Bangla Golpo pdf - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৬) - bangla choti - love story - life story

 

বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৬)

Bangla Golpo pdf - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৬) - bangla choti - love story - life story
Bangla Golpo pdf - বিষন্নতার শেষ বিকেল (পর্ব ৬) - bangla choti - love story - life story 

মেখলা হতাশ চোখে আজকের সেলস রিপোর্টটা দেখছিল। আজকেও তেমন কোনো নতুন অর্ডার নেই। অথচ আইসক্রিমটা যখন লঞ্চ করে তখন এক সপ্তাহেই এক হাজার লিটার আইসক্রিম চলে যায়। তার বেশিরভাগই বাকিতে। এরপর যত দিন গেছে ততই অর্ডার কমে এখন প্রায় শুন্যের কাছে। প্রথমে এত বেশি বিক্রি দেখে ও আরও দশ হাজার লিটার আইসক্রিম বানানোর কাঁচামাল অর্ডার করেছিল। অথচ এদিকে যেগুলো প্রথমে বিক্রি করেছিল তারই টাকা পায়নি। উলটো এগুলোর মেয়াদ চলে গেলে সব নাকি ফেরত আসবে। ভাবনাটা ভাবতেই ও দিশেহারা বোধ করে, এতগুলো টাকা লস হয়ে যাবে! ইশ, বাবার কাছে ও দাঁড়াবে কি করে? যদিও বাবা ওকে আশ্বাস দিচ্ছে যে ব্যবসায় প্রথমে এমন হয়। কিন্তু কি করে যে ঘুরে দাঁড়াবে ও ঠিক বুঝতেই পারছে না। 


ঠিক এমন সময় মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। মেখলা নিরাসক্ত ভঙ্গিতে মেসেজটা খুলে থমকে যায়, রাফসানের মেসেজ!! দ্রুত পড়ে, 'আজ বিকেলে কি একটু ফুচকা খাওয়ার সময় হবে? আমি অপেক্ষা করব।' 


কোথাও যেন একটা ভূমিকম্প হয়, মাথাটা কেমন ঘুরিয়ে ওঠে। বার বার ও মেসেজটা পড়ে। একটা অকারণ অভিমানে গলা বুজে আসতে চায়। মেখলা চেয়ারে এবার হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে। চোখটা বন্ধ করে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে চোখটা খুলে মোবাইলটা হাতে নেয়, কাঁপা কাঁপা হাতে লিখে, 'আমি আসব, ঠিক ছ'টায়।' 


২.

বসন্তের শেষ বিকেল, বাতাসে একটা কেমন যেন একটা মন উদাসের টান আছে। রাফসান আজ আগেই চলে এসেছে। প্রথমে ভেবেছিল মেখলার অফিসেই যাবে কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখল ওখানে হয়ত মেখলা ওর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারবে না। তাই ও মেসেজ পাঠিয়েছিল ওদের দু'জনের প্রিয় জায়গাটায় আসতে। ওর মেসেজ পেয়ে মেখলা যখন লিখেছিল, আমি আসব, তখন রাফসানের মনে হয়েছিল এই পৃথিবীতে ও অনেক সুখী, মেখলা যে আসছে ওর কাছেই!


 দূর থেকে ও মেখলাকে আসতে দেখে, হলুদ একটা জামা, তার উপর জাম কালারের ওড়না। কাছে আসতেই রাফসান হাত নাড়ে, একটু অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলে, 'ভালো আছেন?' 


