শুধু তোমারই জন্য
পর্ব_২২
Bangla Golpo | শুধু তোমারই জন্য পর্ব_২২ | bangla choto golpo |
সন্ধ্যার কিছুটা পরে আনিতার ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। এখন বেশ হালকা লাগছে নিজেকে। বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে সোফায় এসে বসলো। আনিতা বসার কিছুক্ষণ বাদেই ওর ছোট চাচ্চু বাসায় ঢুকলো। আনিতাকে দেখে বলে,
--"ঘুম ভেঙেছে তোমার? তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমার জন্য নিয়ে আসা গিফট গুলো দিচ্ছি তোমাকে।"
--"ওকে চাচ্চু।"
আনিতার চাচ্চু আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। বিকেলে বাসায় ফিরে আনিতা নিজেই বলেছিলো কার্টন খুলে ফেলতে। তাই ওর চাচ্চু বিকেলেই খুলে ফেলে। আনিতাকে ডেকেছিলো কয়েকবার কিন্তু আনিতা ঘুমিয়ে থাকায় উঠে আসেনি। কিছুক্ষণ বাদে আনিতার চাচ্চু আনিতার পাশে এসে বসলেন। আনিতার দিকে কিটক্যাট আর স্নিকার্সের বড় দুই প্যাকেট চকলেট এগিয়ে দিলো। আর পকেট থেকে নতুন ফোন বের করে দিলো। আনিতা ফোন পেয়ে তো মহাখুশি। আনিতা ওর চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--"থ্যাংকিউ চাচ্চু।"
আনিতার চাচ্চু ওকে একহাতে জড়িয়ে নেয়। তখনই আনিতার আম্মু ড্রয়িংরুমে এসে আনিতার হাতে নতুন ফোন দেখে বলে,
--"আবার ওকে ফোন দিলি কেন? আগের তো একটা ফোন ছিলোই।"
--"ওটা তো তোমার পুরোনো ফোন ছিলো আম্মু।"
--"তাতে কি? ছিলো তো।"
--"আনিতা আমার কাছে চেয়েছিলো আগে। বলেছিলাম আসার সময় নিয়ে আসবো। তাই দিলাম। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে ফোন পেয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে। যদি কখনো কিছু শুনেছি তাহলে সেটা কিন্তু তোমার জন্য ভালো হবে না আগেই বলে দিলাম আম্মু। মনে থাকেব?"
আনিতার চাচ্চুর কথায় আনিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। ওর চাচ্চুর একটা ফোন আসাতে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আনিতার আম্মুও নিজের রুমে চলে যান। এদিকে আনিতা বসে বসে ভাবছে। কোনোভাবে যদি চাচ্চু ওর আর আহিয়ানের কথাটা জেনে যায় তখন কি হবে? ওকে তো একদমই মেরে ফেলবে। ওর আব্বু চাচ্চু খুবই ভালো কিন্তু এসব বিষয়ে খুবই স্ট্রিক্ট। কিন্তু সত্যি তো চাপা থাকে না। একসময় না একসময় সেটা ঠিক সবার সামনে আসবে। তখন কি করবে আনিতা? ওর আব্বু চাচ্চুদের সামনে দাঁড়াবে কি করে?
আপাতত এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রুমে চলে গেলো। এসব নিয়ে যত ভাববে ততই মাথা ধরবে। পরেরটা পরে দেখা যাবে ভেবে এখন এসব ভাবা বাদ দিলো। আনিতা রুমে গিয়ে আগের ফোন থেকে মেমোরি কার্ড আর সিমকার্ড খুলে নতুন ফোনে ভরে নিলো। অনিমা আনিতার কাছে এসে আনিতার আগের ফোন নিয়ে বলে,
--"এবার থেকে তাহলে এই ফোন আমার।"
আনিতা কিছু না বলে মুচকি হাসলো। আনিতাকে হাসতে দেখে অনিমা ফোন নিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আনিতা উলটে পালটে নতুন ফোনটা দেখছে।
রাত দশটা বেজে নয় মিনিট। হুট করে আহিয়ানের কথা মনে পড়লো আনিতার। বিকেলে বাসায় ফেরার পর একটা বারের জন্যও ওর সাথে কথা হয়নি। আহিয়ান না ওর ম্যাসেজের উত্তর দিয়েছে আর না কোনো ফোন করেছে। বিছানার উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও করলো না। তন্ময়কে ফোন লাগালো। তন্ময় ফোন রিসিভ করে বলে,
--"হ্যাঁ আনিতা বলো।"
--"কোথায় আছো তোমরা?"
