Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য | পর্ব_১৩ (ধামাকা পর্ব) | bangla love story pdf

 


শুধু তোমারই জন্য 

পর্ব_১৩ (ধামাকা পর্ব)

Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য | পর্ব_১৩ (ধামাকা পর্ব) | bangla love story pdf
Bangla Golpo - শুধু তোমারই জন্য | পর্ব_১৩ (ধামাকা পর্ব) | bangla love story pdf


কেটে যায় আরো কয়েকটা দিন। আদৃতের ফোন এখনো বন্ধ। না অনলাইনে এসেছে আর না নাম্বার অন করেছে। আনিতাও আর চেষ্টা করেনি রাতুল বা আরহানের মাধ্যমে আদৃতের সাথে কথা বলার। সারাদিন খুব ভালোভাবেই কাটায় সবার সাথে। কিন্তু দিনশেষে রাতে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। ধরে রাখতে পারে না নিজের চোখের পানিগুলো। 


আদৃতের জন্য কিনে রাখা গিফটগুলো কলেজ ব্যাগ থেকে বের করলো আনিতা। আদৃতের জন্য একটা পাঞ্জাবিও কিনতে চেয়েছিলো সাথে কিন্তু মাপ না জানায় কিনতে পারেনি। এ ক'দিন গিফটগুলো ওর কলেজ ব্যাগেই ছিলো। বের করেনি আর। আজকে বের করলো আলমারি তে তুলে রাখার জন্য। এভাবে তো আর সবসময় কলেজ ব্যাগে নিয়ে ঘুরা যায় না। যেই ভাবা সেই কাজ শপিং ব্যাগটা নিয়ে আনিতা আলমারি তে তুলে রাখলো। 


আলমারি আটকানোর সময় হঠাৎ করেই আহিয়ানের দেওয়া সেই ব্যাগটা চোখে পড়ে আনিতার। এতদিনেও সেটা একবারের জন্যও খুলে দেখেনি ও। সেদিন ছাদ থেকে নেমেই আলমারিতে তুলে রেখেছিলো আনিতা। খোলার প্রয়োজন মনে করেনি আর। হাত দিয়ে ব্যাগটা ছুঁয়ে দিলো আনিতা। হুট করেই ব্যাগের ভিতর কি আছে তা জানার জন্য বেশ কৌতূহল জাগলো আনিতার মনে। ব্যাগটা বের করে আনিতা আলমারি আটকে দিলো।


আজকে আনিতা কলেজ যায়নি। ঠিক করেছে ক'দিন কলেজ যাবে না ও। এসময় কেউ আসবে না। অনিমা স্কুলে আর আম্মুও রান্না করছে। তবুও আনিতা দরজা লাগিয়ে নিবে ভাবলো। বলা তো যায়না কখন কে চলে আসে। শপিং ব্যাগটা বিছানায় রেগে দরজা আটকে দিলো আনিতা। এবার দেখা যাক এই ব্যাগে কি আছে।


আনিতা ব্যাগটা খুলে দেখে তাতে, সিলভার কালারের দু জোড়া ঝুমকো আর দু মুঠো চুড়ি, আর সাথে খুবই সিম্পল একটা ব্রেসলেট আছে। ব্রেসলেট খুব সিম্পল হলেও ডিজাইনটা একদম ইউনিক। খুবই সুন্দর। ব্রেসলেটটা আনিতার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো আহিয়ান হঠাৎ এসব কেন দিলো ওকে? 


আমি যে উনার সাথে সত্যি কালকে থাকবো এটা তো উনি নিশ্চিত ছিলো না। তাহলে এগুলো কখন কিনলো? তবে কি আগে থেকেই কিনে রেখেছিলো? কিন্তু আমার জন্য আহিয়ান এসব কেন কিনবে? তবে কি অন্য কারো জন্য কিনে রেখেছিলো? কিন্তু অন্যের জন্য কিনে রাখা জিনিস আমাকে কেন দিবে? উফস ভাবতে পারছি না আর। এসব ভেবে আনিতা দু হাতে মাথা চেপে ধরলো। 


