Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২৫ - Bangla choti golpo

 

Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২৫ - Bangla choti golpo
Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য  পর্ব_২৫ - Bangla choti golpo 

শুধু তোমারই জন্য

পর্ব_২৫


--"ফারদিন বিয়ে করে ফেলেছে।"


--"মানে? কি সব বলছো তুমি? ফারদিন এরকমটা করতে পারে না।"


ফাইয়াজ রোদেলার কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"এরকমটাই হয়েছে।"


রোদেলা ঝাড়ি মেরে নিজের কাঁধ থেকে ফাইয়াজের হাত সরিয়ে দিলো। তাসকিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাত দুটো ধরে বলে,


--"তা্ তাসকিয়া ফাইয়াজ ভাইয়া এটা কি বলছে? বল না সবটা মিথ্যা।"


--"এটাই সত্যি দোস্ত।"


রোদেলা তাসকিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। সাথে সাথেই আনিতা ধরে ফেলে ওকে। হাটু ভেঙে নিচে বসেই কাঁদতে শুরু করে রোদেলা। এখানে কি হচ্ছে আহিয়ান আর তন্ময় কিছুই বুঝতে পারছে না। তন্ময় এগিয়ে গিয়ে শুভকে জিজ্ঞেস করতেই শুভ জানালো,


--"ফারদিন রোদেলার উডবি আর তাসকিয়ার ভাই।"


রোদেলার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো কথাটা শুনতেই তন্ময়ের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। তন্ময় কেন যে এই কথাটা ঠিক মানতে পারছে না। রোদেলার কান্নাটাও ঠিক সহ্য হচ্ছে না ওর। তন্ময় সেখান থেকে সরে রেস্তোরাঁর বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান বলে,


--"মানে রোদেলার উডবি হলে আবার অন্যকাউকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে কেন?"


--"সেটাই তো বুঝতে পারছি না।"


--"আচ্ছা এসব নিয়ে পরে কথা হবে। আপাতত বাসায় ফেরা যাক। রোদেলাকে সামলাতে হবে।"


জেরিন আর আনিতা দুজনে রোদেলাকে মেঝে থেকে উঠিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসালো। এতক্ষণের হাসি খুশি পরিবেশটা মূহুর্তেই যেন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। আনিতা রোদেলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলো। রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আনিতা বলে,


--"রোদ কাঁদিস না প্লিজ। এভাবে কাঁদলে অসুস্থ হয়ে পড়বি তো।"


রোদেলা আনিতার কোমড় জড়য়ে ধরে আনিতার পেটে মুখ গুজে কিছুটা শব্দ করে কান্না করে দিলো। তাসকিয়া দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রোদেলার সামনে আসার মুখ নেই যে ওর। তাসকিয়াই খুব করে চেয়েছিলো রোদেলাকে ওর ভাবী বানাবে। তাসকিয়ার জন্যই দু বছর আগে রোদেলা আর ফারদিনের আংটি বদল হয়। তাসকিয়া তো ওর ভাইকে দেখে ভেবেছিলো ও রোদেলাকে ভালোবাসে। তাহলে আজ কি হলো এইটা? তাসকিয়ার সব ভাবনা ভুল করে দিয়ে ওর ভাই অন্য কাউকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসলো? নিজের হাতেই নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের লাইফটা শেষ করে দিলো। এসব ভেবেই তাসকিয়া দূরে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ওর নিজেকেই সবচেয়ে বেশি দোষী মনে হচ্ছে ফারদিনের করা কাজের জন্য। 


রোদেলা এখনো আনিতার পেটে মুখ গুজে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। সবাই ওর কান্না থামানোর চেষ্টাও করছে কিন্তু কিছুতেই থামছে না রোদেলা। আনিতা রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোদেলা কাঁদতে কাঁদতেই বলে,


--"আনি ফারদিন আমার সাথে এরকমটা কিভাবে করতে পারলো বল? আমি যে উনাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি। একটা ছোট্ট বাড়ি, একটা সংসার, ফুটফুটে একটা বাচ্চা, এবং ফারদিন আর আমি। ভালোবাসায় ভরপুর থাকবে আমাদের ঘর। কিন্তু___কিন্তু কি হলো এইটা? ফারদিন যে আমার সবকিছুকে তুচ্ছ করে দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলো। কিভাবে সহ্য করবো এইটা আমি? ওই মানুষটা গত দুই বছর যাবত আমার হয়েও আজ সে কেন আমার হলো না? কেন সে আজ অন্যের স্বামী বল না আনিতা? কেন সে মানুষটা আমার হয়েও আমার হলো না?"


