Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট১৩ - bangla choti golpo - love story - life story

বোকা প্রেমিকা

পার্ট১৩

Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট১৩ - bangla choti golpo - love story - life story
Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট১৩ - bangla choti golpo - love story - life story 


বর্ষা নিয়মিত ডায়েরি লিখতো।আর এই কথাটা জল ছাড়া কেউ জানতো না।এমনকি বর্ষণও না।বাইরে পড়ে আছে বর্ষার নিথর দেহ।বর্ষা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।আর এর কারণ সম্পুর্ন অজানা।কি কারণে বর্ষা এমন সিদ্ধান্ত নিলো কেউ ই খুঁজে পাচ্ছে না।পুলিশ এসেছিলো।বর্ষার পুরো ঘর তারা সার্চ করেছে।চিরকুট,সুইসাইড নোট কিচ্ছু পায় নি পুলিশ।থানায় অপমৃত্যুর মামলা করতে বলেছে।কিন্তু জলের মন বলছে অন্যকিছু।বর্ষা এভাবে এমন পথ বেছে নেওয়ার মেয়ে নয়।হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েটা হুট করেই এভাবে দুনিয়া ছেড়ে দেবে? জল বর্ষণের ঘরের আলমারির ওপরে উঁকি দিতে লাগে।বর্ষা বলেছিলো বর্ষণ চলে যাবার পর থেকে সে এখানেই তার গোপন ও ব্যক্তিগত জিনিসগুলো রাখে।লম্বা হওয়ায় খুব ইজিলি আলমারির ওপরে থাকা খয়েরী রঙের মলাটের ডায়েরীটা দেখতে পায়।খুব সহজে পেরেও নেয় সে।জল ডায়েরীটা খুলে পড়তে শুরু করে।ফিতে দিয়ে মার্ক করা অংশটুকু থেকেই সে পড়তে শুরু করে।


' আমি জানতাম আপু ডায়েরীটা তুমি খুঁজবে আর পেয়েও যাবে।এখন আমি তোমাদের থেকে অনেক দূরে।বিশ্বাস করো এত তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে আসতে চাই নি।কিন্তু ওরাও আমায় বাঁচতে দিলো না। মরতে কেউ ই চায় না।আমিও তার ব্যাতিক্রম নই।বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা আমায় বাঁচতে দিলো না।প্রতিটা মুহুর্তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। সবসময় মনে হতো আমি মরতে পারলে বাঁচি।তুমি আমায় পই পই করে না করেছিলে যাতে আমি আবেগের বশে কোনো ভুল কাজ না করি।কিন্তু আমি তাই ই করে ফেলি।আবেগের বশে একটা সম্পর্ক টেকানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষায় আমি রিশাদের রু*ম ডেটের প্রস্তাবে রাজি হই।রিশাদকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম।আর এর সুযোগ নিয়েই রিশাদ আর ওর বন্ধু আমার ইজ্জতহানি করে।আমায় ধ*র্ষণ করে।এতটুকুতেও ওরা থেমে যায় নি।সেদিনের ধ*র্ষণের ভিডিও ফোনে ধারণ করে দিন রাত আমায় ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।আবার ওদের লালসা মেটাতে হবে আমার।আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।ওভাবে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো।তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।

তোমরা আমায় ভুল বুঝো না আপু।মরতে কেউ চায় না আপু।আমি বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা আমায় বাঁচতে দেয় নি।'


জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জল ডায়েরিটা নিয়ে নেয়। বাইরে বর্ষার দেহ ধরে এখনো মা অঝোর ধারায় কাঁদছে।বর্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে বোনের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। বর্ষাকে দাফন করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।সেদিন রাতে বর্ষণ ঘুমায় নি। ঘরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে।ভাইদের কাছে নাকি বোনেরা কলিজার টুকরা হয়।সেই হিসাবে বোনের মৃত্যুতে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদা অস্বাভাবিক কিছু না।এই প্রথম জল বর্ষণকে কাঁদতে দেখলো।অনেকটাই মায়া হচ্ছে বর্ষণের প্রতি জলের।কিন্তু যখন বর্ষণের বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পরে তখনই বর্ষণের প্রতি জলের সব মায়া নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।জলও সেদিন ঘুমায়নি।রাত জেগে বর্ষার পুরো ডায়েরীটা পড়ে।যদি রিশাদ বা ওর বন্ধু সম্পর্কে কোনো আইডিয়া পায়!


