Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৩) - life story - love story

 

বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৩)

Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৩) - life story - love story
Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৩) - life story - love story 


মেখলার যখন ঘুম ভাঙে ততক্ষণে সকাল দশটা বেজে গেছে, তাও আলিস্যি ছাড়ছে না। সাধারণত ও সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে, কিন্তু এখন অখণ্ড অবসর তাই ওঠার তেমন তাড়া নেই। আর গত কয়েকমাস পরীক্ষার জন্য এত বেশি পড়তে হয়েছে যে শরীর এখন বিশ্রাম চায়। 


মেখলা আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কেমন আলসেমি লাগছে। আবার শুয়ে পড়ে। আধোঘুমে টের পায় সামনের রাস্তা থেকে রিক্সার টুনটুন শব্দ ভেসে আসছে, তরকারিওয়ালার হাঁক ভেসে আসছে, কোথাও খুটখাট শব্দ হচ্ছে। বাইরের জীবন থেমে নেয়, শুধু ওর নিজের জীবটা কেমন একটা জায়গায় আটকে আছে। নাহ, গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে। বাবার বিজনেসে তো বসবেই, তবে তার আগে নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা করবে। ভাবতে ভাবতে মনটা চনমনে হয়ে ওঠে।


এর মাঝেই মা এসে তাড়া দেন, 'মেখলা, এবার উঠে পড়। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করবি, আয়।'


মেখলা একটা সুন্দর হাসি দেয়, 'গুড মর্নিং আম্মু।' 


রাহনুমা একটা স্নেহের হাসি হাসেন, মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে যায়। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেই তো আর এমন করে কাছে পাবেন না। কেন যে এমন নিয়ম! 


মেখলা এবার আর দেরি করে না, বিছানা ছাড়ে। ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা খেতে খেতে আজকের পত্রিকাটা দেখে। দেখতে দেখতে ব্যবসা বাণিজ্যের পেজটায় আসে। নাহ, এখন থেকে এই পেজটা ভালো করে দেখতে হবে। এতদিন ভুলেও এই পেজটা দেখত না ও। মেখলা বিড়বিড় করে পড়ে, 'ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, নরসিংদীতে সঞ্চয়ী ব্যাংকের নতুন শাখা উদ্বোধন, রেগলারের নতুন ব্র‍্যান্ডের আইসক্রিম এল বাজারে।' 


শেষের খবরটায় ও একটু আগ্রহ বোধ করে। দু'দিন আগেই এই নতুন আইসক্রিমের লঞ্চিং হয়েছে। আইসক্রিম ওর খুব প্রিয়, যদিও খেলেই গলা ব্যথা আর ঠান্ডা লেগে যায়। 


মেখলা এবার মনোযোগ দিয়ে খবরটা পড়ে, 'বাজারে প্রচলিত আইসক্রিমের চেয়ে এই নতুন আইসক্রিমটা একদমই আলাদা, লো ফ্যাট থাকাতে ওজন বাড়ার অযথা দুশ্চিন্তা নেই।' 


বাহ, দারুণ তো। হ্যাঁ ওজনটাও তো ঠিক রাখতে হয়। এখন তো একটু খেলেই ওজন বেড়ে যায়। মেখলা এবার পরের পেজে যেতেই রেগলার গ্রুপের আইসক্রিমের একটা বড় এড দেখতে পায়, একজন নামকরা মডেলে আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে মোহময়ী ভঙ্গিতে খাচ্ছে। এরা পারেও! তবে আইসক্রিম প্রমোশনের কনসেপ্টটা সুন্দর, লো ফ্যাট আইসক্রিম। এমন নতুন কিছু ভাবতেই ওর ভালো লাগে। নাহ, একটা নতুন কিছু করতে হবে। ভাবনাটা অস্থির করে তোলে মেখলাকে। 


এমন সময় নিচের ল্যান্ডলাইন থেকে দারোয়ান জামালের ফোন আসে, 'ম্যাডাম, আপনার নামে একটা পার্সেল এসেছে।' 


মেখলা ভ্রু কুঁচকে বলে, 'আমার নামে? কী পার্সেল?' 


নিচ থেকে জামাল বলে, 'ম্যাডাম, বলতে পারলাম না, আমি পার্সেলটা উপরে পাঠিয়ে দিলাম।' 


মেখলা মনে করার চেষ্টা করে গত কয়েকদিনে ও কিছু অর্ডার করেছে কি না। মনে করতে পারে না। একটু পরেই রান্নার মেয়েটা ফাতেমা একটা পার্সেল নিয়ে আসে। মেখলা হাতে নিয়ে পার্সেলটা খুলে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে, 'দেশ পত্রিকা'! 


