Bangla Golpo | তোমাকে বলার ছিল - তৃতীয় পর্ব | bangla choti

 

Bangla Golpo | তোমাকে বলার ছিল - তৃতীয় পর্ব | bangla choti


তোমাকে বলার ছিল… 

তৃতীয় পর্ব


-  সুজন তোর কাছে থার্মোডাইনামিক্স  এর   নোট টা হবে ?

সুজন ওর পাশে রাখা চশমাটা চোখে দিল I  চশমার কাঁচ ঘোলাটে হয়ে আছে  মুছতে ইচ্ছা করছে না I  এমনিতেই  আজ চশমাটা বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে I সুজন ঘোলাটে চশমা দিয়েই ব্যাগ হাতড়ে  নোটটা বের করল I  তারপর বলল

- কালকে ফেরত দিলেও হবে 

- অনেক থ্যাংক ইউ রে I  তুই আমার ফটোকপি টাকাটা বাঁচিয়ে দিলি I  আজ রাতেই লিখে ফেলবো

- আচ্ছা সমস্যা নেই 

আজ লাইব্রেরীতে কিছুতেই মন বসছে না I তিন দিন হয়ে গেল  হিয়া ফোন ধরছেনা ,  মেসেজ করছে না এমনকি মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে না I  শুধু অদ্ভুত একটা মেসেজ পাঠিয়ে ,তারপর দুইদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছে  I সুজন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা বের করে একটা কল করলো I


-তুমি কি বিজি তৃণা ?

- না  সেরকম কিছু না I কেন ?

- একটু দেখা করতে পারবে ?

- এখন ? তুমি কি এখন আবার ক্যাম্পাসে আসবে ?

- আমি  ক্যাম্পাসেই আছি I তুমি কোথায় ?  তোমার    হলের কাছে আসবো ?

- আমি হলে থাকি না  I 

-ও,  তাহলে  বরং থাক

- সমস্যা নেই আমি  ও  কাছাকাছি আছি  I তুমি কোথায় আছো বলো  আমি আসছি

-  আমি লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেছি I  তুমি কোথায় ? 

- টিএসসিতে

- আচ্ছা আমি আসছি

তৃণা  একটু  জড়োসড়ো হলো I সুজনে  ওর সঙ্গে  দেখা করতে চায় কাল রাতে মেসেজ জানিয়েছে I কিন্তু এখন একটু অস্বস্থি হচ্ছে I  তৃণা গ্রুপের সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো I   এপ্রিলের শেষ I  একটু গরম পড়েছে I  তবে এদিকটাতে  ভালোই বাতাস I  বেশ সুন্দর  আবহাওয়া I  তৃণ আস্তে  আস্তে সামনের দিকে হাটতে লাগল I   রোকিয়া  হল এর কাছাকাছি এসে দেখল সুজন রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসছে I তৃণা  ওকে দেখে  হাত নাড়লো I সুজন বোধহয় প্রথমে তৃণা কে চিনতে  পারেনি I  না পারারই কথা I  তৃণা   আজকে শাড়ি পরে এসেছে I হালকা বেগুনির মধ্যে  সবুজ পাড় I  অন্ধকারে যদিও খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না I  তবে দিনের আলোয় দেখলে যে কাউকেই জারুল ফুলের কথা মনে করিয়ে দিত I  তৃণা একেবারেই  সাজেনি I   তবে ওকে খুব  স্নিগ্ধ  লাগছে I  সুজন একটু অবাক হয়ে বলল 

- তোমার কি কোন প্রোগ্রাম ছিল ?

- হ্যাঁ I আমাদের গ্রুপের একটা প্রোগ্রাম ছিল

- কিসের গ্রুপ ?

- আবৃত্তির

- তুমি আবৃত্তি করো ?  সুজন বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল

- এই  টুকটাক I  সেরকম কিছু না I

তৃণা এড়িয়ে গেল I  গ্রুপে  ওর ভালোই পরিচিতি I ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ও  গ্রুপের সঙ্গে আছে I আজ একটা কথোপকথনের  মেইন  লিড ছিল ওর I ছোটবেলা থেকেই ওর গান শিখার শখ ছিল I  কিন্তু টিচার ইন্সট্রুমেন্ট  এর খরচ নানা ঝামেলায় পারেনি I তাই ফার্স্ট ইয়ার থেকে গ্রুপের সঙ্গে জয়েন করেছে I  বেশ লাগে I  স্কুলে থাকতেও তৃণা  টুকটাক  আবৃত্তি,  উপস্থাপনা করেছে I এখন ডিপার্টমেন্টের যে কোন অনুষ্ঠানে ওই উপস্থাপনা করে I  ওর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর  সুন্দর বাচনভঙ্গি  নির্ভুল উচ্চারণ সকলেরই ভালো লাগে I


- তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিল তৃণা

- হ্যাঁ বল

- একটু কি বসতে পারি ?

