পুতুল বউ গল্প - পর্ব ৮ - bangla choti golpo - bangla golpo pdf

 পুতুল বউ

পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৮ - bangla choti golpo - bangla golpo pdf
পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৮ - bangla choti golpo - bangla golpo pdf 

                     ★★(পর্ব - ৮)★★

.তুই এমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো??....কিছুটা চটে গিয়ে আবির কে জিজ্ঞাস করলো রিফা।

রিফার ধমক শুনে আবির হাসিটা থামিয়ে রিফার দিকে তাকাতেই রিফার এতো সিরিয়াস এক্সপ্রেশন দেখে আবার জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।

.

রিফার সাথে আবির অনেকটাই ফ্রি আর ওরা বয়সেও তেমন ছোট বড় নয়।

আবির এবার হাসি থামিয়ে একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব খুলে বলল এমন কি আজ মার্কেটে ঘটে যাওয়া সব ও।

.

সব কথা শুনে রিফা তো পুরা থ হয়ে গেলো।

একটা মেয়ে এতটা লজ্জাবতী হয় কি করে???

আর এতো কম কথা বলে থাকে ই বা কি করে??

হ্যা লজ্জা নারীর ভূষণ। তাই বলে এতোটা লজ্জা??

হুম....কিছু একটা তো করতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতেই আবির বলে উঠলো -- আপা তোমার সাথে আরেকটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করার ছিলো।

-- হুম বল কি বলবি শুনছি তো.....

আসলে ভাবছিলাম মিষ্টি কে যদি আবার স্কুলে ভর্তি করানো হয় তো কেমন হয়??

ওর তো বয়স অনেক কম আর এখনো ssc পাশ টা ও করে নি।

আমি প্রায়ই দেখি ও রুমে বসে কাপড়ে সুই সুতো দিয়ে কিসের জেনো নকশা করে রান্নাবান্না ও ভালো ই পারে সব কাজ ই খুব আগ্রহ সহকারে করে।

এতোদিনে যা বুঝলাম এই মেয়েকে বাবার বাড়ি থেকে সব বিষয়ে পি এইচ ডি করিয়ে ই পাঠিয়েছে শুধু লেখাপড়া টা ই বাদ দেওয়া হয়েছে।

রিফা আবিরএর কথা গুলো মনোযগ দিয়ে এতক্ষন শুনলো তারপর বলল হুম বুদ্ধিটা খারাপ না কিন্তু মা কি এতে রাজি হবে???

মা তো শহরের মর্ডান মেয়েকে ঘরের বউ ই করবেনা আর এখন মিষ্টিকে বাড়ির বাইরে যেতে দিবে... তাও আবার স্কুলে পড়তে??

আরে এর জন্য ই তো তোমাকে বলছি ---আপা তুমি মাকে ম্যানেজ করো না প্লিজ""""

ওকে ওকে দেখছি কি করা যায়,  আর মিষ্টি কে এখন থেকে ঠিক করানোর দায়িত্ব আমি নিলাম।

দেখ তোর বউকে কিভাবে পাল্টে দেই।

এখন চল মায়ের রুমে মিষ্টি স্কুলের বিষয় টা নিয়ে কথা বলে আসি।

-- ইইইইইই না না আমি যাব না।

আমাকে দেখলেই মা বুঝে যাবে এই বুদ্ধিটা আমার।

-- হুম তো কি হয়েছে মা বুঝলে বুঝবে..... কথা তো বলতেই হবে আর যদি মা বেশী রেগে যায় তো ভয় পাচ্ছিস কেনো আমি তো আছিই, তোকে রেখে জোড়ে দৌড় দিবো।

তারপর তুই পিছে পিছে আর আমি আগে আগে... এমন হাসিঠাট্টা করতে করতেই ওরা মায়ের রুমে চলে গেলো।

দেখে মা রুমে গিয়ে পান খাচ্ছে।

কিরে আয় বোস ----- তোরা দুইজন একসাথে কি মনে করে???

কার কি লাগবে আর কে কার ওকালতি করতে এসেছিস???

ইয়ে মানে আসলে মা  আমি আর আবির ভাবছিলাম যে মিষ্টি কে এখানে একটা স্কুলে ভর্তি করালে কেমন হয়??

আমার ভাই এতো শিক্ষিত আর ওর বউ হাই স্কুলের সীমানা ই এখনো অতিক্রম করে নি।

বাইরে গেলে ভালো করে মানুষের সাথে মিশে কথা ও বলতে পারবে না .... আবির এর সাথে কি এমন মেয়ে মানায়...তুমি ই বলো মা????

.

মা সে কথায় কিছু না বলে বলতে লাগলো টেবিলে খাবার দিচ্ছি তোরা খেতে আয়।

মায়ের হয়তো কথাটা ভালো লাগেনি।

মা উঠে যেতে চাইলেই আবির মায়ের হাতটা ধরে বলল আরে মা কই যাও কথাটা তো শুনো....

মা কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল কি শুনবো হা......... বলছি শুনবো টা কি??

