পুতুল বউ গল্প - পর্ব ৫ - bangla choti golpo - bangla love story

 পুতুল বউ

পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৫ - bangla choti golpo - bangla love story
পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৫ - bangla choti golpo - bangla love story 


                      (পর্ব - ৫)


বিয়ের দুই দিন পার হয়ে আজ তৃতীয় দিন।এই তিন দিনে  আবির আর মিষ্টির যতটুকু কথা হয়েছে সবটুকু আবির একা ই বলেছে।যা কথোপকথন বললে ভুল হবে।আবিরএর অবস্থা অনেকটা রেডিওর RJ দের মতো আর এখানে নির্বাক শ্রোতা হচ্ছে মিষ্টি। এ পর্যন্ত আবির নিজে ওর সাথে কথা বলা ছাড়া মেয়েটি মুখে এক ফোটা আওয়াজও বের করে নি।

আবির ঘরে থাকলে, পাশে বসলে কিংবা সামনে শুয়ে থাকলে মিষ্টি শাড়ির ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।যেন ওর আপন কেউ নয় আবির।হ্যা তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছে আবির...... তার যখন অন্য কোনো দিকে মনযোগ থাকে তখন মেয়াটা ঘোমটার নিচে থেকে উকি দিয়ে আবির কে দেখে অথচ আবিরএর চোখ পরলেই সে চোখ সরিয়ে নেয় ।

আচ্ছা এর নাম #পুতুল_বউ না রেখে #কচ্ছপ_বউ রাখলে কেমন হয়??????

.

পরেরদিন সকালে মিষ্টি আবির এর আগেই ঘুম থেকে উঠে পরলো।

নিজের কাপড়চোপড়গুলো এখনো সুটকেসে ই রেখে দিয়েছে।

আলমারিতে আবির এর কাপড়গুলোর সাথে নিজের কাপড়গুলো রাখতে কেমন যেন জড়তা কাজ করে মনে হয় যেনো আবিরএর কাপড়ের সাথে অর কাপড় নয় বরং ও কে ই আবির স্পর্শ করবে।

আবির ঘুম থেকে উঠে দেখলো মিষ্টি পাশে নেই।

আজ সকালেই উঠে গেছে কিন্তু উঠে কোথায় গেল বোকা মেয়েটা??

কারো সাথে গিয়ে আড্ডা জুড়ে দেওয়ার মতো মেয়ে তো ও নয়।তাহলে গেল কোথায়?? 

আবির ঘরেরর চারদিকটায় তাকিয়ে না দেখতে পেয়ে ওয়াশরুম চেক করলো।

তারপর ওকে ওয়াশরুমে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো মিষ্টি বারান্দায় দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কি দেখছে এতো মনযোগ দিয়ে??? 

আবির বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি স্কুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিন তলার এই বারান্দা দিয়ে পাশের গার্লস হাই স্কুলের বড় উঠোন টা সহজেই চোখে পরে।ছুটির সময় ও টিফিনের সময় সব মেয়েরা মাঠে জোরো হয়ে ছুটোছুটি করে।

মিষ্টি স্কুল মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে।জাতীয় সংগীতের ধ্বনি তুলে মেয়েগুলো স্কুল মাঠে সাড়ি সাড়ি হয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইছে।

মিষ্টি কি দেখছে তা আবির বুঝেও ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করলো -

-কি দেখছো!

হঠাৎ আবির এর কথা শুনে মিষ্টি চমকে গিয়ে তাকালো আবির এর দিকে।সেই আগের মতোই চুপচাপ।

কোনো উত্তর না পেয়ে আবির বলল-

-স্কুল দেখছিলে??

মিষ্টি নিচের দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বলল-

-হুম।

-পড়তে ইচ্ছে হয়?

মিষ্টি জবাব দিলো না শুধু একটু তাকালো আবির এর দিকে।

মিষ্টি লজ্জায় কিছু মুখ ফুটে বলতে পারে না।

আবির মিষ্টির মনের এই জড়তা ভাবটা ভালো ভাবেই আয়ত্ত করে নিয়েছে।

আবির বলল-

-ঠিকাছে.....বলো না।

 তুমি রুমের ভেতরে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর না হয়

 এক সাথেই নাস্তা করতে যাবো।

মেয়েটা তা-ই করলো।

আবিরএর কথা মতো মিষ্টি  বারান্দা থেকে রুমে চলে গেল। 

রাইসা ও আজ সকালে স্কুলে গিয়েছে।

মিষ্টি সকালে ওকে স্কুল যেতে দেখেছিল।স্কুল ড্রেসে দেখা মাত্রই নিজের স্কুলের কথা মনে পরে গিয়েছিল ওর।এইভেবে কেঁদেছে ও কতোক্ষন। স্কুল ড্রেসে প্রতিদিন সকালে এইভাবেই স্কুলে যাওয়া হতো ওর।একদিনও স্কুল বন্ধ দেয় নি।বান্ধুবীদের সাথে কথা বলা কিংবা খেলা করার অাকর্ষনে প্রতিদিন স্কুল যাওয়া হতো ওর।আজ ওই বান্ধুবীরা ওর থেকে কতোটা দূর ভাবতেই কান্না পায় ওর।

