পুতুল বউ
পুতুল বউ গল্প - ৪র্থ পর্ব - bangla choti golpo -bangla Golpo |
(৪র্থ পর্ব
আবির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পরলো।হুইস্কির নেশায় একেবারে এক ঘুমে রাত পার করেছে।কিন্তু রাতে ঘুম আসার পর ওই মেয়েটার কি হয়েছিল!
হঠাৎ
মিষ্টির কথা মনে পরতেই আবির পাশে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি এখনো ঘুমে মগ্ন।
লম্বা ঘন চুলগুলো চেহারার দিকে এলোমেলো হয়ে আছে।শাড়ির আচলও শরীরে নেই। গায়ে কম্বলও জড়িয়ে শোয় নি। কম্বল পায়ের নিচে দুমড়ে পরে আছে।হাত পা ছড়িয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।
আবির কম্বলটা মিষ্টির শরীরে জড়িয়ে দিলো।
চমৎকার লাগছে ওকে।
কোনো কবি তার কাব্যিক ভাষায়ও হয়তো এই সৌন্দর্য হয়তো তুলে ধরতে পারবে না।
মানুষকে সবচেয়ে বেশী নিষ্পাপ তখনি লাগে যখন সে ঘুমিয়ে থাকে।
মিষ্টিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন নিষ্পাপতাও হার মানবে।কপালে ছোট করে চুম্বন দিলেও কি ওর ঘুম ভেঙে যাবে নাকি ঘুম ভাঙার পরোয়ানা করে কপালে এক ফোটা আদর ঢেলে দিবে??
নাহ.......থাক।যদি জেগে উঠে যায়??
কাল রাতের মতোই আবির কে ভয় পেতে শুরু করে!
বোকা মেয়েটা রাতে মুখটা ধুয়েও ঘুমোয় নি।চেহারায় মেকআপ ভেসে উঠছে।কাল রাতে যে ও কেঁদেছিল তার প্রমাণ দিচ্ছে ছড়িয়ে থাকা কাজল মাখানো চোখ দুটো।
.
আবির ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বসলো।এতোদিন মেয়েদের সাথে জমিয়ে ফোনে আলাপ করেছে।ভার্সিটির যতোগুলো মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিল সবার সাথেই ফোনে কথা বলে টাইমপাস করেছিল।কিন্তু ঘরে সুন্দর একটা ছোট #পুতুল_বউ থাকতে আবার টাইমপাস কিসের???
.
আবির বসে বসে ক্লোজ মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়া বাকি সব মেয়েদের ফোন নাম্বার ডিলিট করে দিলো।
আর ফেইজবুক থেকে ও মেয়ে ফ্রেন্ড দের আনফ্রেন্ড করে দিল।
এখন থেকে ওর সব ভাবনা এই #পুতুল_বউ
.
বাড়ির কাচ্চাবাচ্চাগুলো এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।এখন ওদের বাড়ির সদস্য হলো
মিষ্টি কে নিয়ে মোট পাচ জন।আবির বড় বোন রিফা তার ২ বছরের মেয়ে মিফতা কে নিয়ে সিলেট থেকে চাকরি করে।স্বামির সাথে মিল না থাকায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা শিফ্ট হবে।কয়দিন পরেই চলে আসবে বিধায় এখন একমাত্র ভাইয়ের বিয়েতে আসতে পারে নি।
বাড়িটা বেশ বড়সড় ওদের।
বাবা-দাদা পাকিস্তানি আমল থেকেই স্বর্নের ব্যাবসা করে আসছে।আর আবির ও নিজের প্রফেশনাল কাজ হিসেবে সেই ব্যাবসায়ই দেখাশোনা করছে।
.
আবির রুমের দরজা খুলে বাহিরে চলে এলো।
আবির তার মায়ের সাথে অনেকটা ফ্রী।প্রায় সব কথাই মায়ের সাথে শেয়ার করে।
মা ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছে।
আবির আসা মাত্রই সে আশেপাশে তাকিয়ে মিষ্টি কে খুঁজতে লাগলো।আবির এর সাথে দেখতে না পেয়ে বলল-
-তোর বউটাকে দেখছি না।
-ঘুমোচ্ছে।
-কেমন লেগেছে তোর কাছে!
বিয়ের আগে আবির মেয়েটির ছবি একবার দেখেছিল।নতুন যুগের মতো মুখ প্রদর্শন করে আলাপ হয় নি।কারন হলো ওদের গ্রাম এলাকায় এইটা গ্রহণযোগ্য নয়।আর মেয়েটা এমনিতেও লজ্জাবতী।
আবির বলল-
-মেয়েটা ভালোই।কথা কম বলে আর কি।
মা মৃদু হেসে বলল-
-নতুন পরিবেশে আমাদের সাথে মিশতেও ওর সময় লাগবে।তুই তো জানিস বাবা.. মেয়েটা কোন পরিবেশের।
মেয়েটার আমাদের সাথে মিশতে অনেকটা সময় লাগবে।
-হয়তো।
.
