Bangla Golpo pdf - শিশির বিন্দু পর্ব ২ - bangla choti golpo - love story - life story

 


"শিশির বিন্দু"

পর্ব- ২

Bangla Golpo pdf - শিশির বিন্দু পর্ব ২ - bangla choti golpo - love story - life story
Bangla Golpo pdf - শিশির বিন্দু পর্ব ২ - bangla choti golpo - love story - life story


পরদিন বিন্দু রিকশায় করে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। মাঝ পথে থাকাকালীন হঠাৎ করেই কেউ চলতি রিকশায় লাফিয়ে উঠে পাশে বসে পড়লো। বিন্দু চমকে উঠেছে! ভয় পেয়ে প্রায় অন্যদিকে হেলেও পড়ছিলো। সাথে সাথেই লোকটা তাকে টেনে সোজা করে বললো, 

- আরে! এখনই তো পড়ে যেতে! এতো ভয় পেয়ে গেছো তুমি!

বিন্দু শিশিরকে দেখে অবাক হলো এবং দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে লজ্জিতভাবে বললো,      

- এভাবে হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠলে তো ভয় পাবোই! 

- সরি, ভয় পায়িয়ে দেওয়ার জন্য। তুমি একপাশে চেপে আছো বলে এভাবে লাফিয়ে উঠলাম। এতে নিশ্চয়ই আমার কোনো দোষ নেই! রিকশায় একা চড়লে কেউ এক পাশে চেপে বসে! পাশের সিট ফাঁকা থাকলে তো যে কেউ দখল করে নিবে! সবসময় মাঝামাঝিতে বসবে। 

- ওকে।

শিশির একটা হাত বিন্দুর পেছনে রেখে গা ঘেঁষে বসলো। বিন্দু খুব অসস্তিবোধ করছে। লজ্জাও লাগছে খুব! এই লোকটাকে দেখলে এতো লজ্জা কোথা থেকে আসে তার নিজেরও জানা নেই। তার দৃষ্টি নিচের দিকে দেখে শিশির বললো, 

- বিন্দু, এনি প্রব্লেম? 

- উহুম।

- তাহলে নিচের দিকে কি দেখো? আমাকেও তো একটু দেখতে পারো।

বিন্দুর ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠেছে লজ্জাময়ী হাসি। সে মাথা তুলে শিশিরের বিপরীতে অর্থাৎ ডান পাশে তাকিয়ে মনে মনে বললো, "আপনাকে আর কি দেখবো। এক পলকেই মুখুস্ত হয়ে গেছে! লাল একটা টিশার্ট পড়েছেন, মিষ্টগন্ধযুক্ত পারফিউম লাগিয়েছেন, কালো জিন্স পড়েছেন,  সিল্কি চুল গুলো মৃদু বাতাসে হেলছে। ইশ! এভাবে যদি পড়াটা এক পলকে মুখুস্ত হয়ে যেতো!"

তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে শিশির বললো, 

- এমন নিরবতা পালন করছো কেন? তোমার তো সামনে এক্সাম, এখনো কি ক্লাস চলে?

- না, কোচিং করছি। 

- ওহ। একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো। কাল পড়ছিলে বিধায় আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। এখন করবো? 

- করুন।

- এতো বেশি ভাবতে পারবে না। যদি ভাবতে চাও দ্রুত ভেবে উত্তর দিবে। আর উত্তর এক কথায় দিবে, অর্থাৎ হ্যাঁ বা না হওয়া চাই। অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে না। সম্পূর্ণ নিজের মত পোষণ করবে। রেডি?