ওখানে উপস্থিত সকলেই নিশ্চুপ। কেন-না এর উত্তর ওদের কারোরই জানা নেই। রোদেলার মতো করে ওরা কেউ-ই ভাবতে পারেনি ফারদিন এমন কিছু করতে পারে। শুভ এগিয়ে এসে রোদেলার কাঁধে হাত রেখে বলে,


--"রোদ প্লিজ এভাবে কাঁদিস না ইয়ার। আগে বাড়ি চল। তারপর আমরা আমাদের সকল প্রশ্নের জবাব ফারদিন ভাইয়ার থেকে নিবো। এখন কান্না করে না প্লিজ লক্ষীটি।"


রোদেলা তখনও হেঁচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে। তন্ময় বাইরে থেকে ভিতরে এসে আনিতাকে কিছু একটা ইশারা করে। তন্ময়ের ইশারায় আনিতা সরে দাঁড়ায় ওখান থেকে। তন্ময় রোদেলার সামনে হাটু গেড়ে বসে রোদেলার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,


--"এই যে ম্যাডাম আপনাকে এভাবে কাঁদতে দেখে যে আমার__আমাদের সবার ভীষণ রকমের কষ্ট হচ্ছে সেইটা কি আপনি বুঝতে পারছেন? আমার তো মনে হয় না বুঝতে পারেন আপনি। আমি যে ইনফ্যাক্ট আমরা সবাই যে রোদেলা কে চিনতাম আমার তো মনে হচ্ছে না এইটা সেই রোদেলা। রোদেলা তো অনেক স্ট্রং তাই না? এতটুকুতেই কি আমাদের রোদেলা ভেঙে পড়তে পারে? উঁহু কক্ষনো পারে না। আমরা সবাই তো আছি তোমার সাথে। তাহলে এভাবে কাঁদছো কেন তুমি? তুমি না তোমার ফ্রেন্ডদের কষ্ট সহ্য করতে পারো না? তুমি না তোমার ফ্রেন্ডদের জন্য নিজের জীবনও বাজি রাখতে পারো? তাহলে আজকে সেই তুমি-ই কেন তোমার ফ্রেন্ডদের এভাবে কষ্ট দিচ্ছো বলো তো? তুমি যে এভাবে কাঁদছো এতে তো সবাই কষ্ট পাচ্ছে। সব্বাই তোমার জন্য কাঁদছে তাকিয়ে দেখো একবার। তুমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছো আর সাথে তোমার ফ্রেন্ডদেরও কষ্ট দিচ্ছো। কেন বলো তো?"


এইটুকু বলে তন্ময় থামলো। রোদেলাও কান্না প্রায় থামিয়ে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে শুধু হেঁচকি তুলছে। তন্ময় আবারো বলতে শুরু করে,


--"আমি জানি তোমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করা যেতে পারে বলো? কাঁদলেই কি তোমার কষ্ট শেষ হয়ে যাবে? যাবে না তো। তাহলে কেন অযথা কাঁদছো? ফারদিন তোমার হওয়ার ছিলো না তাই সে আজ অন্যের হাজবেন্ড। আর অন্যের হাজবেন্ডের জন্য তুমি কেন কাঁদবে? এখন তার প্রতি তোমার কোনো অধিকার নেই। বড়জোড় তুমি তার থেকে তোমার প্রশ্নের জবাব গুলো পেতে পারো এর থেকে বেশি কিচ্ছু না। ফারদিন তোমার কপালে লিখা ছিলো না তাই তাকে তুমি হারিয়েছো। মানতে শিখো এইটা। এমনটা হওয়ার পিছনে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার জন্য উত্তম কিছু রেখেছে। হয়তো বা এতেই তোমার ভালো সেজন্যই আল্লাহ ফারদিনকে তোমার জন্য লিখেননি। তোমার জন্য নিশ্চয়ই এর চেয়েও আরো ভালো কিছু আছে। এখন কান্নাকাটি অফ করো তো। অনেক কেঁদেছো আর না। বাসায় ফিরবো এবার সবাই। চলো।"


