Bangla Golpo | তোমাকে বলার ছিল সপ্তম পর্ব | bangla choti

 


তোমাকে বলার ছিল

সপ্তম পর্ব

Bangla Golpo | তোমাকে বলার ছিল সপ্তম পর্ব | bangla choti
Bangla Golpo | তোমাকে বলার ছিল সপ্তম পর্ব | bangla choti 


চা-পাতা, চিনি -খরচ করে করে  উজাড় করে দিয়েছে I মনে হয় যেন বাপের পয়সায় কেনা I


 ঘরের ভেতর থেকেই  কথাটা কানে গেল   তৃণার I বড় চাচী রান্নাঘরে থালা-বাসন  আছড়ে শব্দ করছে;  আর একা একাই বকে  যাচ্ছে I অবশ্য বিড়বিড় করে বলছে না I ইচ্ছে করেই এমন ভাবে বলছে, যেন কথাগুলোর তৃণার কানে যায় I হঠাৎ করে প্রচন্ড কান্না পেয়ে গেল তৃণার I বাড়িতে ও   খায়না বললেই চলে I সকালে না খেয়ে বেরিয়ে যায় I দুপুরে হলে গিয়ে খাবার কিনে খায় I রাতে মাঝে মাঝে খেয়ে ফেরে I কখনো  চায়ের সাথে টুকটাক খেয়ে নেয় I খাবার বলতে বাড়িতে   শুধু  চা টাই খায়  I এটা নিয়েও এত কথা শুনতে হচ্ছে ! কান্নাটা প্রায় গলার কাছে চলে এসেছিল; তখনই তৃণার মনে হল সুলতানা আন্টি বলেছিলেন  যে নিজের অধিকারের জন্য নিজেকেই লড়তে  হয় I বলেছিলেন তুই যত মাথা নিচু করে  থাকবি, সবাই তোকে  ততই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করবে I  নিজের অধিকার আদায় করে নিতে শেখ I  নিজের ভালো দেখার মধ্যে দোষের কিছু নেই I


তৃণা  ঘর থেকে বেরিয়ে এলো Iবড় চাচা টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে I টুম্পা টিভি দেখতে দেখতে আইসক্রিম খাচ্ছে I তখনো রান্নাঘর থেকে একইরকম ভাবে আওয়াজ ভেসে আসছে I তৃণা বড় চাচার সামনে দাঁড়িয়ে থমথমে গলায় বলল

- তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে চাচা I

  সামাদ সাহেব তাকালেন না I একমনে খেয়ে যেতে  লাগলেন I তৃণা বললো

-অনেকদিন থেকেই তোমাদের বলতে চাচ্ছি I আমি  কাল হলে উঠে যাব I এখানে আমার পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে I

সামাদ সাহেব আতকে উঠলেন I সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে তৃণা হলে উঠে যাওয়ার কথা বলছে I কিন্তু তার মা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে  যদি তৃণা হলে থাকে, তাহলে তার খরচা বাবদ  দোতালার ভাড়াটা ওকে বুঝিয়ে দিতে I দোতালার ভাড়া 12000 টাকা I  এখন তৃণাকে এক পয়সা দিতে হয়না I  উল্টো  তৃণা মাসে মাসে এক হাজার  করে টাকা দেয় I সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে I সামাদ সাহেব হুংকার দিয়ে উঠলেন

- মেয়েটা একটু চা  খায় এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে I  সারাদিন খালি ভ্যাজর ভ্যাজর I ভালো লাগেনা  আর বাড়িতে থাকতে I

 তারপর তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন

- যা তো  মা  দুইকাপ চা বানা I  এক  কাপ  তোর আর এক কাপ আমার I তারপর গলা উঁচিয়ে বললেন,

