শেষ_পর্ব
"ভালোবাসি মেঘা "
Bangla Golpo - শেষ পর্ব - ভালোবাসি মেঘা - Bangla choti golpo |
মেঘার চোখ থেকে কথা হাত সরিয়ে বলে ওঠে
-- সারপ্রাইজ।
মেঘার চোখ এতক্ষণ অন্ধকারে আবৃত্ত ছিলো,এখন ছাড়া পেয়ে,আলোতে নিভো নিভো করছে,,মেঘা সামান্য চোখ কচলে,সামনে তাকায়,,আর সাথে সাথে উড়ে আসে এক ঝাক বেলুন। লাল রঙ্গের এক ঝাক বেলুন মেঘার আশ-পাশ জুড়ে পরে,,সাথে গিটারের টুংটাং শব্দ শুনা যায়। মেঘা ঘুরে সামনে তাকায়,, অভি সেখানে হেলে দুলে,গিটারের তালে তাল মিলিয়ে গান গাইতে গাইতে মেঘার দিকে এগিয়ে আসছে, মেঘা মুগ্ধ হয়ে শুনে গানের লাইন গুলো, কারণ এইটা মেঘার সেই প্রিয় গান টা
"ভালোবাসি বলে দাও আমায়, বলে দাও হ্যা সব কবুল "
গানের মাঝখানেই আশেপাশে জ্বলে ওঠে লাল নীল আলো,সেই আলোয় লেখা "ভালোবাসি মেঘা"।
মেঘা অবাক হয়ে আছে,কারণ আজ কথা শুভকে প্রোফজ করা কথা ছিলো,কিন্তু অভি কেমন করে চলে আসলো? আর এইসবই বা কি? তাহলে কি এই গুলো আগে থেকেই প্লেন করা? এইসবই ভাবছিলো মেঘা তখন, অভি গানের শেষ লাইনটি শেষ করে,মেঘার সামনে এসে,হাটু গেড়ে বসে এক মুঠো সাদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে
--- ভালোবাসি মেঘা
মেঘা কি করবে বুঝতে পারছে না৷ এখনো কি রাগ করে থাকবে নাকি,সব ঠেলে ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে নিবে....!
তখন পাশ থেকে কথা বলে ওঠলো,আর অপেক্ষা নয়,বলে দে এবার,জানুক পৃথিবী,ভালোবাসা সুন্দর হয়...!
মেঘা যেন কথার এমন বাক্যে ভরসা পায়,নিজেকে ভুলে দৌড়ে যায় অভির কাছে, ফুল গুলো নিয়ে,আষ্টেপৃষ্টে আকড়ে ধরে অভিকে।অভি মুচকি হাসে,,তার প্রিয়তমার রাগ ভেঙ্গেছে যে,অবশেষে।
পাশে দাড়িয়ে এইসব দেখছিলো কথা তখন শুভ এসে তার কানে কানে বললো,
-- শুধু কি অন্যের গুলাই দেখে যাবা, নাকি নিজেও জড়িয়ে নিবা কোনটা?
কথা লজ্জা পায়,,লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করে তার মুখ!
কথা আর শুভ প্লেন করেই মেঘাকে আর অভিকে এখানে এনেছে,ওদেরকে মিলিয়ে দেওয়াই ওদের কাজ ছিলো,আর সেটা পূরণও করলো।
সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে,মেঘা আর অভি পাশাপাশি হাটছে, সাথে শুভ আর কথা,,,! সন্ধ্যার আলো আধারিতে কথার চোখ পড়ে,সামনের ফুলের দোকান গুলোতে,সে শুভ কাছে আবদার করে বসে,তার বেলিফুলের মালা লাগবে,,শুভ আর কি ভাবে না করবে,,প্রিয়তমাকে খুশি করতে, এনে দেয় বেলি ফুলের মালা,,খোপায় খুজে দিতে দিতে মৃদু শব্দে উচ্চারণ করে
-- এইভাবেই সারা জীবন বায়না করে যেও কথা।
কথা মুচকি হাসে...! হালকা আলোয়,শুভর দিকে তাকিয়ে,এমন হাসিতে, শুভর প্রায় জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।
সেদিন বেশ রাত করেই চারজনে বাসায় ফিরে। মেঘা বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়, বেলকুনিতে গিয়ে দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। যা দেখে মৃদু হাসে মেঘা, কারণ এমনি এক বৃষ্টির মাঝে মেঘার দেখা হয়ে ছিলো অভির সাথে।
ফোন হাতে নিয়ে মেঘা অভির নাম্বারে ডায়েল করে,,সঙ্গে সঙ্গে রিসিভও হয়,,তখন মেঘা বলে ওঠে...
