে গেলো। ওরা দুজনে বাইকে উঠে বসতেই আহিয়ান বাইক স্টার্ট দিলো। মিনিট দশেকের মাঝেই আহিয়ান ওদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে বাইক থামালো। আহিয়ান বাইক পার্ক করে আনিতার হাত ধরে ওদের বিল্ডিংয়ের ভিতর যেতে শুরু করলো। আনিতা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
--"এখানে কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
--"চলো আমার ফ্যামিলির বাকী সবার সাথেও তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।"
--"কিন্তু আপনার মা?"
--"আম্মু বাসায় নেই আজ।"
এইটুকু বলে আনিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লিফটে করে ফোর্থ ফ্লোরে উঠে পড়লো। লিফট থেকে বের হয়ে ডান দিকের দ্বিতীয় ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে আহিয়ান কলিংবেল চাপলো। এক থেকে দু মিনিটের মাঝেই দরজা খুলে গেলো। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অদ্রিকে দেখে আনিতা চোখ বড় বড় করে তাকায়। অদ্রি একগাল হেসে দরজার পাশ থেকে সরে গিয়ে বলে,
--"ভিতরে এসো ভাবী। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম আমরা।"
এইটুকু বলেই অদ্রি ভিতরে চলে গেলো। আহিয়ান আনিতার হাত ধরেই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"ও___"
--"ভিতরে চলো আগে তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।"
প্রত্যত্তুরে আনিতা আর কিছু বলল না। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে সোজা সোফায় গিয়ে বসলো। নাহিয়ান আর অদ্রি এসে বসলো পাশের সোফায়। রুহি উড়নায় হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে এসে আনিতার পাশে বসলো। আনিতা অবাক চোখে সবাইকে দেখছে। এরাই কি আহিয়ানের ভাবী আর বোন? আনিতা কিছুই বুঝতে পারছে না। ফ্যালফ্যাল করে ওদের সবার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি মুচকি হেসে আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--"এই যে ঝাসির রানী তোমার পাশে যে অতি কিউট হ্যান্ডসাম ড্যাশিং শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলেটাকে দেখছো আমি তার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ অর্থাৎ তার অতি আদরের ভাবী।"
রুহির এমন ঘোরপ্যাঁচ কথা শুনে আনিতা বিষম খেলো। আহিয়ান শান্তশিষ্ট? ওর মতো রাগী ছেলে তো মনে হয় আর দুটো দেখেনি আনিতা। অদ্রি কিচেনে গিয়ে একগ্লাস পানি এনে আনিতার সামনে ধরলো। আনিতা গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানি শেষ করে খালি গ্লাসটা টি-টেবিলের উপর রাখলো। আহিয়ান সবার সাথে আনিতার পরিচয় করিয়ে দেয়। অদ্রি আহিয়ানের ছোট বোন। আর ওই ফুটফুটে পিচ্চি কিউট নুজাইরাহ হলো নাহিয়ান আর রুহির মেয়ে। রুহি উঠে গিয়ে কিচেন থেকে ট্রেতে করে কয়েক ধরনের খাবার এনে টি-টেবিলে রাখলো। আনিতার পাশে বসে আনিতাকে খেতে ইশারা করলো। আনিতা কাচুমাচু হয়ে চুপচাপ বসে আছে। এতদিনে রুহি আর অদ্রির সাথে আনিতা বেশ সহজ হলেও জানতো না ওরা আহিয়ানের ভাবী আর বোন। আজকে জানার পর কেমন একটা জড়তা কাজ করছে। পাশের রুম থেকে নুজাইরাহ "কাকাই" বলে দৌড়ে এসে আহিয়ানের কোলে চেপে বসলো। আহিয়ানও পরম আদরে নুজাইরাহকে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।