ও আবার দেখে, ব্যাপারটা সত্যি! এবারের পুজোর দেশ পত্রিকাই! খুশি হতে যেয়েও থমকে যায়, আচ্ছা কে পাঠাল এটা? কাইয়ুম মামা? কিন্তু উনি তো ওর বাসার ঠিকানাটা জানেন না। তাহলে? এই দেশ পত্রিকা কেনার কথা তো আর কেউ জানে না। কোনো বন্ধু পাঠাবে এটা প্রায় অসম্ভব। জন্মদিন হলেও কথা ছিল। 


হঠাৎ একটা অসম্ভব কথা মনে হয়, আচ্ছা, সেদিনের তীব্র গরমে ফুলহাতা শার্টের সাথে ব্লেজার পরা ওই  ছেলেটা পাঠায়নি তো? ছেলেটা কী ওর গাড়ির পিছু পিছু এসে বাসার ঠিকানা জেনে গেছে? 


গম্ভীরমুখে পত্রিকাটা উল্টাতেই এক টুকরা কাগজ নিচে পড়ে। মেখলা ঝুঁকে কাগজটা কুড়িয়ে নেয়, একটা মোবাইল নাম্বার লেখা, সাথে একটা চিরকুট, 'গতবার আপনার মতো আমিও দেশ পত্রিকাটা পাইনি। আপনার আগ্রহ দেখেই পাঠালাম। এখন তো কেউ এমন করে গল্প পড়ে না, তাই। পড়া শেষে আমাকে ফেরত দিলেই হবে, রাফসান।' 


মেখলা রাগ করতে যেয়েও হেসে ফেলে, সেই ছেলেটাই! অদ্ভুত তো। সেদিন তাহলে ওর পিছু নিয়েছিল? এমন গায়ে পড়া ছেলে সাধারণত ভালো হয় না। একটা জিনিস ভেবে ছেলেটাকে ক্ষমা করা যায়, ছেলেটা ওর মতোই গল্প পড়তে পছন্দ করে। আর ওর প্রিয় সংখ্যাটাই পাঠিয়েছে। ছেলেটাকে একটা ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানানো দরকার। মোবাইলটা হাতে নিয়ে এবার নাম্বারটা আগে সেভ করে, তারপর ছোট্ট করে একটা মেসেজ লিখে। 


তারপর আরাম করে ওর প্রিয় দোলনাটাতে গিয়ে পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বসে, একটা অপার্থিব আনন্দ নিয়ে মেখলা পড়া শুরু করে।


২.

রাফসান আজ সকালেই মনোযোগ দিয়ে ওর নতুন লঞ্চ করা আইসক্রিমটার সেলস রিপোর্ট দেখছিল। এই ক'দিনে বেশ ভালো সেলফিং হয়েছে, দোকানদাররা বেশ ভালোই অর্ডার করেছেন। এখন দেখার বিষয় মানুষ কতটা কেনে। মানুষজন কেনা শুরু করলেই দোকানদাররা রি-অর্ডার করবে। তখনই বোঝা যাবে আইসক্রিমটা ভালো চলবে নাকি খারাপ চলবে। আজকের প্রথম সারির সব ক'টা পত্রিকাতে খবরটা এসেছে, সাথে মিস কোহেকাফের আইসক্রিম খাওয়ার এডটাও। অনলাইনেও এডটা দিয়েছে ও, সাথে ফেসবুকে ওদের পেজ থেকেও বুস্ট করা হচ্ছে। এখন সব ঠিকঠাক হলেই হয়। 


এই যখন ভাবছে ঠিক তখন মোবাইলে একটা মেসেজ আসে, অচেনা নাম্বার। মেসেজটা খুলতেই রাফসানের বুকট ধক করে ওঠে, সেই মেয়েটা মেসেজ পাঠিয়েছে! এই মেসেজটার জন্যই গতকাল রাত থেকে ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সেদিন ও মেয়েটার নিকেতনের বাসার ঠিকানাটা টুকে এনেছিল। তারপর একটা কুরিয়ার সার্ভিসে 'দেশ' পত্রিকাটার সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ভয়ে ভয়ে ছিল, মেয়েটা না ফোন করে আবার ঝাড়ি দেয়। মেসেজ আসাতে স্বস্তি বোধ করে ও। 