২২-৯-২১


লিস্টে একটা ছেলে ছিলো।নাম রিশাদ আহমেদ।ও প্রায়ই আমার ডে তে রিপ্লাই দিতো।সেখান থেকেই টুকটাক কথা হতো।ওর সাথে আমার বেশ একটা ভালো সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।সেটা পরে প্রেমে রূপ নেয়।আজ আমাদের সম্পর্কে তিন মাস পূর্ণ হলো।বুঝতেই পারিনি কিভাবে ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি।দেখতে দেখতে তিনটে মাসও হয়ে গেলো।


এই অংশটুকু পড়ে জলের কেন যেন মনে হলো রিশাদ প্লে বয় টাইপের ছেলে। জল বর্ষার আইডি ঘাটতে থাকে।আইডি ঘেটে অবশেষে সে রিশাদের আইডি পায়।বায়ো দেখেই বুঝতে পারে জল এই ছেলে পাক্কা প্লে বয়।বর্ষা বাচ্চা মেয়ে।তাই না বুঝে ছেলেটার ফাঁদে পা দিয়েছিলো।পরে শেষমেশ জীবনটাই দিয়ে দিলো।ছেলেটার দুর্বলতা যেহেতু মেয়ে।তাই জল নিজের ডিপিতে কোনো মডেলের শাড়ী পরা আকর্ষণীয় ছবি দেয়।দীর্ঘদিন পর সে ডিপির ছবিটা চেঞ্জ করলো।রিশাদকে সে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠায়।এবং রিশাদ তা সাথে সাথে একসেপ্ট করে।এইত্তো রিশাদ জলের ফাঁদে পা দিয়েছে।এখনই মেসেজ দিলে বিষয়টা খুব সন্দেহজনক হবে।ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে সব করতে হবে।আর যাই হোক রিশাদ আর সাদকে জল ছাড়ছে না।বর্ষার মৃত্যুর প্রতিশোধ জল নিয়েই ছাড়বে।


১১-১১-২১

আজকে রিশাদের সাথে ফার্স্ট মিট করতাম।একই এলাকায় থাকা সত্ত্বেও ওকে কখনো আমি সামনাসামনি দেখি নি।আজই প্রথম।অনেকটাই নার্ভাস ছিলাম।ফার্স্ট মিট বলে কথা!ওকে এক পলক দেখেই আমি দৌড়ে চলে আসি।


এই অংশটুকু পড়ে জলের অতীত মনে পড়ে যায়।সম্পর্ক হওয়ার পরে জল আর বর্ষণের প্রথম দেখার সময় জলও ঠিক ওভাবেই ঘাবড়ে গিয়েছিলো।প্রেমিকের সাথে প্রথম দেখা মনে হয় সব মেয়েদেরই নার্ভাসের মধ্যে হয়ে থাকে।এতকিছুর পরেও মেয়েদের কাছে প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম দেখার দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকে।

_______


রিশাদের সাথে জল ইদানীং বেশ অনেকটাই ভাব করে ফেলেছে।প্রায়ই কথা হয় ওদের।আজ জল রিশাদের সাথে দেখা করতে যাবে।সাথে সাদেরও আসার কথা।জল আগে থেকেই ট্রাংকুলাইজার কিনে রেখেছিলো।এই সামান্য অজ্ঞান হওয়ার ইঞ্জেকশনটা কিনতে জলের কম খাট খোড় পোড়াতে হয় নি! এটি কিনতে গেলে সরকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সরকারি অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করা লাগে।কিন্তু জল ইঞ্জেকশনটা চোরাই পথে কিনেছে। তাই বেশ অনেকটাই টাকা খরচ করতে হয়েছে জলকে। জল রিশাদকে অনেকটা নিরিবিলি জনশূন্য স্থানে আসতে বলে। রিশাদ জলের বলা জায়গায় সাদকে নিয়ে আসে।জলের জ্যামের কারণে কিছুটা দেরি হয়ে যায়।গিয়ে দেখে রিশাদ আর সাদ সেখানে জলের জন্য অপেক্ষা করছে।জল গাড়ি থেকে নেমে ইঞ্জেকশন দুটো ওড়না দিয়ে আড়াল করে ওদের কাছে যায়।জলকে দেখেই রিশাদের মনে ধরে যায়।এমন লম্বা মেয়ে সচারাচর খুব একটা দেখা যায় না।যদিও জল শ্যামলা।কিন্তু ওর লম্বা হওয়াটা ওর শ্যামলা হওয়ার দোষটাকে ঢেকে দিয়েছে।জল আহামরি কোনো সুন্দরী নয়।শুধু লম্বা। যা ই ই রিশাদকে দুর্বল করে দিয়েছে।রিশাদের হাবভাব দেখে জল বুঝতে পারে ওর প্রেমের অভিনয়ে রিশাদ গলেছে।প্রাথমিক খোশগল্প করে রিশাদ জলকে নিয়ে দূরে কিছু কথা বলার অনুরোধ করে।জল ত এই সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলো।মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দেয় জল। রিশাদ জলকে নিয়ে ঝোপের আড়ালে যায়।


" বলো কি বলবে?"