কেননা শত কথা হলেও সে এখন শ্বশুর বাড়ি।সবাইকে ছেড়ে একাকীত্ব থাকাতে কেমন একটা ভয় কাজ করে ওর ভেতর।

.

.

সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় আবির এর বাবা বলেছে....  ""দুপুরের খাবারটা আজ না হয় নতুন বউ-ই বানিয়ে খাওয়াবে""।

এখন আবির ভাবছে  মেয়েটা কি কি রান্না করতে পারে তাও তো কারো জানা নেই....যদি না পারে তাহলে মুখফুটে বলবে ও না, তখন কিভাবে ম্যানেজ করবে????

.

একটু পরেই মা এলো আবির এর রুমে মিষ্টি কে ডেকে আনতে।

রুমে এসে দেখল মিষ্টি খাটে বসে ঘোমটা জড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে।

মা ওকে রুমের বাহিরে থেকেই ইশারা করে তার সামনে আসতে বলল।

মিষ্টি শাশুড়ির  ইশারা বুঝে তার সামনে গেল।

শাশুড়ি  বলল-

-রান্নাঘরে চলো।তোমাকে রান্নাঘরটা দেখিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে দেই।

শাশুড়ি মায়ের পিছু পিছু মিষ্টি রান্নাঘরে গেল।বড় রান্নাঘরটা ওর কাছে পছন্দ হলো।

.

মা বলল-

-রান্না করতে পারো?

মিষ্টি মাথা নেড়ে বোঝালো যে সে রান্না জানে।

মা বলল-

-কি কি রান্না করতে পারো?

মিষ্টি  মিহি স্বরে বলল-

-ভাত,ডাল,আলুর ভর্তা,ডিম ভুনা,ডিম ভাজি,আলুর দম,শাক.........

যা সে বানাতে পারে ওইগুলোর নামই মনে করে বলে যাচ্ছে।

মা ওর কথা থামিয়ে বলল-

-হুম।বুঝেছি। বুঝেছি।

মিষ্টি সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল।

মা বলল-

-বিরিয়ানি  বানাতে পারো?

মিষ্টি  মাথা নাড়ালো।সে পারে।

-তবে আজ বিরিয়ানি  বানাও।আমি তোমাকে পরিমাণ বলে দিচ্ছি।

পরিমাণ প্রস্তুত হয়ে নেওয়ার পর চুলোর সামনে গিয়ে ম্যাচ হাতে নিয়ে মিষ্টি দাঁড়িয়ে রইলো। 

মা ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-

-কি ব্যাপার?দাঁড়িয়ে আছো যে!কোনো অসুবিধে হচ্ছে তোমার?

-আমি গ্যাসের চুলা জ্বালাতে পারি না।

ঠিকই তো।গ্রামে মাটির চুলোয় রান্না করার অভ্যাস যার আছে তার গ্যাসের চুলো ধরানোতে হিমশিম খাওয়াটাই স্বাভাবিক।

.

মা ওকে চুলোটা জ্বালিয়ে দিলো

মিষ্টি সেইভাবেই রাঁধতে লাগলো যেইভাবে মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি রান্না করতো।কিন্তু সবার স্বাদ তো আর এক না।যদি খিচুড়িটা কারো মন মতো না হলো তবে কি ওকে সবাই বকবে না কি সবাই একসাথে ওকে মার শুরু করবে????  মনে মনে ভয় হচ্ছে.....ভাবতেই ভয়ে কান্না পাচ্ছে।

.

রান্না শেষ করে মিষ্টি ওর রুমে গিয়ে বসলো।

আবির রুমে শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটছে।

আবির এর  একটা জিনিসই কেবল মাথা ঘুড়ছিলো মেয়েটা কি স্কুলে পড়তে চায়??

মেয়েটা এমনিতেও পড়ালেখার দিক দিয়ে বেশী দূর এগুতে পারে নি।বর্তমানের সাথে অনেকটা পিছিয়ে।যদি ওকে পড়াশোনা চালিয়ে বি,এ পাশ করানো যায় মেয়েটা হয়তো একটু চালাক চতুর হতে শিখবে।

.