রাফসান আগ্রহ নিয়ে মেসেজটা পড়ে, 'পত্রিকাটা পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন কাজ আর কখনোই করবেন না। আমার পড়া শেষ হলেই আপনাকে জানাব। মেখলা।'


রাফসান দুইবার পড়ে মেসেজটা, নাহ, মনে হচ্ছে মেয়েটা বেশি রাগ করেনি। পড়া শেষ হলে জানাবে, মানে নিশ্চয়ই ফোন করবে। যাক, একটা সুযোগ পাওয়া যাবে তাতে সেদিনের ব্যাপারটা জেনে নেওয়া যাবে। 


রাফসান এবার মেখলার মেসেজের উত্তর লিখে, 'তাড়াহুড়ো করে পড়ার দরকার নেই, আপনি ধীরে সুস্থে পড়ুন। আর যে গল্পগুলো আপনার ভালো লাগবে সেগুলো একটা রঙপেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে রাখবেন। তাহলে ওগুলোই আগে পড়ব। প্রথমে কোন গল্পটা দিয়ে শুরু করেছেন, শীর্ষেন্দুর? রাফসান।' 


মেখলা সবেমাত্র শীর্ষেন্দুর নতুন গল্পটা শুরু করেছে, ঠিক তখনই মেসেজটা আসে। দেখে রাফসান ওর মেসেজের উত্তর করেছে। দেখবে না ভেবেও মেসেজটা পড়ে, হতাশ হয়ে ভাবে ও বিরাট ভুল করেছে এই ছেলেকে মেসেজ করে। এখন সে নানান ছুতোয় ওকে মেসেজ করবে, কিছুক্ষণ পরে হয়ত ফোনও করবে। ইশ, কেন যে বোকামিটা করল! এভাবেই মানুষ জড়িয়ে পড়ে, তারপর কষ্ট পায়। নাহ, এবার এটা ও হতে দেবে না। কিন্তু ছেলেটা বুঝল কি করে যে ও শীর্ষেন্দুর গল্পটাই আগে পড়বে! 


সেদিন পুরো দুপুর, বিকেল গড়িয়ে যায় মেখলার কোনো মেসেজ আসে না। রাফসান বার বার মোবাইল চেক করে আর হতাশ হয়। নাহ, মেয়েটা মনে হয় রাগ করেছে। থাক আর মেসেজ দেবে না ও। 


বিকেলের দিকে গল্পটা যখন পড়া শেষ হয় মেখলার অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতি হয়। কী সুন্দর করে জীবনবোধের কথা লিখেছেন প্রিয় লেখক। জীবনে দুঃখ আসে, কষ্ট আসে, কিন্তু মানুষ তা জয় করে সামনে এগিয়ে যায়। নতুন করে ভালোবাসতে হয়, বাঁচতে হয়। নাহ, মনটাই ভালো হয়ে গেছে মেখলার। রাফসানের কাছে এবার সত্যিই কৃতজ্ঞতা বোধ করে। মেসেজ দেবে না ভেবেও মেসেজটা লিখে, 'হ্যাঁ, আপনার ধারণা সঠিক। শীর্ষেন্দুর গল্পটা দিয়েই শুরু করেছিলাম, অদ্ভুত জীবনবোধের গল্প। আবারও আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন। মেখলা।' 


সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্তে মেখলার মেসেজটা আসে। সারাদিনের ভ্যাপসা গরমটা কেটেছে, একটু ঠান্ডা বাতাস বইছে। কোথাও হয়ত বৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকেই ঠান্ডা বাতাসটা আসছে। রাফসান মেসেজটা পড়ে, মনে হয় এমন মন জুড়ানো ঠান্ডা বাতাসটা বুঝি মেখলার ওদিক থেকেই আসছে। মেসেজটা পড়েই রাফসানের মন ভালো হয়ে যায়। যাক, মেয়েটা রাগ করেনি, আর করলেও গল্পটা হয়ত জাদু করেছে। 


রাফসান দ্রুত টাইপ করে, 'বাহ, শুনেই ভালো লাগছে। আপনি দাগ দিয়ে রাখুন, কিন্তু ভুলেও আগে থেকে গল্পটা বলে দিয়েন না, প্লিজ। রাফসান।'


রাফসানের মেসেজটা আসতেই মেখলা মৃদু হাসে, ছেলেটা ওর মতোই গল্প পাগল। কেউ যদি আগেই গল্পটা বলে দেয় তখন ইচ্ছে করে তাকে খেয়ে ফেলতে। পড়ার আমেজটা নষ্ট হয়ে যায়। 


মেখলা একটা লাল রঙপেন্সিল বের করে শীর্ষেন্দুর গল্পে অনেক মায়া নিয়ে ছোট্ট একটা দাগ কাটে। 


৩.