একটা বর্ষা হতে পারে একটা স্মৃতির কারণ,
বদলে দিতে গোটা জীবন
বৃষ্টির জলে চা
কিংবা
খোপায় গুজে দেওয়া কাঠগোলাপের মতো
ভালোবেসে যেও ইচ্ছে মতো....!!
কথা গুলো শুনে অভি মৃদু হাসে,,অভিমানি মেয়েটা ভালোবাসা শব্দটা কত সুন্দর ভাবেই না,উচ্চারণ করলো,, এমন ভাবেই তো সে চায় মেঘাকে সারা টি জীবন,,যে পার করবে তার সাথে সারাটি জীবন...!!
তারপর এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়,,অভির সাথে মেঘার সম্পর্কটা বেশ জমে ওঠে।লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা,,মাঝে মাঝে ক্লাস শেষে নদীর পাড়ে ঘুরা। একে অপরের আবদার পূরণ করা,,বেশ ভালেই কাটছিলো দিন গুলো....!
এরই মাঝে একদিন অভি জানায়,,সে মেঘাকে বিয়ে করতে চায়,,তাই সে কালকের মধ্যেই তার মা-বাবা কে নিয়ে মেঘাদের বাসায় আসতে চায়...!
মেঘা খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে, তবে কিছুটা ভয়ও পায়,কিভাবে বাসায় মেনেজ করবে.................।
সে দিন রাতে মেঘা তার পরিবারকে সবটা জানায়,,মেঘার মা প্রথমে রাজি হলেও তার বাবা ঘোর বিরোধিতা করে,,কিন্তু মেঘার মা একটু বুঝাতেই ওনিও রাজি হয়ে যান। মেঘাও সবটা অভিকে জানিয়ে দেয়...!!
তারপর পরের দিন প্লেন মাপিক অভি তারপর মা বাবাকে নিয়ে মেঘার বাসায় আসে...মেঘা তখনও বিশ্বাস করতে পারছে না,সে অবশেষে অভিকে নিজের করে পাবে।পাশে থাকা কথা মেঘার পাগলামি দেখে মৃদু হাসে,,আর মনে মনে বলে, অন্যের ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে....
গুরুজনরা বসে বিয়ের পাকা কথা ঠিক করে,,বিয়ে হবে আগামী মাসে,,। হাতে বেশ কিছু দিন সময় আছে...!
সে দিন রাতে মেঘার ঘুম হয় না আনন্দে,প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাবার আনন্দে...!
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়...! এরই মাঝে ওদের বিয়ের সময় এসে যায়....,মেঘা বেলকুনিতে দাড়িয়ে চা খাচ্ছিলো,,আর ভাবছিলো,অভির সাথে কাটানো তার সুন্দর মুহূর্ত গুলোর কথা...আকাশে বিশাল চাঁদ ওঠে,,অভি পাশে থাকলে মন্দ হতো না...! এই সব ভাবনার ঘোরেই মেঘা আচ্ছন্ন ছিলো,,হঠাৎ অনুভ করে, তাকে কেউ পিছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে,, হকচকি ওঠে পিছনে তাকাতেই সে অভিকে দেখতে পায়,,স্বতির নিঃশ্বাস পেলে,মেঘা অভির দিকে তাকায়.... মৃদু হেসে বলে
-- তুমি?
অভি মাথা নেড়ে বলে ওঠে
-- হ্যা আমি।
-- কিভাবে এলে এখানে?
-- চোরের মতো দেয়াল বেয়ে..!
মেঘা হাসে অভির কথায়,,অভিও শান্তি খুজে পায় মেঘার হাসিতে। মুগ্ধ হয়ে দেখে সে মেঘাকে।
চাঁদের আলোতে দুজন কে বেশ সুন্দর লাগছে। তখন অভি বলে ওঠে....
-- কাল কে শপিং করতে যাবো,,সাথে তুমিও যাবে,,শাশুড়ি আম্মুর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়ে গেছে,,তুমি রেডি থেকো কাল বিকালে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো...!