অন্তত স্বামীর সাথে লজ্জা কাটিয়ে কথা বলতে কোনো বউয়েরই জড়তা থাকে না।কিন্তু আমার বেলায় হচ্ছে উল্টো।

আবির এখনও মিষ্টির লজ্জা কাটিয়ে কথা বলাতে পারার জন্য সক্ষম হয় নি।

কিন্তু মেয়েটার ভালো মন্দ এখন তার বর খেয়াল না রাখলে কে-ই বা রাখবে!

.

মিষ্টিকে দেখে আবির বলল-

-আমার সামনে বসো।

মিষ্টি আবির এর থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।

আবির বলল-

-এতো দূরে গিয়ে কেনো বসছো??

আমি বাঘ অথবা ভাল্লুক নই যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো।

মেয়েটি এখন সামান্য ইঞ্চি সামনে এসে বসলো।

আবির বলল-

-আমাকে লজ্জা করার কিছুই নেই।প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে তুমি আমার সাথেই তো কথা বলবে।আমার সামনে তোমার এতো বড় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকারও কোনো প্রয়োজন নেই।

মিষ্টি শুনে গেল কিন্তু বললা না কিছু।

কথাগুলো শুনেছে ঠিকই।

কিন্তু ওর এই কথাগুলোতে কতোটুকু প্রভাব ফেলবে তা-ই ভাববার বিষয়।

 আবির বলল-

-আমাদের বাড়িটা একবার ঘুরে দেখেছো?? বাহিরে বাগান আর ছাদের উপরে ফুলের সমারোহ দেখে তোমার স্বর্গ  মনে হবে।

এসো আমার সাথে চারিদিক টা ঘুরে দেখবে।

.

আবির এর পিছু পিছু মিষ্টি এগুতে লাগলো।

আবির ওকে প্রথমে বাগানের দিকটায় নিয়ে গেল। বাগানে রং বেরঙ্গের নানা রকম ফুল।কিন্তু এই বাগানটা দেখে মিষ্টির ওর গ্রামের বাড়ির কথা মনে পরে গেল।চোখ জ্বলে ঝাপসা হয়ে এলো।কেননা গ্রামে পাড়ার মেয়েরা সবাই মিলে এমনি একটা ফুলবাড়িতে গিয়ে সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে ফুল কুড়িয়ে আনতো আর মালা গেথে গলায় কানে পরে থাকতো।

ফুল মিষ্টির খুব পছন্দের।

আবির বাড়ির সব কোণায় কোণায় মিষ্টিকে চিনিয়ে নিলো।

.

বিকেলে মেয়েটাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরিয়ে আনা যাক।নতুন জায়গার নতুন পরিবেশ দেখলে হয়তো ওর ভালো লাগবে।মেয়েটিকে রেডি হতে বলাতে মেয়েটি কেবল শাড়িটাই বদলেছে।

আবির দেখলো মেয়েটি খুব সাধারণভাবে তৈরি হয়ে নিয়েছে।চুলে শুধু একটা খোপা বেধেছে।ওর এই সিম্পল রুপটাও অবশ্য দারুন।

অন্য কেউ হলে তো সাজের মেলা নিয়ে থাকতো। মেয়েটি সাজগোজের এক অংশও জানে না।এই যুগের মেয়ে বলতে মিষ্টিই হয়তো একমাত্র মেয়ে যে কি না সাজগোজের কিছুই জানে না।

তবুও মেকআপ ছাড়া কাজল আর লিপস্টিকের ব্যবহার তো সবাই-ই জানে।

আবির ওকে দেখে বলল-

-চোখে কাজল নেই কেনো??

লিপস্টিক হাল্কা করেই না হয় ঠোটে লাগাতে... 

মেয়েটি নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো-

-নাই

-একি...কিছুই নেই?

এই মেয়ে তো সব দিক দিয়েই পেছনে। 

আবির বলল-

- চলো আজ ঘুরতে না গিয়ে তোমাকে মার্কেট নিয়ে যাবো।তুমি তোমার প্রয়োজন মতো সব জিনিস নিবে।

মেয়েটি মাথা নাড়ালো আর বোঝালো যে সে যাবে।

তারপর আবির মিষ্টি কে নিয়ে বাইকে বসিয়ে বের হলো কিন্তু এখানে ও যে এক বিপদ মিষ্টি তো বাইকে ও বসতে পারে না।

আবির ভাবলো এই সুযোগে হয়তো তার নতুন বউ তাকে জড়িয়ে ধরে বসবে আর বাকিসব কাপল রা যেভাবে ঘুরতে যায় সেভাবে বউ কে নিয়ে ঘুরবে,  হয়তো এতে ওদের দূরত্ব কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু এখানে ও কপাল খারাপ 


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.