কথাগুলো বলেই তন্ময় রোদেলার চোখের পানি মুছে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর সবাইকে ইশারা করে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এলো। আনিতা রোদেলাকে নিয়ে বাইরে আসতেই তন্ময় রোদেলার হাত ধরে টেনে নিজের বাইকের পিছনে বসিয়ে দিলো। রোদেলা কোনোমতে তন্ময়কে ধরে বসতেই তন্ময় বাইক স্টার্ট দেয়। ঘন্টা খানেক এর মাঝে ওরা সকলে বাড়িও পৌঁছে যায়৷ 


মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা আর ফারদিন। একপাশেই ফারদিনের নতুন বিয়ে করা বউ মাথায় ঘোমটা টেনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর অন্য পাশে তাসকিয়া আনিতা শুভ ফাইয়াজ জেরিন তন্ময় আর আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সকাল হতেই ওরা চলে এসেছে তাসকিয়াদের বাড়ি। রোদেলার সকল প্রশ্নের জবাব ফারদিনের থেকে নিতে। রোদেলা একবার ফারদিনের বউয়ের দিকে তাকালো। শ্যাম বর্নের গোলগাল মায়াবী চেহারার অধিকারী মেয়েটি। ভয় ভয় মুখ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফারদিন রোদেলার হাতদুটো ধরে বলে,


--"রোদ ইজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট। ট্রাস্ট মি।"


--"বিয়ে করে বউ নিয়ে এসে এখন বলছেন এটা শুধুই একটা দূর্ঘটনা? আপনার কথা শুনে খুউব হাসি পেলো ফারদিন।"


--"রোদ আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। এই মেয়েকে ভালোবাসি না এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে বিয়ে করিনি ওকে। বিশ্বাস করো।"


রোদেলা ঝামটা মেরে ফারদিনের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। ফারদিন অবাক চোখে দেখছে রোদেলাকে। রোদেলা মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে ফারদিনকে বলে,


--"লজ্জা করে না আপনার? পাশেই নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে রেখে তারই সামনে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছেন? ভুলে যাবেন না ওই মেয়েটি আপনার স্ত্রী। বিয়ে হয়ে গিয়েছে আপনাদের।"


--"বলছি তো এটা একটা দূর্ঘটনা। আমি বা ইশফা আমরা কেউ-ই ইচ্ছাকৃত ভাবে বিয়েটা করিনি। আর আমরা একে অপরকে আগে থেকে চিনতামও না। তুমি কেন বিশ্বাস করতে চাইছো না আমাকে? ইশফাকে আমি কোনোদিনও নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। ভালোবাসতে পারবো না আমি ওকে। কয আমি সত্যিই শুধু তোমাকে ভালোবাসি।"


এতক্ষণে সবাই জানতে পারলো ফারদিন যে মেয়েটাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে তার নাম ইশফা। রুমের ভিতর শুধু ফারদিন আর রোদেলাই কথা বলে যাচ্ছে। বাকী সবাই নিরব দর্শকের মতো সবটা দেখে যাচ্ছে। ইশফা মেয়েটিও চুপচাপ মাথা নিচু করে সবটা শুনছে। চোখে পানি টলমল করছে ইশফার। মাঝে মধ্যে ফারদিনের চিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠছে। রোদেলা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,


--"আপনি যতই চিৎকার চেঁচামেচি করুন না কেন তাতে তো আর সত্যিটা পালটে যাবে না ফারদিন। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যাই হোক না কেন বিয়েটা যে আপনাদের হয়ে গিয়েছে এটা তো আর মিথ্যে না? এই সত্যিটা তো আপনাকে মানতেই হবে।"


--"হ্যাঁ স্বীকার করছি আমি আমাদের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রোদ তোমাকে হারাতে পারবো না আমি। ছয় মাস সময় দাও আমাকে ইশফাকে ছেড়ে দিবো। ওকে আমার চাই না। ইভেন তুমি ব্যাতিত অন্য কোনো মেয়েকে আমার চাই না। আমি জাস্ট তোমাকে চাই।"


--"এই ভুলটা ভুলেও করবেন না ফারদিন। আপনি ভাবলেন কি করে ইশফাকে ছেড়ে দিলেই আমি আপনার হয়ে যাবো?"