হাটুতে দু হাত রেখে তাতে মাথা রাখলো আনিতা। একমনে ভেবে চলেছে সব কিছু। আহিয়ানের প্রথম এখানে আসা। আদৃতের ওর সাথে পরিচয়। অবাক করা বিষয় হলো দুজনের সাথে ওর একই দিনে পরিচয় হয়েছে। আর মাঝে মাঝে আহিয়ানকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগে আনিতার কাছে। আর হুট করেই আহিয়ান চলে আসলো কালকে। ফাইয়াজ তো গ্রামে আসার আগে সবসময় জানায় আনিতাকে তবে এবার কেন জানালো না? আসার আগেরদিনও তো আনিতার ফাইয়াজ তন্ময় দুজনের সাথেই কথা হয়েছে এরা তো কিছুই বলল না। কাল তো আদৃতের আসার কথা ছিলো। কিন্তু হঠাৎই ফোন দিয়ে বলে জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে আসতে পারবে না। কাল তো আনিতা আর আদৃতের সম্পর্কের এক বছর হলো৷ কিন্তু আহিয়ান কালকে কিসের ওয়ান ইয়ার সেলিব্রেশন করলো? তাও আবার আনিতার সাথেই৷ সে চাইলে তো অন্য কারো সাথেও সেলিব্রেশন করতে পারতো। তাহলে আনিতার সাথেই কেন? তবে কি আদৃত আর আহিয়ান দুজনে একই মানুষ? 


পরক্ষণেই এসব উদ্ভট চিন্তাধারার কথা ভেবে আপন মনেই হাসলো আনিতা। আদৃত আর আহিয়ান দুজনে কেন একই মানুষ হতে যাবে? দুজনেই আলাদা আলাদা মানুষ।


আহিয়ানের দেওয়া গিফটগুলো আবার তুলে রাখলো আলমারিতে। আর মনে মনে ভাবলো পরে একসময় আহিয়ানকে জিজ্ঞেস করে নিবে এসব কি শুধুই কাল রাতে ওর সাথে ছিলো বলে? নাকি এর পিছনে অন্য কোনো কারন আছে। 


অনেকটা সময় যাবত দরজায় কড়া নারার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আনিতার। আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দুইটা সাইত্রিশ বাজে। বিছানা থেকে নেমে চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলতেই দেখে অনিমা দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা দরজা খুলতেই অনিমা রুমে ঢুকে পড়লো। আনিতাও হাই তুলতে তুলতে কাবার্ড থেকে জামা বের করে গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে গেলো। 


বেশ ক্ষানিকটা বাদে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হয়ে এলো আনিতা। এখন আর ছাদে উঠতে ইচ্ছে করলো না তাই বারান্দায়ই ভেজা কাপর গুলো শুকানোর জন্য মেলে দিলো। চুল থেকে আর টাওয়াল খুলল না আনিতা ওভাবেই ডাইনিংয়ে চলে গেলো খাওয়ার জন্য। খাবার খেয়ে আবারো রুমে চলে এলো আনিতা। 


কানে ইয়ারফোন গুজে "এই অবেলায়" গানটা শুনছিলো আনিতা। হুট করেই আনিতার স্মৃতিচারণে আদৃত ধরা দিলো। আদৃতের কথা মনে হতেই চোখ খুলে ফেলল আনিতা। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আনিতা। আদৃতের কথা হাসি আদৃতের বলা ভালোবাসি এমন কি প্রত্যেকটা কথা একে একে মনে হতে লাগলো আনিতার৷ চোখ আবারো জলে ভরে উঠছে। কিন্তু আনিতা খুব করে চাইছে চোখের পানিগুলো যাতে বের না হয়। 


যে মানুষটা এভাবে হুট করে ওর লাইফ থেকে কোনো কারন ছাড়াই হারিয়ে যেতে পারে তার জন্য ও আর কান্না করবে না। আজ নয় দিন হলো আদৃতের সাথে আনিতার কথা হয় না। এর মাঝে একবারো আদৃত ফোন অন করেনি আর অনলাইনেও আসেনি। আরহান আর রাতুলের সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিলো আনিতার। আদৃতের খোঁজ ঠিকই ওদের থেকে নিয়েছে আনিতা। কিন্তু একবারের জন্যও বলেনি আদৃতকে ওর সাথে কথা বলতে। আনিতা আর চায় না আদৃত জোরপূর্বক ওর সাথে কোনো সম্পর্কে থাকুক। তাই তো সব পাগলামি করা ছেড়ে দিয়েছে এখন আনিতা। কিন্তু পাগলামি ছেড়ে দিলেও কি আর ভুলা যায়? ভুলে থাকা যায় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে? 


