আমরা অদিতি ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই

 

আমরা অদিতি ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই
আমরা অদিতি ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই

আমি তাসমিয়া হোসেন অদিতি, মায়ের অনেক আদরের মেয়ে। আমি পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুরে (মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী) নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। আমায় নিয়ে মায়ের অনেক স্বপ্ন, মা আমার পড়াশোনার দিকটাতে অনেক বেশি জোর দিতেন। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, বুঝতে পারতাম কষ্টে থেকেও আমার সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করতো মা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারতাম যে  সমাজের এক শ্রেণির মানুষ নামে প্রাণীর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে আমার উপর। প্রতিবাদ করার সাহস ছিলো না শুধুমাত্র এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া। কারণ আমি যে মেয়ে! আমায় যে এসব সহ্য করে, এড়িয়ে যেতে হবে এটাই নিয়ম! এমনটাই মনে হতো আমার কাছে।তাই প্রত্যহদিন হাজার হাজার শকুনের চোখ এড়িয়ে সর্বদা নিজেকে আড়াল করে,নিরিবিলি এই মর্ডান অভদ্র সমাজে ভদ্রতার মোড়ক প্যাঁচিয়ে থাকতাম। প্রাথমিকের গন্ডি পেরোতেই নিজের কাছে মনে হতো এইসব শকুনরা বোধহয় ভিনগ্রহের। এদের জন্ম স্বাভাবিক মানুষের মতো না। এদের ঘরে বোধহয় মা-বোন,মায়ের জাত বলে কেউ নেই,কিছু নেই! একটা সময় এমনও মনে হতো,মনে হতো বললে ভুল হবে অনেকটা বিশ্বাস করে মেনেই নিয়েছিলাম মাতৃভূমি, মাতৃস্নেহ ভরা দেশটার কর্তৃত্ব পুরুষ! সহ্য করে নিতাম এসব. মাঝে মাঝে ভাবতাম ইশ আমি যদি পুরুষ হতাম!রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতাম! অথবা আমি যদি কোন সুপারম্যান, আলাদিনের দৈত্যর সন্ধান পেতাম তাহলে আমি এইসব কুলাঙ্গার,কাপুরুষদের অন্ডকোষ কেটে তাদের তাড়না যন্ত্রের সুইস অফ করে দিতাম। শকুনের চোখ গুলো উপ্রে ফেলতাম সমাজ,রাষ্ট্র থেকে সকল অনিয়ম দূর করে আমার কিংবা আমার মা_বোন নারীর প্রাপ্য অধিকার/সম্মান টা বজায় রাখতাম। এসব-ই আমার স্বপ্ন ছিলো! আমি সবেমাত্র চৌদ্দ বছরে পা দিয়েছি, এই অল্প সময়েই কয়েক হাজার শকুনের লোলুপ দৃষ্টিতে পরিণত হয়েছি। 


টিভি তে মাঝে মাঝেই শিশু,মেয়ে,নারী এমনকি বৃদ্ধার ধর্ষণের নিউজ শুনতাম, দেখতাম। তখন আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো কেনো  ধর্ষণ করে? ভিকটিমের দোষটা কোথায়? ধর্ষণের জন্যে কি ভিকটিমের পোশাক দায়ী নাকি শরীরের অঙ্গ? আমার মাথায় উদ্ভট উদ্ভট চিন্তা আসতো যে বোধ হয় স্কুলের পড়াশোনা, প্রাইভেট ঠিক মতো করে না তাই হয়তো এমন করে!বয়স অল্প আমার তাই চিন্তাগুলোর পরিধিও অল্প। আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়ি আজ অবধি ধর্ষণ সম্পর্কে আমায় বিদ্যালয় কিংবা টিচার কেউ কিছু  শিখাইনি! ধর্ষণ কি? কেনো করা হয়? এর থেকে বাচাঁর উপায় কি?  সেল্প ডিফেন্স কিভবে করবো ইটিচি।


শুধু আমি না আমার মতো হাজারো অদিতি এরকমটার শিকার! তারা এর থেকে উত্তরণ চায় কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছে না। আমি নিয়মিত শালীন পোশাক পড়ি,ছোট মানুষ তাই নিজের শরীরের প্রতি যথেষ্ট নজর রেখে চলি। সবসময় সদাচারী,  ন্যাচারাল নরমাল ভাবে চলাফেরা করি। এইসব মাথায় একদমই সিরিয়াস ভাবে নেইনা কারণ আমি আমার  মায়ের মুখে হাঁসি ফুটানোর জন্যে সংকল্পবদ্ধ। মা আমায় সবসময়ই অমানুষ শকুদের ব্যপারে সতর্ক থাকতে বলতেন,আমি শুধু মাথা টা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতাম! আচ্ছা!


