শুধু তোমারই জন্য
পর্ব_১৫
Bangla choto golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৫ - bangla love story pdf |
আনিতা ওর বন্ধুদের কাছে গিয়ে মাঠে বসতেই ফাইয়াজ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
--"কিরে বুড়ি এতক্ষণ কোথায় ছিলি?"
--"যেখানেই থাকি তোমায় বলবো কেন?"
--"আমি মামার কাছে বিচার দিতাছি তুই দিনে দিনে ভারী বেয়াদব হচ্ছিস।"
ফাইয়াজের কথায় আনিতা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো। ফাইয়াজের একপাশে আনিতা আর অন্য পাশে তাসকিয়া বসা ছিলো। তাসকিয়ার পাশে রোদেলা আর শুভ বসা। আনিতার পাশে জারা বসা ছিলো। কিছুক্ষণ বাদেই জারার পাশে জেরিন আর রাতুল এসে বসে। তারপর আরহান আহিয়ান এবং শেষে তন্ময় বসে শুভর পাশে। মাঠের এক কোনায় গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে এই এগারো জন। আশেপাশের অনেকেই আনিতাদের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। কেননা আনিতারা সকলের কাছেই পরিচিত। ফাইয়াজকেও কেউ কেউ চিনে কিন্তু ওর বন্ধুদের কেউই চিনে না। চারটা অপরিচিত ছেলেকে ওদের সাথে বসে আড্ডা দিতে দেখে অনেকেই ঘুরেফিরে তাকাচ্ছে। তার উপর আবার চারজনেই দেখতে মাশাল্লাহ। কিছু কিছু মেয়েরা আড়চোখে বারবার তন্ময় ওদের দিকে তাকাচ্ছে। আনিতা আর আহিয়ান কিছুটা বরাবর বসেছে। আহিয়ানকে দেখেই জারা খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। জারা আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
--"দোস্ত দেখ আহিয়ান কত্তটা কিউট।"
এমনিতেই আনিতার মেজাজ ঠিক নেই তারউপর আবার জারার এই কথা। আনিতার মেজাজটা যেন আরো বেশি বিগড়ে গেলো। আনিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
--"তুই জানিস এই ছেলের ক্যারেক্টারের ঠিক নেই। এক সাথে চার/পাঁচটা করে রিলেশন করে এই ছেলে। আর তুই কিনা এই ছেলের উপর ফিদা? ভাবতেই আমার অবাক লাগছে জারা।"
--"আরেহ কোনো সমস্যা নেই। এই রকম হ্যান্ডসাম কিউট ড্যাশিং একটা ছেলে ওরকম একটু আধটু রিলেশন করবেই। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।"
জারার কথা শুনে মুখ বাঁকালো আনিতা। জারা আবার আনিতার একদম কাছ ঘেঁষে বসে। আনিতার হাত দুটো জারা নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
--"ইয়ার একটু লাইনটা ক্লিয়ার করে দে না। সত্যিই এই আহিয়ান ছেলেটাকে না আমার খুউউউউব ভালো লাগে।"
আনিতা জারার থেকে নিজের হাত ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
--"এই শুন এইসব আজাইরা কাজ কামে আমায় একদম জড়াবি না। তোর এত ইচ্ছে হলে তুই নিজেই গিয়ে প্রপোজ করে দে।"
জারা অসহায় চোখে তাকায় আনিতার দিকে। আনিতা বিরক্তিতে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আহিয়ানের বারবার আড়চোখে আনিতার দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে আনিতার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। হুট করেই আনিতার চোখ জয়ের উপর পড়ে। আনিতা জয়কে দেখেই বসা থেকে উঠে দৌড়ে জয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জয়ের সামনে গিয়ে আনিতা দু হাটুতে ভর দিয়ে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নেয়। আনিতাকে দেখে জয় মৃদু হাসে। দুজনেই এক সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে আর কথা বলছে। আনিতার বা হাতের অনামিকা আঙুলে সিলভার কালারের একটা প্লেন রিং ছিলো। জয় সেটা চাইলেই আনিতা ওর হাত থেকে সেটা খুলে জয়ের হাতে পড়িয়ে দেয়।
এদিকে আহিয়ান জয় আর আনিতার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। আনিতা যখন নিজের রিং খুলে জয়কে পড়িয়ে দেয় তা দেখে আহিয়ানের মাথা রাগে ফেঁটে যাচ্ছিলো। আনিতার পাশে অন্য একটা ছেলেকে আহিয়ান কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। আহিয়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তন্ময় আনিতার দিকে তাকায়। আহিয়ানের রাগের কারনটা তন্ময় বুঝতে পেরে মুচকি হাসে। তন্ময় আহিয়ানের দিকে ঝুকে বলে,
--"রিলাক্স ভাই। এত রেগে যাচ্ছিস কেন? কথাই তো বলছে।"
আহিয়ান রাগী চোখে তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
--"কথা বলছে মানলাম তাই বলে নিজের হাতের রিং খুলে ওই ছেলেকে পড়িয়ে দিবে? অন্য ছেলেকে রিং পড়িয়ে দেওয়ার মতো সাহস ওর হয় কি করে?"