- এখানে বসবে ?  তৃণা  একটু অবাক হলো I  সন্ধ্যা হয়ে গেছে I  হলের সামনে এসময় প্রচুর কপোত-কপোতী  বসে গল্প করছে I  সুজন এখানে বসতে চাইবে  ও আশা করেনি I

- কোন সমস্যা ? সুজন জানতে চাইল 

- না আমার কোন সমস্যা নেই I চলো বসি

কালভার্টের উপর দুজন বসল পাশাপাশি  I  তৃণা  বলল

- চা খাবে ?

- না I  আমি যদি একটা সিগারেট ধরাই তোমার কি খুব সমস্যা হবে ? 

তৃণা হেসে ফেললো 

-সমস্যা হবে কেন ?  এটা স্বাধীন দেশ I তুমি অবশ্যই সিগারেট ধরাতে  পারো I 


 সুজন সিগারেট ধরালো I তৃণা  লক্ষ্য করলো  ওর হাত কাঁপছে I  সিগারেট ধরিয়ে ওভাবেই বসে রইলো I তৃণার খুব অস্বস্তি হচ্ছে I কি বলবে বুঝতে পারছে না I  অনেকক্ষণ পর  তৃণা বললো

-তুমি ঠিক আছো সুজন ? 

 সুজন কিছু বলল না  অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন I তৃণা একটু অবাক হল I চশমা ছাড়া ছেলেটাকে একেবারে অচেনা লাগছে I

-তুমি খেয়েছো কিছু ?

 -হ্যাঁ ?  না কিছু খাইনি 

- আমিও খাইনি  কিছু খাবে ? 

- ও আমার সঙ্গে এমন কেন করল তৃণা ? 

-তুমি ওর কথা মাথা থেকে বের করে ফেলো I   ভেবে নাও এমন কিছু হয়নি

  সুজন একটু  হাসল I

-এতো সহজে বলে ফেললে ?  জানো  তৃণা  আমার  আজকাল নিজেকে খুব অপদার্থ মনে হয় I মনে হয় আমি হয়তো …….

- আচ্ছা  সুজন  তোমার থার্ড পেপার এর কি অবস্থা ?  আমার মনে হয় আমি ওটাতে ফেল করব

সুজন কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইল  তারপর হেসে বলল

- তুমি খুব অদ্ভুত  তৃণা I  এই কথাটা এখন ইচ্ছা করেই বললে তাই না ?

- সে তুমি যা ভাবার ভেবে নাও  কিন্তু আমার আসলেই একটু হেল্প দরকার I তা না হলে ফেল করব I একটু সাহায্য করবে আমাকে I

- অবশ্যই করবো

- দিনের বেলা তো ক্লাস থাকে আর  বিকেলে আমাকে টিউশনি করতে হয় I  তোমার যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে দশটার দিকে ফোনে  আমাকে একটু  বুঝিয়ে দিতে পারো I  পারবে ?

-  হু

- ঠিক আছে তাহলে আমি কল দেব I আজ তাহলে  যাই 

- তোমাকে পৌছে দেবো রাত হয়ে গেছে তো 

 তৃণা ঘড়ি দেখল I সাড়ে আটটা বাজে I 

-   রাত  কোথায় ? মাত্র সাড়ে আটটা বাজে I  আমি এখন কোথাও বসে খাব I তারপর বাড়ি যাবো I  তুমি কি কিছু খেয়েছো দুপুরে 

- না

-খাবে কিছু ?

- খাওয়া যায়

- কি খাবে বলো ?

- একটা কিছু হলেই হল 

- এভাবে বললে তো হবেনা I 

- কেন ? 

- এই ধরো তুমি চিংড়ি মাছ খাও না  আমি যদি এখন তোমাকে একটা সি-ফুড রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই তুমি খেতে পারবে ?

