Bangla Golpo pdf - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_৪৩ - bangla choti golpo

 


শুধু তোমারই জন্য

পর্ব_৪৩

Bangla Golpo pdf - শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_৪৩ - bangla choti golpo
Bangla Golpo pdf - শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_৪৩ - bangla choti golpo 


আহিয়ান বাসার সামনে এসে কোনোমতে বাইক পার্ক করে দ্রুত সিড়ি বেয়ে চারতলায় উঠে গেলো। সদর দরজা খোলাই ছিলো। আহিয়ান ভিতরে ঢুকে দেখলো আনিতার রুমের দরজা খোলা। রুমে ঢুকতেই দেখে আনিতা ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আহিয়ান আনিতাকে একদম ঠিকঠাক দেখতে পেয়ে মনে মনে আল্লাহ এর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করে। আহিয়ানকে দেখে রোদেলা আনিতার অন্যপাশ থেকে সরে বসলো। আহিয়ান আনিতার পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,


--"আনি___কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন এভাবে? আমাকে বলবে না?"


আহিয়ান আনিতার মাথায় হাত রাখার সাথে সাথেই আনিতা ফাইয়াজকে ছেড়ে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে ওর শার্ট খামচে ধরে কিছুটা শব্দ করে কাঁদছে এখন আনিতা। শুভ নিরব দর্শকের মতো এক কোনে দাঁড়িয়ে আনিতাকে দেখছে। আহিয়ান আবারো আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,


--"তুমি যদি না বলো তোমার কি হয়েছে তাহলে আমি বুঝবো কিভাবে? তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় তো।"


আনিতা তখনো চুপচাপ আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে হেঁচকি তুলে কাঁদছে। আহিয়ানের মনে পড়লো রোদেলা বলেছিলো, আনিতা যখন দরজা লক করে তখন সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রিদমান উঁকিঝুঁকি মারছিলো। রিদমানের কথা মনে হতেই আহিয়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো। তবুও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে বলে,


--"রিদমান কিছু বলেছে তোমায়?"


রিদমানের কথা শুনতেই আনিতা আরো শক্ত করে আহিয়ানকে আঁকড়ে ধরলো। আগের তুলনায় আরো বেশি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আহিয়ানের বুঝতে বাকী রইলো না রিদমানই কিছু করেছে। আনিতার পিঠে হাত রেখে আহিয়ান বলে,


--"কি করেছে ও?"


--"উন্ উনি আমার সা্ সাথে_____"


একে একে সবটা খুলে বলল আনিতা আহিয়ানকে। কথাগুলো শুনে আহিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর। ওই রিদমানের এত সাহস হলো কি করে ওর আনিতার গায়ে হাত দেয়? রাগে নিজের হাত মুঠো করে নিলো ও। আহিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে শান্তর নাম্বারে ডায়াল করলো। কয়েক সেকেন্ড বাদে শান্ত ফোন রিসিভ করতেই আহিয়ান বলে,


--"রিদমান কোথায়?"


--"জানি না ভাই।"


--"এক্ষুনি খোঁজ লাগা৷ আর ওর খোঁজ পাওয়ার সাথে সাথেই আমাকে লোকেশন জানাবি।"


--"আচ্ছা ভাই।"


এইটুকু বলেই ওপাশ থেকে শান্ত ফোন কেটে দিলো। মিনিট দুয়েকের মাথায় শান্ত ম্যাসেজ করে জানালো রিদমান তিন রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। গটগট করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আনিতাকে নিয়ে বাইকে উঠে বসলো আহিয়ান। ফাইয়াজ এসে আহিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"বাদ দে এসব। এখন আর ঝামেলা করে লোক জানাজানি করে লাভ নেই। নেক্সট টাইম এমন করলে আর ছাড় পাবে না ও।"


--"ওকে অনেকবার ওয়ার্ন করা হয়েছে ফাইয়াজ। কিন্তু ও কিছুতেই শুনেনি। আর আজ তো সব লিমিট ক্রশ করে ফেলেছে ও।"


