Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৪) - love story - life story

 

বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৪)

Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৪) - love story - life story
Bangla choti golpo - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৪) - love story - life story 


মেখলা আজ সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। বাইরে এখনই হালকা একটা কুয়াশার মতো পড়েছে, অথচ শীত আসতে দু'মাস বাকি। মেখলা বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই পাখির কিচিরমিচির শুনে তাকায়, তারপর অবাক হয়ে খেয়াল করে একটা বড় মাটির টবে নিচে লতা পাতার মধ্যে ছোট্ট একটা পাখি বাসা বেঁধেছে। সেটাই কিচিরমিচির করছে। দৃশ্যটা দেখে ও অভিভূত হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখে একটা বুলবুলি পাখি, চোখের কোণে আর লেজের নিচে একটু লাল রঙ। নিশ্চয়ই ডিমে তা দিচ্ছে, ক'দিন পরেই ছানা ফুটবে। ব্যাপারটা ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যায় মেখলার। মাকে বলতে হবে যেন এদিকে সবাই কম আসে, অন্তত আগামী দুটো সপ্তাহ। বুলবুলির বাচ্চা ফুটে বেরোতে এ সময়টুকু দরকার। আজ সকালটাই সুন্দর হয়ে গেল। 


আরেকটা কথা মনে হতেই মনটা ভালো হয়ে যায়, আজ রাফসানের সাথে আবার দেখা হবে। ছেলেটা খুব ভালো, সেদিনের পর আরও দু'বার দেখা হয়েছে। প্রায়ই কথা হয়। ওর আইসক্রিম মার্কেটিং এর নানান কূট কৌশল শোনে। ছেলেটার মাঝে নতুন কিছু করার একটা অদম্য আগ্রহ আছে, এটা খুব ভালো লাগে। মেখলা নিজেও একটা কিছু করতে চায়। রাফসানের সাথে ওর এই জায়গাটায় দারুণ মিল। তাই সম্ভব হলে ও রাফসানের নতুন নতুন আইডিয়াটা কাছে থেকে দেখার সুযোগ ছাড়ে না। এই যে আজ যেমন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ ওরা একটা আইসক্রিম ফেস্টিভ্যাল এর অনুষ্ঠান করবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে ইচ্ছেমতো আইসক্রিম খাওয়া যাবে। এমন ইভেন্টগুলোতে মেখলা এমনিতেও যেত, তার উপর রাফসান থাকাতে যাওয়ার আগ্রহটা তীব্র হয়। 


দুপুরে খেয়ে বহুদিন পর একটু সাজে মেখলা। সুন্দর একটা জামা, সাথে মানানসই কানের দুল, ব্রেসলেট, গলায় ছোট্ট একটা চেইন। রাহনুমা আড়চোখে মেয়ের সাজ দেখে, কিছু বলেন না। মনে মনে খুশি হন, মেয়েটা স্বাভাবিক হচ্ছে আবার। 


মেখলা মাকে বলে বেরিয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাফসানের দু'বার মেসেজ এসেছে, 'আইসক্রিম কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি চলে আসুন।' 


মেখলা হাসে, আইসক্রিম আবার ঠান্ডা হয় কী করে! ওর মতোই দুষ্ট ছেলেটা। কিন্তু মনের ভেতর ঠিক একটা কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ওর মতোই। এ বিষয়ে মেখলা এখনও কিছু জিজ্ঞেস করেনি, রাফসানও ওকে বিব্রত করেনি। ওরা দু'জনেই দু'জনকে সময় দিচ্ছে, কতটুকু বলা যায়, তাই হয়ত বুঝে নিচ্ছে। 


মেখলা যখন পৌঁছে ততক্ষণে ইন্টারকন্টিনেন্টাল এর পুলসাইডটা লোকে লোকারণ্য। বেশিরভাগই কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়ে। তা রাফসানদের অফারটাও লোভনীয়। যারা আইসক্রিম খেতে ভালোবাসে তারা এই সুযোগটা ছাড়বে না। মেখলাকে দেখে রাফসান আনন্দিত মুখে হাত নাড়ে, কাছে এসে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে, 'আহা, সব আইসক্রিম ঠান্ডা হয়ে গেছে। বসুন গরম করে দিচ্ছি।' 