তারিখঃ ২২/০৯/২০২২ইং

বাসায় আমি একা! ঘরে কেউ নেই! ব্যাগে গতকালকে মায়ের দেওয়া প্রাইভেট টিচারের প্রায় ৪৩২০ টাকা। আজকে স্যারদের টিউশনি ফি দেওয়ার কথা। হঠাৎ করে শকুনের গন্ধ নাকে আসতেছে...দরজা আটকানো ছিলো,আমি ভয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যাচ্ছিলাম। ফোন নেই যে মাকে জানাবো আমার অবস্থা। একটা শকুন আজ আমার বাসা অবধিই চলে এলো। কয়েক ধাক্কায় দরজাটা ভেঙ্গে গেলো,আমি ভিতর থেকে হাজারো চেষ্টা ও শক্তি খাটিয়ে আটকে রাখতে পারিনি!  আমি এর মাঝে কয়েকবার ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছি...!


জ্ঞান ফিরে আসার পর নিজেকে আমি ডাইনিং এর মেঝেতে আবিষ্কার করলাম।  ধীরে ধীরে মাথাটা তুলে দেখলাম শকুনটা চোপায় বসে বসে হাসছে।  বসা থেকে উঠে এসে সে আমার উপর সে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি চেষ্টা করলাম ছাড়া পাওয়ার জন্যে কিন্তু পেরে উঠতেছিলাম না। অবশেষে শরীরের সকল শক্তি একত্র করে ঝাপটা মেরে শকুনটাকে সরিয়ে দৌড়ে মেঝের কোনায় গিয়ে লুকালাম।  শকুনটা দেখতে হুবুহু মানুষের মতো! মানুষের মতো শকুনটার হাত,পা,নাক,চোখ সবই আছে!!😔


শকুনটা আমার দিকে আসতেছে. আমি কাঁদতেছি,মিনতি করতেছি,ধর্মের দোহাই দিচ্ছি রেহাই পাওয়ার জন্যে। কাছে আসতেই পা ধরে কেঁদেছিলাম,মুক্তি চেয়েছি!  কিন্তু আমার কোন কান্নাই,চোখের জল শকুনের মনকে গলাতে পারেনি। 


শকুনটি টেনে হিঁচড়ে আমার সব........

চুলের মুঠি ধরে চেচিয়ে..... 😰

আমি বাবা ডেকেছি! ভাই ডেকেছি! ধর্মের দোহাই দিয়েছি....."এমন করিয়েন না আম্নে আমার বড় ভাই,আমি আপনার বোন হই"! "বাবা আমি আপনার মেয়ের মতো গো বাবা এমনটা করিয়েন না" "আল্লাহ পাপ দিবো"!

আল্লাহ বাঁচাও আমায়!!! ওহ আল্লাহ! 

শকুনের কানে আমার আর্তনাদ পৌছায়নি!  আমায় ধর্ষণ করা অবস্থায় ও আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি রেহাই পেতে। আমার চিৎকার দেওয়ালের ওপারে ভদ্র সমাজে পৌছায়নি!  


২য় বার সে তার বেল্ট খুলে মেরেছে.... 😪

আমি তখন সব ভুলে জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছি তার কাছে। কিন্তু শকুনটি আমায় চারবার ধর্ষণ করেছে!! আমার পুরো শরীর তখন অসার হয়ে আসছিলো, চিৎকার, কান্না করার মতো শক্তি নেই। বইছিলো সমতার চিহ্ন লাল রঙ...!! 😰 আমার মুখে একটাই বাক্যে ছিলো " বাবা একটু পানি খেতে দিবা,খুব পিপাসা পেয়েছে!" পানি!পানি! 


শকুনটি আবারও মারছে আমায় বেল্ট দিয়ে.আমার চিৎকার কমানোর জন্যে সে আমার ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে দিয়েছিলো শক্ত করে। আমি অসার হয়ে আছি সে ছুরি দিয়ে আমার বেল্লিতে টান দিলো আমি লাফিয়ে, ঝাপ্টাচ্ছি! সে আমার পা বাঁধলো, হাত বাঁধলো!!!! 


হাত বাঁধার সময় সে আমার মুখের বাঁধটা  শক্ত করে বাঁধার জন্য খুলেছিল। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম "ধর্ষণ করেছো, বেল্ট দিয়ে মেরেছো, এখন আমায় হত্যা করতে চাচ্ছো!" কিন্তু কেনো?? আমার অপরাধ টা কি!?? "আমার অপরাধ টা কি!"

এটাই ছিলো আমার শেষ কথা- "আমার অপরাধ টা কি?"


সে আমার কোন উত্তর না দিয়ে একে একে আমার হাত দুটো কাটলো, আমার পা দুটোও কাটলো, তারপর আমার গলাটাও কেটে ফেললো! 😰


আমি জানি না আসলে আমার অপরাধ টা কি ছিলো?  কি দোষ করেছিলাম? তবে আমার জানতে খুব ইচ্ছে করতেছে উত্তরটা।


 আপনারা কি জানেন যে, "কি অপরাধ আমার?"


নামঃ তাসমিয়া হোসেন অদিতি। আমি ধর্ষণের শিকার একজন!! আমি ধর্ষিতা বাংলাদেশ! 

বয়সঃ ১৪ বছর


আমরা অদিতি ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই। CBC(BSL)


Copy Pest 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.