এইটুকু বলে সাথে সাথেই বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো আহিয়ান। ফাইয়াজ বুঝতে পেরেছে ওকে একা সামলাতে পারবে না। তাই ও তন্ময় রাতুল ওদেরও ডেকে নিলো ওখানে। ফাইয়াজও বাইক বের করে তিনজনে বাইকে করে কিছু সময়ের মাঝেই তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছে যায়। আহিয়ান ততক্ষণে রিদমানের শার্টের কলার ধরে রাস্তায় বের করে এনেছে। সন্ধ্যা বিধায় এখন এখানে প্রচুর মানুষ জনের আনাগোনা। সন্ধ্যার পর এই জায়গাটা বেশ জমজমাট থাকে। সেই কারনে এখানে আজও প্রচুর মানুষের ভীর। সবাই উৎসুক চোখে আহিয়ান আর রিদমানের দিকে তাকিয়ে আছে। 


আহিয়ান রিদমানকে বাইরে টেনে এনে ওর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে৷ রিদমান ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে৷ তন্ময় আর রাতুল এসে আহিয়ানকে টেনে ওর থেকে দূরে নিয়ে গেলো। আহিয়ান ঝাড়া মেরে ওদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারো রিদমানের কাছে গিয়ে ওর শার্টের কলার ধরে বলে,


--"কু___বাচ্চা তোর সাহস হলো কি করে ওকে স্পর্শ করার? তোকে এর আগেও বেশ কয়েকেবার ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস নি। উলটো আজ তুই আমার আনিতাকে স্পর্শ করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছিস। তোকে তো আমি আজ জানেই মেরে ফেলবো।"


এই বলে আহিয়ান রিদমানের নাক বরাবর একটা পাঞ্চ মারে। রিদমান ছিটকে ক্ষানিকটা দূরে সরে দাঁড়ায়। রিদমান নিজের নাক আঙুল দিয়ে ঘঁষে বলে,


--"ভুল করছিস আহিয়ান। খুব বড় ভুল করছিস। এর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে। আর যেই আনিতার জন্য আজ তুই জনসম্মুখে আমার গায়ে হাত তুললি না? সেই আনিতার এমন হাল আমি করবো যে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেও হাজার বার ভাববে।"


ফাইয়াজ এবার এগিয়ে গিয়ে রিদমানকে আরো একটা পাঞ্চ মারে। আহিয়ান এগিয়ে গিয়ে রিদমানের শার্ট খামচে ধরে বলে,


--"কি বললি তুই? আর একবার বল। একদম জিন্দা মাটির নিচে পুতে ফেলবো৷"


রিদমান ঝাড়া মেরে আহিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শার্ট ঝাড়া দিতে দিতে বলে,


--"এখন আর বলবো না। করে দেখাবো।"


এইটুকু বলে আনিতার দিকে এগিয়ে যায় রিদমান। আনিতাকে টাচ করার জন্য হাত বাড়াতেই আহিয়ান রিদমানের হাত ধরে টেনে ওকে রাস্তায় ফেলে দেয়। হাটু গেড়ে রিদমানের পাশে বসে ওর শার্টের কলার ধরে একের পর এক থাপ্পড় দিয়েই যাচ্ছে রিদমানকে। রাতুল আরহান তন্ময় ওরা সকলেই আপ্রান চেষ্টা করছে আহিয়ানকে ছাড়িয়ে আনতে। কিন্তু পেরে উঠছে না। সকলকেই ঝামটা মেরে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তন্ময় গিয়ে আনিতাকে বলে,


--"তুমি যাও। তোমার কথা শুনবে আহিয়ান। এমন চলতে থাকলে তো ও রিদমানকে জানে মেরে ফেলবে৷ সরিয়ে আনো ওকে।"


আনিতা এক পা দুপা করে আহিয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই আহিয়ান পিছু ফিরে তাকায় ওর দিকে। রিদমানকে মারতে মারতেই আহিয়ান বলে,


--"সরে যাও আনি। আমাকে আটকাতে আসবে না বলে দিলাম।"


--"হাত জোর করছি। চলে আসুন প্লিজ। এভাবে মারলে ও মরে যাবে তো।"


--"মরুক। মেরে ফেলতেই তো চাই আমি ওকে। ওর সাহস হলো কি করে তোমার গায়ে হাত দেয়ার? তোমাকে স্পর্শ করার মতো সাহস দেখিয়েছে ও। তোমাকে? ওর কতো বড় বুকের পাঠা আজ আমিও দেখবো।"