মেখলাও দুষ্টুমি করে বলে, 'একদম ধোঁয়া ওঠা আইসক্রিম চাই। দেখেন, এটা না আবার নতুন কোনো ব্র‍্যান্ড হয়ে যায় আপনাদের। আমাদের মতো যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়, তাদের জন্য এমন গরম গরম আইসক্রিম বানালেন।' 


রাফসান মুখটা কপট গম্ভীর করে বলে, 'আইডিয়াটা কিন্তু মন্দ না। এমন হতেই পারে। আইসক্রিমের নাম হবে Smoky Icecream.' 


মেখলা হেসে বলে, 'হয়েছে, আর নতুন চিন্তা করতে হবে না। দেখি, আপনারা কী কী আয়োজন করেছেন।' 


রাফসান এবার হেসে ওকে নিয়ে সামনের দিকে এগোয়। মেখলাকে আজ দারুণ লাগছে, কিন্তু বলতে গিয়েও বলে না। আবার কী মনে করে বসে কে জানে। 


রাফসান ঘুরে ঘুরে ওকে বিভিন্ন ফ্লেভার আর প্রেজেন্টেশন এর আইসক্রিমগুলো দেখায়। তারপর ওর নতুন লঞ্চ করা লো ফ্যাট আইসক্রিমটা দেখিয়ে বলে, 'এটা সম্পূর্ণ আমারই আইডিয়া। ভালো না?'


মেখলা উৎসাহের সাথে মাথা নেড়ে বলে, 'হ্যাঁ তো। আমি এটার বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম পেপারে। তখন অবশ্য আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ওঠেনি। ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া।'


মেখলার প্রশংসা শুনে রাফসান খুব খুশি হয় মনে মনে। ওকে এক স্কুপ লো ফ্যাট আইসক্রিম দিতে বলতেই মেখলা নিজে থেকেই বলে, 'রাফসান, আপনি বরং আপনার কাজ করুন। আমি আমার মতো ঘুরে ঘুরে দেখি আর খাই। কিছু লাগলে আপনাকে বলব।' 


ঠিক এটাই মাথায় ঘুরছিল, কী করে মেখলাকে বলে যে ওর এখানে অনেক কাজ আছে। যাক, মেয়েটা ঠিক বুঝতে পেরেছে ওর মনের কথা। রাফসান হাত নেড়ে চলে যায়। অন্য কাস্টমারদের সামলাতে সামলাতে ও দূর থেকে মেখলার উপর একটা চোখ রাখে। মেয়েটা আসলেই আইসক্রিম ভালোবাসে। 


বিকেল পাঁচটায় যখন মেলাটা শেষ হয় তখন রাফসান একটু কাছে আসার সুযোগ পায়। মেখলা গম্ভীরমুখে বলে, 'এই আপনার অতিথিপরায়ণতা! মানুষকে দাওয়াত দিয়ে একটুকু সময় না দিয়ে দূরে দূরে থাকা।' 


রাফসান মুখটা করুণ করে বলে, 'মস্ত ভুল হয়ে গেছে। কি করব বলুন, পুরো দায়িত্বটা যে আমারই।'


মেখলা এবার মিষ্টি হেসে বলে, 'আমি জানি, আর এই দায়িত্বটা আপনাকে দেওয়া হয়েছে কারণ আপনি যোগ্য। আর আপনার লো ফ্যাট আইসক্রিমের ভাবনাটাও চমৎকার। ইশ, আমি যদি এমন নতুন নতুন আইসক্রিম বানাতে পারতাম!' 


রাফসান সিরিয়াস মুখে বলে, 'পারবেন না কেন? নিশ্চয়ই পারবেন। আপনাকে একটা গল্প শোনাই। বিখ্যাত মার্কিন আইসক্রিম ব্র‍্যান্ড 'বেন এন্ড জেরি'র প্রতিষ্ঠাতা বেন কোহেন আর জেরি গ্রিনফিল্ড ছিলেন বাল্যবন্ধু। তারা দু'জন মিলে এই বিখ্যাত আইসক্রিম ব্র‍্যান্ডটা দাঁড় করান। জানেন তারা আইসক্রিম বানানো শিখেছিল কোথা থেকে?' 