অনেকটা সময় সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিতে দিতে একপর্যায়ে আনিতা আবার আগের মতো রুহি আর অদ্রির সাথে সহজ হয়ে গেলো। আর কোনো জড়তা কাজ করছে না ওর মাঝে। নাহিয়ানের সাথেও আনিতা এখন বেশ ফ্রি হয়েছে। সন্ধার ক্ষানিকটা আগে আনিতা ওঠে দাঁড়ালো নিজেদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য। নুজাইরাহ আনিতার কাছে এসে দাঁড়াতেই আনিতা ওকে কোলে তুলে নেয়। নুজাইরাহ আনিতার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। নুজাইরাহকে কোলে নিয়েই সকলের থেকে বিদায় নিয়ে আনিতা আহিয়ানদের ফ্ল্যাট থেকে বের হলো। সাথে আহিয়ানও এসেছে। আনিতা নুজাইরাহকে কোলে করে নিয়েই নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। আহিয়ান পরে এসে নুজাইরাহকে নিয়ে যাবে।
-
বেশ কিছুদিন যাবত রিদমানের বিরক্ত করার পরিমানটা বেশ বেড়ে চলেছে। যখন তখন যেখানে সেখানে বিরক্ত করতে চলে আসে। ওর জন্য এখন আনিতা ফাইয়াজ বা আহিয়ানকে ছাড়া একা বাসা থেকে বেরও হয় না। রিদমানের বিষয়ে আহিয়ান আর ফাইয়াজকে জানিয়েছে আনিতা। ওরা দুজনে বেশ কয়েকবার রিদমানকে ওয়ার্ন করেছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না এতে। রিদমানের অসভ্যতামো দিন দিন বেরেই যাচ্ছে। কিন্তু আজ তো রিদমান সব লিমিট একেবারে ক্রস করে ফেলেছে।
বিকেলে নুজাইরাহ এসেছে বাসায়। সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই বায়না ধরে চিপস্ খাবে। ফাইয়াজ আর শুভ বাসায় নেই। রোদেলাও রাতের রান্না করছে। তাই বাধ্য হয়েই আনিতা উঠে দাঁড়ালো দোকানে যাওয়ার জন্য। আনিতাদের বিল্ডিংয়ের প্রথম তলায় একটা দোকান আছে। একটা চিপস্ তো কিনবে। তিন থেকে চার মিনিট লাগবে। তাই ও গায়ে উড়না জড়িয়ে দরজা খুলে আশেপাশে দেখে নিলো একবার৷ নাহ রিদমান কোথাও নেই। আনিতা মনে মনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে পা বাড়ালো সিড়ির দিকে। দোকানে গিয়ে দু প্যাকেট চিপস্ কিনে নিলো আনিতা। দোকানীকে টাকা দিয়ে পিছু ঘুরার আগেই হুট করে কেউ আনিতার কোমড়ে বাজে ভাবে স্পর্শ করে। চট করে আনিতা পিছন ফিরে রিদমানকে দেখে কয়েকপা সরে দাঁড়ায়। রাগে ঘৃণায় আনিতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। দ্রুত পা ফেলে আনিতা সিড়ি বেয়ে চার তালায় উঠে যায়৷ নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে ভিতরে যাওয়ার আগেই রিদমান ওকে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। রিদমান বা হাত দিয়ে আনিতার একহাত পিছনে নিয়ে পিঠের সাথে মুচড়ে ধরে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে আনিতা। ডান হাত দিয়ে রিদমান আনিতার কপাল থেকে থুতনি অব্দি বাজে ভাবে স্পর্শ করে। এবার কিছুটা শব্দ করেই কেঁদে ফেলে আনিতা৷ রিদমান আনিতার কপালে পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে,
--"এখন কোথায় তোমার আহিয়ান? এলো না আমার হাত থেকে তোমায় বাঁচাতে? ও তো আমায় তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে অব্দি বারন করেছিলো। কিন্তু আমি তো তোমায় টাচ করে ফেললাম। এবার কি হবে?"