 রান্না ঘর থেকে একটু বের হলে ভালো হয় I

 তৃণা বড় চাচা কে  চা দিয়ে  নিজের চা  নিয়ে ছাদে চলে গেল I 


তৃণাদের   ছাদটা তেমন বড় নয় I খুব একটা যত্নও করে না কেউ I শুধু কাজের মেয়েটা এক  বেলা  এসে ঝাড়ু দিয়ে যায় I তৃণা কিছু গাছ লাগিয়েছিল Iঅযত্নে অযত্নে সেগুলো ও মরে গেছে I তৃণার খুব  শখ    ওর নিজের একটা  ছাদ  হবে I সেখানে অনেক গাছ লাগাবে  ও I  পানির  ট্যাংকটার পিছনে  খানিকটা ফাঁকা জায়গা I দুই দিক থেকে ঘেরা;  তাই বাইরে থেকে দেখা যায় না I এই জায়গাটা তৃণার  খুব প্রিয় I ও মাঝে মাঝে এখানে বসে বই পড়ে I 


আজ আকাশ খুব পরিষ্কার I তৃণা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল, অজস্র তারা-ভরা রাতের আকাশ Iতৃণার খুব ইচ্ছা করে ছাদের মধ্যে শুয়ে থাকতে I  চায়ের কাপ পাশে রেখে হেলান দিয়ে বসলো তৃণাI রাত  বোধ হয় ভালোই হয়েছে I পাশ থেকে মোবাইলটা নিল সময় দেখার জন্য I একটা মেসেজ এসেছে I খেয়াল করা হয়নি I তৃণা দেখল সুজন মেসেজ পাঠিয়েছে I

- সরি তোমার ফোন ধরতে পারিনি I তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ I ফোন করা যাবে ?


 তৃণা নিজেই ফোন করলো


- তোমার শরীর এখন কেমন সুজন ?

-ভালো

- তাহলে আজকে ক্লাসে আসলে না যে ?


- সকালে একটু খারাপ ছিল I সারাদিন ঘুমিয়েছি I এখন খুব ঝরঝরে লাগছে I তোমাকে কি ফোন করে বিরক্ত করলাম I

- একেবারেই না I

- তোমার কি মন খারাপ তৃণা ?

 তৃণা  একটু  চমকালো;

- না তো

- তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে I একটু ভিডিওটা অন করবে ?

 তৃণা হেসে ফেললো I বলল

- আমি এখন ছাদে I ভিডিও  অন করলে তুমি কিছু দেখতে পাবে না I

- এত রাতে তুমি ছাদে কি  করো ?

- আকাশ দেখি I আজকে আকাশ  খুব পরিষ্কার I অনেক তারা দেখা যাচ্ছে I 

-তাই ? তোমার কথা শুনে তো আমারও দেখতে ইচ্ছে করছে I কতদিন ছাদে যাওয়া হয় না I দাঁড়াও আমিও যাচ্ছি I 

- না তুমি যেওনা I একটু ঠান্ডা আছে I তোমার আবার শরীর খারাপ করবে I 

-আচ্ছা I 

- তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম I

-কি ?

- কালকে স্টেরিও কেমিস্ট্রির একটা পরীক্ষা আছে I ম্যাডাম নোটিশ বোর্ডে দিয়েছে 

- হঠাৎ ? ম্যাডাম তো ছুটিতে ছিল !

- হ্যাঁ কাল থেকে ক্লাস শুরু হবে I তোমাকে কেউ বলেছে নিশ্চয়ই ?

- না কেউ বলেনি I কেউ ফোনও করেনি;

- ও

- তৃণা একটা কথা তোমাকে অনেকদিন ধরে বলব ভাবছি I বলা হচ্ছে না…

- কি বলো..

- থ্যাঙ্ক ইউ I  তুমি আমার জন্য যা করেছ, সেটা অনেক কাছের বন্ধু না হলে কেউ করেনা I

- আমি আবার কি করলাম ?

 সুজন একটু হাসলো  তারপর বলল;

- আমাকে দেখতে যতটা বোকা মনে হয়, আমি আসলে ততটা বোকা নই I এই যে তুমি রাতের বেলা আমাকে ফোন করো পড়ার কথা বল,  এটা তুমি কেন করছ আমি জানি I যেন আমার পড়াশোনার ক্ষতি না হয় I তুমি জানো এই সময়টাতে  হিয়া আমাকে কবিতা পাঠাতো I কি জানো  তৃণা,  ছোটবেলা থেকে আমার কোনো বন্ধু নেই I সবাই সব সময় প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছে I কিন্তু আমি যখন তাদের মাঝে গেছি, ওদের আড্ডা থেমে গেছে I কেউ আমার সামনে সহজ হতে পারেনি I আমি সবার কাছে দূরেরই থেকে  গেছি I 

কিছুক্ষণ দুজনই চুপ করে রইলো I একসময় তৃণা নীরবতা ভেঙে  বলল

- তুমি কি আমার কাছে  হিয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাও ?