যে মানুষটার কাছে আনিতার কোনো মূল্য নেই সেই মানুষটার জন্য আর কাঁদবে না ও। আর ফিরিয়ে আনতে চাইবে না নিজের লাইফে। এতদিনে আনিতার বোঝা হয়ে গিয়েছে আদৃত যদি সত্যি ওকে ভালোবাসতো তাহলে এভাবে অন্তত ওকে কষ্ট দিতে পারতো না। একবারের জন্য হলেও ওর খোঁজ নিতো। ওর সাথে এতদিন কথা না বলে কিছুতেই থাকতে পারতো না। 


"কিন্তু আমার কি দোষ ছিলো? আমি তো আদৃতকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম। ওর সবটা মেনে ওকে ভালোবাসতাম। ওর সব অবহেলা ইগনোর ওর দেওয়া মানসিক যন্ত্রণা সব সবটা সহ্য করেও শুধু ওকেই ভালোবেসেছিলাম। সেই ভালোবাসার প্রতিদান ও এভাবে দিলো?"


নিজের মনেই কথাগুলো বলে চোখ আবারো বন্ধ করে নিলো আনিতা। সাথে সাথেই চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আনিতা আর ভাবতে পারছে না কিছু। সবকিছু কেমন যেন অসহ্য লাগছে ওর কাছে। দিনে দিনে কেমন যেন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে ও। কিছুই ভালো লাগছে না , কারো ভালো কথাটা অব্দি সহ্য হচ্ছে না ওর। অল্পতেই রিয়্যাক্ট করে ফেলছে। এভাবে তো চলতে পারে না। এসব থেকে ওর বের হতে হবে। নিজেকে আরো শক্ত করে তুলতে হবে ওর। আর কিছুতেই ভেঙে পড়বে না ও। মনে মনে এসব ভেবে চোখের কোনের পানিটা মুছে নিলো আনিতা। ফোন হাতে নিয়ে গান বন্ধ করে দিয়ে ইয়ারফোন খুলে বালিশের পাশে রাখলো। তারপর পা বাড়ালো ছাদের দিকে।


----


ফাইয়াজ ছাদে দাঁড়িয়ে তাসকিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছিলো। ফাইয়াজের কোনো বন্ধুকেই দেখা যাচ্ছে না এখানে৷ হুট করেই ফাইয়াজের চোখ আনিতার দিকে গেলো। আনিতা রেলিং ধরে একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আনিতাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাসকিয়াকে বাই বলে ফোন রেখে দিলো ফাইয়াজ। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে ওদের ছাদ থেকে লাফিয়ে আনিতাদের ছাদে আসলো ফাইয়াজ। 


আনিতা এখনো একমনে সামনের মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে ছোট ছোট বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে। আর বাচ্চাদের সাথে সেখানে আহিয়ানও খেলছে। মাঠের এক সাইডে তন্ময় আদনান আরহান বসে আছে। ফাইয়াজ আনিতার কাঁধে হাত রাখতেই আনিতা পাশ ফিরে তাকালো। ফাইয়াজ বলে,


--"এখান একা একা দাঁড়িয়ে আছিস যে?"


--"এমনি ভালো লাগছিলো না। তাই ছাদে এলাম।"


--"আনি বুড়ির কি মন খারাপ?"


--"নাহ ভাইয়া। তোমার বন্ধুরা তো ওই মাঠে আছে তুমি ছাদে একা কি করছো?"