--"রোদ ভালোবাসি আমি তোমাকে।"


--"একসময় ভালোবাসতেন। এখন থেকে শুধুই ইশফাকে ভালোবাসবেন আপনি। আসছি।"


কথাটা বলে রোদেলা চলে আসতে নিলেই পিছন থেকে ইশফা রোদেলাকে ডেকে উঠে,


--"আপু__"


হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায় রোদেলা। পিছন ঘুরে ইশফার দিকে এগিয়ে যায়। ইশফার সামনে দাঁড়িয়ে রোদেলা বলে,


--"বলো।"


--"উনি যা বলছেন সব সত্যি আপু। উনি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে বিয়ে করেননি। কি থেকে কি হয়ে গেলো মাঝখান থেকে আমার জন্য আপনার লাইফটা শেষ হয়ে গেলো।"


--"নাহ পাগলী এভাবে বলছো কেন?"


--"আ'ম সরি আপু। আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখান থেকে চলে যাবো। ছয় মাসের আগে তো ডিভোর্স দেওয়া পসিবল না। অন্তত ছয়টা মাস আপনার ফারদিনের নামের পাশে আমার নামটা সহ্য করুন। ছয় মাস পরেই চলে যাবো আমি।"


--"একটা থাপ্পড় মারবো। তোমাদের কিভাবে বিয়ে হয়েছে সেটা এখন আর জানতে চাচ্ছি না আমি। আমি জাস্ট এতটুকুই জানি যে তোমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ আমাকে ফারদিনের জন্য লিখেননি তাই আমি ওর হইনি। কিন্তু আল্লাহ নিজে তোমার আর ফারদিনের জুড়ি লিখেছেন। ফারদিনের বাম পাঁজরের হাড় দিয়ে তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি চাইলেও যে তোমাদের সম্পর্কটা ভাঙতে পারবো না। আর আমি এইটা চাই-ও না।"


--"আপু উনি আপনাকে খুউব ভালোবাসেন। ভালো থাকতে পারবে না আপনাকে ছাড়া।"


--"এখন থেকে তোমাকে ভালোবাসবে ফারদিন। আর তুমি পারবে না ওকে ভালো রাখতে? নিজের ভালোবাসা দিয়ে ওর মন থেকে আমাকে মুছিয়ে দিয়ে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে না তুমি?"


--"আপু___"


--"আপু বলে ডেকেছো তো? তাহলে আপু হয়ে কিভাবে তোমার সংসারটা ভেঙে দিই আমি বলো তো? আর আপু বলে যেহেতু ডেকেছোই তাহলে আপুর এই আবদারটুকু রেখো। ফারদিনকে খুউব ভালো রেখো কেমন?"


রোদেলা ইশফার হাত ছেড়ে উলটো ঘুরে কয়েক পা এগিয়ে যায়। আবার কিছু একটা মনে হতেই দু পা পিছিয়ে ফারদিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,


--"আপনার কাছেও আমার একই চাওয়া। এই বাচ্চা মেয়েটাকে প্লিজ কষ্ট দিয়েন না। আগের সব কিছু ভুলে যান। এখন নতুন করে ইশফাকে নিয়ে বাঁচতে শুরু করুন। ও-ই এখন আপনার সহধর্মিণী। আপনার ভালো খারাপ সব কিছুর সঙ্গী। ওকে কখনোই কষ্ট দিয়েন না। ধীরে ধীরে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।"


--"তোমাকে ছাড়া কিচ্ছু ঠিক করতে চাই না আমি রোদ।"


--"ভালোবাসেন তো আমায়?"


--"হ্যাঁ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।"


--"তাহলে আমার কথাটা রাখবেন আশা করি। আমাকে যদি ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে ভুলে ইশফাকে নিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করুন। ও আপনার স্ত্রী এখন থেকে ওকেই ভালোবাসবেন আপনি। আর কাউকে না। এমন কি আমাকেও না।"


কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রোদেলা। রোদেলার পিছু পিছু আনিতা ওরা সকলেই বেরিয়ে গেলো। তাসকিয়ার আম্মু এসে রোদেলার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দেয়। ওনার চোখেও পানি। বড্ড ভালোবাসেন তো রোদেলাকে। আর এমন কিছু যে হতে পারে এটা উনারা কেউ-ই ভাবতে পারেনি। তাসকিয়ার আম্মু রোদেলার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,