--"আমি বলছি। প্লিজ ছাড়ুন ওকে। বাসায় চলুন।"


আনিতা আহিয়ানের হাত ধরে টেনে রিদমানের থেকে ছাড়িয়ে আনলো ওকে। একপ্রকার জোর করেই আহিয়ানকে নিয়ে বাসায় ফিরলো ওরা। 


রাত এগারোটা বাজতে চলল। আনিতা আহিয়ানকে খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আহিয়ান কিছুতেই খেতে চাচ্ছে না। এখনো রেগে আছে প্রচুর। এতো মেরেও কিনা এই ছেলের রাগ কমলো না। আনিতা বহু কষ্টে কয়েক লোকমা খাবার খাইয়ে দিলো আহিয়ানকে। তারপর ডাইনিংয়ে বসে নিজেও সবার সাথে খেয়ে নিলো। আরহান আর রাতুল চলে গিয়েছে বেশ কিছুটা সময় হলো। আহিয়ান আর তন্ময় এখনো আনিতাদের বাসাতেই আছে। আহিয়ান কিছুতেই বাসায় যেতে রাজি হচ্ছে না। ফাইয়াজ আহিয়ানকে আস্বস্ত করে বলে,


--"আর সমস্যা হবে না আহিয়ান। আমি আর শুভ তো এখন বাসায় আছি। আর রিদমান যদি এরপরেও কোনো ঝামেলা করে তাহলে তোকে আমি ফোন করে জানিয়ে দিবো। তোর বাসা তো এখানেই। তখন না হয় চলে আসবি।"


অনেক বোঝানোর পর আহিয়ান বাসায় যেতে রাজি হয়। বাসায় যাওয়ার আগে আহিয়ান বেশ ক্ষানিকটা সময় সবার সামনেই আনিতাকে জড়য়ে ধরে রাখে। তারপর আলতো করে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। আহিয়ানের পিছু পিছু তন্ময়ও চলে যায়। আনিতা আর রোদেলাও নিজেদের রুমে চলে যায়। আনিতা আগেই গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। রোদেলা লাইট অফ করে আনিতার পাশে শুতেই আনিতা রোদেলাকে জাপ্টে ধরে ঘুমায়।


-


সকাল আটটা নাগাদ আনিতার ঘুম ভাঙে। ও পাশে রোদেলাকে দেখতে পেলো না। বিছানা ছেড়ে ওঠে অলস ভঙ্গিতে ওয়াশরুমে চলে গেলো আনিতা। বেশ ক্ষানিকটা বাদে ফ্রেশ হয়ে বের হলো ও। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আনিতা আয়েশ করে সোফায় গিয়ে বসলো। রোদেলা তখন গ্যাসে কফির পানি বসিয়েছে৷ ফাইয়াজ বাজারে গিয়েছে সকালের নাস্তা আনতে৷ আর শুভ কুম্ভকর্ণের মতো এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। 


মিনিট পাঁচেক বাদেই ফাইয়াজ নাস্তা নিয়ে বাসায় ফিরলো। আনিতা নাস্তা নিয়ে প্লেটে রেখে একে একে টেবিলে খাবার সাজালো। ফাইয়াজ চেয়ার টেনে বসলো৷ আনিতাও পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। রোদেলা তিনমগে কফি করে এনে টেবিলে রাখলো। তিনজনে মিলে একসাথে খাবার শেষ করে সোফায় গিয়ে বসলো। ফাইয়াজ নিজের রুমে গিয়েছে। অফিস যাওয়ার জন্য একটু বাদেই রেডি হবে। আনিতা আর রোদেলা আজ ভার্সিটি যাবে না। আনিতার ফোন বেজে উঠতেই ও ফোন হাতে নিয়ে দেখে জেরিনের ফোন। আনিতা ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই জেরিন বলে,


--"এফবিতে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে দেখেছিস?"


--"কিসের ভিডিও?"


--"জানিস না তুই?"


--"নাহ তো।"


--"রাস্তার মাঝে একটা ছেলেকে ফেলে আহিয়ান ভাইয়া মারছে। তোকেও দেখা গিয়েছে সেখানে। ছেলেটা তোর সাথে নাকি উল্টাপাল্টা কিছু করেছে।"


--"মা্ মানে? কি বলছিস এসব তুই?"