 সুজন বিস্মিত হয়ে বলল

- তুমি কি করে জানলে যে আমি চিংড়ি মাছ খাইনা

-  আমি জানিনা Iএটা একটা  এক্সাম্পল ছিল I যাক জেনে ভালো হলো

ওরা দুজন রিকশা নিয়ে  ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুটো সেট মেনু খেলো I  খেতে বসে বোঝা গেল দুজনই প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিল I  খাওয়া শেষে তৃনা বললো 

- তুমি  এখান থেকে ফিরবে কি করে ?  তোমার বাসাতো গুলশান তাই না ? তোমাকে এদিকে নিয়ে আসাটা উচিত হয়নি

- সমস্যা নেই গাড়ি এসে নিয়ে যাবে

- তুমি তো ফোন করনি  I আসতে  তো প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে 

- না গাড়ি ক্যাম্পাসে রাখা আছে

 তৃণা আশ্চর্য হয়ে বলল

- তাহলে তুমি গাড়ি রেখে আমার সঙ্গে রিক্সা করে  আসলে কেন ?

- এমনি I  রিক্সায় খুব একটা উঠা  হয় নাতো  তাই

 সুজনের কন্ঠস্বর কেমন বিষন্ন শোনালো I  সুজন প্রায়ই   হিয়াকে বলতো  রিক্সা করে কোথাও ঘুরতে   কিন্ত হিয়া রাজি হতো না  সবসময় গাড়ি নিতে চাইত I সঙ্গে  তৃণা  কে ও যেতে হতো I তৃণা যেতে চাইতো না I তবু দুজনেই জোর করত I হঠাৎ করেই সবকিছু এরকম হয়ে যাবে   তৃণা  কোনোদিন ভাবতেও পারেনি I দীর্ঘশ্বাস   ফেলে  ও বলল

- আমি এবার যাই I   দশটার পর তোমাকে ফোন দিব

- আচ্ছা সাবধানে যেও

 তৃণা চলে যাবার পর সুজন আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে লেকের ধারে গিয়ে  বসল I   জায়গাটা  আবছা অন্ধকার I অন্যমনস্ক হয়ে বসে রইল  সুজন I 

গত দু'দিন হিয়া ওর মেসেজের রিপ্লাই করেনি I  যদি আজ  ও না করে  তাহলে আর কোনো দিন  ও কে বিরক্ত করবে না I  কিন্তু কেন  ও এরকম করলো  এটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে I 


অনেকদিন পর্যন্ত  হিয়া  ওকে প্রতিরাতেই  তিনটা করে কবিতা পাঠাতো I  সুজন জবাব দিত না I একটা লেখার কথা আজ খুব মনে পড়ছে I   হিয়া লিখেছিল


করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি

দিও খামে

কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস

একটি ফুলের ছোট নাম,

টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু, হয়তো পাওনি খুঁজে

সেইসব চুপচাপ কোন দুপুরবেলার গল্প

খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বোলো, ভালবাসি !

 এই কবিতাটার মধ্যে একটা অদ্ভুত বিষন্নতায় আছে I এই বিষন্নতা ছুঁয়েছিল  সুজনক I  মেসেজ  পেয়ে সেদিন   হিয়াকে ফোন করেছিল সুজন হিয়া ধরেনি I  বাধ্য হয়ে টেক্সট করেছিল সুজন

- তুমি আমাকে এইসব কবিতা কেন পাঠাও হিয়া  ?

 হিয়া লিখেছিল

- এগুলো কবিতা নয় আমার মনের কথা I  কিন্তু এই যে আমি তোমাকে এত কিছু লিখি, কই তুমি তো কখনো তার জবাব দাওনা I 

-  কি জবাব দেবো ?

- আজ যদি জবাব না দাও তাহলে আর কোনদিন তোমাকে কিছু লিখব না 

মেসেজ পেয়ে আঁতকে উঠেছিল সুজন I ততদিনে ওর নেশা ধরে গেছে I এই কবিতা আসা বন্ধ হয়ে গেলে মনে হয় ওই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে I  সুজন লিখেছিল 

খুব কাছে এসো না কোন দিন

যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে

এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা

এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা

কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে

অবিরাম বয়ে চলা ।

যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে

মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন

দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো

যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ

রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ

শীতলতা, থেকে উষ্ণতা

প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা

তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-

এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ

কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।

মেসেজটা পেয়ে হিয়া দ্রুত তৃণা কে সেটা ফরওয়ার্ড করে দিল আর তার সঙ্গে লিখল

- কীসব হাবরা জাবরা লিখেছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না I 

চলবে……..


লেখনীতে

 অনিমা হাসান     


 এই পর্বে  দুটো কবিতা  দেয়া হয়েছে I  ‘খুব কাছে এসো না ‘ রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর  আর  ‘চিঠি দিও মহাদেব সাহার লেখা I


Next part 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.