শুধু তোমারই জন্য
পর্ব ৩৭
bangla golpo pdf - শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৩৭ - bangla choti golpo |
বেশ কিছু দিন চলে যায় এর মাঝে। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আনিতা আহিয়ানকে সবটা বলে। আহিয়ান তেমন কিছু একটা বলেনি। নেহাৎ আনিতার আব্বু যেতে বলেছিলো বলেই গিয়েছিলোও আনিতা। আর তাছাড়া আহিয়ানকে জানানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আহিয়ানই বিজি থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেনি। তাই এখানে আনিতার উপর রেগে যাওয়াটা ঠিক মানায় না।
ভার্সিটিতে ভর্তির প্রিপারেশন চলছে। সবাই মিলে ঠিক করেছিলো ওদের কলেজেরই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। কিন্তু মাঝখান থেকে বেঁকে বসলো রোদেলা। ও প্রয়োজনে পড়াশুনা ছেড়ে দিবে। তবুও নাকি এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবেনা। আর তার একটাই কারন, ফারদিন সেই ভার্সিটির প্রফেসর। কিছু মাস আগেই ফারদিন পড়াশুনার পাট চুকিয়ে এই ভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে জয়েন করে। ফারদিনকে দেখলে নাকি রোদেলার কষ্ট হবে। ফারদিনকে হারানোর যন্ত্রণাটা নাকি ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। ও চোখের সামনে সবসময় ফারদিনকে দেখতে পারবে না। তাই রোদেলা কিছুতেই এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে না। রোদেলা আর ফারদিনের সামনে পড়তে চায় না। তাই ও ঠিক করেছে ঢাকার কোনো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করবে। আর এতে রোদেলার বাসার সবাইও রাজি। কারন, রোদেলার বাসার প্রতিটা সদস্য জানে রোদেলা ফারদিনকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। আর ফারদিন ইশফাকে বিয়ে করার পর রোদেলা কতটা ভেঙে পড়েছে। তাই রোদেলার কথায় আর কেউ দ্বিমত করেনি। এখান থেকে দূরে সরে মেয়েটা যদি একটু ভালো থাকে তো থাকুক না। ক্ষতি কি?
রোদেলা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করবে শুনে আনিতার মনে একটু আশার আলো দেখা দিলো। আনিতারও ছোট থেকে ইচ্ছে ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু বাসায় থেকে রাজি হবে না বিধায় কাউকে বলার সাহস করে উঠতে পারেনি ও। এবার যখন রোদেলা ঢাকায় ভর্তি হবে তখন আনিতা মনে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে ওর আম্মুকে গিয়ে বলে,
--"আম্মু রোদেলা না ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে।"
--"হ্যাঁ তো?"
--"দু/এক দিনের মাঝেই ঢাকা চলে যাচ্ছে ও।"
--"ভালো তো।"
আনিতার আম্মু কাজ করতে করতেই কথা গুলো শুনছিলো আর উত্তর দিচ্ছিলো। আনিতা এক হাত দিয়ে নিজের অন্যহাত ডলছে। ওর আম্মুকে বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। আনিতা মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,
--"আ্ আমিও ঢা্ ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করতে চাই আম্মু।"
এতক্ষনে আনিতার আম্মু হাতের কাজ ছেড়ে তীক্ষ্ণ চোখে আনিতার দিকে তাকালো। আনিতা ততক্ষণে মাথা নিচু করে নিয়েছে।
--"যতদূর পড়াশুনা করার ইচ্ছে হয় কর। কিন্তু এখানে থেকে। ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়াশুনার নাম ভুলেও মুখে আনবি না। তোকে একা কোথাও ছাড়ছি না আমরা।"
--"একা কোথায় আম্মু? রোদেলাও তো আছে।"
--"থাকুক। ওকে একা ওর ফ্যামিলি ছাড়লে ছাড়ুক। আমি ছাড়বো না।"
--"প্লিজ আম্মু। কিছু হবে না। রাজি হয়ে যাও না। প্লিজ।"
আনিতার আম্মু আনিতার কোনো কথাই কানে তুলছে না। আনিতা ওর আম্মুর পিছু পিছু ঘুরছে আর একই কথা বলে যাচ্ছে। শেষে ওর আম্মু বিরক্ত হয়ে বলে,
--"বিরক্ত করিস না যা এখান থেকে।"
--"প্লিজ আম্মু। এমন করো না। প্লিজ আমি ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। প্লিজ রাজি হয়ে যাও তুমি।"
--"তোর আব্বু রাজি হলে যা। আমি এতে কিছু বলতে বা করতে পারবো না।"
*