" If you don't mind...! can I kiss you?"


" Why not..!তুমি তো আমায় বয়ফ্রেন্ড।আমার ওপর তোমার অধিকার আছে।"


জলের কথাটা শেষ হতে না হতেই রিশাদ ঝড়ের গতিতে জলের কোমল ঠোঁট খানা নিজের ঠোঁটের দখলে করে নেয়।আকষ্মিকতায় জল খানিকটা চমকে গিয়েছিলো। পরে সে নিজের স্বাভাবিক হয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে লাগে।রিশাদ যখন পুরোপুরি ভাবে জলের কোমল ঠোঁটের মাঝে ডুবে যায় ঠিক তখনই জল ট্রাংকুলাইজারটার ভরা ইঞ্জেকশনটা রিশাদের ঘাড়ে বসিয়ে পুশ করে নেয়।রিশাদ মাটিতে পরে যায়।মিনিট দশেকের মধ্যে সে অচেতন হয়ে যায়।এবার সাদের পালা।জল ঝোপের আড়াল থেকে দেখে সাদ কারো সাথে ফোনে কথা বলায় মগ্ন।ব্যস!এই সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবে না।জল গিয়ে সাদের ঘাড়েও ইঞ্জেকশন বসিয়ে ট্রাংকুলাইজার পুশ করে দেয়।মেডিসিনের প্রভাবে সাদও অচেতন হয়ে যায়।জল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। গাড়ি থেকে দড়ি বের করে দুটোকে বেঁধে গাড়িতে তোলে জল।মুখে টুকরো কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় জল।সিনেমা নাটকে দেখায় যে মুখে স্কচটেপ লাগালে মানুষ মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ করতে পারে না।ভুল জিনিস দেখানো হয়।স্কচটেপ লাগানোর পরও মানুষ আওয়াজ করতে পারে। তাই জল মুখে কিছু কাপড়ের টুকরো দিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়।যাতে ওরা কোনো আওয়াজ না করতে পারে।

জলের প্রচন্ড অপরাধবোধ হচ্ছে। যে কাজটা জল আজ পর্যন্ত বর্ষণকে করতে দেয় নি সেই কাজটা আজ রিশাদকে কর‍তে দিয়েছিলো।সে ঠকালো না তো বর্ষণকে?ঠকলে ঠকলো বর্ষণ!সেও তো জলকে কম ঠকায়নি।বর্ষণ জলের থেকে এগুলোই ডিজার্ভ করে। অপরাধবোধ কাটাতে দুটো সিগারেট ধরায় জল।ভেতরের অনুভূতি গুলোকে ধোঁয়া করে মুক্ত বাতাসে ছেড়ে সে বাসার দিকে রওনা দেয়।

বাসায় ঢোকার সময় জলের বর্ষণের সাথে দেখা হয়।বর্ষণ অফিস থেকে ফিরছিলো।জলকে দেখে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।


" কোথায় গিয়েছিলে?"


" বাইরে।একটা কাজ ছিলো ওই কাজটা কর‍তেই মুলত গিয়েছিলাম।"


কথাটা বলে জল গাড়ি নিয়ে গ্যারাজের দিকে যায়।গাড়িটাকে পার্কিং করে গ্যারাজের এক কোণায় রিশাদ আর সাদকে রাখে।পকেট থেকে ফোন বের করে সীম,মেমোরি টাকে নষ্ট করে ফেলে।ফোন দুটোকে ইট দিয়ে থেঁতলে পাশে থাকা নর্দমায় ফেলে দেয়। সাদ,রিশাদ তখনও অচেতন অবস্থায়ই আছে।জল ওদের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দেয়।আজ রাত থেকেই শুরু হবে ওদের শাস্তি।বর্ষার প্রতি অন্যায়ের শাস্তি।ধীরে সুস্থে কষ্ট দিয়ে মেরে ওদের দুনিয়া ছাড়া করবে জল।


চলবে,,,ইনশাআল্লাহ


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.