বিন্দু একটু ইতস্তত বোধ করলো। কি এমন প্রশ্ন করবে যার পেছনে এতো শর্ত লাগানো! শিশির পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিলো। বিন্দুকে তার দিকে তাকাতে দেখে শিশির হেসে বললো, 

- ভয় পেয়ো না। ইজি কোশ্চেন। তবে সেটা তোমার জীবনের সিদ্ধান্তই বলতে পারো।

শিশির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো, 

"সামনে রিকশাওয়ালা আংকেল আছে, তাই মুখে বলছি না। আমি টাইপ করছি, তুমি হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দিবে।"

এই ফিসফিস শব্দ বিন্দুর মনের ভেতর উথাল-পাতাল এক অজানা তরঙ্গের সৃষ্টি করে দিয়েছে! গুরুতর অসস্তি অনুভব করছে! এমন লাগছে কেন তার! নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না কেন! নিজের উপর বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে সে! এদিকে শিশির ফোনে টাইপ করা শুরু করেছে। "হুহ! ঢং! কানে কানে ফিসফিস করে সেই কথা বলতে পারলে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা যেত না!"

এদিকে লেখা শেষ করে শিশির বললো,

- তুমি খুব লজ্জা পাচ্ছো, তাই ফিসফিস করে বললাম না। পড়ো এবং উত্তর দাও, তারাতাড়ি দিবে।

বিন্দু এদিকে থতমত খেয়ে গেছে! মনে মনে বলল, "কিন্তু এই লোকটা শুনলো কিভাবে! মন পড়তে পারে নাকি!" বিন্দু ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো শিশিরের প্রশ্ন,  "আমাকে তোমার ভালো লাগে?"

 এটা কেমন কথা হলো! গতকাল বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গেছে আর আজ এমন প্রশ্ন! বিন্দুকে ভাবতে দেখে শিশির বললো, 

- কি হলো, বলো! দ্রুত উত্তর দিতে বলেছিলাম। তোমার মনের উত্তরটাই দিবে। কুইক.... 

বিন্দু ভেবে পাচ্ছে না কি উত্তর দিবে! ভালো লাগে সেটা কি এনাউন্স করে দিতে হবে! শিশির উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না! শিশির আবার বললো, 

- বিন্দু তুমি এতোটা কনফিউজড হয়ে যাচ্ছো কেন! ইজিলি উত্তর দাও। যেমন, বাঙালির প্রধান খাবার কি? ভাত। সেকেন্ডে উত্তর হয়ে যায়। ঠিক সেভাবেই বলো।

বিন্দু নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,      

- হ্যাঁ।

অত:পর শিশির আবার লিখলো, "পিতামাতা দ্বারা ঠিক করা আমাদের বিয়েতে তুমি রাজি?"

বিন্দু এক পলক শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, 

- হ্যাঁ।

শিশির মুচকি হেসে লেখাটা মুছে আবার লিখলো, " তোমার উত্তরে কিন্তু আমাদের অর্ধেক বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে পড়ানোর সময় ও তো এসবই জিজ্ঞেস করা হয়, রাজি কিনা! কবুল বললেই বিয়ে সম্পাদিত! যাক, দুইটা তো হয়ে গেলো। তৃতীয় কবুলটা না হয় কাজীর সামনেই বলো। এবার আরেকটা প্রশ্ন বিয়ের পরপরই কি আমরা বেবি নিবো?"

এমন প্রশ্নে বিন্দু হতবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকালো! শিশির তার চাহনি দেখে জ্বিভ কাটলো এবং দুষ্টু হেসে দ্রুত লেখা মুছে ফোন পকেটে রাখতে রাখতে বললো,

- একটু বেশিই হয়ে গেছে না? যাক আর বেশি বেশি জিজ্ঞেস করছি না। এবার আসল কথায় আসি। শপিং করতে যাবে তুমি? 

- যেতেই হবে? 

- জোর করবো না। ইচ্ছে থাকলে বলো। সুযোগ হবে তোমার? পড়াশোনার চাপ থাকলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।     

- না গেলেই ভালো হতো। বিয়ের দিন গুলোতে আবার পড়াশোনায় গেপ পড়বে।

- ওকে। সামনে যেহেতু এক্সাম, আমার মতেও না যাওয়াটাই বেটার। ঘুরাফেরা করবে উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়বে। পড়তে পারবে না তখন!