কিন্তু মিষ্টির লাজুকতা নিয়ে আবির এর কোনো অভিযোগ নেই।শুধু মেয়েটার ভয় কাটাতে হবে।এইটুকুই এখন আসল কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে গেল।বিছানা থেকে নেমে আগোছালো বিছানাটা নিজে নিজেই ঠিক করে রাখলো।
আবির কাপড়চোপড়ে চারিদিক আগোছালো করে রেখেছে।মিষ্টি কাপড়গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে নিলো।মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
.
আবির ঘরে ঢুকে দেখলো বিছানাটা সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে তার পুতুলবউ।
বিছানাপত্র সুন্দরভাবে ঠিকঠাক করে মেয়েটা মাথায় ঘোমটা দিয়ে খাটেই বসে আছে।
রুমে কেউ না ঢুকলে হয়তো জানাই যেতো না যে মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে পরেছে।চুপচাপ একাকী বিছানায় নিজের মতো করেই বড় ঘোমটা মাথা দিয়ে বসে আছে।
আবির বলল-
-এইখানে একাকী বসে থাকতে ভালো লাগছে তোমার???
মেয়েটি কথা না বলে ঘোমটার আড়ালে আবির এর দিকে তাকালো।
আবির বলল-
-রুমের বাহিরে গিয়ে সবার সাথে কথা বলো,হেটে হেটে চারিদিকটা দেখে আসো,মা বাবা কে সালাম দিয়ে এসো।এইভাবে বসে থাকলে কি চলবে??
তুমি এখন এই বাড়ির নতুন বউ।
তোমার সাথে সবাই এখন আগ্রহের সাথে কথা বলতে চাইবে কিন্তু তুমি যদি কথা না বলে চুপচাপ থাকো তাহলে সবাই তোমাকে ভালোভাবে জানবে কি করে??
.
আবির এর কথা মতো মিষ্টি উঠে গেল।
ধীরে ধীরে পা ফেলে রুমের বাহিরে গেল।কিন্তু কার সাথে, কি কথা বলবে কিছুই বুঝছে না।
রুমের বাহিরে গিয়ে দরজার সামনে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
আবির খেয়াল করে দেখলো মিষ্টি রুমের বাহিরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কোথায় যাওয়াটা এখন যুক্তিসংগত হবে হয়তো বুঝছে না।
আবির মিষ্টির সামনে গিয়ে বলল-
-এসো আমার সাথে।
আবির মিষ্টিকে রাইসার রুমে নিয়ে গেলো।
রাইসা ক্লাশ নাইনে পড়ে মিষ্টির থেকে এক - দেড় বছরের ছোট হবে। তাই প্রায় সমবয়সের কারনে হয়তো ওর সাথে মিশতে সুবিধা হবে।
রাইসা মিষ্টি কে দেখে বলল-
- আরে ভাবী তুমি ঘুম থেকে উঠে গেছো??
আমি ঔ রুমে যেতে চেয়েছিলাম, পরে ভাবলাম তুমি হয়তো এখনো উঠো নি তাই আর যাই নি।
বাড়িটা কেমন লেগেছে তোমার ভাবী?
মিষ্টি ধীরে ধীরে জবাব দিলো-
-ভালো।
-আমাকে চিনেছো?
মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে বোঝালো যে সে চিনে না।
আর চিনবেই বা কি করে কাল সারারাস্তা পাশাপাশি বসে এলেও এতো বড় ঘোমটার নিচ থেকে কিছুই দেখতে পারে নি।
রাইসা বলল-
-আমি হচ্ছি তোমার ননদ।
নাম হচ্ছে রাইসা।
আপু তো এখন দুরে থাকে তাই বিয়েতে আসতে পারে নি দুই একদিনের মধ্যেই পোষ্টিং ঢাকায় হলে আপু ওর মেয়েকে নিয়ে এখানে চলে আসবে তখন সবাই মিলে খুব আড্ডা দেবো। অনেক মজা হবে।
রাইসাকে মিষ্টির ভালো ই লাগলো।
ঘোমটার আড়াল থেকে একনজর রাইসাকে দেখলো।
এমন সমবয়সী দের সাথে গ্রামে খেলেছে সে।গ্রামের কথা মনে পড়তেই মিষ্টি কেঁদে দিলো।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
রাইসা কান্নার আওয়াজ পেয়ে মিষ্টির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল-
-আরে..তুমি কাঁদছ কেন!আমার কোনো কথায় কি তুমি কষ্ট পেয়েছো!কিছুই তো বুঝতে পারছি না।কেন কান্না করছো তুমি?