তন্ময় চুপ করে গেলো আহিয়ানের কথা শুনে। এখন আহিয়ানকে কিছু বলে কোনো লাভ নেই। তন্ময় শুভর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
--"আনিতার সাথে ওই ছেলেটা কে বলো তো?"
--"জয় ভাইয়া। অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। আনিতার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ভাইয়া বলেই ডাকে ওকে।"
শুভর কথা শুনে তন্ময় আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
--"শুনলি? আনিতা ভাই বলে ছেলেটাকে। তুই অযথাই রেগে যাচ্ছিস।"
--"ছেলেটাকে দেখেছিস? কিভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।"
--"থাকুক তাতে তোর কি?"
--"আমার কি মানে?"
তন্ময় কোনো উত্তর না দিয়ে বাকীদের সাথে আড্ডায় মন দিলো। জয় আর আনিতা কথা বলতে বলতে ফাইয়াজদের এখানে এসে দাঁড়ায়। আনিতার চোখ আহিয়ানের উপর পড়তেই আনিতা লক্ষ্য করে আহিয়ানের চোখমুখ রাগে লাল হয়ে আছে। আহিয়ানের এই অবস্থা দেখে আনিতা মুখ টিপে হাসে। আহিয়ানকে আরো একটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য আনিতা বলে,
--"রোদেলা বাসায় যাওয়ার সময় ফোন দিস আমাকে। আমি একটু আসছি।"
আনিতার কথায় ফাইয়াজ প্রশ্ন করে,
--"কোথায় যাচ্ছিস?"
আনিতা একবার আহিয়ানের দিকে তাকায়। আহিয়ান এখনো রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আহিয়ানের এমন রাগ দেখে আনিতার খুব হাসি পাচ্ছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আনিতা নিজের হাসি আটকে নেয়। তারপর বলে,
--"জয়ের সাথে কাপল ডান্স প্র্যাক্টিস করবো। সামনে মাসেই চাচ্চু আসবে তারপর বিয়ে করবে। আমাকে পারফর্ম করতে হবে তো নাকি?"
আনিতার কথা শুনে আহিয়ানের রাগ আরো বেশি বেড়ে গেলো। আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো আবারো। তারপর জয়ের হাত ধরে টেনে সেখান থেকে চলে গেলো। আহিয়ান রাগে একদম লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে আহিয়ান। রাতুল জেরিনের পাশে থেকে উঠে আহিয়ানের পিছনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে। তারপর পিছন থেকে আহিয়ানের দু কাঁধে হাত রেখে বলে,
--"কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি একটা।"
রাতুলের কথায় তন্ময় আর আরহান মুখ টিপে হাসে। আহিয়ান রাগী চোখে রাতুলের দিকে ঘুরে তাকায়। তা দেখে রাতুল বলে,
--"রেগে যাচ্ছিস কেন?"
--"জেরিন যদি এখন ওর সিনিয়র একটা ছেলের হাত ধরে হাটে তাকে তুমি করে বলে। তারপর আবার তার সাথে নাচতে নাচতে কাপল ডান্স প্র্যাক্টিস করতে চলে যায় তখন কেমন লাগবে তোর?"
আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে রাতুলকে কথাগুলো বলল। রাতুল কিছু বলার আগেই ফাইয়াজ বলে,
--"তোরা দুজনে ওভাবে কি কথা বলছসি রে?"
--"কিছু না। তোরা আড্ডা দে। আমি জেরিন আর আহিয়ান একটু ঘুরে আসছি।"
কথাটা বলেই রাতুল আহিয়ানকে টেনে তুলল। আহিয়ান দাঁড়িয়ে প্যান্ট ঝাড়া দিয়ে নিলো। যদিও ঘাসের উপর বসেছিলো তবুও কিছুটা ধুলো লেগে যায় প্যান্টে। রাতুল জেরিনের সামনে গিয়ে বলে,
--"তুমি বসে আছো কেন? একজনকে টেনে তুলতে হলো তোমাকে কি এখন আবার কোলে করে তুলতে হবে?"