--"আমি আর ফাইয়াজ তো বের হয়েছি একটু।"
--"তা তোমার ওই গুনধর বন্ধু আহিয়ান কোথায়?"
--"আসার সময় তো ওকে ছাদেই দেখলাম। "
--"আচ্ছা তাহলে পরে কথা বলছি আমি রাখছি।"
--"ওকে।"
আনিতা লাইন কেটে দিলো। ড্রয়িংরুমে উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই। আনিতা ওর আম্মুর রুমে গিয়ে বলল,
--"ফুপ্পির বাসায় যাচ্ছি আমি।"
--"এত রাতে ও বাসায় কেন যাবি? এখন খেয়ে নিবি চল। তারপর ঘুমাবি। কাল সকালে যাস।"
--"আজ আমি ফুপ্পির সাথে ঘুমাবো আসছি।"
--"আরে আনিতা শোন। খেয়ে তো যা____"
আনিতা কিছু না শুনেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আনিতা ওর ফুপ্পির সাথে দেখা না করেই ছাদে উঠে গেলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে আহিয়ানকে পেলো না। তাই আবার নিচে নেমে এলো। বেশ ক্ষানিকটা সময় ওর ফুপ্পির সাথে গল্প করলো।
মিনিট পাঁচেক পর ফাইয়াজ এসে ওর আম্মুকে ডেকে বলল টেবিলে খাবার দিতে। আনিতার আম্মু খাবার গরম করে টেবিলে দিতে দিতেই আনিতার আংকেল চলে আসেন দোকান থেকে। আনিতা ওর ফুপ্পির কাজে কিছুটা সাহায্য করে। ইতিমধ্যেই ফাইয়াজ তন্ময় ফাইয়াজের আব্বু-আম্মু চেয়ার টেনে বসে পড়েন। আনিতা ওর ফুপ্পির চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ানকে কোথাও দেখা গেলো না। তন্ময় আহিয়ানকে ডাকতে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই আহিয়ান এসে চেয়ার টেনে বসে। একবারের জন্যও আনিতার দিকে তাকালো না। আনিতার বেশ রাগ হচ্ছে এবার আহিয়ানকে এভাবে দেখে। আনিতার ফুপ্পি সবাইকে খাবার সার্ভ করতে গেলে আনিতা বলে,
--"আজ আমি সবাইকে দিয়ে দিচ্ছি তুমি বসো।"
--"তুইও খেতে বোস। তোর দিতে হবে না।"
--"আহ! ফুপ্পি দাও না।"
--"তুই পারবি না।"
--"পারবে মা। এখন থেকেই একটু আধটু শিখিয়ে দাও নয়তো বিয়ের পর কথা শুনতে হবে। তার থেকে ভালো না এখনই কিছুটা প্র্যাক্টিস করে নিক।"
ফাইয়াজের কথায় আনিতা রাগ দেখিয়ে বলে,
--"তুমি তোমার বউকে নিয়ে চিন্তা করো আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।"
এই বলে আনিতা একে একে সবার প্লেটে খাবার দিয়ে দিলো। শুধুমাত্র ফাইয়াজের প্লেট ছাড়া। ফাইয়াজ কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
--"সবাইকে দিলি আমাকে দিলি না কেন?"