- নাহ I আমার এখন ওর মুখটা ও ঠিক মত মনে পড়ে না I

- এসব কী  বলছো?

- সত্যিই বলছি I  ওর সঙ্গে আমার কখনো সেই রকম কোন কানেকশন তৈরি হয়নি I তবে হ্যাঁ , যখন রাত হয় আমার ভীষণ কষ্ট হয় I প্রতি রাতেই ও আমাকে তিনটা করে কবিতা পাঠাতো I ওই সময়টা আসলে আমার খুব অস্থির লাগে I কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না I

- ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তেI

-  হু I

-কবিতা তোমার খুব প্রিয় তাই না… 

- হ্যাঁ 

তৃণার হঠাৎ মনটাই খারাপ হয়ে গেল I এভাবে ছেলেটার ইমোশন নিয়ে খেলা উচিত হয়নি I তৃণা জানত সুজনের কবিতা খুব প্রিয় I লাইব্রেরীতে দেখেছে ও I সুজন যখন পড়তে বসে,  তখন ওর ব্যাগ থেকে সব বই বের করে টেবিলের উপর রাখে I তৃণা  লক্ষ্য করেছে,  ওখানে  অনেক কবিতার বই থাকে I 


সুজন খুব বিষন্ন গলায় বলল 

-  আচ্ছা তৃণা  ,  তুমি তো আবৃত্তি কর I আজকে আমাকে একটা কবিতা শোনাবে ?

-তৃণা সচরাচর কাউকে কবিতা  পড়ে শোনায় না I  কিন্তু আজকে  ওর মনটা খুব অন্যরকম হয়ে আছে I ও বলল, আচ্ছা I


হয়তো এই পাহাড় সমান উঁচু হতে চায় কেউ

আমি মাটিতে মেশা ঘাস হতে ভালোবাসি,

যার মাড়িয়ে যাওয়ার সে মাড়িয়ে যাক ঘাস

তবু ঘাসের বুকেই জমে শিশিরবিন্দু ;

হয়তো কেউ পার হতে চায় দীর্ঘ দূরের পথ

আমি বাড়ির উঠোনে লুটিয়ে থাকি,

উঠানের কোণে হয়ে থাকি চারাগাছ

সেইখানে ঐ দূর আকাশকে ডাকি ;

হয়তো কেউ পাখিদের মতো চায় দুইখানি ডানা

আমি ভালোবাসি শিশুদের টলমলে হাঁটা, উড়তে চাইনা,

চাই এইখানে নিরিবিলি শুয়ে থাকি

যার হওয়ার সে হোক জোয়ার,

আমি হতে চাই ভাটা ;

হয়তো কেউ হতে চায় ঐ পাহাড়ের মতো

আমি হাত-পা গুটিয়ে মাটিতেই শুয়ে থাকি,

লেগে থাক এই শরীরে শুধুও কাদামাটির ঘ্রাণ

যে কাছে আছে তাকেই আমি আরো কাছাকাছি ডাকি II

অনেকক্ষণ পর্যন্ত সুজন চুপ করে রইলো I তৃণা একটু হেসে বলল,


- কি হল, আমার অডিয়েন্স এরকম নীরব হয়ে গেল কেন ?


-  আচ্ছা   তৃণা  একটা কথা জিজ্ঞেস করব,  সত্যি করে বলবে ?

- হ্যাঁ বল

- এইযে  হিয়া আমাকে এত কবিতা পাঠাতো এগুলো কি সব আসলে ওই পাঠাতো ?

 তৃণা চমকে উঠলো I কোন জবাব  খুঁজে পেল না I


চলবে ………

 লেখনীতে

 অনিমা হাসান


 এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে  তার নাম ‘’ইচ্ছা’’  লিখেছেন মহাদেব  সাহা I

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.