Bangla story pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৪ | bangla choti pabi

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_১৪

Bangla story pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৪ | bangla choti pabi
Bangla story pdf | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_১৪ | bangla choti pabi 


বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আনিতা। ওর ভালো লাগছে না আর কিছু। একটা মানুষ এভাবে ঠকাতে পারে? এত এত মিথ্যে কথা বলতে পারে? ওই মানুষটা না হয় মিথ্যে ছিলো কিন্তু আনিতার ভালোবাসাটা তো মিথ্যে ছিলো না। আনিতা তো সত্যিই ভালোবেসেছিলো। তাহলে? তাহলে কেন এত কষ্ট পাচ্ছে ও? ভালোবেসে কেন এভাবে ঠকতে হলো? সব্বাই সব্বাই মিলে ওকে মিথ্যে বলেছে। তন্ময়? যাকে নিজের ভাই ভেবেছিলো সেও এতগুলো দিন মিথ্যে বলে ঠকাতে পিছপা হয়নি একবারো। 


উঠে বসলো আনিতা। ভেঙে পড়বে না আর ও। কার জন্য কাঁদবে? কেন কাঁদবে? যার কাছে ওর মূল্য নেই তার জন্য চোখের পানিটা ফেলা নেহাৎ বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। এই ভেবে চোখের পানি মুছে নিলো ও। বাসায় বসে থাকলে আরো বেশি একা লাগবে। তাই ভেবে নিলো কাল থেকেই কলেজ যাবে। কিছুদিন অফ দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আর কলেজ অফ দিবে না আনিতা।


কলেজ মাঠের এক কোনায় বসে আড্ড দিচ্ছে আনিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা। একটা ক্লাস করেছে আপাতত আর কোনো ক্লাস নেই। মাঝে দুটো ক্লাস গ্যাপ পড়েছে। আনিতার কাছ থেকে সব কথা শুনে তাসকিয়া রোদেলা শুভ তিনজনেই গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আর আনিতা ফোন ঘাটছে বসে বসে। ও এসব নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না আর। জারা এসে বসলো আনিতার পাশে। আনিতা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে একবার জারার দিকে তাকালো তারপর আবারো ফোনে মুখ গুজে বসে রইলো। জারা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,


--"ইয়ার ওই ছেলেটাকে দেখলাম আজ।"


জারার কথা গায়ে মাখালো না আনিতা। ও আগের মতোই ফোন নিয়ে ব্যস্ত। জারার কথায় আনিতা ব্যাতিত ওরা তিনজনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তাসকিয়া জিজ্ঞেস করে,


--"আজ আবার নতুন কোন ছেলেকে দেখলি তুই?"


--"আরে ওই যে তোর বিএফ এর ফ্রেন্ড। নামটা যেন কি? আহি আহিয়ান। হ্যাঁ আহিয়ান। ওকেই দেখলাম একটু আগে কলেজের বাইরে।"


এবার জারার কথায় চোখ তুলে তাকালো একবার আনিতা। আহিয়ানকে দেখেছে? আহিয়ান কি করছে এখানে? আহিয়ানের কথা মনে হতেই রাগে ফেটে পড়লো আনিতা। কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না। জারাকে উদ্দেশ্য করে রোদেলা তখন বলে,


--"কিহ? আহিয়ান ভাইকে দেখেছিস তুই?"


--"হ্যাঁ রে। জানিস আজকে আবার নতুন করে তার উপর ক্রাশ খেলাম আমি। ইশ্ কি কিউট ছেলেটা। এতদিনে একটুও বদলায়নি। দিন দিন যেন আরো বেশিই কিউট হচ্ছে। ইশ্ এই ছেলেকে দেখলে মনে হয় আমি আর নিজের মাঝেই থাকি না।"


জারার কথায় সবাই বিরক্ত হচ্ছে অনেক। কিন্তু মুখে কেউই সেটা প্রকাশ করলো না। আনিতা তো রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে জারার দিকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে। রোদেলা আনিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে একবার। তারপর আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,


--"কুল বেবি। এত রেগে যাচ্ছিস কেন? আহিয়ান ভাই যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র তুইই হবি।"


--"এই শুন ওই আহিয়ান বা আদৃত যেই হোক ওকে ভালোবাসি না আমি। হেইট করি আমি ওই মানুষটাকে বুঝতে পেরেছিস?"