রাতুলের কথায় জেরিন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আর আরহান মুখ টিপে হাসছে। রাতুল আরহানের পাশে থাকাতে আরহান ওর কথা শুনতে পায়। জেরিন ওর কলেজ ব্যাগ দিয়ে রাতুলকে একটা বারি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
অন্যদিকে জয় আর আনিতা প্র্যাক্টিস রুমের নাম করে একটা ক্লাসে বসে আছে। জয় আর আনিতা বাদেও রুমটাতে আরো চার/পাঁচ জন ছেলে মেয়ের দুটো গ্রুপ বসে আড্ডা দিচ্ছে। একটা গ্রুপ আনিতাদের ব্যাচের আর অন্যটা আনিতার সিনিয়র। জয়ের ব্যাচেরও দু/তিনটা ছেলেমেয়ে আছে সেখানে। আর একজোড়া টুন-টুনি মানে একটা কাপল বসা ছিলো। রাফাত আর আয়রা। এই দুজনের প্রেমের ব্যাপারে কলেজের সবাই কম বেশি জানে। রাফাত হচ্ছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। আর আয়রা অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। দুই টুনাটুনি একদম লাস্ট বেঞ্চে বসে জমিয়ে প্রেম করছে।
আনিতা হাই বেঞ্চের উপর বসে পা ঝুলিয়ে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। এখানে থাকা বাকী ছেলে মেয়েরা আনিতা আর জয়ের দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে। আনিতাদের ব্যাচের একটা মেয়ে আনিতাকে জিজ্ঞেস করে,
--"আনিতা এইটা কি আমাদের জিজু নাকি?"
আনিতা মেয়েটার দিকে তাকায় একবার। তারপর আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ও মুখ কাচুমাচু করে বসে আছে। তা দেখে আনিতা ফিক করে হেসে দেয়। আনিতার হাসির শব্দে জয় রাগী চোখে তাকায় আনিতার দিকে। আনিতা হাসি থামিয়ে বলে,
--"আরেহ না। এমনি ও আমার ফ্রেন্ড প্লাস ভাই যেটা ভাবিস তোরা।"
আনিতার কথায় জয়দের ব্যাচের একটা ছেলে বলে,
--"ওওওহহ আমরা আরো ভাবলাম তুমি বুঝি আমাদের ভাবী।"
আনিতা কিছু বলবে তার আগেই ওর চোখ যায় করিডোরের দিকে। আহিয়ান রাতুল জেরিন এদিকেই আসছে। আনিতা আহিয়ানকে দেখতে পেয়ে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিছুটা জোরেই বলে,
--"এখনো ভাবী হইনি কিন্তু হতে কতক্ষণ বলুন?"
আনিতার কথায় জয় কেঁশে উঠে। আর ওখানে থাকা সবাই হেসে ফেলে। জয় আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
--"অকালেই আমায় মেরে ফেলতে চাস নাকি?"
জয়ের কথায় আনিতা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আর দরজার সামনে আহিয়ান দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। আনিতার কথাটা আহিয়ান ওরা সবাই শুনতে পায়। আগে থেকেই আহিয়ান রেগে ছিলো তার উপর আবার আনিতার এই কথা শুনে আহিয়ানের রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো। আহিয়ান ক্লাসে ঢুকে আনিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে,
--"নামো এখান থেকে।"
আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকায়। তা দেখে আহিয়ান এবার কিছুটা জোরে বলে,
--"নেমে দাঁড়াতে বললাম তো।"
এবার সবাই কিছুটা অবাক চোখেই তাকালো ওদের দুজনের দিকে। আহিয়ানের রাগ দেখে ততক্ষণে জয় বসা থেকে দাঁড়িয়ে আহিয়ানের থেকে চার পাঁচ হাত দূরত্বে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আনিতা যা বলেছিলো তার থেকে অনেক বেশিই রাগী আহিয়ান। এই ছেলের যা রাগ না জানি আবার আনিতার সাথে এভাবে মেশার দায়ে ওর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে দেয়। তার থেকে ভালো ওর থেকে দূরে থাকা। মনে মনে এই ভেবে জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
আনিতা এখনো নির্বাক হয়ে বসে আছে। আহিয়ানের এবার রাগ সামলানো বড্ড কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডান হাতের দু আঙুল দিয়ে কপাল ঘঁষে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করলো একবার। আনিতা তখনো বসেই আছে। আহিয়ান এবার আর রাগ সামলাতে পারলো না। আনিতার হাত ধরে টেনে ওকে বেঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আনিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। আনিতা বলল,
--"ছাড়ুন বলছি। আমাকে সরকারি প্রোপার্টি পাইছেন নাকি যে যখন তখন হাত ধরে টানাটানি করেন। ছাড়ুন আমায়। ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"
আহিয়ান রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
--"আমার পারসোনাল প্রোপার্টি তুমি। সো ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা তো আমি দেখছি।"
--"চিৎকার করবো কিন্তু এবার।"
--"তোমারই লস চিৎকার করলে। এখন তো এই ক্লাসের কয়েকজন দেখছে আর তুমি চিৎকার করলে পুরো কলেজ দেখবে।"
আনিতা চুপ হয়ে গেলো আহিয়ানের কথা শুনে। আনিতা উঁকি দিয়ে একবার সবার দিকে তাকালো। সবাই কেমন করে যেন ওদের দুজনকে দেখছে। কেউ আবার মুখ টিপে হাসছে। আনিতার ভয় ও কাজ করছে সাথে লজ্জাও লাগছে। আহিয়ান আনিতার থুতনি ধরে নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
--"ওদিকে কি দেখছো? আমার দিকে তাকাও।"
--"দেখুন।"
--"হ্যাঁ দেখছি আমি কি দেখাবে দেখাও।"
--"সরে দাঁড়ান আপনি। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।"
--"ছেড়ে দিবো। তার আগে বলো জয়ের সাথে এত হাসাহাসি কিসের? নিজের রিং খুলে ওকে পড়িয়ে দিলে কেন? এমনিতে দিলে মানা যেত কিন্তু ওকে পড়িয়ে দিলে কেন? আর ওর সাথে কাপল ডান্স প্র্যাক্টিস করবা তাই না?"