--"চোরের মতো লুকিয়ে আহিয়ানের চোখের আড়ালে আমার সাথে এরকম না করে পারলে ওর সামনে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেখান। আপনার হাত আর হাতের জায়গায় থাকবে না।"
--"এই চুপ। একদম চুপ। আহিয়ানের ভয় দেখানো হচ্ছে আমাকে? আহিয়ানের ভয়? তোমার সাহস হয় কি করে ওর সাথে এভাবে ঘুরে বেরানোর? তোমাকে একদিন বলেছি না তুমি শুধু আমার? তাহলে কেন ওর সাথে মিশো তুমি? নেক্সট টাইম যাতে আর না দেখি ওর সাথে তোমাকে। আমি ভালোবাসি তোমাকে। আমি ভালোবাসি। আমি তোমাকে আহিয়ানের কিছুতেই হতে দিবো না।"
এইটুকু বলে রিদমান একহাতে আনিতার দু গাল চেপে ধরে ওর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। আনিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। এদিক ওদিক মাথা নাড়াচ্ছে। কিছুতেই রিদমানের সাথে পেড়ে উঠছে। এই মূহুর্তে ওর নিজেকে খুব বেশি অসহায় অসহায় লাগছে। মনে মনে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে বারবার। হঠাৎ করেই সিড়িতে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে রিদমান আনিতাকে ছেড়ে দেয়। আনিতা ছাড়া পেয়ে রিদমানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে।
আনিতাকে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিতে দেখে রোদেলা কিচেন থেকে বের হয়ে এলো। সদর দরজা খোলা দেখে রোদেলা সদর দরজা আটকাতে গিয়ে দেখে বাইরে রিদমান দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ফ্ল্যাটের দিকেই উঁকিঝুঁকি মারছে। রোদেলা এবার বুঝতে পারলো আনিতার ওভাবে দৌড়ে গিয়ে রুম লক করে দেওয়ার কারন। রোদেলা সদর দরজা লাগিয়ে ওদের রুমের সামনে চলে যায়। দরজা ধাক্কা দিয়ে বেশ কয়েকবার আনিতাকে ডাকে রোদেলা। কিন্তু আনিতা ভেতর থেকে কোনো সারা দিচ্ছে না। রোদেলার বেশ ভয় লাগছে এবার। বাইরে রিদমান উল্টাপাল্টা কিছু করেনি তো আনিতার সাথে? এসব ভেবে রোদেলার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। নুজাইরাহ সোফা থেকে নেমে রোদেলার পাশে দাঁড়িয়ে ওর জামা ধরে টানে। রোদেলা হাটু ভেঙে নুজাইরাহ এর সামনে বসতেই নুজাইরাহ বলে,
--"আন্টি কাকিয়ার কি হয়েছে?"
--"কিছু হয়নি সোনা। তুমি যাও গিয়ে কার্টুন দেখো।"
--"আমি চিপস্ খাবো।"
--"আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি সোনা।"
এইটুকু বলে রোদেলা উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলো টি-টেবিলের উপর দু প্যাকেট চিপস্ রাখা। রোদেলা নুজাইরাহকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে এক প্যাকেট চিপস্ ওর হাতে দিয়ে আবারো আনিতাকে ডাকতে গেলো। কিন্তু আনিতা এবারেও সারা দিচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পরও যখন আনিতা সারা দিচ্ছে না তখন রোদেলার ভয় হতে শুরু করে। আর কোনো উপায় না পেয়ে ফাইয়াজকে কল দেয়। ফাইয়াজের ফোন ওয়েটিং বলছে। কি করবে না করবে কিছু ভাবতে পারছে না রোদেলা। উপায়ন্তর না পেয়ে শেষে আহিয়ানকে ফোন করে আনিতা। দু বার রিং হতেই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে। রোদেলা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
--"ভাইয়া আনিতা রুমের দরজা খুলছে না।"
--"ঘুমিয়েছে হয়তো। ডাকো ভালো করে।"
--"নাহ ভাইয়া ঘুমায়নি ও।"
--"তাহলে দরজা খুলবে না কেন?"
--"আধ ঘন্টা আগে নুজাইরাহ বায়না ধরেছিলো চিপস্ খাবে। তাই ও চিপস্ কিনতে নিচে গিয়েছিলো। সেখান থেকেই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে দরজা লক করেছে। এখন এত করে ডাকছি দরজা খুলছে না ও। সদর দরজা লক করতে গিয়ে রিদমানকে দেখেছিলাম আমাদের ফ্ল্যাটের বাইরে। আম্ আমি কি করবো ভাইয়া? খুব টেনশন হচ্ছে আমার। আনিতাকে এত করে ডাকার পরও কিছুতেই সারা দিচ্ছে না ও।"
--"আসছি আমি।"
এইটুকু বলেই আহিয়ান লাইন কেটে দিলো। অফিস থেকে বের হয়ে বাইক স্টার্ট দিলো আহিয়ান। যতটা জোরে সম্ভব বাইক চালাচ্ছে আহিয়ান। বাইক চালাতে চালাতেই আহিয়ান একা একা বিড়বিড় করছে,
--"এবার যদি রিদমান বাড়াবাড়ি কিছু করেছে তো আমি খুন করে ফেলবো ওকে। আমার হাত থেকে এবারে কেউ বাচাতে পারবে না ওকে। আই সোয়্যার, আই উইল কিল হিম।"
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]