Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ১) - Bangla Golpo pdf - love story

 

বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ১)

Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ১) - Bangla Golpo pdf - love story
Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ১) - Bangla Golpo pdf - love story 


বিজয় সরণির মোড়ে আজকের শেষ বিকেলে এটাই বুঝি শেষ সিগন্যাল, এরপরের সিগন্যাল যখন পড়বে তখন নিশ্চয়ই সন্ধ্যা নেমে যাবে, ভাবে রাফসান। সেই কখন সিগন্যাল পড়েছে, ছাড়ার কোনো নাম নেই, এখানে সবসময়ই এমন হয়। রাফসান একটা অস্থিরতা নিয়ে মোটরসাইকেল থেকে মাথাটা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করে। নাহ, ট্রাফিক পুলিশটা হাতের ছাতাটা লাঠি বানিয়ে তার উপর একটা হাত দিয়ে ভর করে আয়েশ করে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো দশ মিনিট হয়ে গেছে, সিগন্যলাটা ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। 


রাফসান বিরক্ত হয়ে যখন এসব ভাবছিল ঠিক তখন হঠাৎ একটা ঠান্ডা ঝড়ো বাতাস ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। পথে পড়ে থাকা একটা নীল রঙের পলিথিন আকাশের দিকে উড়ে যায়। রাফসান চোখটা ধুলো থেকে সামলে আকাশের দিকে তাকায়, অবাক হয়ে দেখে একটু আগের পরিস্কার আকাশটা ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। চারপাশে একটা স্বস্তির ঠান্ডা বাতাস। ভাদ্রের শেষে আজ সারাদিন ভীষণ গরম পড়েছিল, এই শেষ বেলাতে এসে প্রকৃতি যেন একটু সদয় হলো। বৃষ্টি শুরু হবে, একটু পরেই। মনটা উদাস হয়ে যায় রাফসানের। চোখটা বন্ধ করে ঠান্ডা বাতাসটা গায়ে মাখে, যেন আদর বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই রাফসান দ্রুত হাতে পেছনের সিটের সাথে বাঁধা রেইনকোনটা খুলে বের করে। এক দু ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। রাস্তার পথ চলতি মানুষেরা দৌড়ে যাত্রি ছাউনির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাফসান দ্রুত হাতে রেইনকোটটা পরে নেয়, তারপর ঘুরে বাইকের হ্যান্ডেলের উপর রাখা হেলমেটটা পরতে গিয়ে শেষ মুহুর্তে থমকে তাকায়। অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করে ওর পাশের ক্রিম কালারের প্রাইভেট কারের জানালায় একটা মেয়ে ডান গালে হাত ঠেকিয়ে উদাস চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে, দু'চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। পুরো পৃথিবী যেন থেমে গেছে, কোথাও কেউ নেই, ঠিক এমন করেই মেয়েটা এমন ভীড়ের ট্রাফিক সিগন্যালকে অস্বীকার করে কাঁদছে।


রাফসানের বুকের কোথায় যেয়ে যেন লাগে, এমন করে কাঁদতে ওরও ইচ্ছে হয়। পৃথিবীর তাবৎ ব্যস্ততা, মানুষজনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ওরও এমন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, কারও জন্য যেন ভীষণ কান্না করতে ইচ্ছে করে। 


হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটা মোটরবাইকের তীক্ষ্ণ হর্ণে ফিরে তাকায়, সিগন্যালটা ছেড়েছে। সামনের গাড়িগুলো ইতিমধ্যেই নড়াচড়া শুরু করেছে। রাফসান হেলমেট পরার আগে আরেকবার মেয়েটার দিকে তাকায়, মিষ্টি একটা মুখ, পলিমাটির মতো নরম, চোখের জলে মুখের জমিন ভিজে যাচ্ছে। রাফসানের সাথে চোখাচোখি হতেই মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে মুখ নামিয়ে নেয়।