মেখলা আগ্রহের সাথে বলে, 'কোথা থেকে?'


রাফসান নাটকীয় গলায় বলে, '১৯৭৭ সালে ওনারা আইসক্রিম বানানো শিখেছিলেন পেন্সিলভেনিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির এক দূরশিক্ষণ কর্মশালা থেকে। মানে আজকের যুগের অনলাইন কোর্স এর মতো। বুঝতে পেরেছেন, মনের ইচ্ছেটাই যে আসল।' 


মেখলা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর কথা শুনছিল, চোখের সামনে একটা অদেখা আইসক্রিম ফ্যাক্টরির ছবি ভেসে ওঠে। সেখানে ও মাথায় একটা হেড কাভার পরে, এপ্রন পরে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে নতুন ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। মেখলা বিড়বিড় করে বলে, 'ঠিক বলেছেন, মনের ইচ্ছেটাই আসল।' 


রাফসান খেয়াল করে মেয়েটা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। সত্যিই আইসক্রিম বানানো শিখবে নাকি! 


কিছুক্ষণ পর মেখলাকে বিদায় জানাতে ও লবির কাছে আসে। মেখলা ড্রাইভারকে ফোন করতেই হতাশ গলায় বলে, 'আমার গাড়ি আসতে আরও আধা ঘন্টা দেরি হবে।' 


রাফসান সহজ গলায় বলে, 'আমার বাইক আছে, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। শুধু শুধু দেরি করবেন কেন, একটু পরেই তো সন্ধ্যা নেমে যাবে।' 


বাইকের কথা শুনেই মেখলা হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায়, নিচু অথচ দৃঢ় গলায় বলে, 'আমি অপেক্ষা করব, আপনি চলে যেতে পারেন।'


রাফসান একটু থতমত খেয়ে যায়, কী হলো মেয়েটার! এই তো বেশ ছিল। নাহ, বাইকের কথাটা বোধহয় বলা ঠিক হয়নি। রাফসান এবার তাড়াহুড়ো করে বলে, 'না না, আমার যাবার দেরি আছে। আসুন তার চেয়ে লবিতে বসি। আপনার গাড়ি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আজ ওরা আমাদের ফ্রি কফি খাওয়াবে, এত বড় একটা অনুষ্ঠান করলাম ওদের এখানে।' 


মেখলা বোঝে রাফসান ওর জন্যই থেকে গেল। মনটা খারাপ হয়, ওর সাথে শুধু শুধু রুঢ় ব্যবহার করল। আসলে বাইকের কথা মনে হলেই তানভিরের কথা মনে পড়ে যায়। প্রায়ই ওকে নিয়ে ঘুরতে যেত। 


মেখলা মাথা নেড়ে সহজ গলায় বলে, 'আচ্ছা, চলুন, আপনার গল্প শুনি। আর ফ্রি কফি পেলে তো কথাই নেই।' 


রাফসান একটু স্বস্তি বোধ করে, যাক মেয়েটা একটু হলেও সহজ হয়েছে। 


ওরা বসতেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল এর ইভেন্ট ম্যানেজার নকিব ভাই এগিয়ে আসেন, হাসিমুখে বলেন, 'রাফসান ভাই, কী দেব বলেন?'


রাফসান হেসে বলে, 'একটু কফি দিলেই হবে।' 


নকিব অবাক গলায় বলে, 'কি বলেন, শুধু কফি? একটা রেড ভেলভেট পেস্ট্রি দেই?'


রাফসান মাথা নাড়তেই নকিব সাহেব একজনকে বলে দেন। যাবার সময় বলেন, 'এরপর নতুন কোনো ইভেন্ট করলে আমাকে ফোন দিয়েন। একদম সুন্দর ব্যবস্থা করে দেব। আর আজকের প্রোগ্রাম তো ঠিকঠাক ছিল?' 