কথাটা বলেই বোঝে কতটা বেমানান প্রশ্ন ও জিজ্ঞেস করল। মেখলার মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝে কী ক্লান্ত আর হতাশাগ্রস্ত মেয়েটা! চোখের আলো যেন মরে গেছে। বুকটা কেমন করে ওঠে, একটা অপরাধবোধ ঘিরে ধরতে চায়। মেয়েটাকে ও কষ্ট দিয়েছে।


মেখলা বিষাদ একটা হাসি দিয়ে বলে, 'আপনি তো ভালো থাকতে দিলেন না। একে তো আমার পাশে দাঁড়ালেন না, তার উপর আমার Avalanche ব্র‍্যান্ড যাতে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে তার জন্য সব কিছুই করছে আপনাদের কোম্পানি। অবশ্য এতে আপনাকে আমি দোষ দেই না, আপনার পেশাগত দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। আমিই পারিনি।' 


রাফসানের ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে মেখলার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে, 'আমি আপনার পাশে দাঁড়াব, আপনি ঠিক পারবেন।' কিন্তু মুখে বলা হয় না।


রাফসান নিচু গলায় বলে, 'আসুন, বসি একটু।' 


মেখলা মাথা নেড়ে বসে। হাসান মামাকে আজ কিছু বলতে হয় না, নিঃশব্দে দু' প্লেট ফুচকা দিয়ে যায়। খেতে খেতে মেখলা বলে, 'আপনি ভালো ছিলেন তো? বাসার সবাই ভালো আছেন?' 


রাফসান মাথা নাড়ে, 'হ্যাঁ, সবাই ভালো আছে।' 


এরপর ওরা আর তেমন কথা খুঁজে পায় না। অথচ রাফসান ভেবেছিল আজ কত কি বলবে মেখলাকে। একসময় খাওয়া শেষ হয়ে যায়, মেখলা আলতো করে বলে, 'আর কিছু বলবেন? না হলে আমি যাই?'


রাফসানের বুকটা কেমন মুচড়ে ওঠে, কী বিষাদমাখা অসহায় একটা গলা! 


সুন্দর একটা সম্পর্ক ও নিজ হাতে নষ্ট করেছে। একটু চুপ থেকে ও বলে, 'আপনি কি এখনও অমন উদাস হয়ে কান্না করে ফেলেন?' 


মেখলা কেমন একটা চোখে তাকিয়ে থাকে, তারপর মাথাটা নিচু করে বলে, 'কান্নার সময় কই। দুশ্চিন্তায় সময় চলে যায়, এতগুলো টাকা নষ্ট করে ফেললাম। আসলে আমার দ্বারা কিছু হবে না। আপনাকে দেখে আমি ভেবেছিলাম আমিও বুঝি আপনার মতো সব পারব। আমি হেরে গেছি।' 


রাফসান এবার আর পারে না, আলগোছে বেঞ্চের উপর রাখা মেখলার ডান হাতের উপর বা হাতটা রেখে হালকা করে চাপ দিয়ে ধরে, তারপর বলে, 'আপনি কখনোই হেরে যাবেন না, আমি আপনার পাশে আছি। আমরা দু'জনে নতুন করে যুদ্ধটা শুরু করব।' 


মেখলা চমকে একবার ওর হাত ধরা হাতের দিকে তাকায়, তারপর রাফসানের মুখের দিকে। এমন সুন্দর কথা বুঝি ও এর আগে কখনও শোনেনি। আর এমন সুন্দর করে ভরসা দিয়ে কেউ ওর হাতটা ধরেনি। মেখলার পুরো শরীরটা কেঁপে ওঠে, অস্ফুটে বলে, 'সত্যি রাফসান? আপনি আমার পাশেই থাকবেন?' 


রাফসান ওর হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে, 'অবশ্যই থাকব। তবে তার আগে তোমাকে হাসতে হবে। আর আমাকে তুমি বলতে হবে।'


মেখলা সারামুখে ঝপ করে সূর্যাস্তের লালিমা নামে, মুখটা নিচু হয়ে আসছে। কোথায় যে মুখটা লুকোবে বুঝে পায় না।


২.