--"হ্যাঁ জানি তো আমরা।"


বলে রোদেলা আবারো মৃদু হাসে। আনিতা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। না এই ছেলেকে সত্যিই আমি হেইট করি। ভালোবাসি না আমি ওকে। কিন্তু জারার মুখে ওর নাম শুনলে এত রাগ হয় কেন আমার? কেন সহ্য করতে পারি না আমি? মনে মনে এসব ভাবে আনিতা। 


আর এদিকে জারা এখনো আহিয়ানের গুনগান গেয়েই যাচ্ছে। আহিয়ান এই আহিয়ান সেই। ছেলেটা এমন কেন? এত ভালো লাগে কেন? সবাই বেশ বিরক্ত হচ্ছে ওর কথায় সাথে আনিতাও। শুভ তখন জারাকে বলে,


--"অফ যা এবার তুই। ওই ছেলে কেমন তা জেনে আমরা কি করমু? আর শোন ওই ছেলের না গার্লফ্রেন্ড আছে রে। সো তোর চান্স একেবারেই নেই।"


শুভর কথায় জারার মুখের রঙ পালটে গেলো। কাঁদো কাঁদো মুখে তাকালো সবার দেখে। তা দেখে তাসকিয়া রোদেলা শুভ তিনজনেই মুখ টিপে হাসছে। আনিতা আবারো ফোনে মুখ গুজেছে। ওর কাছে মনে হচ্ছে জারার এই বকবকানি শোনার থেকে ফোন টেপা অনেক ভালো। জারা একবার সবার দিকে তাকিয়ে আনিতার দিকে তাকায় আবার। আনিতার হাত ধরে বলে,


--"আনিতা আহিয়ানের কি সত্যিই গার্লফ্রেন্ড আছে?"


আনিতা কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে জেরিন ডেকে উঠে। আনিতা জারাকে আসছি বলে ওখান থেকে উঠে জেরিনের কাছে চলে যায়। জেরিন আর আনিতা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে। জেরিন বলে,


--"তোর কাজিন ফাইয়াজের বন্ধু আহিয়ানই___"


--"হ্যাঁ আহিয়ানই আদৃত।"


--"কিন্তু এভাবে সবটা কেন লুকিয়েছে তোর থেকে?"


--"জানিনা।"


--"কিন্তু কেন করলো এমনটা? কেন মিথ্যে বলে তোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলো কিছুই বলেনি?"


--"নাহ তবে রাইসার সাথে ওর বিচ্ছেদের কারন আমি ছিলাম সেজন্য মনে হয়।"


--"মানে?"


জেরিনের প্রশ্নে আনিতা তাকায় একবার ওর দিকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাইসার কথা সবটা বলে জেরিনকে। এমন কি কাল কি কি হয়েছিলো আহিয়ান কি কি বলছে সব বলে। জেরিন সবটা শুনে বলে,


--"আচ্ছা আনিতা এমনও তো হতে পারে আদৃত সত্যিই তোকে ভালোবাসে। শুরুতে মিথ্যে বলে সম্পর্কে এসেছিলো বলে সত্যিটা জানানোর সাহস করে উঠতে পারেনি।"


--"তাই বলে সত্যিটা বলবে না? ও তো জানে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। একটা বার সত্যিটা বলে দেখতে পারতো ও।"


--"জানি না কেন করেছে এমন। তবে আমার মনে হয় তোর একবার খোলামেলা ভাবে কথা বলার দরকার আদৃতের সাথে। জিজ্ঞেস কর ওকে কেন এরকমটা করেছে। কেন মিথ্যে বলেছে এতদিন? একবারের জন্যও কেন সত্যিটা বলল না।"


--"বাদ দে এসব। ভালো লাগছে না আর।"


সেকেন্ড ফ্লোরের করিডোর দিয়ে জেরিন আর আনিতা যাচ্ছিলো কথা বলতে বলতে। পূর্ব দিকের শেষের রুমটা ক্রস করার সময় হুট করেই কেউ আনিতার হাত টেনে ধরে ক্লাসে নিয়ে যায়। আচমকা এমন হওয়াতে আনিতা বেশ ভরকে যায়। জেরিনও আনিতার পিছু ক্লাসে ঢুকতে গেলে রাতুল ওর হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রাতুল জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"কোথায় যাচ্ছো তুমি?"