কথা বলতে বলতে তারা ভার্সিটির পাশে এসে পড়েছে। রিকশা ভাড়া দিবে কি দিবে না তা নিয়ে দোটানায় আছে বিন্দু! সে ই তো রিকশা নিয়েছে, ভাড়া তার ই দেওয়া উচিত। এখন দিতে গেলে যদি শিশির কিছু বলে লজ্জায় ফেলে দেয়! তখন কি হবে! 

ভাবতে ভাবতে রিকশা থেমে গেলো আর বিন্দুও নেমে পড়লো। শিশির রিকশায় বসে আছে। বিন্দু নেমে ব্যাগের চেইন অর্ধেক খুলছে আবার লাগাচ্ছে। তা দেখে শিশির বললো, 

- ভাড়া দেওয়ার চিন্তা করছো? 

বিন্দু দ্রুত ব্যাগের চেইন ছেড়ে দিয়ে একটু হেসে বললো, 

- না। আপনি কি নামবেন না?

- তুমি বললে যেতে পারি, স্যার ক্লাস করবে তো আমাকে নিয়ে?

কথায় কথায় শিশিরের দুষ্টুমি দেখে বিন্দুর মুখের হাসি একটু বিরক্তিকর ভাব নিলো। শিশির হেসে বললো, 

- আমি নামবো না, বাসায় যাবো এখন। যাও তুমি। আর যাওয়ার সময় সাবধানে যেও। যেতে না পারলে আমাকে কল করো। আর রিকশায় একা উঠলে মাঝামাঝিতে বসো। আল্লাহ হাফেজ। 

- আল্লাহ হাফেজ।

বিন্দু ভার্সিটির ভেতরে যেতে লাগলো আর মনে মনে বললো,

"ইশ কি খারাপ লোক! কথায় কথায় এভাবে লজ্জা দেয় কেন! আর বিন্দু, তুইই এমন গাধী কেন! টাস টাস কথা বলতে পারিস না! মুখ ভরা লজ্জা নিয়ে বসে থাকিস আর বুলি ফুটে না মুখে!"

 হঠাৎ করেই রিজু এসে সামনে দাড়ালো,

- বিন্দু!!! রিকশায় কে ছিলো তোর পাশে? সত্যি করে বল, মিথ্যে বললে ঝালমুড়ির বদলে প্যাকেট খাওয়াবো তোকে!

- আগে, ঝালমুড়ি খাওয়া, পড়ে না বলবো!

- তোর বলতে হবে না, ও শিশির ছিলো। রাইট? 

- আমি কি জানি! আমার বলতে হবে নাকি! 

- হিহিহি...উত্তর পেয়ে গেছি! ইশ! আর একটা মিনিট আগে পৌছাতে পারলেই হতো! মরার কণ্ঠধ্বনিও বিড়ালের মতো মিউমিউ! গরুর মতো হলে না "দুলামিঞা" বলে একটা হাক ছাড়তে পারতাম! আর একটু কথাবার্তা বলতে পারতাম!    

- বিড়ালের মতো আর কি, তুই তো বিড়ালী ই। মিউমিউ এর বাচ্চা চল!

- মিউমিউ এর বাচ্চা বললি কেন! পিজা হাট খাওয়া। এনগেজড হয়েছিস অথচ কিছুই খাওয়াসনি আমাকে! কিপ্টুস!  আজ ছাড়ছি না তোকে!

- পিজা হাট দেই আর গরু, ছাগল ও বিড়ালের হাট দেই, ক্লাস তো করবি আগে! 

- হুম।

ক্লাস শেষে বিন্দু পিজার বদলে সিঙ্গারা হাট দিয়েছে রিজুকে। রাতে শিশিরের নম্বর থেকে কল আসতেই সে কেপে উঠলো! সারাদিনে এ নিয়ে তিনটা কল এসেছে তার ফোনে আর সে তিন বারই কেপে উঠেছে। কেননা বারবারই মনে হয়েছে শিশির কল করেছে! কিন্তু প্রথমবার ছিলো মা, সিঙ্গারা খাওয়ার সময় কল করেছে বাসায় ফিরতে দেরি করছে বলে। দ্বিতীয়বার ছিলো রিজু, বিকেলে সে তার কাজিনদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে তা জানানোর জন্য। আর এখন তৃতীয়বার সেই লজ্জা দেওয়া ও ভয় দেখানোর মানুষটা! বিন্দু রিসিভ করতেও ভয় পাচ্ছে! এখন আবার কি যেন বলে লজ্জায় ফেলে! কাপা কাপা হাতে ফোন রিসিভ করলো বিন্দু। সে সালাম দেওয়ার আগেই তার কানে এলো, 