--"আমাকে মাফ করে দিস মা। আমার ছেলের হয়ে আমি তোর কাছে মাফ চাচ্ছি। তোকে এই বাড়ির বউ করে আনার বড্ড শখ ছিলো যে আমার। চেয়েছিলাম তোর ইন্টার কমপ্লিট হলেই আমার ফারদিনের বউ করে ঘরে তুলবো তোকে। আমাদেরই ভুল হয়েছিলো। দু বছর আগেই যদি আংটি বদল করে না রেখে সরাসরি তোকে বউ করে ঘরে তুলতাম তাহলে আজ এই দিনটা আসতো না।"


তাসকিয়ার আম্মুর কথায় রোদেলা কান্না মিশ্রিত চোখেই কিছুটা হেসে দেয়। রোদেলা তাসকিয়ার আম্মুর হাতদুটো ধরে বলে,


--"আমি তোমার ছেলের বউ হওয়ার ভাগ্য নিয়ে দুনিয়াতে আসিনি আন্টি। এখন যে তোমার ছেলের বউ হয়ে ঘরে এসেছে তাকে হাসিমুখে গ্রহণ করো। এটাই চাই আমি। আর কিচ্ছু না।"


বিনিময়ে তাসকিয়ার আম্মু আর কিচ্ছু বললেন না। মৃদু হাসলেন একটুখানি। রোদেলাও মুচকি হেসে বের হয়ে এলো বাসা থেকে। সাথে আনিতা ওরা সকলেই এলো। তাসকিয়া ওদের বাসাতেই আছে। তাসকিয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে মেইন রোডে উঠে রোদেলা আনিতাকে বলে,


--"আচ্ছা আমি তাহলে বাসায় যাচ্ছি।"


--"এই একদম না। তুই আমাদের বাসায় যাবি। আন্টিকে ফোন করে বলে দিয়েছি আমি। ফাইয়াজ ভাইয়া গিয়ে তোর জামা কাপড়ও নিয়ে এসেছে। সো এখন তুই সোজা আমাদের বাসায় যাবি। তুই আর আমি একসাথে থাকবো অনেক অনেক মজা করবো আমরা কেমন?"


--"ভালো লাগছে না আনি। আমি কয়েকটা দিন একা থাকতে চাই প্লিজ।"


--"উঁহু এটা তো হচ্ছে না সোনা। তোমাকে আমি একা কিছুতেই ছাড়ছি না। পরে শয়তানের পাল্লায় পড়ে যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসিস তখন আমরা আমাদের এই কিউট ফ্রেন্ডটাকে কোথায় পাবো শুনি?"


--"আনিতা বোঝার চেষ্টা কর। সত্যিই ভালো লাগছে না আমি একা থাকতে চাই।"


--"আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইছি না। তুই চল তো আমাদের সাথে।"


আনিতা একপ্রকার জোর করেই রোদেলাকে নিয়ে তন্ময়ের বাইকের পিছনে বসিয়ে দিলো। জেরিনও গিয়ে শুভর বাইকে বসে পড়লো। আনিতা ফাইয়াজের বাইকে উঠতে নিলেই ফাইয়াজ বলে,


--"আহিয়ানের সাথে যা। রোদেলার ব্যাগ বাসায় রেখে আসছি আমি। আর তাছাড়া আমার একটু কাজও আছে। কাজটা সেড়েই আসছি। তোরা ইনফর্ম করে দিস আমাকে কোথায় আছিস সেটা।"


--"কেন বাসায় যাবো না এখন আমরা?"


--"নাহ। বাসায় গেলে রোদেলার ফাঁকা ফাঁকা লাগবে সবকিছু। মন খারাপ থাকবে। তাই আগে ওর মন ভালো করতে হবে।"


--"আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ওক্কেহ ডান। আমি ম্যাসেজ করে দিবো তোমাকে।"


বিনিময়ে ফাইয়াজ কিছু না বলে মৃদু হেসে বাইক চালিয়ে চলে গেলো। আনিতা গিয়ে আহিয়ানের বাইকের পিছনে বসে পড়লো।


--"তোহ চলেন।"


--"কোথায়?"


--"রোদেলার মন ভালো করতে হবে তো।"


--"ওকেহ চলো।"


সবাই মিলে বাইক স্টার্ট দেয়। বাইক স্টার্ট দিতেই তন্ময় বলে,


--"আনিতা আমরা যাবো টা কোথায়?"


--"যেদিকে দু-চোখ যায় ভাইয়া। আমাদের জাস্ট একটা কথা মনে রাখতে হবে। যে করেই হোক আমাদের রোদের মন ভালো করতেই হবে।"


--"ওকেহ ডান।"

চলবে।


ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.