--"আনিতাকে একটা ছেলে___"


--"ওই ছেলেটা আহিয়ান অন্য কেউ না। সো চিন্তার কোনো কারন নেই।"


--"আদৃত কেন নিয়ে গেলো এভাবে?"


--"তোমার বান্ধুবীর যে রাগ। তার রাগ ভাঙাতে হবে তো নাকি?"


--"তাই বলে এভাবে একটা ফাঁকা ক্লাসে। কেউ যদি ওদের দুজনকে দেখে ফেলে একসাথে তখন কি হবে বুঝতে পারছো? যদি কোনো স্যার ম্যাম চলে আসে? এর থেকে ভালো ওদের বলো অন্য কোথাও গিয়ে বসে কথা বলতে।"


--"হ্যাঁ আহিয়ান বলবে আর আনিতা নাচতে নাচতে চলে যাবে তাই না? তাহলে তো ভালোই হতো।"


--"কেউ যদি চলে আসে তখন?"


জেরিনের কথায় এবার তন্ময় ক্ষানিকটা হেসে বলে,


--"কেউ আসবে না চিন্তা করার কি আছে? তাছাড়া আমরা তিনজন তো আছিই গার্ড হিসেবে।"


তন্ময়ের কথায় জেরিন কিছুই বুঝতে পারলো না। জেরিন একবার রাতুলের দিকে তাকিয়ে আবার তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"মানে?"


--"মানে ওরা ভিতরে কথা বলছে এখন আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিবো বুঝলে?"


রাতুল জেরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কথাটা বলল। এবার জেরিন সবটা বুঝতে পেরে মাথা দুলিয়ে মৃদু হাসলো। রাতুল তন্ময়ের সাথে জেরিনের পরিচয় করিয়ে দেয়। ভিতরে আনিতা আর আহিয়ান কথা বলছে। বাইরে তন্ময় রাতুল জেরিন পাহাড়া দিচ্ছে। ফাইয়াজ আর আরহান আনিতার ফ্রেন্ডদের সাথে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে।


----


আনিতা একদম দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই আহিয়ান ওর একহাতে দেয়ালে চেপে ধরে দাঁড়ানো। ওদের দুজনের মাঝে তিন ইঞ্চির মতো দূরত্ব হবে। আহিয়ান আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আনিতা মাথা নিচু করে হাত মোচড়ামুচড়ি করছে। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে আহিয়ানের থেকে ছাড়াতে পারছে না ও। আনিতা ছটফট করেই যাচ্ছে। তা দেখে আহিয়ান বলে,


--"আহ আনি! একটু শান্ত হয়ে দাঁড়াও তো। আমি যতক্ষণ নিজে থেকে তোমাকে না ছাড়ছি ততক্ষণ তুমি ছুটতে পারবে না। এটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। তাহলে কেন শুধু নিজের এনার্জি লস করছো?"


--"ছাড়ুন আপনি আমাকে। আমাকে এভাবে এখানে ধরে এনেছেন কেন আপনি?"