মেখলা Avalanche অফিসের বোর্ড রুমে বসে আছে। আজ শনিবার, রাফসানের ছুটির দিন। সেদিনের পর থেকে নিয়ম করে প্রতি শুক্র আর শনিবার এই অফিসে এসে ও বসছে। আজ ও ওর বিজনেস প্ল্যানটা শেয়ার করবে। মেখলার বাবাও আজ এসেছেন রাফসানের প্ল্যানটা শুনতে, যদিও খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না। 


রাফসান মেখলার বাবার দিকে তাকিয়ে অনুমতি নিয়ে বলে, 'আমি শুরু করছি। আসলে নতুন কোম্পানির জন্য এটা খুব সাধারণ একটা ঘটনা। মার্কেটে যদি পুরনো প্রোডাক্টই আনা হয় তাহলে মানুষ খাবে কেন? তাই আমার সাজেশন মার্কেটে Avalanche ব্র‍্যান্ডের সব আইসক্রিম আগে শেষ করে আমাদের নতুন কোনো ব্র‍্যান্ড নিয়ে আসা। সেটা খেতে ভালো হতে হবে আবার নতুন কোনো থিমের উপর হতে হবে।' 


মেখলার বাবা হতাশ গলায় বলেন, 'তুমি তো নতুন কিছু বললে না। এগুলো তো আমরাও জানি। কিন্তু যে আইসক্রিমগুলো দোকানে দেওয়া হয়েছে তা মানুষ না কিনলে কী করে শেষ হবে। আর নতুন এমন কী এক্সাইটিং থিমই বা পাবো যা আগে কেউ ভাবেনি?' 


মেখলা বাবার দিকে একটু রাগত চোখে তাকায়, বাবার জন্য না রাফসান আবার রাগ করে চলে যায়।


রাফসান অবশ্য রাগ করে না, ও বলে, 'আংকেল, আপাতত আইসক্রিমগুলো যদি ফ্রিও দিতে হয় আমরা দেব। মানুষ অন্তত ব্র‍্যান্ড নামটা জানল। আর আইসক্রিমটা আমি খেয়ে দেখেছি, বেশ ভালো। তবে আইসক্রিম আমরা একদম ফ্রি দেব না, বরং ওই টাকাটা আমরা দোকানদারদের ইনসেন্টিভ হিসেবে দেব। যাতে ওরা পুশ সেল করে। আইসক্রিমের এই প্রথম চালান থেকে আমাদের এক পয়সাও হয়ত আসবে না কিন্তু মানুষের হাতে পৌঁছাবে। আর মানুষ একবার এটা ভালোভাবে নিলে তখন দোকানদার নিজেই ডেকে অর্ডার করবে।' 


মেখলা মুগ্ধ হয়ে শোনে, বলে, 'বাহ, চমৎকার আইডিয়া।' 


কামরান আহমেদ অবশ্য অতটা খুশি হন না, গম্ভীরমুখে বলে, 'সেটা করে দেখা যেতে পারে। তোমরা কথা বলো, আমার একটা জরুরি কাজ আছে, আজ আমি উঠি।' 


বাবা চলে যেতেই মেখলা চিন্তিত গলায় বলে, 'আচ্ছা রাফসান তুমি কী নতুন কিছু ভেবেছ? মনে হলো বাবার সামনে চেপে গেলে।' 


রাফসান উজ্জ্বল চোখে বলে, 'বাহ, তুমি ঠিক ধরেছ। দাঁড়াও একটা নতুন ফাইল খুলি, আমার একটা আইডিয়া আছে, জানিনা তোমার মনে ধরবে কি না।' 


মেখলা আগ্রহের সাথে বলে, 'তাড়াতাড়ি দেখাও, আমি জানতাম তুমি নিশ্চয়ই কিছু ভেবে এসেছ।' 


রাফসান এবার হেসে নতুন একটা স্লাইড ওপেন করে। মেখলা অবাক হয়ে খেয়াল করে পুরো স্ক্রিন জুড়ে একটা বড়সড় লাল রঙের হার্টের ছবি, ভাঙা। আর উপরে বড় বড় করে লেখা Broken Heart আইসক্রিম। 


মেখলা বিস্মিত গলায় বলে, 'আইসক্রিমের নাম Broken Heart?'