--"নিজের খাবার নিজে নিয়ে খাও। বিয়ের পর তো তাই করতে হবে। তার থেকে ভালো না এখন থেকেই অভ্যাস করে নাও।"
এই বলে আনিতা ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই ওর ফুপ্পি ডেকে উঠে। আনিতা পিছন ফিরতেই ওর ফুপ্পি জিজ্ঞেস করে,
--"কোথায় যাচ্ছিস তুই? খেতে বোস বলছি।"
--"পেট ভরা ফুপ্পি খাবো না। আমি রুমে যাচ্ছি ঘুমোবো।"
--"শোন আনিতা__"
আনিতা আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে এ বাড়িতে ওর জন্য বরাদ্দ করা রুমে চলে গেলো। আনিতা যাওয়ার কিছুটা সময় বাদে অল্প কিছু খেয়ে আহিয়ানও খাবার ছেড়ে উঠে গেলো। পর পর দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তন্ময় মুখ টিপে হাসলো। দুজনের মাঝে যে মান অভিমান চলছে সেটা তন্ময় বেশ বুঝতে পারছে। আহিয়ানের আনিতাকে এড়িয়ে চলার বিষয়টা তন্ময় জানে। উল্টো দিকে আনিতার অভিমানী মুখটাও তন্ময়ের ভালো লাগছে না। ওর ইচ্ছে করছে আনিতাকে গিয়ে সবটা বলে দিতে। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে এসে যদি সবটা বলে দেয় তাহলে তো আর সারপ্রাইজ থাকলো না। তাই তন্ময় চুপ করে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
সাড়ে এগারোটা বাজে। আনিতার ঘুম আসছিলো না। তাই চুপিচুপি ছাদে চলে গেলো। আনিতাকে ছাদে যেতে দেখে তন্ময় আগেই ছাদের কারেন্ট অফ করে দিলো। আনিতা ছাদে গিয়ে লাইট অন করার জন্য সুইচ টিপ দিলো ঠিকই কিন্তু লাইট জ্বলে উঠলো না। ফোনটাও নিয়ে আসেনি আনিতা তাই বেশ রাগ হলো নিজের উপর। আনিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশে অর্ধেক চাঁদ উঠেছে। অর্ধেক চাঁদের আলোতেই চারিপাশ কিছুটা আলোকিত লাগছে। কেন যেন একটুও ভয় লাগছে আনিতার। ছাদের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। ওর বা দিকে পা বাড়াতে নিলেই মৃদু বাতাস এসে আনিতার শরীরে লাগতেই কিছুটা কেঁপে উঠলো। আনিতার হাতের ডান দিকে চোখ যেতেই দেখলো রেলিং ঘেঁষে একটা ছেলের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। চাঁদের হালকা আলোতে আনিতা স্পষ্ট বুঝতে পারলো অবয়বটা আহিয়ান ছাড়া অন্য কারো না। ধীর পায়ে এগিয়ে আনিতা আহিয়ানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান তখনো উলটো ঘুরে সিগারেট টানছে। ও বুঝতেই পারেনি ওর পিছনে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে। আনিতা গলা ঝেড়ে বলে,
--"বলছিলাম কি লাইটার হবে আপনার কাছে?"
আনিতার গলা পেয়ে আহিয়ান চমকে পিছন ফিরে তাকালো। আহিয়ান এই সময় আনিতাকে একদমই ছাদে আশা করেনি। আহিয়ান আমতা আমতা করে বলে,
--"তুমি? তুমি এসময় ছাদে কেন?"
--"সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি। যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দিন আপনি।"
--"কি?"
--"লাইটার হবে আপনার কাছে?"
--"লাইটার দিয়ে তুমি কি করবে?"
--"সিগারেটের টেস্ট কেমন সেটাই দেখবো।"
--"মানে?"