--"কেন ধরে এনেছি সেটা বলার সুযোগ কোথায় দিচ্ছো তুমি আমাকে? এসে থেকেই তো ছটফট করে যাচ্ছো।"


--"বলতে হবে না আপনার কিছু। যেতে দিন আমাকে।"


--"আমার কথা শেষ না হওয়া অব্দি তো আমি তোমাকে যেতে দিচ্ছি না।"


--"দেখুন আমি আপনার সাথে একদমই কথা বলতে চাই না। এমন কি আপনার কোনো কথাও আমি শুনতে ইচ্ছুক না। প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।"


--"তা বললে তো হবে না।"


--"প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।"


আনিতা কথাটা বলার সাথে সাথেই আহিয়ান ওর হাত ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। ছাড়া পেয়ে আনিতা ওখান থেকে চলে আসতে নিলেই আহিয়ান আবারো আনিতার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে একেবারে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিলো। চোখ বন্ধ করে আছে আনিতা। আনিতার হৃদপিণ্ডটা খুব দ্রুত উঠানামা করছে। নিঃশ্বাস খুব দ্রুত নিচ্ছে। আহিয়ান আনিতার কোমড় চেপে ধরে ওকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। আহিয়ানের স্পর্শ পেয়ে আনিতা চোখ খুলে তাকায় ওর দিকে। আহিয়ান আনিতার দু গালে হাত রেখে বলে,


--"আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। অন্যায় করেছি আমি তোমার সাথে। কিন্তু বিশ্বাস করো ভালোবাসি আমি তোমায়। হ্যাঁ আমার ভুল হয়েছে তোমাকে সত্যিটা না জানিয়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো যতবার জানাতে চেয়েছি ততবার শুধু একটা কথাই মনে হয়েছে তুমি আহিয়ান নামক ছেলেটাকে একদমই পছন্দ করো না। তুমি জানো আহিয়ান একসাথে অনেকগুলো রিলেশনে আছে। মেয়েদের ইমোশনস নিয়ে খেলে। তাই তুমি আহিয়ানকে সহ্য করতে পারো না। কিন্তু তুমি যখন জানতে পারবে তুমি যাকে এতটা ভালোবাসো সেই ছেলেটা আর কেউ না সেই আহিয়ানই তখন তোমার কি হবে? যে ছেলেটাকে তুমি এই একটা কারনে অপছন্দ করো সে ছেলেটাকেই তুমি ভালোবাসো তার সাথেই তুমি সম্পর্কে আছো। সেটা তুমি নিতে পারতে না ওই সময়। তাই আমি চেয়েছিলাম কিছুটা সময় নিয়ে তোমাকে সব সত্যিটা আমি সামনা-সামনি জানাবো। সেজন্যই এখানে আসা আমার।


আহিয়ান এবারে চুপ করে যায়। আহিয়ানের কথা শুনে কাঁদছে আনিতা৷ তা দেখে আহিয়ান ওর চোখের পানিটা মুছে দিয়ে আবারো বলে,


--"তোমাকে আমি কথা দিয়েছিলাম আনি আমাদের সম্পর্কের এক বছর পূর্ন হলে আমি তোমার সামনে আসবো। তোমাকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করিয়ে রেখেও আমি যাইনি সেখানে। তার একটাই কারন সেখানে অনেক লোকজন থাকতো আর তুমি তখন সবটা জানলে নিজেকে সামলাতে পারতে না। আমি চাইনি এই বিষয়টা লোক জানাজানি হোক। সবাই তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করুক তাই পরে ফোন করে না বলে দিয়েছিলাম আমি যেতে পারবো না। কিন্তু আনি আমি কিন্তু আমার কথাটা রেখেছিলাম। তোমার সামনে সেদিন আমি এসেছিলাম। যদিও বা তুমি তখনো জানতে না যে আমিই আদৃত। তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কের যেদিন এক বছর হবে সে দিনটা আমরা দুজনে মিলে সেলিব্রেট করবো। আমি কিন্তু আমার এই কথাটাও রেখেছি আনি। সেদিনটা আমরা সেলিব্রেশন করেছি। দুজনে একসাথে কেক কেটেছি। একে অপরকে খাইয়ে দিয়েছি।"


--"কিন্তু সবটাই মিথ্যে বলে। যেখানে আপনি সম্পর্কটাই মিথ্যে বলে শুরু করেছিলেন সেখানে আর কিসের সত্যি আশা করবো আমি।"