গুলশান ডিসিসি মার্কেটের পশ্চিম গেটে হাসান মামার ফুচকা, চটপটির দোকান। ফুটপাতের উপরেই একটা বড় রঙিন ছাতা দিয়ে নিচে কাঠের বেঞ্চিতে বসার ব্যবস্থা। কয়েকটা লাল প্লাস্টিকের চেয়ারও আছে। সন্ধ্যার পর পর দোকানটা জমে ওঠে। 


মেখলা ওকে আজ এখানেই আসতে বলেছে। সকালে রাফসান যখন অফিস করছিল ঠিক তখন মেখলার মেসেজটা এসেছিল, 'আমার পড়া শেষ, আপনি ফ্রি থাকলে আজ সন্ধ্যায় ডিসিসি মার্কেটের পশ্চিম গেটে হাসান মামার ফুচকার দোকানটায় চলে এসেন। আর হ্যাঁ, ব্লেজার পরে আসার দরকার নেই (একটা হাসির ইমোজি)।'


রাফসানের খুব হাসি পেয়েছিল, মেয়েটা তো দুষ্ট আছে। রাফসান আর দেরি করেনি, জানিয়ে দিয়েছিল ও আসবে, আর ব্লেজার না পরেই। 


সন্ধ্যা নামছে, রাফসান ডিসিসি মার্কেটের দক্ষিণ দিকের রাস্তা বরাবর অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ ক্রিম কালারের টয়োটা প্রিয়াস গাড়িটা খুঁজছে। হঠাৎ ওর মোবাইলটা বেজে ওঠে, চেয়ে দেখে মেখলার ফোন। দ্রুত হাতে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা গলা পাওয়া যায়, ' সাদা টি-শার্ট সাথে ছাই কালারের প্যান্ট, এটাই তো আপনি?'

রাফসান চমকে ঘুরে তাকিয়ে দেখে মেখলা ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, জলপাই রঙের একটা ফতুয়া সাথে একটা গাঢ় বাদামি প্যান্ট। মেয়েটাকে একেক সময় একেক রকম লাগে। রাফসান ফোনটা রেখে অবাক গলায় বলে, 'আপনি কোন দিক দিয়ে আসলেন? আপনার গাড়ি তো দেখলাম না।' 


মেখলা চোখ কুঁচকে বলে, 'আপনি তো আমার গাড়িও চিনে রেখেছেন। আমি রিক্সায় অন্যদিক দিয়ে এসেছি, তাই দেখেননি। চলুন বসি ওখানটায়।' 


বসতে বসতে ও বলে, 'আমি মেখলা, আপনিই তো রাফসান?'


রাফসান মাথা নাড়ে, 'হ্যাঁ। আপনার নামটা সুন্দর। নামের অর্থটাও।' 


মেখলা হাসে, 'হ্যাঁ, প্রথম পরিচয়ে সবাই আমার নামের প্রশংসাটাই করে। তারপর এগোয়।'


রাফসান বোকার মতো একটা অপ্রস্তুত হাসি দেয়। তারপর সামনের বেঞ্চিটাতে বসতেই মেখলা ওর হাতে পত্রিকাটা দিয়ে বলে, 'আপনাকে সত্যিই অনেক ধন্যবাদ। গল্পগুলো খুব ভালো, আমার যেগুলো ভালো লেগেছে সেগুলো দাগ দিয়ে রেখেছি। জানিনা আপনার ভালো লাগবে কি না। আজ আপনাকে আমি খাওয়াব। হাসান মামা, দুই প্লেট ফুচকা দেন।' 


শেষ কথাগুলো বলার সময় একটু হাসে মেখলা। 


রাফসান ওর কথা শুনছিল আর এক দৃষ্টিতে দেখছিল। মেয়েটার চোখ দুটো দারুণ সুন্দর, হাসলে গালে টোল পড়ে। গায়ের রঙটা পলিমাটির মতো সুন্দর, মসৃণ। চুলগুলো হালকা বাদামি। একটা সুন্দর পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। 