--"আমি তোকে ভিডিও এর লিংক পাঠাচ্ছি তুই দেখে নে।"


--"আচ্ছা দে তো।"


জেরিন ফোন কেটে দিয়ে এফবিতে একটা ভিডিও এর লিংক সেন্ড করলো আনিতাকে। আনিতা লিংকে ক্লিক করতেই একটা ভিডিও এলো। খুবই পুপুলার একটা পাবলিক গ্রুপে ভিডিওটা পোস্ট হয়েছে। কালকের ঘটনার পুরো দেড় মিনিটের একটা ভিডিও কেউ এফবিতে আপলোড করেছে। কাল যা ঘটেছিলো তার সাথে ক্যাপশনে আরো রংচঙ মেখে ঘটনাটাকে আরো বাজে ভাবে সবার সামনে উপস্থান করা হয়েছে। ভিডিও দেখে কেঁদে ফেললো আনিতা৷ তেরো ঘন্টায় ভিডিওটাতে প্রচুর ভিউস কমেন্টস শেয়ার এসেছে। এক কথায় ভাইরাল ভিডিও। পুরো দেশ দেখেছে এই ভিডিও। আনিতার এবার ভয় হতে শুরু করলো। ওর বাসার কেউ দেখেনি তো এটা? তাহলে তো ওকে জানে মেরে ফেলবে। রোদেলা ফাইয়াজকে ডেকে ভিডিওটা দেখালো। ফাইয়াজও ঘাবরে গিয়েছে। ফাইয়াজ ভাবছে এটা যদি ওর ছোট মামা দেখে তাহলে আর রক্ষা থাকবে না। হুট করেই কলিংবেল বেজে উঠলো। বাসা থেকে কেউ আসেনি তো? ভয়ে আনিতার হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। রোদেলা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আহিয়ান এসেছে। ফাইয়াজ আহিয়ানকে ভিডিওটা দেখালো। মূহুর্তেই আহিয়ানের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। জনগন তো এমনিতেই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তিল থেকে তাল বানায়। আর এখানে কাল রাতে জনসম্মুখে একটা ছেলে আর একটা ছেলেকে রাস্তায় ফেলে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে। রক্তাক্ত করেছে তাও আবার তার গার্লফ্রেন্ডকে স্পর্শ করেছিলো বলে। পাবলিক তো এটাকে আরো রংচঙ মাখাবেই। আনিতা সোফায় বসে কেঁদে যাচ্ছে। মিনিট দশেক বাদে আবারো কলিংবেল বেজে উঠলো। এবারেও রোদেলা দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে আনিতার ছোট চাচ্চু দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা এবার ভয়ে সিটিয়ে গেলো। ফাইয়াজও শুকনো ঢোক গিলে। আনিতার ছোট চাচ্চু একপলক আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আনিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শান্ত গলায় আনিতাকে বলে,


--"ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে নাও এক্ষুনি।"


--"কে্ কেন চাচ্চু?"


--"আমার সাথে বাসায় ফিরবে আজ আর এক্ষুনি।"


--"ছয়দিন পর আমার ফার্স্ট সেমিস্টার এক্সাম।"


--"অনেক পড়াশুনা করেছো এতোদিনে। আর দরকার নেই।"


ফাইয়াজ এগিয়ে এসে ওর ছোট মামার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


--"কিন্তু মামা এভাবে হঠাৎ করে?"


--"কাল এখানে যা ঘটেছে তারপরও আমি ওকে এখানে রাখবো ভেবেছিস?"


--"এখানে তো ওর কোনো দোষ ছিলো না।"


--"কার দোষ ছিলো আর কার ছিলো না এসব আমি জানতে চাচ্ছি না। ও আমার সাথে বাসায় যাবে ব্যাস।"


আহিয়ান এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো সবটা দেখছিলো। কিন্তু আর বসে থাকতে পারলো না। আহিয়ান গুটি গুটি পায়ে আনিতার চাচ্চুর সামনে এসে দাঁড়ালো। আহিয়ান মাথা নিচু করেই বলে,


--"মামা ভুল বুঝছেন আপনি।"


--"তোমার থেকে অন্তত কিছু শুনতে চাইছি না আমি। আর কাল ওই ভিডিওটাতে তুমিই তো ছিলে। তুমিই তো মারছিলে ওই ছেলেকে আনিতার গায়ে হাত দেওয়ার জন্য। কালকের ঘটনার পর সবার আর জানা বাকি আছে তোমাদের দুজনের মধ্যে কি সম্পর্ক আছে? সমাজে কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবো আমরা?"