রাফসান মাথা ঝাঁকিয়ে হেলমেটটা পরে নিয়ে বাইকটা স্টার্ট করে। মেয়েটার গাড়িটার পাশে পাশেই এগোতে থাকে। এক দু'বার পাশ ফিরে তাকায়, নাহ, মেয়েটা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে এখন, চোখমুখ ফোলা। আচ্ছা, মেয়েটা তখন হঠাৎ করেই কাঁদল কেন? বাইরের বৃষ্টি দেখে এমন হয়েছিল? জানার একটা তীব্র কৌতুহল বোধ করে রাফসান। 


সিগন্যালটা পেরোতেই বৃষ্টির বেগ বাড়ে, আর মেয়েটার প্রাইভেট কারটাও খালি রাস্তা পেয়ে বেগ বাড়ায়। রাফসানের হঠাৎ করেই একটা পাগলামি পেয়ে বসে, মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে সে অমন করে কান্না করল কেন তখন।


রাফসান গাড়িটার পিছু পিছু চলতে থাকে। খেয়াল করে টয়োটা প্রিয়াসের একটু পুরনো মডেলের গাড়ি। নাম্বার প্লেটটা দেখে নাম্বারটা মনে মনে বার বার আউড়ে নেয় যাতে হুট করে হারিয়ে না ফেলে। ফ্লাইওভারটা পেরোতেই প্রাইভেট কারটার বামের ইন্ডিকেটর লাইটটা জ্বলে উঠে, তারমানে গাড়িটা মহাখালির দিকে যাবে। রাফসান একটু ভাবে, ওর সোজা যাওয়ার কথা। আচ্ছা দেখাই যাক আগে মেয়েটার বাসা কোথায়।


গাড়িটা একটু সামনে এসে ইউ টার্ন নিয়ে গুলশান লিংক রোডে ঢুকে পড়ে। বৃষ্টি পড়ছে এখনও কিন্তু তীব্রতাটা কমে এসেছে। রাফসান ভাবে, আচ্ছা গাড়ির মেয়েটা কী বুঝতে পেরেছে যে ও পিছু পিছু আসছে? 


গাড়িটা নিকেতনের আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। রাফসান এবার মোটরসাইকেলের গতি কমায়। কিছুদূর যেয়ে গাড়িটা একটা দোতলা বাড়ির সামনে থেমে হর্ন দিতেই ভেতর থেকে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। গাড়িটা মসৃণভাবে ভেতরে ঢুকতেই গেট বন্ধ হয়ে যায়। রাফসান গেটের উপর দিয়ে চোখ রেখে দেখার চেষ্টা করে, নাহ, কিছু দেখা যায় না। বাসাটা দেখে ও অবাক হয়েছে, এই এলাকায় সব ছয়তলা বাসা। এমন একটা জায়গায় এমন সুন্দর একটা দোতলা বাসা, নাহ, এগুলোকে ডুপ্লেক্স বলে, দেখা পাবে ভাবেনি। দোতলায় একটা সুন্দর বড় বারান্দা। রাফসান আগ্রহ নিয়ে একটু তাকায়, নাহ, কেউ নেই, থাকার কথাও না। রাফসানের এখন নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে, আচ্ছা ও কেন এল এখানে? একটা মেয়ে গাড়িতে কোনো কারণে কান্না করতেই পারে, তাই বলে ও পিছু পিছু চলে আসলো? নাকি অমন মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি, রাফসানের হঠাৎ করেই কারও কথা মনে পড়ে গিয়েছিল, ওর নিজেরও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখন একটা মেয়ের কান্না মুখ দেখে ওর কি মনে হয়েছিল মেয়েটাও ওর মতো দুঃখী? 


নাহ, যেটাই হোক, কাজটা যে পুরো বোকার মতো হয়েছে সেটা এখন বুঝতে পারছে। রাফসান মাথা নেড়ে হাসে, তারপর বাইকটা ঘুরিয়ে নিয়ে নিকেতনের বের হবার গেটের দিকে যায়। 


২.