রাফসান সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে, তারপর বলে, 'জানাব আপনাকে নকিব ভাই।' 


নকিব ভাই চলে যেতেই মেখলা হেসে দুষ্টুমির গলায় বলে, 'বিজনেস রিলেশন।' 


রাফসান হাসে, 'জ্বি, ঠিক ধরেছেন। স্বার্থ ছাড়া তো কেউ কাউকে মনে রাখে না, কিছু করেও না।' 


মেখলা থেমে যায়, একটু তাকিয়ে থাকে, তারপর উদাস গলায় বলে, 'সবাই না। কিছু বোকা মানুষ কোনো কিছুর আশা ছাড়াই আরেকটা মানুষকে মনে রেখে দেয়, কষ্ট পায়।' 


রাফসান মেখলার গলায় বিষাদটা টের পায়। বোঝে মেখলার সেই কষ্টের কথা যা এখনও ও জানে না। 


রাফসান এবার কথা ঘোরাতে বলে, 'আপনাকে আজ খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে।'


মেখলা একটা বিষন্ন হাসি দেয়, তারপর বাঁকা গলায় বলে, 'মিষ্টি লাগছে, কিন্তু সুন্দর না। আমি জানি আমার গায়ের রঙটা ফর্সা না, তাই কেউ আমাকে সুন্দর বলে না, খুব বেশি হলে বলে মিষ্টি লাগছে। তানভিরও তাই বলত, আমি প্রথম দিকে বুঝতাম না, খুশি হয়ে যেতাম। ভাবতাম ও বুঝি অনেক ভালোবাসে আমায়। আমি ডুবে গেলাম। কিন্তু যেদিন বুঝতে পারলাম ততদিনে তিনটা বছর পার হয়ে গেছে। কথা ছিল আমার মাস্টার্স পরীক্ষার পর পরই বিয়ে হবে। কিন্তু একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি হবার পর পর ও বদলে যেতে লাগল। আপনাদের ভাষায় দারুণ সুন্দরী এক মেয়ের সাথে ওকে প্রায়ই দেখা যেতে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যেত, বলত কিছু না। কিন্তু একদিন আমি ওদের দেখে ফেললাম, সেদিন তানভির আর অস্বীকার করেনি। 


আমি চলে এসেছিলাম, কিন্তু ভুলতে পারিনি। আমি সত্যিই ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম, তাই সেদিন যখন মাস্টার্স এর শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে ফিরছিলাম তখন হঠাৎ করেই মনটা কেমন হয়ে গেল। সেদিন আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন হবার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। আচ্ছা, বলুন তো কেন এমন হয়? এই আমি কেন ওই বিশ্বাসঘাতক তানভিরকে ভুলতে পারিনি?' 


রাফসান মন দিয়ে শুনছিল, ওর নিজের সাথে মেখলার কষ্টগুলো মিলিয়ে নিচ্ছিল। ওর কথা শেষ হতেই রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর বলে, 'এই বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। শানুকে আমি ভুলতে পারিনি। আমাদের পাঁচ বছরের রিলেশন, সেটা সেই টিপিক্যাল চাকরি না হবার কারণেই ভেঙে গেল। ও দেখতে সেই তথাকথিত সুন্দর ছিল, তাই পাত্রের অভাব ছিল না। শেষে একজন বিসিএস চাকুরিজীবির কাছেই বিয়ে হয়ে গেল। বিদায় বেলা বলেছিল, ওরও নাকি কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কী করে ও জড়ায়, তাতে নাকি ভালোবাসা মরে যাবে একদিন। শানু আমার পাঁচ বছরের সম্পর্কটা এক মুহুর্তে অস্বীকার করে চলে গেল। কষ্ট পেয়েছিলাম ভীষণই। আমারও আপনার মতো মনে হয়েছিল ও বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু দেখেন আমিও আপনার মতো একবারে ভুলে যেতে পারিনি। তাই সেদিন আপনার কান্না দেখে খুব জানতে ইচ্ছে হয়েছিল, আপনিও কী আমার মতো কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন।'


মেখলা ব্যথিত চোখে তাকায়, ও ভাবতেই পারেনি রাফসানও ওর মতো একটা ভারী দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছে। সহানুভূতির গলায় বলে, 'আপনাকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব? কিন্তু কেন এমন হয় বলুন তো? আমরা ভুলতে পারিনা কেন?' 