রাফসান রহস্যময় হাসি হাসে, তারপর বলে, 'আমাদের চারপাশে হৃদয় ভাঙা মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের থিমটা হলো হার্ট ব্রোকেন হলেও আইসক্রিম খেয়ে সেলিব্রেট করতে হবে, মন ভালো রাখতে হবে। এই লাল ব্রোকেন হার্টের লোগো দিয়ে আমাদের আইসক্রিমের মোড়ক হবে। এটা দিয়েই পেপারে, টিভিতে, এফএম রেডিওতে, বিলবোর্ডে, সবজায়গায় বিজ্ঞাপন যাবে। অন্যান্য সবকিছু একই ডিজাইনের হবে। আর আমাদের কাজ শুরু হবে ইউনিভার্সিটি, কলেজগুলো থেকে।' 


মেখলা কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর গভীর গলায় বলে, 'রাফসান, তুমি কী করে আমার মনের কথাটা টের পেয়ে যাও? তুমি একদম ঠিক বলেছ। আমাদের চারপাশে হৃদয় ভাঙা মানুষের সংখ্যাই বেশি। তোমার এই থিমটা যে আমার তোমার জীবনের সাথেই জড়িয়ে। আমি বাবাকে বোঝাব, তুমি সবকিছু রেডি করো। তুমি যেভাবে বলবে ঠিক সেভাবেই কাজ হবে।' 


৩.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে একটা ছোট্ট ফ্রিজার ভ্যানের দুধ সাদা গায়ের উপর লাল রঙের একটা ভাঙা হৃদয়ের ছবি, পাশে একটা বিশেষ ফন্টে লেখা Broken Heart আইসক্রিম, সাথে একটা স্লোগান 'আপনার হৃদয়কে কষ্ট দেবেন না'।


ভ্যানটার সামনেই দুটো ছেলে মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, মাথায় লাল ক্যাপ, গায়ে সাদা টি শার্টে ওই গাড়িটার গায়ের মতো ভাঙা হৃদয়ের ছবি, সাথে স্লোগানটা, 'আপনার হৃদয়কে কষ্ট দেবেন না'। ছেলেটার টি শার্টে একটা ব্রোকেন হার্টের ছবি, আর বাম পাশে দাঁড়ানো মেয়েটার টি শার্টেও তাই। দু'জনে দু'দিকে কৃত্রিম গোমড়ামুখে তাকিয়ে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে ওদের এইমাত্র ব্রেকআপ হয়েছে, আর দু'জনের টি শার্টে এমন করে হার্টটা আঁকা দেখে মনে হচ্ছে একটা হার্ট দু'ভাগ হয়ে যাচ্ছে। 


এই অভিনব প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন দেখে ক্যাম্পাসের সব ছেলেমেয়ে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সবাই বেশ মজা পায়, কৌতুহল নিয়ে সবাই ফ্রিজার ভ্যানটা ঘিরে আইসক্রিমের অর্ডার দিতে থাকে। আজকের জন্য অফার ছিল, একটা কিনলে একটা ফ্রি। আইসক্রিমের সাইজ, আর দামটাও হাতের নাগালেই রাখা। 


দিন শেষে ওরা যখন Avalanche এর অফিসে বসে, মেখলা অবাক হয়ে দেখে ওর একদিনেই শুধু একটা স্পট থেকে এক হাজার পিস আইসক্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। মেখলা আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, বলে, 'রাফসান, তোমার আইডিয়া তো একদম বাজিমাত। আচ্ছা, আজ তো তুমি আর আমি এটা করলাম। আমরা যদি এমন আরও দশটা ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকার আরও কয়েকটা ইউনিভার্সিটি, কলেজে এই ক্যাম্পেইনটা করি তাহলে তো অল্প কিছু দিনেই আমাদের এই ব্র‍্যান্ডটা দাঁড়িয়ে যাবে।' 


রাফসানের আজ খুব ভালো লাগছে, ও নিজেও ভাবেনি ওর এই ছেলেমানুষী আইডিয়াটা সবাই এত পছন্দ করবে। ও খুশি খুশি গলায় বলে, 'অবশ্যই আমরা করতে পারি। আমার বিশ্বাস আমি এই ব্র‍্যান্ডটা দাঁড় করাতে পারব। তবে তার আগে আমাকে আমার কোম্পানির চাকরিটা ছাড়তে হবে। যদি তুমি চাও আমি তোমার কোম্পানিতে জয়েন করব। যদিও কথাটা স্বার্থপরের মতো শোনাচ্ছে, আমি নিশ্চিত হবার পরেই তোমার কোম্পানিতে জয়েন করছি। তুমি যখন এসেছিলে তখন অনিশ্চিত ছিল, তাই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।' 