--"ভিডিও তে আসলে যা দেখানো হয়েছে তার পুরোটা সত্যি না।"


আনিতার চাচ্চু আহিয়ানের কথা আমলে নিলেন না। আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে ধমকে সুরে বললেন,


--"তোকে ব্যাগ গুছাতে বললাম না আমি?"


আনিতা মাথা নিচু করে রুমে চলে গেলো। ওর পিছু পিছু রোদেলাও গেলো। আনিতা ব্যাগ গুছিয়ে বিছানায় বসে কাঁদছে। রোদেলা গিয়ে ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখতেই আনিতা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো৷ আনিতার চাচ্চু বাইরে থেকে বার বার আনিতাকে ডাকছে। আনিতা চোখের পানি মুছে ব্যাগ হাতে রুম থেকে বের হয়ে এলো। আনিতা বের হতেই আনিতার চাচ্চুর ওর হাত থেকে ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে নিলো। ফাইয়াজ আহিয়ান ওরা অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আনিতার চাচ্চু বুঝতে নারাজ। আনিতার হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। পিছন পিছন আহিয়ান ওরা সকলেও নিচে নেমে এলো। সেকেন্ড ফ্লোরের সিড়িতে নামতেই আনিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। আনিতার চাচ্চু আনিতার দিকে তাকাতেই আনিতা কাঁদতে কাঁদতে মাথা নিচু করে বলে,


--"আহিয়ানকে আমি ভা্ ভালোবাসি চাচ্চু। প্ প্লিজ আ্ আমাদের আলাদা করে দি্ দিও না।"


কথাটা বলতে দেরী হলেও আনিতার গালে থাপ্পড় পড়তে দেরী হলো না। কথাটা শুনার সাথে সাথেই আনিতার চাচ্চু সজোরে আনিতার গালে থাপ্পড় মারলো। বিস্ময়ে আনিতা গালে হাত দিয়ে ওর চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রইলো ক্ষানিকটা সময়। এই প্রথম আনিতার গায়ে ওর পরিবারের কেউ হাত তুলল। ওর ছোট চাচ্চু ওকে মেরেছে আজ। এটা যেন আনিতা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আহিয়ান চোখ বন্ধ করে আনিতাকে দেওয়া থাপ্পড়টা হজম করে নিলো। আহিয়ানের মনে হচ্ছে থাপ্পড়টা আনিতার গালে না ওর গালে পড়েছে। আনিতার চাচ্চু আর কথা না বাড়িয়ে আনিতার হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিচে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আনিতার চাচ্চু গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। আনিতাদের গাড়িটা চোখের আড়াল হওয়ার আগ অব্দি আহিয়ান গাড়ির দিকেই তাকিয়েছিলো অশ্রুসিক্ত নয়নে। আনিতাদের গাড়ি আড়াল হতেই আহিয়ান চোখের কোনের পানিটুকু মুছে নিলো।


যতটা সময় সামনের লুকিং গ্লাসে আহিয়ানকে দেখা যাচ্ছিলো আনিতা ততটা সময়ই আহিয়ানকে দেখেছে। আহিয়ান চোখের আড়াল হয়ে যেতেই আনিতা কিছুটা শব্দ করেই কেঁদে ফেললো। নিজের মনেই আনিতা বলে,


--"তবে কি আপনাকে আমার আর পাওয়া হবে না? আজই কি আমাদের শেষ দেখা আহিয়ান? কিভাবে থাকবো আমি আপনাকে ছাড়া? আপনাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবলেও যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ধীরে ধীরে যে আপনার থেকে অনেকটা দূরে চলে যাচ্ছি আমি। আমাদের এই দূরত্ব কি কোনোদিনও কমবে আহিয়ান? আমি কি তবে সত্যিই আপনাকে হারিয়ে ফেললাম? এই জীবনে কি আমার আর আপনাকে পাওয়া হবে না আহিয়ান?"

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.