পুরো তিনদিন লাগিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাসার সবাইকে রাজি করায় আনিতা। বেশ খুশি লাগছে আনিতার। ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে ওরা দুজন। তারউপর আহিয়ানকে যখন তখন চাইলেই দেখতে পাবে ও। ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার কথাটা আনিতা এখনো আহিয়ানকে জানায়নি। ভেবেছে একেবারে ঢাকায় গিয়েই সারপ্রাইজ দিবে। ফাইয়াজকেও বারন করে দিয়েছে কথাটা জানাতে। আনিতা ওরা ভেবেছিলো হোস্টেলে গিয়ে উঠবে। কিন্তু আনিতার ফুপ্পি তাতে বাধা দেয়। তিনি জানান, ফাইয়াজ তো একাই একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ফাইয়াজের ওখানে গিয়েই উঠবে৷ ওদের একা থাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। দেখে রাখার জন্য ফাইয়াজ তো থাকবেই। আনিতা আর রোদেলাও দ্বিমত করেনি। রোদেলার তো প্রথমে বেশ মন খারাপ করছিলো ঢাকায় গিয়ে একা থাকতে হবে বলে। কিন্তু আনিতা যখন জানালো ও নিজেও যাচ্ছে রোদেলার সাথে তখন রোদেলার খুশি দেখে কে। কিছুক্ষণ আগে শুভ ফোন করে জানায় ও ওদের সাথে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। তিন বন্ধু মিলে একসাথে থাকবে। ওদের যেন আনন্দের কোনো শেষ নেই। কিন্তু কষ্ট কিছুটা থেকেই গেলো। এত করে বলার পরও তাসকিয়ার আব্বু রাজি হয়নি তাসকিয়াকে ঢাকা পাঠাতে। তাসকিয়ার আব্বুর একই কথা, ফারদিনের এখানে বিয়ে ঠিক হয়ে থাকার পরও ঢাকায় থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। তাসকিয়াও যে এমন কিছু করবে না তার কি গ্যারান্টি? একবার মান সম্মান হারিয়েছেন। ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন পড়াশুনার জন্য আর ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। তাই তিনি দ্বিতীয় বারও একই ভুল করতে চান না। তার মতে, পরিবারের সবার শাসন ভালোবাসা ছেড়ে হোস্টেলে থেকে যারা পড়াশুনা করেন তাদের অধিকাংশই খারাপ ছেলে মেয়ে বা বাজে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে বেপথে পা দেয়। সবাই মিলে বোঝানোর পরও তিনি বুঝতে নারাজ। তাই সকলেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাসকিয়ারও যেমন ওদের সকলে ছেড়ে থাকবে বলে মন খারাপ তেমনি ওদের তিনজনেরও ভীষণ রকমের মন খারাপ তাসকিয়াকে ছেড়ে যাবে বলে।
রাত নয়টা বেজে একচল্লিশ মিনিট। ফাইয়াজ এসেছে আজ সন্ধায়। আনিতা ওদেরকে নিয়ে যেতে। কাল সকালেই বের হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। সকালে প্যাকিং করার সময় পাবে না বলে এখনই জামা কাপড় সহ আনিতার সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে আনিতা। খুব মনোযোগ সহকারে আনিতা নিজের জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। ফাইয়াজ আনিতার রুমে এসে আনিতার বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লো। মাথার উপরে চলন্ত ফ্যানের দিকে ক্ষানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে ফাইয়াজ বলে,
--"হঠাৎ করে ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার ভূত মাথায় চাপলো কেন?"
আনিতা ব্যাগ গুছানো বাদ দিয়ে ফাইয়াজের দিকে তাকালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো ব্যাগ গুছানোতে মনোনিবেশ করে বলে,
--"ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। বলার সাহস হয়নি কখনো।"
--"হঠাৎ এতো সাহস এলো কোত্থেকে?"
--"জানি না। রোদেলা ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে। তাই আমিও ভাবলাম একটা বার অন্তত বলে তো দেখি। রাজি হওয়া বা না হওয়াটা পরের বিষয়।"
--"হুম বুঝলাম। টিকিট কাটলি আর অমনি লটারি লেগে গেলো তাই না?"
--"হুম অনেকটা সেরকমই। তবুও রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমার জানো? আমি তো ভেবেছিলাম রাজি হবেই না। কিন্তু অবশেষে রাজি হলো সবাই।"
দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। আনিতা হাসি থামিয়ে আবারো ব্যাগ গুছানোয় মনোযোগ দিলো। ফাইয়াজ কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলে,
--"তোরা সবাই যাচ্ছিস। তাহলে তাসকিয়া কেন যাচ্ছে না?"