মেখলা জোরে মাথা নাড়ে, বলে, 'তুমি একদম ঠিক ছিলে। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। তুমি তো একা নও, তোমার একটা পরিবার আছে, দায়িত্ব আছে। তোমাকে সবসময় ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর আজকের এই সাফল্য শুধুই তোমার জন্য। তুমি আমার পাশে দাঁড়ালে তোমার চেয়ে আমিই বেশি উপকৃত হব।' 


রাফসান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে মেখলার দিকে, মেয়েটা কী সুন্দর বুঝদারের মতো কথা বলল। মনটা একটা ভালো লাগায় ভরে যায়। সেই সাথে মনের কোণে একটা কথা উঁকি দিয়ে যায়, আচ্ছা মেখলাকে নিয়ে ও যা ভাবতে চায় মেখলাও কী তাই?


৪.

আজ হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে এক বিশাল আইসক্রিম মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তার আগে সবগুলো সংবাদপত্রে, অনলাইন মাধ্যমে, ফেসবুকে Broken Heart এর লোগো, স্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে অর্ডার আসা শুরু হয়েছে। 


আজকের পুরো আয়োজনে সব জায়গায় দু'জন করে ছেলেমেয়ে যাদের পরনে সেই টি শার্ট যাতে ব্রোকেন হার্টের লোগো, দু'জন দু'দিকে মুখ কৃত্রিম গোমড়া করে ঘুরিয়ে রেখেছে। 


ওদের দু'জনকে অবাক করে দিয়ে এত সংখ্যক মানুষ আসে ওরা অবাক হয়ে যায়। আজ ওদের দুই পরিবারের সব সদস্যরাও এসেছে। মেখলার আম্মুর সাথে রাফসানের আম্মুকে কি যেন একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। আর রাফসানের বাবা মেখলার বাবার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খেতে থাকে। রাফসান, মেখলা, আর সুমি ব্যস্ত হয়ে গেস্ট সামলায়। 


রাফসান ইউনিভার্সিটির কিছু কলেজের ছেলেমেয়েদের ওর থিমটা বোঝাচ্ছিল, ঠিক তখন একটা গলা পায়, 'ভাই, আপনাদের এই আইসক্রিম কি সব জায়গায় পাওয়া যাবে?' 


রাফসান ঘুরে তাকাতেই অবাক চোখে দেখে শানু! 


রাফসান কিছু বলার আগেই শানু একটু জোরেই বলে ওঠে, 'তুমি!' 


রাফসান একটু বিব্রত হয়ে ছেলেমেয়েদের দিকে তাকায়, তারপর 'এক্সকিউজ মি' বলে সরে আসে। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে, 'তুমি এখানে?' 


শানু একটু বাঁকা গলায় বলে, 'আমি তো এখানেই থাকব। আমার জামাই তো ঢাকায় পোস্টিং, ওকে তো এই কোম্পানি থেকে দাওয়াতও দিয়েছে। বোঝ তো, সরকারের উচ্চপদস্থ লোকদের হাতে রাখতে হয়। কিন্তু তুমি এখানে কেন? ওহ, বুঝেছি, এই আইসক্রিম কোম্পানিতে কাজ নিয়েছ। যাক, ভালোই হয়েছে, তোমার জন্য এটাই ঠিক আছে। দাও তো আমাকে তোমাদের স্পেশাল কি এই আইসক্রিম। নামটা বেশ হয়েছে।' 


