Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট৬ - bangla choti golpo - love story - life story

বোকা প্রেমিকা

পার্ট৬

Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট৬ - bangla choti golpo - love story - life story
Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট৬ - bangla choti golpo - love story - life story 


জল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নয়।অন্য মেয়ে যেমন কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই সেজে আয়নায় নিজেকে দেখে।বিভিন্ন রঙঢঙ করে ছবি তুলে।জল তেমন নয়।জীবনে এই প্রথমবার জল নিজে একা সাজলো।ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে গিয়ে জলের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়।ছোট বেলায় কোথাও যাওয়ার আগে জলের মা জলকে লিপস্টিক পরিয়ে আর কালো টিপ দিয়ে সাজিয়ে দিতো।তখন জলের জীবন অনেক সুন্দর ছিলো।ছোট্ট সংসারে কোনো অশান্তির ছায়া ছিলো না।কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সব পালটে যায়।বাবা-মার মধ্যে দাম্পত্য কলহ,বিচ্ছেদ,জলের একা হয়ে যাওয়া,বর্ষণের সাথে পরিচয়,ওর ভালোবাসার অভিনয়।এত এলোমেলো তো হওয়ার কথা ছিলো না জলের জীবনের!কেন ভাগ্য এত নির্মম হলো জলের প্রতি?

জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কাঁপা কাঁপা হাতে কাজলের মাথা খোলে জল।এই প্রথম জল চোখে কাজল দেবে।ভয় করছে তার।আগে কখনো এই জিনিসটা ব্যবহার করা হয় নি তো!কাঁপা কাঁপা হাতে চোখে কাজল দিতে লাগে জল।অদক্ষ হাত হওয়ায় বেশ কয়েকবার চোখে খোঁচা লাগে জলের।শাড়ির আঁচল দিয়ে আলতো করে জল চোখ মুছে। সাজা হয়ে গেলে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায় জল।কি যেন মিসিং!হ্যাঁ,টিপ নেই।শুধুমাত্র একটা টিপ বাঙালি নারীদের সাজে পরিপূর্ণতা এনে দেয়।বিশেষ করে শাড়ির সাথে!কিন্তু জলের কাছে তো টিপ নেই!কাজল দিয়ে কপালে ভ্রু জোড়ার মাঝখানে ছোট্ট বিন্দু আঁকে জল।ব্যস!এই বার জলের সাজ পরিপূর্ণ।


বের হতে হতে জল বর্ষণকে ফোন দেয়।


" বর্ষণ তুমি আসছো তো?"


" জল তুমি মুখ ফুটে আমার কাছে আবদারটা করেছো।আমি না এসে থাকতে পারি?"


" আচ্ছা আমি বের হয়েছি।তুমি আসো।"


জল ফোন কেটে দেয়।একটা রিক্সা ঠিক করে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়।কিন্তু মাঝ রাস্তায় জ্যাম জলের পুরো মেজাজটাই বিগড়ে দেয়।ঢাকাবাসী মনে হয় জীবনের অর্ধেক সময় এই জ্যামে বসেই কাটিয়ে দেয়।জ্যামে বসে অলস সময় পাড় করতে জল বর্ষণের ইনবক্সে ঢুকে।পুরোনো চ্যাট গুলো পড়তে লাগে।তখন কত মায়া,টান,গুরুত্ব,ভালোবাসা ছিলো।আর এখন!সব অভিনয়।সত্যিই!সম্পর্ক পুরনো হয়ে গেলে রাতে মাথাব্যথা হয়,ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা হয়,মুড সুইং হয়,গুরুত্ব,মায়া,টান সব কমে যায়।কেউ তখন নতুনে মজে।আবার কেউ পুরোনো স্মৃতিটাকেই আগলে ধরেই একসাথে বাঁচতে চায়।তখন একসাথে থাকাটা খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায়।থাকে শুধু ফর্মালিটির জন্য খোঁজ খবর নেওয়া।

পার্কে গিয়ে দেখে জল বর্ষণ আগে থেকেই সেখানে জলের জন্য অপেক্ষা করছে।জল আসতেই বর্ষণ জলের কথা মতো লাল গোলাপ দেয়।এতবছরের সম্পর্কে আজ বর্ষণ প্রথম জলের চোখে মুখে খুশীর ছাপ দেখতে পেলো।তবে জলকে আজ কেন যেন অস্বাভাবিক লাগছে বর্ষণের।অস্বাভাবিক লাগবে না ই ই বা কেন?দীর্ঘদিনের সম্পর্কে জলকে বর্ষণ কখনো হাসতে দেখেনি,সাজতে দেখেনি।আজ হঠাৎ  এভাবে জলকে সাজতে আর হাসতে দেখে বর্ষণের কাছে অস্বাভাবিক লাগাটাই স্বাভাবিক।তার মধ্যে হাসিটা যদি হয় মাত্রাতিরিক্ত আর অস্বাভাবিক!কেন যেন জলকে বর্ষণের বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে।কোনো কারণ ছাড়াই হাসছে আজ জল।প্রচুর হাসছে।যেন দীর্ঘদিনের জমিয়ে রাখা হাসি আজ একবারে প্রকাশ করছে। তারপর হঠাৎ করেই সে বর্ষণের দিকে নিষ্পাপ চাহনিতে তাকায়।শান্ত গলায় বলে,,,


" আচ্ছাহ, বললে না আমায় আজ কেমন লাগছে।"


বর্ষণ আরও ঘাবড়ে যায়।জলের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে সে।শুকনো মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,


" তুমি তো সবসময় সুন্দর।তবে আজ তোমায় অন্যরকম সুন্দর লাগছে।ভয়ংকর সুন্দর।"


জল বর্ষণের কথা শুনে কিছুক্ষণ বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে।সেই চাহনিতে।নিষ্পাপ চাহনি।বর্ষণের আতঙ্ক,ভয় তীব্রতর হতে থাকে জলের এমন আচরণে।তারপর হঠাৎ করেই জল ফিক করে হেসে দেয়।কেমন সাইকোদের মতো আচরণ করছে জল।বর্ষণ কাঁপা কন্ঠে জলকে বলে,,,


" জল! Are you ok?"