--"আপনার এত মানে বুঝতে হবে না। লাইটার আছে কিনা সেটা বলুন।"
--"নাহ নেই।"
--"স্মোক করছেন অথচ লাইটার নেই বলছেন? ওকে কোনো ব্যাপার না।"
কথাটা বলে আনিতা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। আহিয়ান অন্যদিকে ঘুরে আবার সিগারেট মুখে নিতে গেলেই আনিতা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। তারপর দাঁত কেলিয়ে বলে,
--"লাইটার লাগবে না। এটাতেই হবে।"
আনিতা সিগারেট মুখে দিতে গেলে আহিয়ান ওর হাত চেপে ধরে। আনিতার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে মাটিতে ছুড়ে পা দিয়ে পিষে ফেলে। আহিয়ান রেগে আনিতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
--"কি করতে যাচ্ছিলে কি তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার?"
--"হ্যাঁ মাথা তো ঠিকই আছে।"
--"স্মোক করবে না ইভেন সিগারেট ছুঁবেও না একদম তুমি।"
--"তাহলে আপনি স্মোক করছিলেন কেন?"
--"আমি স্মোক করবো বলে কি তোমাকেও করতে হবে নাকি?"
--"হ্যাঁ করবো।"
--"একদম না।"
--"তাহলে আপনিও আর স্মোক করবেন না। আপনি জানেন স্মোক করা আমি একদম পছন্দ করি না তারপরও আপনি আমার সামনে স্মোক করছেন। আপনার সাহস তো কম বড় না।"
--"আমার সাহসের কিছুই দেখোনি তুমি।"
--"দেখতে চাইও না। আপনি আগে বলুন আর স্মোক করবেন না।"
--"ভেবে বলবো।"
--"আচ্ছা সেটা পরে দেখছি। কলেজ থেকে ফেরার পর থেকেই আপনি এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন?"
--"আমার যেভাবে খুশি আমি সেভাবে চলবো।"
--"কিন্তু আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলতে পারেন না। কষ্ট হয় আমার এতে। আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারেন না আপনি।"
--"পারি সব করতে পারি আমি।"
--"আমাকে কাঁদাতেও পারেন?"
--"হ্যাঁ এটাও পারি।"
আহিয়ানের কথায় আনিতার চোখদুটো ছলছল করে উঠে। আহিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে টাইম দেখে নিলো একবার। তন্ময়কে একটা ম্যাসেজ সেন্ড করে আবারো ফোন পকেটে রাখলো। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে ওখান থেকে চলে আসতে নিলেই আহিয়ান আনিতার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। এক টান মেরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আনিতাকে। চোখের পলক ফেলতেই আনিতার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আহিয়ান এক হাতে আনিতার চোখের পানিটুকু মুছে নিয়ে অন্যহাত দিয়ে আনিতার কোমড় চেপে ধরলো।
--"হ্যাপি বার্থডে পিচ্ছি-পাখি। ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্ন অফ দ্যা ডে।"
আহিয়ান কথাটা বলার সাথে সাথেই ছাদের লাইটিং জ্বলে উঠলো। আনিতা চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আহিয়ানের দিকে আবার তাকায়। এই মূহুর্তে আনিতার চোখ-মুখে খুশির ঝিলিক। আহিয়ান আনিতাকে আর একটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
--"তোমাকে আমি কাঁদাতেও পারি আর হাসাতেও পারি। ভালোবাসি তোমাকে আমি। তোমাকে হাসানোর কাঁদানোর অধিকার শুধুমাত্র আমার। তোমার সাথে আমার যা ইচ্ছে করতে পারি আমি। আমিই হাসাবো আবার আমিই কাঁদাবো। আমিই রাগ করবো আবার আমিই তোমার রাগ অভিমান সব ভাঙাবো। আমিই তোমার সাথে ঝগড়া করবো তোমাকে বকাঝকা করবো আর সারাজীবন আমিই তোমাকে ভালোবাসবো। আর আমিই আদর করবো তোমাকে।"
শেষ কথাটা আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। আহিয়ানের শেষ কথায় আনিতা কেঁপে উঠে কিছুটা। হুট করেই আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকায় আনিতা। আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]