Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা পার্ট৫ - Bangla choti golpo - love story - life story

 

বোকা প্রেমিকা

পার্ট৫

Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট৫ - Bangla choti golpo - love story - life story
Bangla Golpo - বোকা প্রেমিকা  পার্ট৫ - Bangla choti golpo - love story - life story 


ইদানীং জল খুব একাকিত্বে আছে।যদিও একাকিত্ব তার নিত্যসঙ্গী। তবে ইদানীং তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।বর্ষণকে সে ফোন দেয়।সাথে সাথে বর্ষণ কল রিসিভ করে।


" বিজি আছো?"


" তোমার জন্য আমি সব সময় ফ্রী প্রিয়তমা।"


" বিকালে একটু সময় দিতে পারবে আমায়?ঘুরতাম একটু তোমার সাথে।"


জলের কথায় বর্ষণ অবাক হয়ে যায়।হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার?যে কিনা বর্ষণের সাথে এতদিনের সম্পর্কে হাতে গুনে দু একবার ঘুরতে গেছে সে কিনা আজ নিজে থেকে যেতে চাইছে বর্ষণের সাথে ঘুরতে!


" জল তুমি সত্যি বলছো?"


" হু।আসবে তুমি?"


" কেন আসবো না?কোথায় ঘুরবে বলো।"


" তেমন কোথাও না।পার্কে তোমার সাথে বসে গল্প করবো।যেমনটা সিনেমা, নাটকে হয়।আমি পার্কে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো তুমি লাল গোলাপ নিয়ে আমার সামনে হাজির হবে।মনে থাকবে?"


" তুমি মুখ ফুটে এই প্রথম আমার কাছে কিছু চাইলে।মনে থাকবে না মানে?অবশ্যই মনে থাকবে।"


" আচ্ছা তাহলে রাখছি।বিকালে দেখা হবে।"


" আচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।"


"আল্লাহ হাফেজ।"


জল ফোন কেটে দেয়।ইদানীং এই একাকিত্বের সময়ে জলের মায়ের কথাও খুব মনে পড়ছে।মায়ের কোলে মাথা রেখে প্রাণ ভরে কাঁদতে পারলে জল শান্তি পেতো।দীর্ঘদিন হলো জল মায়ের সাথে যোগাযোগ করেনি।এমনকি কারও সাথে যোগাযোগ করেনি সে।দুটো মাস সে সম্পুর্ন নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছিলো।মাঝখানে কয়েকটা পরীক্ষা ছিলো।ওই পরীক্ষার কারণে শুধু ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো জল।তাও লোকচক্ষুর আড়াল হয়ে।পরীক্ষা শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে সে এক্সাম হলে ঢুকেছে।পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সে চলে এসেছে।আজ হঠাৎ করেই জলের ঘুরতে মন চাইলো।তাছাড়া বর্ষণের সাথেও জলের দরকারি কিছু কথা আছে।তাই সে বর্ষণকেও আসতে বললো।এক ঢিলে দুই পাখি।


বহুদিন পর আজ জল জলের বাবার বাসায় যাচ্ছে।মায়ের শাড়ি নিতে।কে জানে!মহিলাটা আবার সব কিছুর সাথে জলের মায়ের শাড়ি,গয়নাগাটিতেও ভাগ বসিয়েছে কিনা!


কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দৌড়ে দরজা খুলতে যান জাবেদ সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী।দরজা খুলে তিনি যাকে দেখতে পান তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।জলও প্রস্তুত ছিলো না তাদের মুখোমুখির জন্য।সে ভেবেছিলো কোনো কাজের লোক হয়তো দরজা খুলে দেবে।


" কেমন আছো জল?"


" জ্বী ভালো।আপনি কেমন আছেন?"


" ভালো।হঠাৎ করে এতদিন পর আসলে যে!"


" কেন?বিরক্ত করে ফেললাম?"


" না না,তোমার বাড়ি তুমি যখন খুশী আসতে পারো।"


চাপা হাসি দিয়ে বলেন জাবেদ সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী।জল বিষন্ন মুখ নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,,,


" ছিলো।এখন আর নেই।এখন এটা আপনার বাড়ি।"


" এভাবে বলে কেউ?তুমি বসো।আমি তোমার বাবাকে ডেকে দিচ্ছি।"


" থাক।তার আর দরকার নেই।আমি একটা দরকারে এসেছি।হয়ে গেলে চলে যাবো।"


কথাটা বলে জল হনহনিয়ে ওপরের ঘরে চলে যায়।জাবেদ সাহেব তখন বাসায়ই ছিলেন।পাশে ঘরে শব্দ পেয়ে তিনি চিৎকার করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডাক দেন,,,


" ফিরোজা!পাশের ঘরে কে?আমি বলেছি না ওটা জলের ঘর।ওই ঘরে জল ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।"


ফিরোজা বেগম ওপরে ওঠে স্বামীর ঘরে আসেন।মুচকী হেসে বলে,,,


" তোমার জল এসেছে।"


স্ত্রীর কথা শুনে মুহুর্তেই জাবেদ চৌধুরীর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।এভাবে হুট করে জল আসবে তিনি কল্পনাও করেননি।ঘরে গিয়ে দেখেন জল আসবাবপত্র থেকে চাদর সরাতে ব্যস্ত।দীর্ঘদিন এক অবস্থায় পরে থাকায় বেশ মোটা স্তরের ধুলো পরেছে চাদরের ওপর।কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ধুলা-বালি চাদর ভেদ করে আসবাবপত্রেও জমেছে কিছুটা।চাদর সরাতেই ধুলোবালি উড়ে নাক মুখে ঢোকে জলের কাশি শুরু হয়।কাশতে কাশতে বলে,


" এই ঘরে কেউ ঢুকেনি?"