মেখলা বাসায় আসতে রাহনুমা চিন্তিত গলায় বলে, 'কি রে, পরীক্ষা কেমন হলো? বিকেলে ক'বার ফোন দিলাম, ধরলিই না মোটে। ড্রাইভার তো বলল তুই গাড়িতেই নাকি ছিলি।' 


মেখলা একটা বিষাদ মাখা হাসি দিয়ে বলে, 'সরি আম্মু, মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিল। হলে যাবার আগে মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।' 


রাহনুমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে, 'আলহামদুলিল্লাহ, যা ফ্রেশ হয়ে আয়। না খেয়ে মুখটা শুকিয়ে আছে।' 


মেখলা মাথা নাড়ে। ব্যাগ রেখে দ্রুত হাতে শুকনো কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজতে থাকে। একটু আগে বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন খুব ভিজতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ওর ঠান্ডার ধাত আছে, একটু ভিজলেই কাশি। তা আজ ভিজতেই পারত ও, শেষ পরীক্ষা ছিল। কথাটা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় যেটা আজ বিকেলেও হয়েছিল। পরীক্ষা শেষ হবার জন্য একজন অপেক্ষা করে থাকার কথা ছিল! ভাবতেই আবার চোখটা জলে ভরে ওঠে। মেখলা চোখ বন্ধ করে, মাথার ভেতর পানির ফোঁটাগুলো কেমন একটা রিমঝিম শব্দ তুলছে। ভালো লাগছে শব্দটা। হঠাৎ করেই ওই ছেলেটার কথা মনে পড়ে যায়। কী লজ্জা! ওর তখন কান্না করা মুখ দেখে ছেলেটা কেমন অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। গাড়িটা ছাড়ার পরও ছেলেটা মোটরবাইকটা নিয়ে পাশে পাশেই আসছিল। নাহ, এমন আর করা যাবে না। কান্নাগুলো এমন হুটহাট মেঘবালিকার মতো ওর গাল বেয়ে নেমে আসে যে ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারে না। কেন এমন হয়? যার অপেক্ষা করার কথা ছিল সে যদি অপেক্ষা না করে থাকে তার জন্য ও কেন কষ্ট পুষে রাখবে? 


ভাবনাটা আর বড় হয় না, মায়ের গলা পাওয়া যায়, 'মেখলা, গরম গরম আলু পুরি বানিয়েছে ফাতেমা। তাড়াতাড়ি বের হ, তোর আব্বুও চলে এসেছে।' 


মেখলা এবার দ্রুত গোসলটা শেষ করে বাইরে আসে। চুলে একটা পাতলা টাওয়েল পেচিয়ে রেখেছে, না হলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে। 


বসার ঘরে আসতেই কামরান আহমেদ হাসিমুখে বলেন, 'কি রে মা, পরীক্ষা ভালো হয়েছে?' 


মেখলা বাবার পাশে যেয়ে গুটিশুটি মেরে বসে, বাবার গায়ে হেলান দিয়ে একটা আলু পুরি মুখে দিতে দিতে বলে, 'হ্যাঁ বাবা, ভালো হয়েছে। তোমার খবর কী?' 


কামরানের খুব ভালো লাগে, এমন করে একমাত্র মেখলাই ওকে জিজ্ঞেস করে। কামরান এক হাতে মেখলাকে জড়িয়ে ধরে বলে, 'আমার খবর ভালো। সামনে আরো ভালো হবে।' 


মেখলা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কামরান আহমেদ নরম গলায় বলেন, 'তুই আর আমি একসাথে অফিস যাব। আমার ব্যবসার কাজগুলো তোকে বুঝিয়ে দিয়ে তবেই আমার ছুটি।' 


মেখলা চেপে রাখা নিশ্বাসটা ছাড়ে, যাক, বাবা বিয়ের কথা বলেনি। মেখলা মাথা নাড়ে, 'উহু, এখনই না। আপাতত দু'মাস আমি শুধু ঘুমাব আর গল্পের বই পড়ব। ইশ, কতদিন ঘুমাই না।' 