--"কি আর করমু বল? তোর বান্ধুবীর সাথে কথা বলছিলাম।"


--"ওহ আচ্ছা।"


এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে থাকে দুজনে। তাসকিয়া যেমন ফাইয়াজকে পাগলের মতো ভালোবাসে তেমনি ফাইয়াজও। ওদের দুজনের ভালোবাসাটা আনিতার কাছে খুব ভালো লাগে। আনিতা আবারো মাঠের দিকে তাকালো। আহিয়ান এখনো বাচ্চাদের সাথে খেলছে। হঠাৎ করেই আনিতা মুচকি হাসে ওদিকে তাকিয়ে। তা দেখে ফাইয়াজ বলে,


--"কিরে বুড়ি ওদিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছিস কেন?"


--"তোমার বন্ধুকে দেখো বাচ্চাদের সাথে কিভাবে খেলছে।"


--"আহিয়ান বরাবরই এমন।"


আনিতা কিছু বলবে তার আগেই ফাইয়াজের ফোন বেজে উঠে। আনিতা ভেবেছিলো তাসকিয়ার ফোন তাই ও কেড়ে নিলো। কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ানের ফোন। তাই ফোনটা আবার ফাইয়াজের হাত দিয়ে বলল,


--"লাউডে দিয়ে কথা বলো তো।"


ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,


--"কেন?"


--"এমনি তন্ময় ভাইয়া কথা তো অনেকবার শুনেছি। কিন্তু আহিয়ান ভাইয়া তো কখনো কথা বলেনি আমার সাথে। তাই তার ভয়েসটা শুনতে চাইছিলাম আর কি। দেখতাম আর কি এত মেয়েরা তোমার বন্ধুর কি দেখে প্রেমে পড়ে? "


ফাইয়াজ হেসে দিলো আনিতার কথা শুনে। ততক্ষণে ফোন কেটে গিয়েছে। ফাইয়াজ হেসেই আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করলো। আহিয়ান ফোন রিসিভ করতেই ফাইয়াজ লাউডে দিয়ে কথা বলতে শুরু করলো।


আহিয়ানের কন্ঠ শুনে আনিতা চমকে উঠলো। অবিকল আদৃতের মতো ভয়েস। তবে কি আহিয়ানই আদৃত? হঠাৎই আনিতার সকালের কথা মনে পড়ে যায়। সকালেও একবার আনিতা ভেবেছিলো আদৃত আর আহিয়ান একই মানুষ। আহিয়ানের বিহেভিয়ার গুলো এবারে একটু অন্যরকম লাগছে। আনিতা ভাবতে পারছিলো না আর কিছু। হাত পা অসার হয়ে আসছিলো ওর। আচ্ছা আহিয়ানের ফুল নেম কি? ফাইয়াজ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো একবার? মনে মনে এসব ভাবছে আনিতা। তারপর একপ্রকার ঘোরের মাঝেই জিজ্ঞেস করে


--"আচ্ছা ভাইয়া তোমার বন্ধুদের ফুল নেইম কি?" 


ফাইয়াজ ফোন পকেটে রেখে দিলো। আনিতার প্রশ্নে কপাল কুঁচকে তাকালো একবার ওর দিকে। তারপর আবার বলল,


--"কেন বল তো?"


--"না এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি।"


--"তন্ময় এর ফুল নেম তো জানিসই। আর আরহানের ফুল নেম তো আরহান নিজেই সেদিন বলল তোকে। বাকি রইল আহিয়ান আর আদনান।"


--"হুম। আদনান আর আহিয়ান ভাইয়ার ফুল নেম কি?"


--"আহিয়ান আদৃত আর রাতুল আদনান।"


চমকে তাকালো আনিতা। তারমানে ওর ভাবনাটাই সত্যি? আহিয়ান আর আদৃত কেউই আলাদা আলাদা মানুষ নন? দুজনেই এক? রাতুল আরহান সবাই ওকে মিথ্যে বলল? সব থেকে বড় কথা আদৃত মিথ্যে বলল ওকে? আর তন্ময় ভাইয়া? তন্ময় ভাইয়াকে তো নিজের ভাই ভেবেছিলাম। সেই ভাইও এভাবে মিথ্যে বলল? এভাবে ঠকালো সবাই মিলে? আনিতার ভালোবাসা, বিশ্বাস সব এভাবে ভেঙে চুরমার করে দিলো আদৃত? আনিতা আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। কিচ্ছু না। মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণা করছে। 