রাফসান একটু চুপ করে থাকে, তারপর বলে, 'আমি এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। পরে মনে হয়েছে আসলে দুটো মানুষ কখনোই একসাথে সমানভাবে প্রেমে পড়ে না। একজন গভীরভাবে পড়ে, আরেকজন কম। যে মানুষটা গভীরভাবে প্রেমে পড়ে তার কষ্ট বেশি। হয়ত ওপাশের মানুষটা ঘন্টার পর ঘন্টা কোনো খোঁজ নেয়নি, মেসেজ সিন করেনি। তাও এপাশের মানুষটা রাগ করেনি, বরং অপেক্ষা করেছে। এই অবহেলাটুকু সে বুঝতেও পারে না। সে আরও অপেক্ষা করে, আরও অবহেলা পেতে থাকে। আমার মনে হয় দু'জন একসাথে প্রেমে পড়লে এমন হতো না। তাই একজন কষ্ট পায়, পেতেই থাকে। আমি আর আপনি সেই মানুষ যারা প্রেমে পড়েছিল, কিন্তু তাদের প্রেমে বিপরীত পক্ষ পড়েনি। তাই তারা বিশ্বাস ভাঙার পরও আমরা তাদের ভুলতে পারিনা। একটা মোহেই ঘুরপাক খেতে থাকি।'


মেখলা তন্ময় হয়ে ওর কথা শুনছিল। আর ভাবছিল, এইমাত্র রাফসান যা বলল তা কেন জানি ওর কাছে ভীষণ সত্য বলে মনে হয়। আসলেই তো, তানভির কত দিন ওর পাঠানো মেসেজ ঘন্টার পর ঘন্টা আনসিন ফেলে রাখত। ও অভিমান করত, রাগ করত, তারপর আবার একটু আদর করে বললেই সব মেনে নিত। কিন্তু তানভির দু'দিন ঠিক থাকত তারপর আবার আগের মতো। যদি ওর মতো করে তানভিরও ওকে অনুভব করত তাহলে ও কষ্ট পেত, কিন্তু তা হয়নি। একটা রুঢ় সত্য ওর কাছে ধরা দেয় আজ। রাফসানকে আজ আগের দিনগুলোর চেয়ে অনেক বুঝদার একজন মানুষ বলে মনে হয়। সেই প্রথম দিনের গায়ে পড়া ছেলেদের মতো আর মনে হয় না। কী সুন্দর করে ওর মনের একটা অজানা কথা জানিয়ে দিল। 


মেখলা উদাস গলায় বলে, 'আপনি একদম ঠিক বললেন। আমার এখন মনে হচ্ছে আমি শুধু শুধু একাই প্রেমটা বয়ে বেড়াচ্ছি যার কোনো মানেই নেই। কিন্তু আপনি ব্যাপারটা বুঝেও কেন ঝেড়ে ফেলেননি?' 


রাফসান এবার দুষ্টুমি করে দুই হাত জোরে ঝাড়া দেয়, তারপর বলে, 'এই আজ ঝেড়ে ফেললাম, আপনি সাক্ষী।' 


ওর বলার ধরন দেখে মেখলা হেসে ফেলে, তারপর ও নিজেও দু'হাত শুন্যে ঝাঁকি দিয়ে বলে, 'আমিও ঝেড়ে ফেললাম।' 


সেদিন বহুদিন পর মেখলার নিজেকে অনেকখানি হালকা মনে হয়। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়। রাফসান ওকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়। 


ফেরার পথে মেখলা চোখটা বন্ধ করে ভাবে, আচ্ছা, যত সহজে ও বলল তত সহজেই কী ঝেড়ে ফেলা যায়? রাফসানও কী পেরেছে? 


(চলবে)

Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.