" তুমি আমার প্রথম দেখা, দুষ্টুমিষ্টি পরী। সামনে এলে এতো রঙিন কেন হও , ও গো লজ্জাবতী নারী? একটু তো ইজি হতেই পারো আমার সাথে।"

- আসসালামু আলাইকুম। 

- ওয়ালাইকুম আসসালাম। পড়ার সময় ডিস্টার্ব করলাম?

- না, পড়া শেষ।

- নামাজ পড়েছো? আই মিন পড়ো নিয়মিত?

- আলহামদুলিল্লাহ, চেষ্টা করি সবসময়।  

-  আলহামদুলিল্লাহ। ডিনার করেছো? 

- হুম, আপনি?

- হুম, বাট এখন যত বলার বলে নাও। বিয়ের পর "আপনি" এর "আ" ও বলতে পারবে না। রাগ করেছো?

- না।

- এখনকার কথা বলছি না। সকালের কথা বলছি, বেবিদের নিয়ে।

আবার বেবি! বিন্দুর জবান বন্ধ হয়ে গেছে! খুব খুব অসস্তিকর লাগছে! এমন কেন লোকটা!

তার কোনো জবাব না পেয়ে শিশির হেসে বললো,

- রাগ করছো কেন! আসলে তুমি আমার সাথে একটুও ফ্রী হতে পারছো না, এবং রিকশায় থাকাকালীন অধিকতর লজ্জা পেয়ে যাচ্ছিলে তাই ইচ্ছে করেই একটু বেশি বলেছি। সরি।

- সরি কেন বলছেন! এখানে অপরাধের কিছু নেই।

- আর ইউ সিরিয়াস? আমি তো দেখছি বেবিদের নিয়ে তোমার ইন্টারেস্ট আরও বেশি! ওহ্ নো! শিশিরবিন্দু, তোমাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তুমি কতটা রঙিন হয়েছো লজ্জায়!

বিন্দু লজ্জিত কণ্ঠে বললো, 

- আপনি এমন কেন!

- কেমন? 

- জানিনা।

- জানিনা টা কি?

- জানিনা।

- হা হা হা, আমি জানি।

- কি?

- অভদ্র প্রেমিক!

- ইশ!

- আমাকে নিয়ে সন্দেহে থেকো না আবার! তুমিই আমার জীবনের প্রথম প্রেমিকা। এটা ফেসবুক স্ট্যাটাস না, ইউনিভার্সেল ট্রুথ। অবশ্য তুমিও হতে না, যদি না তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হতো। আমি শুধুমাত্র একজনের জন্যই সেই অভদ্র প্রেমিক, যে কিনা আমার বউ হবে।

- আর বাকিদের জন্য কি ভদ্র প্রেমিক? 

- তুমি কি জানো, এই প্রথম একটা প্যাচ দিলে আমার কথায়?

- হয়তো।

- বাকিদের জন্য আমি ভদ্র ছেলে। হা হা হা! রাত জেগে পড়ো?

- উহুম।

- গুড হেবিট। গুমিয়ে পড়। রাত জাগবে না কখনো। ঘুম নষ্ট হতে দিবে না। নিশ্চিন্তে ঘুমাবে আর আমাকে ও বেবিদের নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্ন দেখবে। শুভ রাত্রি।

- শুভ রাত্রি।

বিন্দু কল কেটে বললো, "যা বলেছেন আপনি! এখন তো মনে হচ্ছে  স্বপ্নেও এসে লজ্জা দিবেন!"


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.