Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট ৩ - bangla choti golpo - bangla love story - life story

 বোকা প্রেমিকা

পার্ট ৩

Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট ৩ - bangla choti golpo - bangla love story - life story
Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট ৩ - bangla choti golpo - bangla love story - life story 

ক্যান্টিনে নুপুরের সাথে বসে ছিলো জল।এরই মাঝে জলের ফোনটা কেঁপে ওঠে।ব্যাগ থেকে বের করে স্ক্রিনে বর্ষণের নাম্বার দেখতে পায়।


" হ্যালো।"


" জল আমার ইমার্জেন্সি কিছু টাকা লাগবে।"


" কত?"


" বেশি না।হাজার দশেক হলেই হবে।"


" এতগুলো টাকা দিয়ে কি করবে?"


" কি করবো মানে?দরকার আছে দেখেই তো চাচ্ছি।"


অনেকটা ধমকের সুরেই বলে বর্ষণ।জল বরাবরই শান্ত স্বভাবের মেয়ে।কথা অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে বলে।পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন!সে ধীরে সুস্থেই কথা বলবে।এইবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।শান্ত গলায় জল বলে,,,


" যেহেতু তুমি আমার কাছ থেকে টাকা নাও সে হিসাবে তুমি টাকা দিয়ে কি করবে বা না করবে তা জানার আমার অধিকার আছে।"


" আমার এক ফ্রেন্ড আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছে।এই মুহুর্তে আমার হাতে টাকা নেই।নাও করতে পারছি না তাই আর কি..."


"আমার কাছে চাইলে!"


বর্ষণের কথা শেষ হওয়ার আগেই জল বলে।বর্ষণ ফোনের বিপরীত পাশ থেকে হেসে আহ্লাদী সুরে বলে,,,


" কিছু বলার আগেই বুঝে যাও তুমি।এইজন্যই তো আমি আমার জলকে এত ভালোবাসি।"


" হু।আমি টাকা গুলো তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।"


" লাভ ইউ।"


" হু।"


জল ফোন কেটে দেয়।নুপুর এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে জল বর্ষণের কথা শুনছিলো।জল ফোন রাখতেই সে বলে উঠে,,,


" ছোটলোকটা তোর কাছে টাকা চাইলো আর তুই দিয়ে দিলি?"


" হু।"


" শুধু হু হু করছিস।তোর কি মনে হয় না বর্ষণ তোকে টাকার জন্য ব্যবহার করছে?"


" প্রয়োজন তাই।মানুষ মাত্রই প্রয়োজনে প্রিয়জন বানায়।"


" তাই এভাবে গাধার মতো একটা জোচ্চোরের পেছনে টাকা ঢালবি?"


" করতে থাকি না!দেখি পানি কতদূর গড়ায়।এক মাঘে তো শীত যায় না।প্রকৃতি একটা হলেও সুযোগ আমায় দেবে।"


" ওই আশায়ই বসে থাকো তুমি।ওই হারামিটার যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন ছুঁড়ে ফেলবে তোকে।"


তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে জল।চোখে মুখে তীব্র আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে,,,


" এহ!অতই সোজা নাকি?হতে পারে আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমার মাথার ওপর সেভাবে বাবা-মায়ের ছায়া নেই।কিন্তু এই কয়েকটা বছরে আমি যা শিখেছি তা আমার বয়সী কোনো মেয়ের সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পর্যন্ত নেই।তোরই তো নেই।কিছু হলেই ভ্যা করে কেঁদে দিস।"


" অপমান করলি?"


" অপমান না।মেয়েদের সামান্য কিছুতে চোখে পানি আসার জন্যই মানুষ মেয়েদের দুর্বল ভাবে।কেউ আমায় দুর্বল ভাবুক আমি চাই না।তাই আমি কাঁদি না।কখনো দেখেছিস আমায় কাঁদতে?"


নুপুর মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দেয়।জল আবার বলে,,,


" তোদের মতো আর পাঁচটা মেয়ের মতো নই আমি।পরিস্থিতি আমায় শক্তিশালী করেছে।বর্ষণ যা করছে করতে দে।সময় আমারও আসবে।সুদে আসলে হিসেব মিলিয়ে নেবো।তুই শুধু দেখে যা।"


___________


বাসায় এসে জল অন্যান্যবারের মতো এইবারও দরজা খট করে লাগিয়ে দেয়।তবে এই দরজার এ পাশের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন।জল এইবার কাঁদে নি।হেসেছে সে।পাগলের মতো হেসেছে।হাজারো দুঃখ-কষ্ট,অবহেলা,তাচ্ছিল্য হাসিটাকে ভুতুরে হাসি করে দিয়েছে।কোনো সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য জলের এই বিষাদের হাসিই যথেষ্ট।তারপর হঠাৎ করেই চুপ হয়ে যায় জল।আকষ্মিক ভাবে দরজাটা খুলে হনহন করে রান্নাঘরে যায় জল।ফল সবজি কাটার ধারালো চাকু দিয়ে একের পর এক আঘাত করে নিজের বাম হাতে।ক্ষতস্থান দিয়ে মুহুর্তেই রক্তস্রোত বইতে লাগে।জলের সেদিকে কোনো হুশই নেই।সে একের পর এক আঘাত করে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করছে।রক্তস্রোত দেখে সে কেমন একটা পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলে,,,