তখনই আনিতাদের ছাদে আসলো আহিয়ান ওরা। আনিতা টলমলে চোখে একবার তাকালো আহিয়ানের দিকে। আনিতার এমন চাহনি দেখে আহিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো আহিয়ান। আনিতা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। 


সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো। একমাত্র আনিতাই চুপচাপ সবটা শুনে যাচ্ছিলো। ফাইয়াজের ফোন বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখে তাসকিয়ার ফোন। তাই ফাইয়াজ আনিতাদের ছাদ থেকে নিজেদের ছাদে চলে গেলো ফোন রিসিভ করে। তন্ময় আরহান আদনান উফস সরি আদনান না রাতুল ওরা তিনজনে কথা বলছে। আহিয়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে আনিতার দিকে তাকাচ্ছে।


বেশ কিছুটা সময় চুপ থাকার পর আনিতা আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আহিয়ান চোখ তুলে তাকায় একবার আনিতার দিকে। আনিতার চোখদুটো কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,


--"কেন এমনটা করলেন আপনি আমার সাথে?"


অবাক চোখে তাকায় আহিয়ান। আনিতার কথা শুনে তন্ময় রাতুল আরহান ওরাও কথা থামিয়ে অবাক চোখে তাকায় আহিয়ান আর আনিতার দিকে। আহিয়ান কিছুটা অবাক হয়েই বলে,


--"মানে? কি করলাম আমি? তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না আমি।"


আহিয়ানের কথা শুনে চোখে একরাশ রাগ নিয়ে তাকায় আনিতা ওর দিকে। তারপর হুট করেই আহিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে কিছুটা চিৎকার করেই আনিতা বলে,


--"বুঝতে পারছেন না? নাকি বুঝতে চাইছেন মিস্টার আহিয়ান আদৃত?"


আনিতার মুখে আদৃত নামটা শুনে চমকে তাকায় আহিয়ান। সাথে ওরা তিনজনও চমকে যায়। আহিয়ান ভাবছে কি করে জানলো আনিতা এটা? ওর তো জানার কথা নয়। তাহলে আনিতা এসব বলছে কিভাবে? আহিয়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে আনিতা আবারো চিৎকার করে বলে,


--"কি হলো? উত্তর দিন বলছি। কেন এমনটা করলেন আপনি আমার সাথে? কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার? কেন এভাবে আমার লাইফটা শেষ করে দিলেন আপনি?"


..........


--"সেদিন মজা করেই রাইসার সামনে ওমন বিহেভিয়ার করেছিলাম বলে? সেদিন আমার জন্য রাইসার সাথে আপনার সব সম্পর্ক শেষ হয়েছিলো বলে এমনটা করলেন আপনি? তার শোধ আপনি এভাবে তুললেন?"


--"আনি তুমি ভুল বুঝছো___"


--"খবরদার বলছি একদম ওই নামে ডাকবেন না আপনি আমাকে। আমাকে ওই নামে ডাকার কোনো অধিকার নেই আপনার।"


--"আমার কথাটা শুনো তুমি যা ভাবছো তা ঠিক নয়।"


--"কি শোনার বাকি রেখেছেন আপনি? অস্বীকার করতে পারবেন আপনি আমার সাথে খেলেন নি? অস্বীকার করতে পারবেন আপনি আমার সরলতার সুযোগ নেননি? অস্বীকার করতে পারবেন আপনি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেননি?"


আনিতার কথায় চুপ করে রইল আহিয়ান। সাথে ওর বন্ধুরাও। আহিয়ান ভাবেনি এভাবে সবটা আনিতার সামনে এসে যাবে। ও ভেবেছিলো নিজে আর কিছুটা সময় নিয়ে সবটা জানাবে আনিতাকে। কিন্তু তার আগেই আনিতা সবটা জেনে গেলো। আহিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে আনিতা আবারো চিৎকার করে বলে,


--"বলুন অস্বীকার করতে পারবেন আপনি?"