মিষ্টি আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।
রাইসা মিষ্টির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
রাইসা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে।
মিষ্টির কান্নার কোনো কারনই বুঝছে না সে। মিষ্টির এই অকারণে কাঁদতে থাকার জন্য রাইসা কিছুটা ঘাবড়ে গেল।
রাইসা তার ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এলো।
আবির ও রাইসার কথা শুনে মিষ্টির কাছে গিয়ে দেখলো মিষ্টি মুখ চেপে কাঁদছে।
আবির ওর কান্নার কারন খুঁজে পেল না শুধু এইটুকুই বুঝলো যে মেয়েটি ভয়ে কাঁদছে নয়তো বাপের বাড়ির কথা মনে পরেছে।কে জানে কোন চাপা দু:খ ওকে কাঁদাচ্ছ।
.
আবির দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে।চোখের পানিতে ওর মুখ একেবারে উজ্জ্বল হয়ে আছে।নাক লাল হয়ে লাল রঙ ধারন করেছে।চোখের নিচে অ উপরে ছড়িয়ে থাকা কাজলের কালো ছাপ পরে আছে।কি দারুন এই রুপ ওর।
.
আবির মিষ্টির কাছে গিয়ে বলল-
-কেন কাঁদছ তুমি?
রাইসার কোনো কথায় কি কষ্ট লেগেছে তোমার?
মিষ্টি আগের মতোই মাথা নাড়িয়ে বোঝালো যে রাইসার কোনো কথায় কষ্ট পায় নি সে।
আবির বলল-
-তাহলে কেন কাঁদছ বলো?
তোমার কোনো অসুবিধে হলে আমাদের সবাইকেই বলবে।কথা লুকিয়ে রেখে কান্না করবে না কখনো। মনে থাকবে?
মিষ্টি এইবারও জবাব না দিয়ে মাথা নেড়ে বোঝালো যে তার মনে থাকবে।
.
এতো কম কথা বলে কিভাবে থাকে মিষ্টি??কিছু কিছু মানুষের তো কথা ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে।
লজ্জা পাওয়া ভালো।কিন্তু তাই বলে কি এতোটা লজ্জা!আবার কি ভেবে এখন কেঁদে যাচ্ছে কে জানে!
আবির বলল -
-চলো খাবার টেবিলে।মা আমাদের জন্য পিঠা বানিয়েছে।
আবির এর কথায় উঠে পরলো।যে যা বলছে মিষ্টি ঠিক তেমনটাই করছে।
উঠতে বললে উঠে আর বসতে বললে বসে এর চেয়ে কম বেশী কিছু করে না।এমন কি কথাও বলে না।গলার মিহি স্বরও ছোট কিশোরীদের মতো।
তবে আবির এর কাছে ভালো লাগে।মেয়েটাকে ওর কাছে দারুন লেগেছে।বাচ্চা মেয়েটির চুপচাপ বসে থাকা,নিরবতা,ধীর গতি চালচলন সব কিছুতেই আবির কে মুগ্ধ করে।
তবে মেয়েটার ভয় কাটাতে হবে।নতুন পরিবেশের সব কিছুই বোঝাতে হবে।আবির এর প্রতি একটা ভালো লাগা গড়ে তুলতে হবে মেয়েটির মাঝে।মেয়েটিকে ভালো রাখার দায়িত্ব তো এখন আবির এর নিজের।
.
মেয়েটির হাসি মুখও তার একবারও দেখা হয় নি।লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে মিষ্টি।নিজের বউয়ের পুতুলের মতো মুখটাকেই ঘোমটার নিচ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে হয় ওর।আর লুকিয়ে দেখার সময় যখন মেয়েটির চোখে চোখ পরে যায় মেয়েটি তখন সাথে সাথে চোখ নিচে নামিয়ে ঘোমটার আচল আরও দীর্ঘ করে ঢেকে ফেলে।
নিজ বউয়ের মুখ দেখতে গেলে বউ যখন লজ্জায় তার বড় আচলের ঘোমটায় মুখ ঢাকে তখন সেই লজ্জার মুখটির দিকেই বার বার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় ওর আর তখনই এই ঘোমটার আড়ালে সেই লজ্জাবতী মুখটির শোভা আরও বৃদ্ধি পায়।
আর আবির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মিষ্টির লজ্জাবতী চেহারায়।
সৌন্দর্যময় রুপটি যেন ওর লজ্জার ভঙ্গিতে ঝলসে পরে আর আবির এর দৃষ্টি কুড়িয়ে বেড়ানোর জন্য নিরবে সুযোগ খুঁজতে থাকে।
.