" নাহ।তিনবছর ধরে এভাবেই আছে ঘর।"


জল এটা বেশ আগেই বুঝতে পেরেছিলো।দীর্ঘদিন বাইরের আলো-বাতাসের সংস্পর্শ না পাওয়ার বদ্ধ ঘরের ভেতর একপ্রকার গ্যাস জমা হয়েছিলো।দরজা খুলতেই জল তা টের পেয়েছিলো।


" হঠাৎ করে এতদিন পর!"


" দরকারে এসেছি।ডিস্টার্ব করার জন্য সরি।দরকার হয়ে গেলেই চলে যাবো।"


জাবেদ সাহেব বুঝতে পারেন মেয়েটা এখনো রাগ অভিমান পুষিয়ে রেখেছে।তিনি অপরাধবোধ অনুভব করেন।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,,,


" কি দরকার?"


" মায়ের কিছু শাড়ি নিতে এসেছিলাম।"


" শাড়ি নিবে?ভালো আছেই কি না!কাপড় তো রোদে দিতে হয়।"


জলের কথার পিঠে কথাটা বলেন ফিরোজা বেগম।জল থেমে গিয়ে খানিকটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।জাবেদ সাহেব স্ত্রীকে ইশারা দেন এখান থেকে চলে যাওয়ার।ফিরোজা বেগম স্বামীর ইশারায় সেখান থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে যান।


" খালাম্মা কেডা আইছে?"


রান্নাঘরে গিয়েই বুয়ার আকস্মিক প্রশ্নের সম্মুখীন হন ফিরোজা বেগম।কেবিনেট থেকে সুজির কৌটা বের করতে করতে বলেন,,,


" তোমার খালুর মেয়ে জল।"


" অহ!ওই পাগুন্নিডা?আমার বইনেই তো গেছাল ওইডার লগে থাকবার!কিবা জানি করে ছেমরিডা!কারও লগে কোনো কথাবার্তা কয় না।ওই খালি পড়বার লাইগা বাইরে যাইতো।আর সারাডা দিন ওই নিজের ঘরে বইয়া থাকতো চুপচাপ।রাইত হইলে মাঝে মাঝে চিক্কির(চিৎকার করে কাঁদা)পারতো আবার হাসতো।আপনেই কন খালাম্মা!সুস্থ মানুষে কি এইন্না করে?মাইয়াডা পুরাই পাগলায় গেছে।খালুরে পাবনার ডাক্তার দেহাবার কইয়েন।"


" তোমার এগুলো নিয়ে না ভাবলেও চলবে।নিজের কাজ করো।"


অনেকটা কড়া গলায়ই কথাটা বলেন ফিরোজা বেগম।বুয়া মুখ গোমড়া করে কাজ করতে লাগে।


জাবেদ সাহেব আজকে প্রাণ ভরে মেয়েটাকে দেখছে।কতদিন পর মেয়েকে কাছে পেলেন।জল একেরপর এক শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ট্রায়াল দিচ্ছে। কোনটাতে ওকে মানায় সুন্দর।জাবেদ সাহেব মনের অজান্তেই জলকে বলে ফেলেন,,,


" লাল কালো টাঙ্গাইলা শাড়িটাতে তোমাকে মানাবে অনেক।"


জল বেগুনি সিল্কের শাড়িটা রাখতে রাখতে কিঞ্চিৎ সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।জাবেদ সাহেব মেয়ের তাকানোতে খানিকটা ভরকে যান।লাল পাড়ের কালো টাংগাইলা শাড়িটাকে আলাদা করে রেখে জল বাকি শাড়িগুলো আলমারিতে তোলে।জাবেদ সাহেব দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।জল তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে নিচে যায়।নিচে গিয়ে ঝাড়ু নিয়ে আসে।যতটুক পারে জল আজ ঘরটাকে পরিষ্কার করবে।মেয়েকে কাজ করতে দেখে জাবেদ সাহেব বলেন,,,


" একা পারবে?বুয়াকে ডেকে দিই?"


" তার আর প্রয়োজন হবে না।আমি একাই পারবো।আর তুমি জানো।অন্যের করে দেওয়া কাজ আমার পছন্দ না।"


" বড় হয়ে গেছো।"


" সে অনেক আগেই।পরিস্থিতির চাপে।"


" শুনলাম তোমার মা নাকি আবার বিয়ে করেছে?"


" তুমি বিয়ে করতে পারলে মা কেন বিয়ে করতে পারবে না।মানুষ সামাজিক জীব।একা থাকা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।"


" তাহলে তুমি একা আছো কেন?"


" একা কই?আমার সঙ্গী আমি নিজেই।আমি একা নই।"


এরইমধ্যে রান্নাঘর থেকে ফিরোজা বেগমের ডাক আসে।তিনি জলের জন্য পাটি সাপটা পিঠা বানিয়েছেন।জাবেদ সাহেবের কাছে তিনি শুনেছেন জল পাটি সাপটা পিঠা, পায়েস খেতে খুব ভালোবাসে।ফিরোজা বেগম মানুষ হিসাবে অতটাও খারাপ না।শুধু তার জন্য জলের মাকে কষ্ট পেতে হয়েছে বলে জল তাকে ঘৃণা করে।এমনিতে ফিরোজা বেগম জলকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন।


চলবে,,,ইনশাআল্লাহ 

Next part 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.