মেঘা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে
--আমি যাওয়ার কি দরকার,,তোমরা যাও,তোমাদের পছন্দই তো আমার পছন্দ।
-- না, না,সে টা হবে না তোমাকেই যেতে হবে,,!
মেঘা আলতো হেসে বলে
-- ঠিক আছে, বাবা,আর বলতে হবে না,,যাবো আমি।
তার পর অভি আলতো করে মেঘার কোপাল ছুয়ে যায় তার স্পর্শে। এক পা দু পা করে সেখান থেকে চলে যায় সে।
মেঘাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে,, পরের দিন সকালে ওঠে মেঘা নামাজ পড়ে নেয়।নাস্তা শেষ,,একটু হাটাহাটি করে, এইভাবে সকাল গড়িয়ে দুপুর,দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়,, মেঘা শুয়ে ছিলো, ঘুম আসছে না,চোখ বুজা অবস্থা...!
তখন ওর রুমে কিছুটা একটা পড়ার শব্দ শুনা যায়,মেঘা লাপিয়ে ওঠে,ফ্লোরে তাকায়,,,ফ্লোরে তাকাতেই সে একটা পাথর মোড়া কাগজ দেখতে পায়,,বেলকুনি দিয়ে কেউ এটা ওর রুমে পেলেছে,,কথা ওঠে গিয়ে,চিরকোট টা হাতে নেয়,,চিরকোট টা খুলে দেখে,, সেখানে ছোট্ট করে লেখা,,"ভালোবাসি মেঘা" ,,সঙ্গে সঙ্গে মেঘার পুরো মুখ হাসিতে চেয়ে যায়,,কারণ এটা যে অভি পেলেছে সেটা মেঘা নিশ্চিত।
এইসবের মাঝেই মেঘার ফোনে কল আসে,মেঘা ছুটে যায় ফোনের দিকে,,স্কিনে অভির নাম দেখে মুচকি হাসে,,ফোন রিসিব করতেই অভি বলে ওঠে
-- তাড়াতাড়ি বের হও,,বাইরে দাড়িয়ে আছি।
মেঘা আনন্দ জড়িত কন্ঠে বলে ওঠে,,
--বাইরে দাড়িয়ে আছো কেন? বাড়িতে আসো
অভি দুষ্টুমির চলে বলে ওঠে
-- না এখন আর যাবো না,,কাল হলুদ, পরশু বিয়ে,,তখন একেবারেই এসে তোমাকে নিয়ে যাবো,,এখন তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসো..। পুরো বাড়ি সাজনো হয়ে গেছে,,একটা বিয়ে আমেজ চলে এসেছে,,আত্নীয় একজন দুজন করে প্রায় চলে এসেছে,
মেঘা বেলকুনিতে গিয়ে রাস্তায় উকি দেয়,,তখন সত্যি সে অভিকে রাস্তায় দেখতে পায়,,গাড়িতে হেলান দিয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলছে,,পড়নে তার সাদা রঙ্গের একটা শার্ট,শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত গুজে রেখেছে,,সাথে কালো রঙ্গের একটা প্যান্ট।বেশ সুন্দরই লাগছে তাকে ....!মেঘাকে বেলুনিতে দেখে অভি মৃদু হাসে,,এক চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার বার্তা পাঠায় সে...!
মেঘা হাসে,প্রিয় মানুষটির পাগলামিতে...!
অভি ড্রাইভ করছে,আর পাশে মেঘা বসে আছে, মেঘা এক পলক অভির দিকে তাকিয়ে গাড়ির কাচটা খুলে দেয়,,আর সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর বাতাসে উড়তে থাকে মেঘার খোলা চুল,,কিছুটা চুল গিয়ে অভির মুখ পড়ে,,অভি আলতো করে চোখ বন্ধ করে নেয়।গাড়ি থামিয়ে বলে ওঠে
-- তুমি কি আমাকে বিয়ের আগেই মারতে চাও নাকি?
মেঘা অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করে
--মানে?