আজ বহুদিন পর শানুকে দেখল, আগের চেয়ে স্বাস্থ্য অনেকটাই বেড়ে গেছে, বেশ গোলগাল চেহারা হয়েছে। দেখে খুব সুখীই মনে হচ্ছে ওকে। কেন জানি রাফসানের আজ মন খারাপ হচ্ছে না। ও হেসে বলে, 'দাঁড়াও, তোমার জন্য একদম স্পেশাল আইসক্রিম নিয়ে আসছি।' 


শানু পর পর দুটো আইসক্রিম খায়। খেতে খেতে ওর জামাইয়ের অনেক গল্প করে। কত দ্রুত কত উপরে উঠে গেছে সেটা বার বার বলে। ওদের যে একটা পাজেরো গাড়ি আছে সেটাও বলে। রাফসান পুরোটা সময় মিটিমিটি হাসে। একবার আড়চোখে খেয়াল করে মেখলা দূর থেকে কেমন খর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। 


শানুকে বিদায় দিয়ে ও আবার অন্য অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। একটা সময় সাংবাদিকরা ওদের দু'জনের সাক্ষাৎকার নেয়। মেখলা এবার নিজেই এই ব্র‍্যান্ডের পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে। পুরোটা যে রাফসানের আইডিয়া সেটাও বলে। 


মেলা শেষে সবাই যখন বিদায় নেয়, তখন ওরা দু'জন বাইরে এসে একটু দাঁড়ায়। 


মেখলা চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সুরে বলে, 'এই যে, আপনি কাকে এত যত্ন করে তখন আইসক্রিম খাওয়ালেন। আবার হেসে হেসে কথাও বলছিলেন। ব্যাপার কি বলো তো?' 


রাফসান প্রাণখোলা একটা হাসি দেয়, তারপর বলে, 'উনি জানতে চাইল যে Broken Heart আইসক্রিম তো অনেক দিন হলো। এখন Touching Heart আইসক্রিম কবে আনব, তাই জিজ্ঞেস করছিল।' 


মেখলা ভ্রু কুঁচকে বলে, 'Touching Heart আইসক্রিম, সেটা আবার কি?'


রাফসান গম্ভীরমুখে বলে, 'এটা হলো ব্রোকেন হার্টের বিপরীত। মনে করো আমার হৃদয় যদি অন্য কারও হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় তখন আমি এই আইসক্রিম খাব মানে অন্য যাদের এমন হবে তারাও তাই খাবে।' 


মেখলা চুপ করে যায়, মুখটা কেমন কালো হয়ে যায়। তারপর শুকনো গলায় বলে, 'তোমার হৃদয় কার হৃদয়কে ছুঁয়েছে?' 


রাফসান ভীষণ মায়া নিয়ে নরম গলায় বলে, 'আমার হৃদয় যে মেখলাকে ছুঁয়েছে, তারও কি তাই?' 


কোথাও যেন এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। একটা ঠান্ডা বাতাস এসে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।মেখলার হঠাৎ করেই মনে হয় আজ আবার ঘুরে ফিরে সেই শরৎকাল এসেছে। এমন একটা বিকেলেই ও এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে কাঁদছিল। আজ সেই বিষন্নতার বিকেলটা বুঝি শেষ হলো। আজ থেকে ওর বিকেলগুলো আর বিষাদ থাকবে না। আজকেই ছিল ওর বিষন্নতার শেষ বিকেল। 


মেখলা চোখের কোণে জমে থাকা জলবিন্দুগুলো মোছে, তারপর গভীর মায়া নিয়ে বলে, 'একদিন যে মানুষটা আমার মন খারাপের খবর জানতে আমাকে না চিনেও আমার কাছে ছুটে এসেছিল সেই মানুষটাকে আমার মন ছুঁয়েছে।' 


এর কিছুদিন পর Avalanche গ্রুপের নতুন আইসক্রিম Touching Heart বাজারে আসে। এই নতুন আইসক্রিমটাও তরুণদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। আর এই নতুন আইসক্রিম ব্র‍্যান্ডের পেছনের দু'জন মানুষ তাদের একত্রিত দুটো হৃদয় দিয়ে নতুন নতুন হৃদয়বান ভাবনা ভেবে যায়।


(সমাপ্ত)

Next story 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.