--"আ্ আমি স্বীকার করছি যা করেছি ভ্ ভুল করেছি। ত্ তোমার বি্ বিশ্বাস ভেঙেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো রাইসার জন্য তোমার উপর থেকে কোনো শোধ নেইনি আমি। ভালোবাসি না আমি রাইসাকে। ইভেন তখন কাউকেই ভালোবাসতাম না আমি।"


--"হ্যাঁ জানি তো আপনি কাউকে ভালোবাসেন না। কিন্তু আমার সাথেই কেন এমন করলেন? আমি তো কোনো ক্ষতি করিনি আপনার। তাহলে কেন আমার ভালোবাসা নিয়ে খেললেন আপনি?"


--"তো্ তোমার ভালোবাসা নিয়ে আমি খেলিনি আনি। আ্ আমিও ভা্ ভালোবেসে ফেলেছি তো্ তোমাকে।"


--"চুপ একদম চুপ। অনেক মিথ্যে তো বলেছেন আর কতো? আর একটা মিথ্যেও আমি আপনার থেকে শুনতে চাই না।"


--"আমি মিথ্যে বলছি না আনিতা।"


--"আই হেইট ইউ। আই রিয়েলি হেইট ইউ। ঘেন্না করি আমি আপনাকে বুঝতে পেরেছেন?"


এই বলে আনিতা আহিয়ানের থেকে সরে দাঁড়ালো। পেছাতে পেছাতে একসময় ছাদের রেলিঙের সাথে আটকে গেলো আনিতা। পরে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ও। তন্ময় কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,


--"আনিতা সাবধানে পরে যাবে তো।"


তন্ময়ের কথাতেও হাসলো আনিতা। একপা দুপা করে এগিয়ে গেলো তন্ময় আরহান রাতুল ওদের সামনে। তারপর কিছুটা চিৎকার করেই বলে,


--"মিথ্যেবাদী। আপনারা সবাই মিথ্যেবাদী। সব্বাই মিলে ঠকিয়েছেন আমাকে।"


মাথা নিচু করে নিলো ওরা। এই মেয়েটার সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো কোনো কাজ ওরা করেনি। ওরা সকলেই জানতো আনিতা আহিয়ানকে কতটা ভালোবাসে। তারপরও ওরা সবটা লুকিয়ে গিয়েছে আনিতার থেকে। সত্যিটা জানায়নি ওকে। আনিতার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস হচ্ছে না ওদের।


আনিতা তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। তন্ময় মুখ তুলে তাকালো আনিতার দিকে। অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আনিতা। তন্ময়ের চোখে অপরাধবোধ স্পষ্ট। আনিতা ছলছলে চোখে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে,


--"তুমিও মিথ্যে বললে আমাকে তন্ময় ভাইয়া? আমার নিজের ভাই নেই তোমাকে আমি নিজের ভাইয়ের জায়গাটা দিয়েছিলাম। তুমিও তো আমাকে বোনই ভাবতে তাই না? তাহলে কি করে পারলে বোনকে এভাবে ঠকাতে?"


তন্ময় কিছু বলল না। কি ই বা বলার থাকতে পারে ওর? আনিতা হাসলো ক্ষানিকটা। আনিতা একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো। তারপর তন্ময়কে বলে,


--"রাতুল আরহান ওদের কথা বাদ দিলাম। আহিয়ান তার কথা আর কি বলবো বলো? তার তো কাজই এটা। মেয়েদের ইমোশনস নিয়ে খেলা করা। এটা করতেই সে ভালোবাসে। তাকে ভালোবেসে মেয়েরা যে কাঁদে তার জন্য পাগলামি করে তার একটু ভালোবাসা পাবার জন্য মেয়েরা তার কাছে হাতজোর করে আকুতি মিনতি করে এসব তোমার বন্ধু উপভোগ করে। সেজন্যই তো এসব করে বেরায়। কিন্তু তুমি? তুমি তো আমাকে নিজের বোন বলেছিলে তুমি কিভাবে আমাকে একটা বছর যাবত এভাবে ঠকালে? এসব করতে বিবেকে বাধেনি তোমাদের একবারের জন্যও?"