--"আমি সেদিন তোমাকে সত্যিটা জানাতে চেয়েছিলাম আনি। কিন্তু পারিনি আমি। তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার ওই চোখের দিকে তাকিয়ে সেদিন আমি আমার এত বড় মিথ্যের কথাটা জানাতে পারিনি। তবে আমি চেয়েছিলাম আজ কালের মধ্যেই সবটা তোমাকে জানাবো কিন্তু তার আগেই তুমি সবটা জেনে গিয়েছিলে। কিন্তু বিশ্বাস করো আনি আমি তোমাকে মিথ্যে বলে সম্পর্কে জড়ালেও তোমার প্রতি ধীরে ধীরে আমার যে ভালোবাসাটা জন্ম নিয়েছে সেটা মিথ্যে না। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি আনি।"


--"জানি না সত্যি ভালোবাসেন কিনা। তবে আমার প্রতি যদি আপনার ভালোবাসা না জন্মাতো তাহলে তখন কি করতেন আপনি?"


আনিতার কথায় চুপ হয়ে গেলো আহিয়ান। আহিয়ানকে এভাবে চুপ হয়ে যেতে দেখে আনিতা মৃদু হাসলো। আনিতা আবারো বলে,


--"এতগুলো দিন এত নাটক করার কারন কি বলবেন? যদি ভালোই বাসেন তাহলে কেন দিনের পর দিন আমাকে অবহেলা করেছেন? কেন দিনের পর দিন আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন? আপনাকে এত ভালোবাসি আমি এটা জানার পরও কেন এত কষ্ট দিয়েছেন আমায় বলবেন?"


--"মেয়েদের একটা সময়ে আমি বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস করতাম না একটা মেয়েও পারে পাগলের মতো একটা ছেলেকে ভালোবাসতে। তুমি এই যে আমাকে এত ভালোবাসতে এত পাগলামি করতে আমার জন্য আমি শুরুতে এটাকে শুধুই আবেগ ভাবতাম। আমার মনে হতো একটা মেয়ে শুধুই একটা ছেলের মন নিয়ে খেলে। ওরা ভালোবাসতে জানে না ওরা শুধু কষ্ট দিতে জানে। তাই একসময় একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছি আমি। কিন্তু তোমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর আমি সব্বাইকে ছেড়ে দিয়েছি বিশ্বাস করো। আর কোনো মেয়ের সাথে আমি সম্পর্ক রাখিনি। যখন বুঝতে পারি আমিও তোমাকে ভালোবাসি ততদিনে অনেকটা লেট করে ফেলেছি। শুরুর দিকে হলেও মানা যেত। শুরুর দিকেও যদি আমি বুঝতে পারতাম যে আমি তোমায় ভালোবাসি তাহলে তখনই সবটা জানিয়ে দিতাম। আমি ভাবতাম আমি যেমন মজা করেই সম্পর্কে জড়াই তুমিও তেমনই আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো। আমি ভাবতাম একটা ছেলেকে না দেখে তুমি কেন ভালোবাসবে? না দেখে কেউ কাউকে ভালোবাসে নাকি? তুমি যেহেতু আমায় দেখোনি তাই তোমার ভালোবাসাটা তোমার আমার সম্পর্কটা আমি অতটা সিরিয়াস নেইনি। কিন্তু আমার ধারণা তুমি পালটে দিয়েছিলে। তোমাকে দেখে তোমার ভালোবাসা দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি যে না দেখেও ভালোবাসা যায়। যখন বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো তখন থেকে আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার। তোমার সাথে সবকিছু শেষ করে দেওয়ার জন্যই আমি তোমাকে অবহেলা করতাম কথা বলা অফ করে দিতাম। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে সবকিছু থেকে ব্লক করে দিতাম শুধুমাত্র তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করার জন্য। আমি আমার মিথ্যে ভালোবাসাটা থেকে তোমায় মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। আমি চাইতাম না তুমি এমন মিথ্যে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে নিজে আরও কষ্ট পাও। যখন বুঝতে পারলাম তুমি আমাকে নিয়ে সিরিয়াস তখন থেকেই আমি চাইনি তুমি আর এই সম্পর্কে থেকে কষ্ট পাও। তাই এত অবহেলা করতাম এত ইগনোর করতাম যাতে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। কিন্তু আমি কিছুতেই পেরে উঠতাম না। তুমি ঠিক কোনো না কোনো ভাবে আবার সবটা ঠিক করে নিতে। মাঝে মধ্যে আমিও নিজে থেকে তোমার কাছে ফিরে আসতাম। জানি না কোন টানে তোমার কাছে বার বার ফিরতাম আমি। শুরুতে তোমাকে ভালো না বাসলেও একটা টাইমে তোমায় আমি ভালোবেসে ফেলি। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা পাগলামি সবকিছু আমাকে বাধ্য করে তোমায় ভালোবাসতে। এই ভেবে তোমাকে সত্যিটা জানাতে পারিনি যে তুমি যদি আমায় ছেড়ে চলে যাও তখন কি হবে আমার? আর সত্যিটা জানার পর তোমার কি অবস্থা হবে? আমি তোমাকে সব সত্যিটা জানাতেই তন্ময় ওদের দিয়ে ফাইয়াজকে বলে তোমাদের এখানে এসেছি বিশ্বাস করো। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি আনি। আমি হারাতে চাই না তোমাকে। এখন আমার লাইফে তুমি ব্যাতিত অন্য কোনো মেয়ে নেই বিশ্বাস করো। শুধুমাত্র তোমায় ভালোবেসে তোমাকে পাবার জন্য আমি সবাইকে ছেড়ে দিয়েছি। শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি সেকেন্ড টাইম নিজেকে বদলে নিয়েছি। একসময়ে একটা মেয়ের জন্য যেমন আমি নিজেকে বদলে নিয়েছিলাম একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম তেমনি আবার একটা মেয়ের জন্যই আমি আমার সেই খারাপ দিকটাকে বদলাতে পেরেছি। আবার বিশ্বাস করতে শিখেছি যে সত্যিই ভালোবাসা আছে। আর সেই মেয়ে তুমি যে আমাকে আবার পালটে দিয়েছো। #শুধু_তোমারই_জন্য আমি নিজেকে একদম বদলে নিয়েছি। সব মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছি কারো সাথে আর কোনো সম্পর্কে নেই আমি। #শুধু_তোমারই_জন্য আর তোমাকে ভালোবেসে।"


