Bangla Golpo pdf - গল্পঃ মা - bangla love story - bangla choti golpo |
বাবা আমার সারাদিন ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না রে। আমাকে একটু বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যাবি?
আম্মুর এমন কথা শুনে ভিতরটায় মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। অসুস্থ মা আমার সারাদিন ঘরের কাজ করতে করতে মনে হয় ত্যাক্ত হয়ে গেছে। দিন শেষে আমার মাও তো একজন মানুষ। সারাদিন বাসায় বন্দি হয়ে থাকতে কারই বা ভালো লাগে? আমি সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি যার কারণে মাকে সময় দিতে পারি না। বড় ভাইও বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে তার বউকে নিয়ে। বাবা মারা গেছে আরো অনেক আগেই। এখন মা সারাদিন ঘরে একাই থাকে। একা একা আর কতক্ষণ ভালো লাগে একটা মানুষের?
- মা আমার পকেটে তো তেমন টাকা নেই। তোমাকে কোথায় নিয়ে যাবো বলো?
- আমার কাছে কিছু টাকা আছে বাবা।
- তুমি টাকা কোথায় পেলে মা?
- তুই যে কাল রাতে আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিলি_সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রেখেছি।
আমি কাজ করে যেই টাকাটা মাকে দেই সেটা দিয়ে ঠিক মতো সংসারই চলে না। তাই কাল রাতে নিজের বাড়তি ইনকাম থেকে মাকে কিছু টাকা দিয়েছিলাম ওষুধ কেনার জন্য। আমার মা সেখান থেকে কিছু টাকা রেখে দিয়েছে!
- সেটা তো তোমার ওষুধ কেনার জন্য দিয়েছিলাম মা। তুমি কেন সেখান থেকে টাকা রাখতে গেলে?
- আমি তোর জন্যই রেখেছিলাম। যদি তোর কোনো প্রয়োজনে আসে এজন্য।
মায়ের আবদার ফেলতে পারলাম না। তাই মাকে নিয়ে বের হলাম। অনেক দিন পর মায়ের সাথে বের হয়েছি। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় ঘুরতে যাবে? জবাবে সে বললো ঢাকার মধ্যেই আসেপাশে কিছুক্ষণ ঘুরেই চলে আসবে।
বাসে উঠে বসলাম মাকে নিয়ে। উদ্দেশ্য শহীদ মিনার এলাকা। রাতের শহীদ মিনার এলাকা অসম্ভব ভালো লাগে। মা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাস ছুটে চলছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে। মা আসেপাশের পরিবেশ দেখা নিয়ে ব্যস্ত। মায়ের চেহারাটা হাসি হাসি মনে হচ্ছে। অনেক দিন পর ছেলের সাথে বের হতে পেরে মাকে খুশীই মনে হচ্ছে।
বাস থেকে নেমে পড়লাম চানকারপুল এলাকায়। একটা রিকশা নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে এসে থামলাম। হাজারো মানুষ আসে প্রতিদিন এখানে ঘুরতে। আমি মাকে নিয়ে শহীদ মিনারের সিরিতে গিয়ে বসলাম। মা আসেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- অভি, এটা সেই এলাকা না, যেটা টিভিতে মাঝে মাঝেই দেখায়।
- হ্যাঁ মা। তোমার কি ভালো লাগছে এখানে এসে?
মা আমার সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বুঝালো তার খুব ভালো লাগছে। মাকে হাসতে দেখে আমার হৃদয়টাও যেন হেসে উঠলো। মায়ের মুখের হাসি যে কতো নিষ্পাপ এটা শুধু সন্তানরাই বুঝতে পারে। মায়ের মুখের হাসি দেখতে যে কি ভালো লাগে এটা একজন সন্তান ছাড়া কেউই বলতে পারবে না।
আমার পকেটে টাকা বলতে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ-ষাইট টাকার মতো আছে। সেখান থেকেই সাধ্য অনুযায়ী মাকে বললাম,
- মা তুমি কি ঝালমুড়ি খাবে? এখানে খুব ভালো ঝালমুড়ি পাওয়া যায়।
- হ্যাঁ হ্যাঁ খাবো। ঝালমুড়ি আমার খুব ভালো লাগে।
আমি ঝালমুড়ি আনার দাঁড়াতেই মা আমার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলো। মায়ের চেহারার দিকে প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকালাম। মা বললো,
- তোর কাছে তো টাকা নেই বাবা। ইনকাম করে সব টাকা তো আমাকেই দেয়ে দিস।
- আমার কাছে মা।
তবুও আমার মা আমাকে জোর করেই টাকা দিয়ে দিলো। সন্তান হিসেবে নিজের মাকে দশ টাকার ঝালমুড়ি কিনে খাওয়াবো সেটাও আমি পারলাম না। মা'ই টাকা দিয়ে দিলো। নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে আমার। আমার মতো সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভালো।