মেখলার অমন হাত পা আড়মোড় ভাঙার অভিনয় দেখে ওরা হেসে ওঠেন। রাহনুমার শুধু মনের ভেতর একটা কষ্ট খচখচ করে, মেয়েটার বিয়ে দেওয়া দরকার। আর যে দেরি করা যায় না। মেখলাকে সে কথা বলাও যায় না, কেমন একটা চোখে যেন তাকায়। আচ্ছা, যাক আরও কয়েকটা দিন। 


নাস্তা সেরে এক মগ কফি নিয়ে মেখলা বারন্দায় চলে আসে। বারন্দাটা বেশ বড়, একটু অর্ধবৃত্তাকার। ছোট ছোট টব দিয়ে চারপাশটা সুন্দর করে মালি চাচা সাজিয়ে রেখেছে। গাছগুলো সব মেখলা পছন্দ করে এনেছে। একটা পাশ জুড়ে সব সুন্দর সুন্দর অর্কিড, গ্রিলের দিকটায় একপাশে সাদা অপরাজিতা, মর্নিং গ্লোরি। নিচের দিকে পর্তুলিকা, এডেনিয়াম, রেইনলিলি, বেলি, স্বর্ণকুমুদ, টগর, জুঁই, দোলন চাঁপা, আরও যে কত কি। মেখলা একটা একটা করে খোঁজ নেয় গাছগুলোর। এগুলোই এখন ওর দারুণ বন্ধু, কথা রাখে। যত্ন নিলে ঠিক ফুল ফুটে ওর মন ভালো করে দেয়। 


মেখলা কফি হাতে পুরো বারান্দাটা একবার ঘুরে ঘুরে দেখে নেয়, তারপর দোলনার মতো ঝোলানো বেতের চেয়ারটায় বসে দোল খেতে থাকে। সামনেই পুজো আসছে, কথাটা মনে হতেই মেখলার মনটা ভালো হয়ে যায়। পুজোর একটা সুন্দর ঘ্রাণ আছে। ওর সবচেয়ে ভালো লাগে এ সময়টায় ওপার বাংলার পুজো সংখ্যাগুলো পড়তে। বিশেষ করে দেশ পত্রিকাটা। যাক, এবারের ছুটিটা ওর দারুণ কাটবে। 


৩.

রাফসান যখন বাসায় পৌঁছে ততক্ষণে রাত আটটা বেজে গেছে। বাসায় ঢুকতেই ছোট বোন সুমি উদবিঘ্ন গলায় বলে, 'কি রে ভাইয়া, তুই তো একদম ভিজে গেছিস। দাঁড়া তোয়ালে নিয়ে আসি।' 


রাফসান রেইনকোটটা নিয়ে সরাসরি বারান্দায় চলে আসে। আড়াই রুমের এই বাসাটায় এই একটাই বারন্দা। তাতেই রাফসান হিমশিম খেয়ে যায় সংসার চালাতে। বাবার পেনশনের কিছু টাকা পায় বলে কোনোমতে সামলে নেওয়া যায়। ওর চাকরিটা মোটে বছরখানেক হলো, তাই স্যালারিও খুব একটা বেশি না, অন্তত ঢাকা শহরের বিবেচনায়। 


রাফসান রেইনকোটটা বারান্দার দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে বসার ঘরে আসতেই আজাহার সাহেব চোখ কুঁচকে বলে, 'তুই বৃষ্টির মধ্যে মোটরসাইকেল চালিয়েছিস?' 