কথাগুলো বলে আহিয়ান আনিতার কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকালো। আনিতা আহিয়ানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। আহিয়ান অবাক চোখে তাকায় একবার আহিয়ানের দিকে। আনিতা রেগে বলে,


--"আমি আপনার প্রথম ভালোবাসা না? এর আগেও আপনি একজনকে ভালোনাসতেন? এইটা নিয়েও মিথ্যে বলেছিলেন? অবশ্য সবই তো মিথ্যে বলেছেন।"


এই বলে আনিতা ওখান থেকে চলে আসতে নিলে আহিয়ান আবারো আনিতার হাত ধরে আটকে দেয়। তারপর আনিতার সামনে গিয়ে বলে,


--"প্রথম ভালোবাসা না ঠিকই তবে তুমি আমার শেষ ভালোবাসা। প্রথম ভালোবাসা ভুলে মানুষ আবারো ভালোবাসতে পারে। কিন্তু শেষ ভালোবাসা ভুলে কখনো ভালোবাসতে পারে না। আনি মানুষের লাইফে যদি প্রথম ভালোবাসাটাই সবকিছু হতো তাহলে সে দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারতো না। প্রথম ভালোবাসাই যদি সবকিছু হতো তাহলে শেষ ভালোবাসা কারো লাইফে আসতো না আনি। প্রথম ভালোবাসা সবাই হতে পারে আনি কিন্তু শেষ ভালোবাসা? শেষ ভালোবাসা সবাই হতে পারে না।"


কথাগুলো শুনে আনিতা ঝামটা মেরে আহিয়ানের থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর বলে,