চোখ তুলে তাকালো আহিয়ান। এগিয়ে আসছিলো আনিতার দিকে। আহিয়ান কিছু বলতে যাচ্ছিলো আনিতাকে। কিন্তু তন্ময় চোখ দিয়ে ইশারা করে না বলে। আহিয়ানও থেমে যায় সেখানেই। আর কিছুই বলে না। তন্ময় আনিতাকে বলে,


--"আগে আহিয়ান এমন ছিলো আমি মানছি সেটা আনিতা। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর ও আর একাধিক সম্পর্কে জড়ায়নি। সবাইকে ছেড়ে দিয়েছিলো সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলো। শুধুমাত্র তোমার জন্য। #শুধু_তোমারই_জন্য আহিয়ান নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে নিয়েছে।"


--"অনেক হয়েছে ভাইয়া। আর নিজের বন্ধুর হয়ে সাফাই গাইতে হবে না।"


--"সাফাই গাইছি না আনিতা। মানলাম আমাদের সকলের ভুল হয়েছে। অন্যায় করেছি আমরা। কিন্তু তোমার প্রতি আহিয়ানের ভালোবাসাটা মিথ্যে নয় আনিতা। ও সত্যি____"


--"আর কিছু শুনতে চাইছি না আমি। প্লিজ এই বিষয়ে আর কিছু বলো না আমাকে।"


এই বলে আনিতা আবার আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। আহিয়ানের চোখে স্পষ্ট অসহায়ত্বের ছাপ। আনিতা চোখের পানিটা মুছে নিয়ে মলিন হেসে বলে,


--"আজকের পর থেকে আদৃত যে আনিতা কে জানতো সেই আনিতা মরে গিয়েছে। মরে গিয়েছে আদৃতের পিচ্চি পাখি। মরে গিয়েছে।"


এই বলে আনিতা দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। আহিয়ান বেশ কয়েকবার ডেকেছে আনিতাকে। কিন্তু আর শুনেনি এমনকি পিছু ফিরেও তাকায়নি। তন্ময় এসে আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই আহিয়ান বলে,


--"ভুল বুঝলো ও আমাকে। বিশ্বাস কর রাইসার সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার জন্য আমি ওর সাথে এমনটা করিনি। আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। ওর মন নিয়ে ভালোবাসা নিয়ে খেলিনি আমি।"


--"আমি জানি আহিয়ান। আমাকে বলতে হবে না এসব।"


--"শুরুতে আমার পরিচয় লুকিয়েছিলাম আমি। কারন আমি কখনো ভাবিনি এভাবে ওকে ভালোবেসে ফেলবো। আমি জাস্ট ফ্রেন্ডলি কথা বলতে চাইছিলাম ওর সাথে। আর আনিতা সেসময় আমাকে মানে আহিয়ানকে একদমই পছন্দ করতো না। তাই আদৃত হয়েই কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর যদি জানতাম এমন একটা পরিস্থিতি চলে আসবে। এমন একটা সময় চলে আসবে যে ওকে আমি ভালোবেসে ফেলবো তাহলে কখনোই ওকে শুরুতে মিথ্যেটা বলতাম না আমি।"


--"বুঝেছি ইয়ার। এখন এসব কথা রেখে ভাব কি করে ওর রাগ ভাঙাবি। আমার বোনটা কিন্তু খুব রেগে গিয়েছে। কষ্টও পেয়েছে খুব।"


তন্ময় এর কথায় আরহান রাতুল দুজনেই সহমত প্রকাশ করে। আর এটাও জানায় যে আনিতা তো ভালোবাসে ওকে তাই বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। ওদের কথায় আহিয়ান বলে,


--"ওর রাগ তো ভাঙাবোই আমি। আনিতা ছাড়া যে আমার একদমই চলবে না। তাই যতদিন না ওর রাগ ভাঙাতে পারছি ততদিন এখান থেকে কোত্থাও যাচ্ছি না।"

চলবে।


[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। আজ অনেক বড় করে দিয়েছি। আমি আপনাদের খুশি করলাম আপনারা আমায় খুশি করুন গঠনমূলক মন্তব্য করে। হ্যাপি রিডিং🥰 ]


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.