--"হ্যাঁ ক...করবো তাতে আ....আপনার কি?"
আহিয়ান রাগী চোখে তাকায় আনিতার দিকে। আহিয়ানের ওমন রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে আনিতা ভয়ে চুপসে গেলো। ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার বাহু জোরে চেপে ধরে বলে,
--"কি বললে? আমার কি? শুনতে পাইনি আর একবার বলো কাপল ডান্স প্র্যাক্টিস করবা জয়ের সাথে তাই তো?
--"ন.....না।"
--"তখন তো এই কথা বলে নাচতে নাচতে চলে এলে। তাহলে এখন তোতলাচ্ছো কেন?"
আনিতা মাথা নিচু করে নিলো আবারো। এবার সত্যিই ভয় লাগছে খুব আনিতার। যেভাবে হাত চেপে ধরে আছে আর রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভয় তো পাবেই। আহিয়ান আবারো বলে,
--"আর কি যেন বললা? এখনো ভাবী হইনি কিন্তু হতে কতক্ষণ তাই তো? ওদের ভাবী হওয়ার খুব শখ দেখছি।"
এইটুকু বলে আহিয়ান থামলো। আনিতা তখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাকী সবাই তাকিয়ে দেখছে এখানে কি হচ্ছে। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে আহিয়ান আবারো চিৎকার করে বলে,
--"কথা বলছো না কেন? খুব শখ জয়ের বউ হওয়ার তাই না?"
আহিয়ানের ধমকে আনিতা কেঁপে উঠলো। আর ওদিকে জয় বেচারা অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আহিয়ানের ধমকে আনিতা আমতা আমতা করে বলে,
--"ন...না তো। আমার জ....জয়ের ব...বউ হবার শখ থাকবে ক...কেন? জ...জয় তো আ...আমার ভা...ভাই লাগে। ওরে আমি ভাইয়ের নজরেই দেখি বি...বিশ্বাস করুন।"
আনিতার কথায় জয় আহিয়ানের কিছুটা সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর আমতা আমতা করে আয়াহিয়ানকে বলে,
--"ও স...সত্যি বলছে ভাইয়া। আমিও ওরে বোনের নজরেই দেখি। আমি তো অন্য একজনকে ভা...ভালোবাসি। আন...আনিতা তো আপনাকে দেখে আ...আপনাকে রা..রাগান...রাগানোর জন্য কথাটা বলেছে।"
জয়ের কথায় আহিয়ান চোখ কটমট করে তাকায় আনিতার দিকে। তা দেখে আনিতা জোরে জয়ের পায়ে একটা পারা দেয়। জয় চিৎকার করে পা ধরে লাফাতে থাকে। ওদিকে বাকী সবাই এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসছে। আহিয়ান বলে,
--"তুমি আমার বুঝেছো? আর তুমি যদি কারো বউ হয়ে থাকো তবে সেটা শুধুমাত্র এই আহিয়ান আদৃতের বউই হবে। কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।"
--"আমি বি...বিয়ে করবো না আ...আপনাকে।"
--"কি বললে? শুনতে পাইনি। আবার বলো?"
--"কি....কিছু না তো।"
আনিতার কথায় আহিয়ান মুচকি হাসলো। রাতুল আর জেরিনও হেসেই যাচ্ছে। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আহিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জয় বুকে হাত দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। হ্যাপি রিডিং🥰 ]