--মানে হচ্ছে, এই যে খোলা চুল গুলো আমার মুখে এসে পড়ছে,এতে তো আমি প্রায় পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে এখন মৃদু ঘ্রাণে...! আর চলন্ত গাড়িতে ড্রাইভ না করে, চোখ বন্ধ করে রাখলে মৃত্যু ছাড়া তো উপায় নেই।
মেঘা লাপিয়ে ওঠে,অভির মুখে হাত চেপে ধরে,রাগি রাগি গলায় বলে ওঠে
-- আর একবার যদি এমন অলুক্ষণে কথা বলছো তো,,তোমার একদিন কি আমার একদিন...!
কথাটা বলেই মুখ ঘোমরা করে বসে পড়ে মেঘা।
অভি মৃদু হেসে, মেঘার দিকে তাকায়,মেঘার কোপালে,স্পশের ছোয়া দিয়ে বলে ওঠে
-- ঠিক আছে আর বলবো না,,এবার তো হাসো,মুখ গুমড়া তোমাকে মানায় না মেঘা...!
মেঘা হাসে,অভি আবারো প্রশান্তি খুজে পায়....!!
শপিং মলে গিয়ে টুকটাক জিনিস কিনে মেঘা। অভির পছন্দের একটা শাড়ি নিয়েছে,,যদিও আগেই সব কেনা হয়ে গেছে।তবু অভির পছন্দ হয়েছে বলেই নেওয়া..! এরই মাঝে অভি এক মুঠো কাচের চুড়ি কিনে, মেঘার হাতে পড়িয়ে দেয়,,মেঘার পুরো হাত ঝলমল করছে, কাচের চুড়িতে...!
সন্ধ্যার আলো আধারিতে,,হাটছে মেঘা আর অভি,সামনে গাড়ি রাখা,,গাড়িতে ওঠতে গিয়েই অভি খেয়াল করে রাস্তার ওপাশে ফুলের দোকান,,বেশ সুন্দর লাগছে ফুল গুলো কে,,সে ভাবে একটা বেলিফুলের মালা মেঘার খোঁপায় পড়িয়ে দিলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ,অভি মেঘাকে গাড়িতে বসিয়ে ফুল আনতে চলে যায়,মেঘা গাড়ির কাচ খুলে অভির দেখে,,,অভি ফুলের দোকানে গিয়ে একটা বেলি ফুলের মালা নেয়,মেঘা তখন আলতো করে গাড়ির জানায় মাথা রেখে চোখ বুজে,কয়েক সেকেন্ড না যেতেই বিকট শব্দে লাফিয়ে ওঠে মেঘা,,তড়িগড়ি করে পাশে তাকিয়ে দেখে,তার প্রিয় মানুষটি রাস্তার মাঝখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মেঘা বোধ শক্তি হারিয়ে যায়,কোন রকমে দৌড়ে অভির কাছে যায়,,অভিকে কোন রকমে টেনে তার দু পায়ের ওপর রাখে,,! বুক ফাটা চিৎকার দিয়ে ওঠে মেঘা, এতক্ষণে চারপাশ ঘিরে গেছে হাজারো লোকে।অভির সাদা শার্ট ধারণ করছে লাল বর্ণে।মেঘা চিৎকার করে অভি ডাকে,অভির তখন মৃদু চোখ খুলা,সে হাত ঝাপটে পকেট থেকে ফুলটা বের করে, কাপাকাপা হাতে, কোন রকমে মেঘার হাতে পেচিয়ে দেয়,ফুলটা,,সাদা বেলি ফুলের মালাটাও রক্তে রক্তাত্ত হয়ে গেছে।মেঘা আবারো চিৎকার দিয়ে অভিকে জড়িয়ে ধরে,,অভি তখন মেঘার কোপাল আদর একে দেয়,,নিভো নিভো চোখে মেঘাকে দিকে তাকিয়ে,কোন রকমে বুক চেপে ধরে, কিছুটা অস্পষ্ট সুরে মেঘাকে বলে ওঠে
--"ভালোবাসি মেঘা"......
যা কেবল মেঘাই শুনতে পায়,,কথাটা বলেই হাজারো অপ্রাপ্তির শ্বাস পেলে,চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় অভি।
মেঘা অভির দিকে তাকিয়ে দেখে,অভির নিথর দেহ ছাড়া আর কিছুই নেই,শেষ নিঃশ্বাসটি তার কাধে পেলে,পাড়ি জমিয়ে, না ফেরার দেশে.....!
মেঘা তখন অভিকে বুকে জড়িয়ে ধরে,আকাশের দিকে তাকিয়ে বিকট চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়.......!