ঝালমুড়ি নিয়ে এসে দেখি আম্মু যেখানে বসে ছিলো_সেখানে নেই। একটু পাশেই তাকিয়ে দেখি_একটা পথশিশুর সাথে মাটিতে বাচ্চাদের মতো বসে কি যেন করছে৷ একদম বাচ্চাদের মতোই বিহেব করছে আমার মা পথশিশুটার সাথে। দেখে মনে হচ্ছে আমার মা এখন পনেরো বছরের কোনো কিশোরী হয়ে গেছে। সামনে গেলাম না তাদের। দূর থেকেই দেখতে লাগলাম তাদের। আমি যে ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কখন থেকে_সেদিকে মায়ের কোনো খেয়ালই নেই। সে ব্যস্ত ওই পথশিশুকে নিয়ে। একবার তার গাল টেনে দিচ্ছে। আবার মাথার চুলগুলো ঝেড়ে দিচ্ছে। নিজের আঁচল দিয়ে মুখও মুছে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওটাই তার ছেলে। আমি কেউ না। আমার তো খুব হিংসা হচ্ছে এখন। আসলে মায়েরা কি এমনই হয়? রাস্তায় তাদের সন্তানের মতো কাউকে দেখলে কি এভাবেই ভালোবাসা উজাড় করে দেয়? এভাবেই কি বুকের মধ্যে সঞ্চয় করা মাতৃস্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়? নাকি মায়েরা স্বার্থপর? হ্যাঁ আসলেই মায়েরা স্বার্থপর। প্রচুর স্বার্থপর মা জাতি। কারণ তারা তাদের সন্তানদের একটু সুখে রাখার জন্য, একটু ভালো রাখার জন্য নিজের জীবনটাও হেসেখেলে ত্যাগ করে দিতে পারে। আর এখানেই মায়েদের স্বার্থ লুকিয়ে আছে। তাই এই দুনিয়ার সব মায়েরাই স্বার্থপর।
প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেছে দাঁড়িয়ে আছি। ঝালমুড়িগুলোর শক্তি সামর্থ শেষ হয়ে এখন একদম দুর্বল হয়ে গেছে। এখন আর ঝালমুড়ি বলা যাবে না এগুলোকে। বলতে হবে হাওয়াই মিঠাই। হাওয়াই মিঠাই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি_মা আমার দিকেই আসছে। খুব খুশী খুশী লাগছে আমার মাকে। আমার মাকে এতো খুশী দেখে আমারও অনেক ভালো লাগছে। মা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস বললো,
- কিরেহ! কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? এতক্ষণ লাগে ঝালমুড়ি নিয়ে আসতে?
মায়ের কথা শুনে বোকা বোনে গেলাম। আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি আর মা....
- দে ঝালমুড়ি দে।
হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে মুখে দিয়েই বললো,
- এগুলো কি নিয়ে এসেছিস? এমন কেন?
- মা তোমার খেতে কষ্ট হবে ভেবে ঝালমুড়িওয়ালাকে বলেছি নরম করে বানাতে_তাই সে নরম করে বানিয়ে দিয়েছে।
মা আমাকে আলতো করে পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে হাওয়াই মিঠাই নামক ঝালমুড়িগুলোই খাওয়া শুরু করলো। আমি তার হাত থেকে সেগুলো ফেলে দিয়ে আবার এনে দিলাম। এবার আর আম্মুকে টাকা দিতে দেইনি। আমিই দিয়েছি।
ঘুরতে ঘুরতে মোটামুটি রাতের দশটার মতো বেজে গেলো। আম্নুকে বললাম চলে যাবো। আম্মু মুখ কালো করে বললো,
- কিভাবে যাবো আমার কাছে তো একটা টাকাও নেই।
আমি আম্মুর চেহারা দেখে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতে বললাম,
- ওই পিচ্চিটাকে দিয়ে দিয়েছো তাই না?
- কি করবো? ও নাকি দুই দিন ধরে না খেয়ে আছে!
- হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। দুই দিন ধরে না খেয়ে আছে দেখেই তো সবগুলো টাকা দিয়ে দিলে। এখন তুমি আর হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরবো।
- তাহলে তো বাসায় ফিরতে অনেক রাত হবে।
- হোক তাতে কি?
- না না রাস্তায় যদি পুলিশে ধরে?
- তখন বলবো, "আমি আর আমার আম্মু মিলে আজকে আমার জন্য মেয়ে খুঁজতে বের হয়েছি।" ইশ! কি বলে দিলাম!
আম্মু হাসছে। খুব সুন্দর করে হাসছে। সর্বাঙ্গ কাপিয়ে হাসছে আমার আম্মু। তার হাসিতে আমিও হাসছি। দুইজনই হাসছি। আসেপাশের অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা হয়তো বুঝতেই পারছে না এই হাসি আমাদের মা-ছেলের ভালোবাসার হাসি।
সমাপ্ত।