বাড়ির বউ স্কুলে গেলে সোসাইটি তে মানসম্মান থাকবে???

আশেপাশের লোকজন কি বলবে??

আবির বলল --- মা আমি বুঝি না তুমি মাঝে মাঝে এমন বোকার মতো কথা কেনো বলো??

মিষ্টি যখন সবার সাথে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না তখন কি সেইটা ভালো হবে,তখন কি সোসাইটি মিষ্টিকে খুব সম্মান করবে???

মিষ্টি কি সারাজীবনই এমন ক্ষেত হয়ে থাকবে??

আর শিক্ষিত মর্ডান মানেই তো খারাপ না।

বরং  সমাজে এক  ধরনের মানুষ আছে যারা কিছু না বুঝে যেখানে সেখানে আহাম্মকের মতো কথা বলে ফেলে,শুধুমাত্র শিক্ষার অভাবে।

আরেকটু লেখাপড়া করলে ও দুনিয়াটা চিনবে বাস্তবতা বুঝবে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখবে।

আর তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে।

মিষ্টি খুব ভালো মেয়ে ওকে নিজের মনের মতো বানিয়ে নেওয়া যাবে।

সারাদিন দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে হাতের কাজ করলেই তো হবে না.......... প্লিজ মা তুমি আর না করো না।

মা হয়তো ব্যাপারটা বুঝেছে আর তাই মিষ্টিকে স্কুলে ভর্তির পারমিশন দিল।

তারপর সবাই একসাথে খেতে গেলো।

খাওয়া শেষে রিফা মিষ্টিকে বলল মিষ্টি তুমি একটু আমার সাথে রুমে এসো তোমার সাথে কথা আছে।

মিষ্টি ও তাই ই করলো।

রুমে যাওয়ার পর মিষ্টিকে কাছে বসিয়ে রিফা বলল ---- মিষ্টি আমার ভাইটাকে তোমার কেমন লাগে????

এরকম প্রশ্নের উত্তর কি হবে মিষ্টি ভেবে পাচ্ছিলো না।

রিফা উত্তর না পেয়ে বলল এভাবে চুপ করে কেনো থাকো তুমি??

কেনো এতো ভয় পাও??

এখন আমরাই তোমার পরিবার।

তোমার ভালো লাগা মন্দ লাগা সব আমাদের সাথে শেয়ার করবে।

আর যে কথা কারো সাথে বলতে পারবেনা বলে মনে হয় সে কথা টা ও আবিরএর সাথে শেয়ার করবে।স্বামী হচ্ছে স্ত্রীর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে আর কিভাবে চলতে হয় সবার সাথে কথা বলতে হয় এসব নিয়ে আপা ওকে অনেক কিছুই বোঝালো।

আর মিষ্টি শুধু ঘার নেড়ে নেড়ে সব কথায়ই সম্মতি জানালো।

তারপর মিষ্টি ওর রুমে চলে এলো।এসেই আবিরএর সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো।

তাই দু চোখে কাজল দিল।

আবির এতোক্ষন বাইরে গিয়েছিলো এখন রুমে এসেই দেখলো মিষ্টি বিছানায় বসে কাপড়ে ফুল তুলছে।

দরজার সামনে দাড়িয়ে আবির দেখছে মিষ্টি কে।

কাজের ফাকে মিষ্টির ঘোমটা যে কখন মাথা থেকে পরে গেছে সে দিকে খেয়াল নেই ওর।

চুলের খোপাটা ও খুলে ঘন লম্বা চুল গুলো ওর পুরো পিঠ দখল করে নিয়েছে।মিষ্টির চোখে লাগানো কাজল টা ও চোখ এড়ালোনা ওর।

সুই থেকে সুতা টান দেওয়ার সময় হাতের চুড়ি গুলোর ঝিনঝিন শব্দে পুরো ঘর মুখোরিত হয়ে উঠছে। এ সুন্দর্যের তুলনা দেওয়ার মতো কিছুই সে খুজে পাচ্ছে না। শুধু এ সৌন্দর্যে মাতাল হতে ইচ্ছে করছে আবির।

কিছু সময় পর মিষ্টি টের পেলো যে আবির ঘরে ফিরেছে তাই মিষ্টি তার ঘোমটা টা টেনেটুনে ঠিক করে বসলো।

.

আবির পাশে গিয়ে বসে বলল -- মিষ্টি কাল সকালে রেডী হয়ে থেকো আমরা কালকে  স্কুলে যাবো তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাতে।

মিষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর মাথা নিচু করে বসে রইলো।

.

কিছুক্ষন পর ফোঁপানির আওয়াজ শুনে আবির তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি কাঁদছে।

আশ্চর্য হয়ে আবির জিজ্ঞাস করলো ---- সে কি........তুমি কাঁদছ কেনো???

চোখের পানিতে ওর দু চোখের কাজল গলে গলে পরছে।

মিষ্টি কিছু বললো না শুধু কেদেই চলছে।

----- আরে বাবা কান্না থামিয়ে বলবে তো কেনো কাঁদছো??????

মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতেই বলল - আমি স্কুলে যামু না।

.

কিছুক্ষন আবির অবাক হয়ে রইলো কারন ও তো ভেবেছিলো মিষ্টি আবার স্কুলের কথা শুনলে খুশি হবে।সেদিনের দৃষ্টিই ওর মনের কথা টা বলে দিয়েছিলো।তবে আজ কেনো এমন করছে??

কেনো তুমি স্কুলে যাবে না কেনো?

মিষ্টি কান্না থামালো কিন্তু কিছু বলছে না।

আবির আবার বলল তোমার সমবয়সীরা থাকবে স্কুলে।সবার সাথে কতো আনন্দ করবে তাহলে যাবে না কেনো বলো??

তোমার স্কুলে যেতে ভালো লাগে না??

-- মিষ্টি বলল হা আমার স্কুলে যেতে ভালোলাগে।কিন্তু সবাই আমারে দেইখা হাসবো।

আমি বাসায় থাইকা আম্মার সাথে ঘরের কাজ করমু।আমি স্কুলে যামু না।

.

আবির বলল -- কে বলেছে সবাই তোমাকে দেখে হাসবে??

তুমি ওদের সাথে মিশবে বন্ধুত্ব করবে দেখবে তোমার খুব ভালো লাগবে আর বাসার কথা তোমার ভাবতে হবে না।

বাড়ির সবাই রাজি।

.

এবার মিষ্টি কিছুটা খুশি হলো।

মনেমনে ভাবছে আপা ঠিক ই বলেছিলো...সে মানুষ টা ভালো।

.

সকালে তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে আবির মিষ্টু আর রাইসা স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হলো।

আর মিষ্টু কে বলে দিলো আজ থেকে আবির আবার অফিসে যাবে।

মিষ্টু যেনো আবির এর সাথে বাসায় চলে আসে।

ওর বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হবে।

তারপর ওদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে মিষ্টুকে স্কুলে এডমিশন করিয়ে ক্লাশে বসিয়ে দিয়ে  আবির অফিসে চলে এলো।

কিন্তু কোনো কাজেই ওর মন বসছে না।মিষ্টির কথা মনে পড়ছে।

তাই ভাবলো আজ বিকেলেই বাসায় চলে যাবে।

.

এদিকে ক্লাশ শেষ করে মিষ্টি রাইসার সাথে বাসায় চলে এলো।

দুপুরে গোসল করে খেয়ে শুয়ে আছে মিষ্টি।

কিন্তু আজ তার কেমন জানি অসস্থি লাগছে।

ঘরটা কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগছে।

আবির কে এইকয়দিন ঘরে থাকলে ও তাকিয়ে দেখেনি কখনো কিন্তু আশেপাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করেছে আজ হয়তো সেটা নেই বলে ই এমন লাগছে।

.

বারবার এপাশওপাশ করছে মিষ্টি কিন্তু কিছুতেই ভালো লাগছে না।আর সেলাই কাজে ও মন যাচ্ছে না।

হঠাৎ মিষ্টির চোখ গেলো আবির এর ব্লেজার টার দিকে।

শোয়া থেকে উঠেই মিষ্টি ব্লেজার টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।

গত কাল এটাই পড়েছিলো আবির।

মিষ্টি কিছু না ভেবেই আয়নার সামনে গিয়ে আবির এর ব্লেজারটা গায়ে দিল।

তারপর আয়নায় নিজেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে

আবির কিছুক্ষন আগেই অফিস থেকে ফিরেছে।রুমে ঢুকিতেই মিষ্টির কান্ড দেখে দাড়িয়ে গেলো আর সেখান থেকেই ওর কর্মকান্ড দেখছিলো।

.

যে মেয়েটি সারাক্ষন মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকে সে খালি ঘরে এমন কান্ড করবে আবির ভাবতেও পারে নি।

 আবির  আর হাসি চাপতে না পেরে হা হা করে হেসে দিলো।

মিষ্টু পিছনে ঘুরতেই আবির কে দেখে লজ্জা পেয়ে ব্লেজার টা খুলে রেখেই দৌড়ে রুম থেকে যাওয়ার সময় আবির মিষ্টুর হাতটা ধরে ফেললো ----

এই যে #পুতুল_বউ আমাকে দেখে এতো লজ্জার কি আছে??

আমি ই তো।

এই ব্লেজার টা তোমার গায়ে যেভাবে জড়িয়েছিলো একবার আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখো আরো ভালোকরে জড়িয়ে রাখবো তোমাকে সারাজীবন আগলে রাখবো.....মিষ্টু লজ্জায় কিছু না বলে হাতটা ছাড়িয়ে পাশের রুমে চলে গেলো।

আবির দাড়িয়ে ভাবছে এইসব আপার ম্যাজিক মনে হয়।

ইশশশশ....আপাটা যেকেনো আরো কয়দিন আগে এলো না.......


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.