" বিষাদগুলো রক্ত হয়ে বেরিয়ে যাক।"


এরই মধ্যে জলের কানে ওপর থেকে ফোনের রিংটোনের আওয়াজ ভেসে আসে।কে ফোন করতে পারে।বর্ষণ?কিন্তু জল তো বর্ষণের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেছে!ওর তো ফোন দেওয়ার কথা নয়!নুপুর তো এখন টিউশনে গেছে।তাই নুপুরের কোনো প্রশ্নই আসে না।মা?মাকে না জল বলে দিয়েছে ফোন কম দিতে!কে কল দিতে পারে?

দৌড়ে ওপরে যায় জল।হাত বেয়ে টপটপ রক্ত মেঝে,সিঁড়িতে পরতে লাগে।এদের ভবিষ্যৎ অতীতের আর পাঁচটা রক্তবিন্দুর মতো।একসময় এরা অবহেলায় মেঝেতে কালো বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যাবে।


জল গিয়ে দেখে তার বাবা ফোন করেছে।বিরক্তি নিয়ে জল কলটা কেটে দেয়।জলের বাবা আবার ফোন করে।তিন চার বার কাটার পর জল কল রিসিভ করে।


" কেমন আছো?"


" হু,ভালো।তুমি কেমন আছো?"


" মেয়ে থাকে অন্য জায়গায়।তাও একা।বাবা হয়ে কি করে ভালো থাকতে পারি?"


জল কি করবে ভেবে পায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জলের বাবাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।তিনি যদি ওই মহিলাকে প্রশ্রয় না দিতেন তাহলে ওদের সুখের সংসারটা এভাবে ভেঙে যেত না।জলের জীবনটাও সুন্দর হতো।সে এভাবে একা হয়ে যেত না।


" তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো জল?"


" রাগের কোনো প্রশ্নই আসে না বাবা।আর আসলেও।রাগ করার আমি কে?


তীব্র অভিমান নিয়ে বলে জল।জলের বাবার বুঝতে বাকী রইলো না মেয়ের তার প্রতি জমেছে এক আকাশ অভিমান।ফোনে ওপাশ থেকে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।


" অনেক দিন হলো তোমায় দেখি না।"


" ছোটবেলায় তোমার আর মায়ের সাথে আমার অনেক ছবি আছে।ওগুলোই দেখো।"


" তখনকার জল আর এখনকার জলের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।"


" পরিস্থিতি করে দিয়েছে।"


" বাসায় আসবে?সেই সাড়ে তিনবছর আগে সেই যে বেরিয়েছিলে আর আসলে না।"


" ওই বাড়িটা আমার সুন্দর অতীত।সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে বাড়িটাতে।যা বর্তমানে আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।অতীতে ফিরে যেতে চাই না।"


" রিকোয়েস্ট করছি আমি তোমায়।"


" সম্ভব না।তাছাড়া আমি গেলে তোমার নতুন স্ত্রী আমায় নিয়ে রাগারাগি করতে পারে।"


" নতুন স্ত্রী?সে তোমার মা হয় জল।"


" মা তাকে আমি কখনো বলি নি।আর বলবোও না।পৃথিবীতে কারও কোনো দ্বিতীয় মা থাকে না।আর তিনি আমার মা হবেন কিভাবে?না তিনি আমায় বড় করেছেন আর না গর্ভে ধারণ করেছেন।উলটো আমার এই দূরে থাকার জন্য তিনিই দায়ী।রাখছি।ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।"


বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জল ফোন কেটে দেয়।হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কাটা স্থানে রক্তগুলো অনাদরে জমাট বেঁধেছে।জল ক্ষতস্থানটা পরিষ্কার করে হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে নেয়।

জলের মন কেন যেন বলছে টাকাগুলো বর্ষণ মিথ্যা কথা বলে নিয়েছে।ফেসবুকে ঢুকে আদিবার আইডিতে ঢোকে জল।স্টোরিতে ক্লিক করতেই দুইজনের কাটানো কিছু মুহুর্তের স্থির চিত্র আসে জলের সামনে।আশপাশ দেখে মনে হচ্ছে এটা বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স।ডে তে ক্যাপশন দেওয়া  "Shopping with my love"

এইজন্যই হয়তো বর্ষণ জলের থেকে এত গুলো টাকা নিলো।বর্ষণ জলের টাকায় বিলাসবহুল বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে অন্য মেয়েকে নিয়ে শপিং করে এদিকে জল নিজের যাবতীয় কেনাকাটা নিউমার্কেট থেকে করে।করতে থাকুক বর্ষণ।যত পারে করুক।সময় জলেরও আসবে।তখন এর থেকে হাজারগুণ যন্ত্রণা জল বর্ষণকে ফিরিয়ে দিবে।


চলবে,,,ইনশাআল্লাহ 


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.