পুতুল বউ

   

পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৬ - bangla life story - bangla choti golpo
পুতুল বউ গল্প - পর্ব  ৬ - bangla life story - bangla choti golpo 

 

              ★★(পর্ব - ৬)★★


আবির মিষ্টি কে নিয়ে শপিং মল এ গেলো। একটা  রিকশা দুজন মানুষ যতটুকু দূরত্বে বসা  যায় মিষ্টি  যেনো সেই সীমানা ও অতিক্রম করে ফেলেছে। উঠে চারিদিক সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছিল।আশে পাশে রেস্তোরা, ফাস্টফুড সবই চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেছে।

শপিং মলে গিয়েই আবির প্রথমে মিষ্টি কে কাপড়ের দোকানে নিয়ে গেলো।

আবির আগে আগে হাটছে আর মিষ্টি তার পিছুপিছু।

মলে এতো মানুষ দেখে মিষ্টি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে।

আবির দোকানে দাড়া করানো পুতুল গুলো দেখিয়ে বলল ঐ দেখো সব জামার মডেল পুতুল কে পড়ানো আছে তোমার যেইটা ভালো লাগে আমাকে বলো,  আমি তাই কিনবো।

কিন্তু আবিরএর সেসব কথায় মিষ্টির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ও ভাবছে এই পুতুলগুলো নিয়ে।এতো বড় পুতুল হয়?????

মলে প্রবেশের পর থেকেই তো ও এসব কে ই দেখছে আর একটা পুতুল কে তো ও সেই কখন থেকেই আড় চোখে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা ওর দিকে সেই কখন থেকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেনো???

কাপড়ের চয়েজ বলতে মেয়েটির কোনো ধারনা-ই নেই।

আবির নিজেই পছন্দ মতো মিষ্টিকে কিছু নতুন কালেকশন এর ড্রেস কিনে দিলো।কিন্তু মেয়েটির পছন্দ হলো কি না সে কোনো হ্যা বা না উত্তর-ই দেয় না।

তারপর ড্রেস কেনার শেষে ওরা কসমেটিক্স এর দোকানে গিয়ে মিষ্টি কে কাজল,লিপস্টিক, হেয়ার ব্যান্ড আরো অনেক কিছু কিনে দিলো।

.

সব কেনাকাটা শেষ হলে ওরা শপিং মলের সামনে থেকে একটা ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।

আবিরএর খাওয়া শেষ কিন্তু মিষ্টি এখনো খাচ্ছে।

আবির মিষ্টিকে একটা দোকান দেখিয়ে বলল তুমি এখানে দাড়িয়ে খাওয়া শেষ করো আমি ঐ দোকান থেকে পানি কিনে আনছি।

অন্যকোথাও যাবেনা কিন্তু, আমি যাবো আর আসবো।

মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।


আবির  দোকানে যেতেই ওর এক বন্ধু  সাজিদ  এর সাথে দেখা হয়ে গেলো।

-কি রে বিয়ে করে আমাদের কে ভুলে গিয়েছিস!

-না।তা ভুলবো কেন?

-তোকে তো এখন আর দেখাই যায় না।তোর বিয়ের দিনটায়ও আসতে পারলাম না।ভাবি কোথায়? তার সাথে তো দেখা-ই হলো না।

.

আবির জানে মিষ্টি কতটা লাজুক আর সাজিদ যদি জানতে পারে যে মিষ্টি আশেপাশে ই আছে তাহলে ওর সাথে দেখা করতে জেদ করবে আর এতে মিষ্টি বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পরে যাবে তাই ওকে বলল -

-বাসায় চলে আয় একদিন। তোর ভাবিকে দেখতে পারবি।

-হুম আসবো।ভাবির একটা ছবিও দেখা হলো না আমাদের।তার সাথে আমাদের কথা বলিয়ে দিলে কিছু হাসি ঠাট্টা করে নিতাম।

বন্ধুদের অভিমানী অভিযোগটা দেওয়াও জায়েজ।কিন্তু কি করেই বা তাদের বোঝানো যায় যে মেয়েটা লাজুক।নিজের বরের সাথে মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না,দশ ইঞ্চি ঘোমটা টেনে রাখে।সে আবার অন্য কারো সাথে হাসি ঠাট্টা করবে কি করে!কিন্তু ফোনে তো আর এতো কথা খুলে বলা যায় না।

 আবির কথা দীর্ঘ না করে বলল-

আচ্ছা আমি আজ আসি তাহলে একটু কাজ আছে, পরে কথা হবে।

তারপর পানির বোতল কিনে নিতে নিতে ভাবছে অনেকটা সময় কথায় কথায় দেরি হয়ে গেলো এদিকে মিষ্টি একা একা দাড়িয়ে আছে।

 

আবির তাড়াহুড়ো করে স্টলে গিয়ে দেখলো মিষ্টি বসে বসে কাঁদছে।আশেপাশের লোকজন ওর কান্না দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

আবির ওকে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল-

-আরে..তুমি কাঁদছ কেন!কি হয়েছে!বলো আমাকে..

এতোক্ষনে একটা সিন ক্রিয়েট হয়ে গিয়েছে সবার সামনে।

.

মেয়েটি কাঁদছে!আর আবির ওর সামনে যেতেই সবাই আরও আগ্রহ নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে।

আবির বলল-

-কাঁদছ কেন তুমি?

মিষ্টি বলল-

-আপনে কোথায় গেসিলেন?

-তোমাকে তো বলেই গেলাম যে আমি পানি কিনে নিয়ে আসছি।

মিষ্টি কেঁদে কেঁদে আবিরএর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে  বলল-

-আপনে আর যাইবেন না।আমাকে একা রাইখা।

এই প্রথম হয়তো দুইটি লাইনের একটি বাক্য বলল সে তাও আবার নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে।

পরিস্থিতি যা ই হোক এখন তো খুশিতে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।এমন অবস্থায় এক মিনিটও এইখানে থাকা সম্ভব না।

আবির উঠে গিয়ে বলল-

-ঠিকাছে।চলো এখন বাড়ি যাই।

ওরা একটা রিক্সায় করে বাড়ি যেতে লাগলো

।ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলেছে।এই এলাকার কিছুই চেনেনা সে। 

আবির ওর দিকে তাকিয়ে  দেখে চোখ ফুলে গিয়েছে।ভয়ে কান্না করতে করতে এই দশা হয়েছে।

আবির বলল-

-কেঁদেছিলে কেন তুমি! বলো তো!তোমার কি মনে হয়েছিল যে আমি তোমাকে সেইখানে একা রেখে চলে গিয়েছি।তুমি এখন থেকে আমার দায়িত্ব। আমাকে বন্ধু ভাববে সব সময়।আমি তোমার কোনো শত্রু নই।আমার নিশ্বাস যতোদিন চলতে থাকবে আমি তোমাকে ততোদিনই খেয়াল রেখে যাবো।তোমাকে বিয়ে করেছি,তোমার বর আমি।অন্য কেউ নই।বুঝেছো?

মেয়েটি একবার শুধু তাকালো ওর দিকে।কিন্তু কিছু বলল না।

.

আবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলল-

-তোমাকে যেই কাজলটা কিনে দিলাম।ওইটা প্রতিদিন চোখে লাগালে তোমাকে খুব ভালো লাগবে।

মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো। 

.

ওরা বাসায় পৌঁছে গেল।বাসায় ফিরে দেখে বড় আপা বাসায় চলে এসেছে।সবাই ড্রইং রুমে বসে কথা বলছে।


.

Next part