--"আপনি আর আপনার ভালোবাসা দুটোই আমার থেকে দূরে থাকুন বলে দিচ্ছি। চাই না আমার আপনার ভালোবাসা।"


এই বলে আনিতা বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে। আনিতার পিছু পিছু আহিয়ানও আসে। দরজার বাইরে পা রাখতেই আনিতা দেখে তন্ময় রাতুল আর জেরিন দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় আনিতাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,


--"সব মিটমাট হইছে তো বোন? আর কোনো রাগ নেই তো ওই আহিয়ান হতচ্ছাড়া আর তোমার এই অভাগা ভাইয়ের উপর?"


--"তোমরা কেউই না নেক্সট টাইম আমার সামনে আসবে না বলে দিলাম। নয়তো একদম খুন করে ফেলবো আমি।"


এই বলে আনিতা হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলো। আনিতাকে ওভাবে যেতে দেখে জেরিনও ওর পিছু নিলো। রাতুল আর তন্ময় দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আহিয়ানের দু পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তন্ময় আহিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"রাগ ভাঙাতে পারলি না বুঝি? শালা তোর জন্য আমার বোনটা এখন আমার সাথেও রাগ দেখায়। কেন যে বন্ধুত্বের খাতিরে তোর কথা শুনে ওরে সত্যিটা বললাম না। আমার উচিত ছিলো তোকে না জানিয়েই ওকে সত্যিটা বলে দেওয়ার। কিন্তু এক বদনা আফসোস সেটা আর হলো না তোর জন্য।"


আহিয়ান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে রাতুল বলে,


--"কিরে চুপ করে আছিস কেন? কি বলল আনিতা? কালকের থেকে তো আজ আরো বেশি রেগে আছে মনে হচ্ছে। কি বলেছিস ওরে?"


--"সবটা ঠিক হয়েই যাচ্ছিলো। কিন্তু যখনই শুনলো ও আমার প্রথম ভালোবাসা না। আমি আগে একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম আর এটাও ওর থেকে লুকিয়ে গিয়েছি সেই আবার লুচির মতো ফুলে উঠলো।"


আহিয়ানের কথায় রাতুল আর তন্ময় মাথায় হাত দেয়। রাতুল আর তন্ময় একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। রাতুল আহিয়ানের পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বলে,


--"শালা তোরে এই কথা বলতে বলছে কে? এই কথা শুনলে তো রাগ করবেই। কিছু কিছু কথা গোপন থাকাই ভালো। গেছো রাগ ভাঙাইতে উল্টো রাগ আরো বারিয়ে দিছো।"


--"একবার মিথ্যে বলেছি। মিথ্যে বলতে বলতে এতদিন পার করেছি। তাই আজ আর কিছু লুকোতে চাইনি। আমার লাইফের সব কথা ওর জানা প্রয়োজন ছিলো তাই জানিয়েছি। আমি চাইনি আর কিছু ওর থেকে হাইড থাকুক। পরে আবার কারো থেকে কিছু শুনবে আবারো ভুল বুঝবে তার থেকে ভালো না আমি নিজেই জানিয়ে দিলাম?"


--"তো এতই যখন ওর জানা দরকার তাহলে মিথ্যে বলেছিলি কেন? কেন শুরু থেকে সত্যিটা জানাসনি?"


--"ওই যে ভাবতে পারিনি যে আমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা সত্যি ছিলো। বুঝতে পারিনি ও আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে সিরিয়াস ছিলো। আর আমিও যে এভাবে ওকে এতটা ভালোবেসে ফেলবো কল্পনাও করতে পারিনি। যে আমি এত এত মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে কিন্তু কেউ কোনোদিন আমার মনে জায়গা করে নিতে পারেনি সেখানে আনিতা যে আমার মনের সবটা দখল করে নিবে ভাবতে পারিনি। যদি বুঝতাম এমন কিছু হবে তাহলে কখনোই শুরুতে মিথ্যে বলতাম না। সম্পর্কটা মিথ্যে দিয়ে শুরু করতাম না।"

Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.