" yea! I'm totally fine..."


কথাটা বলে আবার হেসে দেয় জল।বর্ষণ বেকুবের মতো জলের পানে চেয়ে থাকে।ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে।নিস্তব্ধ জায়গায় জলের আচরণ ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।তার মধ্যে আজ অমাবস্যা।জল বর্ষণের কাছে এক অদ্ভুত আবদার করে বসে।তার নাকি অনেক দিনের ইচ্ছে বর্ষণের সাথে সে অমাবস্যার রাতে হাঁটবে।বাঙালি প্রেমিকারা সাধারণত প্রেমিকার সাথে পূর্ণাঙ্গ চাঁদ উপভোগ করার আবদার করে।কিন্তু জলের আবদারটা বেশ অনেকটাই ভিন্ন।বর্ষণ শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,


" বেশ তো!চলো তোমায় হেঁটে হেঁটে বাসায় পৌছে দিই।তোমার ইচ্ছেও পুরণ হলো আমার ইচ্ছেও পুরণ হলো।"


" তোমার ইচ্ছে?কি তোমার ইচ্ছে?"


" তোমার বাড়ি দেখার।"


" সম্ভব না।"


" কেন?"


" আমি বলছি তাই।দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন করবে না প্লিজ।"


বর্ষণ চুপ হয়ে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বর্ষণ জলকে বলে,,,


" আচ্ছা জল তোমার ভয় করছে না?"


" ভয় করবে কেন?"


" নিরিবিলি জায়গায় বসে আছো।তারমধ্যে অমাবস্যার রাত।আশে পাশে কোনো প্রাণী নেই।"


" নিরিবিলিও কথা বলে।আর কে বলছে প্রাণী নেই।পেছনে দেখো।"


জলের কথায় বর্ষণ পিছন ফিরে তাকায়।এক জোড়া উজ্জ্বল চোখ দেখতে পায় সে।আকস্মিক ভাবে দেখায় বেশ ভয় পেয়ে যায় বর্ষণ।ভয়ে লাফ দিয়ে কিছুটা সরে বসে বর্ষণ।জল হাসতে হাসতে বলে,,


" ভয় পাওয়ার কি হলো?ওটা তো একটা বিড়াল।"


কথাটা বলে জল গিয়ে বিড়ালটাকে পরম যত্নে কোলে তুলে নেয়।বিড়ালটা সম্পুর্ন কালো বর্ণের।গ্রাম বাংলার মানুষেরা বলে কালো বিড়াল নাকি অশুভ।বর্ষণ জলকে বলে,,,


" জল কালো বিড়াল বলে খুব একটা সুবিধার না।এটা অশুভ। "


" কে বলেছে?"


" মানুষ জন তাই বললাম।"


" মানুষজন তো কত কিছুই বলে।সঠিক কয়টা?আমি মনে করি মানুষই অশুভ।যদিও মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।তাই বলে এমন ভাবে পৃথিবীতে নিজেদের রাজত্ব বিস্তারের চেষ্টা করছে যেন পৃথিবীটা মানুষের একার।অন্য কারও বাঁচার অধিকার নেই পৃথিবীতে।অথচ সৃষ্টিকর্তা কোনো কিছু বিনা কারণে বা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি।"


জলের কথায় যুক্তি আছে।পৃথিবীতে আজ মানুষই ভয়ংকর অশুভ প্রাণী।মানুষের জন্যই আজ পৃথিবীতে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিলীন।বৈশিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধিরও একটি বড় কারণ মানুষ ও তার কর্মকাণ্ড।বর্ষণ চুপ করে বসে থাকে।জল বিড়ালটাকে তখনও আদর করতে ব্যস্ত।


" আচ্ছা বর্ষণ!আমায় বিয়ে করবে কবে তুমি?"


জলের আকস্মিক প্রশ্নে বর্ষণ চমকে যায়।নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলে,,,


" এইতো।মাস্টার্সটা কমপ্লিট হলে কোনো একটা ছোটখাটো চাকরি পেলেই তোমায় বিয়ে করবো।"


" সত্যি বলছো তো?আমি আবার প্রায়ই স্বপ্নে দেখি তুমি অন্য মেয়ের সাথে।"


" স্বপ্ন তো স্বপ্নই।বাস্তবে কোনো মিল নেই এর।"


" আমি কিন্তু তোমায় আগেই বলেছি বর্ষণ।তুমি ছাড়া আমি একা।এই বিশাল পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।সবার মতো আমায় ঠকিয়ো না তুমি বর্ষণ।"


জলের করুণ কন্ঠে কথা গুলো শুনে বর্ষণের জলের প্রতি নতুন করে মায়া জন্মাতে থাকে।অনুসূচনা জাগে মনের ভিতর।নিজেকে পৃথিবীর সবচে নিকৃষ্ট মানুষ মনে হয় বর্ষণের।কত ভাবেই না সে জলকে ব্যবহার করেছে।ঠকিয়েছে।ব্যবহার করেছে,ঠকিয়েছে বললে ভুল হবে।সে এখনো জলকে ব্যবহার করে যাচ্ছে, ঠকিয়ে যাচ্ছে।অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বারবার জলের সাথে প্রতারণা করছে।


চলবে,,,ইনশাআল্লাহ 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.