রাফসান মাথা নেড়ে বলে, 'আপনি যে রাগ করেননি তাতেই আমি খুশি। সেদিন যেমন করে না করলেন, আমি তো ভয়েই ছিলাম।' 


মেখলা মিষ্টি করে হাসে, রাফসানের মনে হয় মানুষের হাসি এত সুন্দর হবার কি দরকার। তারপর বলে, 'হ্যাঁ, রাগ করার মতোই কাজ করেছেন। আপনি সেদিন আমার পিছু পিছু বাসা পর্যন্ত এসেছিলেন, আমি টেরই পাইনি।' 


রাফসান হেসে মাথা নেড়ে বলে, 'সেদিন না। তার আগেই আমি আপনার বাসা চিনি, আপনাকে চিনি।' 


মেখলা থমকে তাকায়, অবাক গলায় বলে, 'সেটা কী করে?' 


রাফসান ছোট্ট নিশ্বাস ছাড়ে, তারপর বলে, 'এই মার্কেটে দেখা হবার আগের দিন বিকেলে আপনার গাড়ি বিজয় সরণি মোড়ে থেমেছিল, ট্রাফিক সিগন্যালে। হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নামে। আপনি গাড়ির ভেতর থেকে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন, চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছিল। দৃশ্যটা দেখে আমার কোথাও কিছু হয়ে গিয়েছিল। আমি সেদিন আপনার গাড়ির পিছু নিয়েছিলাম।' 


মেখলা নিশ্বাস বন্ধ করে রাফসানের কথাগুলো শুনছিল। মনটা হঠাৎ করেই আবার বিষন্নতার চাদরে মুড়ে দিল ছেলেটা। হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে, সেদিন ও কাঁদছিল তানভিরের কথা মনে করে। পাশেই মোটরবাইকে থাকা ছেলেটা ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়েছিল। সেই ছেলেটাই যে রাফসান, ভাবতেই অবাক লাগছে। 


মেখলা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে, 'কেন পিছু নিয়েছিলেন?' 


রাফসান লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়, বলে, 'আপনি কেন কাঁদছিলেন, তাই জানতে।' 


মেখলা বিরক্ত গলায় বলে, 'আপনি কী করে ভাবলেন আপনাকে আমার কান্নার কারণ বলব?' 


রাফসান মাথা নাড়ে, বলে, 'হ্যাঁ, সেটাই তো। আপনি বাসায় ঢুকে পড়লেন, তখন আমার মনে হলো বোকার মতো কাজ করেছি। এমন সম্পূর্ণ একজন অপরিচিত মানুষের কাছে আপনি কেনই বা আপনার কষ্টের কথা বলবেন।'


মেখলা তীক্ষ্ণ গলায় বলে, 'তাহলে?'


রাফসান অসহায় গলায় বলে, 'আমার মনে হয়েছিল আমার মতো আপনারও একটা লুকিয়ে রাখার মতো কষ্ট আছে। তাই একটু মিলিয়ে নেবার জন্যই অমন বোকার মতো আপনার পিছু নেওয়া।' 


মেখলা এবার চুপ হয়ে যায়, তারপর অস্ফুটে বলে, 'আপনারও লুকিয়ে রাখার কষ্ট আছে? আপনি একটা মুহূর্ত দেখেই আমার কষ্টটা টের পেয়ে গেলেন? আর শুধু সেটা জানতেই আপনি আমার পিছু নিয়েছেন সেদিন?'


শেষ দিকে মেখলার গলাটা কোমল হয়ে আসে। একটা ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যায় রাফসানকে। ও গাঢ় গলায় বলে, 'আপনি কি আমাকে বলবেন সেদিন আপনি কেন অমন করে কাঁদছিলেন? আমি তাহলে একটু মিলিয়ে নিতাম।' 


মেখলার কেন জানি এই সম্পূর্ণ অপরিচিত ছেলেটার কাছে নিজেকে নিঃসংকোচ লাগছে। একে ওর কষ্টের কথাগুলো বলা যায়। হাসান মামা ফুচকা দিতেই ও প্লেটটা হাত বাড়িয়ে নেয়, তারপর বলে, 'হ্যাঁ, বলব। তার আগে আসুন ফুচকাটা শেষ করি। পরে খেতে ভালো লাগবে না।' 


রাফসান বোঝে মেয়েটা একটু সময় নিচ্ছে, কিন্তু ঠিক বলবে। ওর তাড়াহুড়ো নেই, ও অপেক্ষা করবে। 


(চলবে)


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.