এই মোটরসাইকেল নিয়ে বাবার খুঁতখুঁত আছে, বার বার সাবধান করেন।রাফসান একটু আমতাআমতা করে বলে, 'এই অল্প একটু রাস্তা বাবা। তুমি চিন্তা করো না।' 


আজাহার বিরক্তের সাথে বলেন, 'চিন্তা করতাম না। তোদের কোম্পানি এমন সস্তা মোটরসাইকেল দেয় যে ভয় লাগে। আমাদের সময় ছিল জাপানিজ ইয়ামাহা মোটরসাইকেল, ১২০ সিসি। কী স্মুথ কন্ট্রোল! তার তুলনায় তোদের এইগুলো যেন টিনের খেলনাগাড়ি।' 


বাবার কথা শেষ হতে না হতেই মা এসে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, 'লেকচার বন্ধ করো। রাফসান, তুই তাড়াতাড়ি গোসলটা করে নে, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।' 


রাফসান হেসে গোসলে ঢোকে। 


আজাহার রাগী গলায় বলেন, 'নার্গিস, ইদানীং আমার সব কথাই তোমার কাছে লেকচার মনে হয়। মানুষের চাকরি শেষ হয়ে গেলে এমন করেই বুঝি তার দাম কমে যায়!' 


নার্গিস বিরক্তি নিয়ে বলে, 'কি কথার কি মানে। ছেলেটা এমন ভিজে আসছে, ওকে গোসল করতে না বলে তোমার গল্প করা ঠিক হলো?' 


আজাহার মাথা নাড়েন, বুঝতে পারার ভঙ্গিতে বলেন, 'হুম, ঠিক বলেছ। খাবার বেড়ে ফেলো, ও গোসল করে বের হলেই খাব।' 


সেদিন রাতে খাবার খেয়ে রাফসান সুমির রুমটায় আরাম করে আধশোয়া হয়ে মোবাইলে ফেসবুক দেখছিল। সুমি মোটে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার, আরও অনেকগুলো বছর বাকি। রাফসানের দায়িত্ব অনেকই। হুট করে ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। ভাবনাটা ভাবতেই একটু থমকে যায়, তারপর একটা বিষন্ন হাসি হাসে। 


সুমি আড়চোখে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকায়, তারপর বলে, 'কি রে, একা একা হাসছিস যে। মোবাইলে কি দেখিস?' 


রাফসান একটু থতমত খেয়ে যায়, সামলে বলে, 'আচ্ছা, এবার পুজো কবে রে? তোদের ইউনিভার্সিটি ছুটি কবে?' 


সুমি দেয়ালে ঝোলানো ভাইয়ার অফিসের ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়, তারপর অক্টোবর মাসের লাল দাগ দেওয়া তারিখটা দেখে। বলে, তোমার তো একদিন ছুটি, নয় তারিখ। আমাদের সাত দিন ছুটি আছে।' 


রাফসান একটু চিন্তা করে, তারপর বিড়বিড় করে বলে, 'তাহলে তো পুজো সংখ্যাগুলো চলে আসার কথা।' 


রাফসানের মনটা ভালো হয়ে যায়। পুজো আসলেই ওর সবগুলো সংখ্যা কেনা চাই। নতুন নতুন গল্প, পড়তেই দারুণ লাগে। আর গল্পগুলোও এত সুন্দর!


রাত বাড়তেই সুমি ড্রয়িং রুমে ওর বিছানাটা পেতে দেয়। একটা রুমে বাবা মা, আরেকটাতে সুমি। রাফসান ড্রয়িং রুমেই ঘুমায়। একটা সিংগেল ম্যাট্রেস কিনে নিয়েছে। সুমিই প্রতিদিন যত্ন করে বিছানাটা করে দেয়।


রাফসান ঘুমিয়ে পড়ার আগে আজকের গাড়ির ভেতর বসে কান্না করা সেই মেয়েটার মুখটা মনে পড়ে। অমন মায়া নিয়ে মেয়েটা কার জন্য কাঁদছিল? কার কথা মনে করে? আচ্ছা, শানুও কী ওর কথা মনে করে মনের অজান্তে কেঁদে ফেলে? নাকি জীবনের সুখের গাড়িতে চড়ে ওকে আজ ভুলেই গেছে?


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.