--"তোমার হবু শশুড়জি যেতে দিবে না।"
--"কেন?"
--"তার ধারনা ঢাকায় গিয়ে তার ছেলে বেপথে পা দিয়ে বাড়ির পছন্দ করা মেয়েকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ির মান সম্মান ডুবিয়েছে। এখন যদি মেয়েকেও ঢাকায় পাঠান তাহলে তার বাকী যেটুকু মান সম্মান অবশিষ্ট আছে সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে।"
কথাগুলো শুনে ফাইয়াজ ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো। ইশ্ বেচারা! কোথায় ভেবেছিলো আনিতা ওদের সাথে তাসকিয়াও যাবে৷ তাসকিয়াকে দেখার জন্য আর ছটফট করতে হবে না। সবসময় চোখের সামনে থাকবে। কিন্তু হলো পুরো উল্টোটা।
*
রাতের খাবার খেয়ে আনিতা মাত্রই বিছানা ঠিক করে শুয়েছে। হঠাৎ করেই আনিতার ফোন বেজে উঠে। বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ করবে না ভেবেও আবার কি মনে করে ফোন রিসিভ করে কানে নিলো। আনিতা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
--"কে বলছেন?"
--"তুষার বলছি।"
আনিতার এবার বেশ রাগ হলো নিজের উপর। যার থেকে দূরে থাকতে চায় বার বার সেই কেনো সামনে চলে আসে? ফোন রিসিভ করার জন্য আনিতার এবার বেশ মেজাজ খারাপ হলো। প্রথমে ভেবেছিলো ধরবে না। না ধরলেই ভালো হতো। আনিতার এসব ভাবনার মাঝেই ওপাশ থেকে তুষার বলে,
--"বিরক্ত করলাম কি?"
--"নাহ বলুন কি বলবেন।"
--"কাল নাকি ঢাকায় চলে যাচ্ছো?"
--"হ্যাঁ তো?"
--"নাহ এমনি। কোথায় উঠছো?"
--"ফাইয়াজ ভাইয়ার ফ্ল্যাটে উঠবো।"
--"ওহ আমাদের বাসা থেকে দুটো গলি পড়েই। তাহলে রোজ দেখা হচ্ছে।"
--"রাখছি। ঘুমোবো।"
তুষারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা লাইন কেটে দিলো। আনিতা ফোন কানে থেকে নামাতেই দেখে দুটো মিসড কল উঠে আছে। আনিতা কল লিষ্টে গিয়ে দেখে আহিয়ান দুবার ফোন করেছিলো। আনিতা তাড়াতাড়ি করেই আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করে৷ দু/তিন বার রিং হওয়ার পরই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে।
--"আ'ম সরি আহিয়ান। আসলে অন্য একটা ফোন এসছিলো তাই___"
--"ইট'স ওকে আনি। এতো এক্সপ্লেইন করতে হবে না। ফোন আসতেই পারে। আমারো তো কত ফোন আসে। বাদ দাও সেসব কথা। কি করছো?"
--"কিছু না শুয়ে আছি। আপনি?"
--"আমিও৷"
--"জানতে চাইবেন না এসময় কে ফোন করেছিলো? বা কার সাথে কথা বলতে পারি?"
--"জানার প্রয়োজনবোধ করছি না। কয আমি জানি যে, আমার পিচ্চি-পাখি শুধু আমারই।"
--"তারপরও আপনার জানা উচিত না? অন্য কেউ হলে তো এতক্ষণে ঝগড়াঝাটি বাধিয়ে ফেলতো। আর তাছাড়া আমি আপনার থেকে কিছু লুকোতে চাই না। আমি ভালো খারাপ যাই করি না কেন? আমি চাই সেটা আপনি আমার থেকেই শুনুন। কেননা, আপনি পরে সেটা অন্য কারো থেকে জানলে আঘাতটা একটু বেশিই পাবেন।"
--"আমি বিশ্বাস করি তোমাকে।"
--"তবুও__"
--"আচ্ছা তুমি যেহেতু বলতে চাইছো তাহলে বলো।"
--"তুষার ভাইয়া ফোন করেছিলো।"
তুষারের নাম শুনেই আহিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগে পুরো শরীর রি রি করছে। সব কিছু সহ্য করতে পারে ও। শুধুমাত্র এই একটা নাম। এই একটা মানুষকে ছাড়া। কেন জানি শুরু থেকেই আহিয়ানের তুষারকে একদম পছন্দ না। আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
--"ও ফোন দিলো আর তুমিও রিসিভ করে নিলে? বলেছিলাম না তোমাকে ওর থেকে দূরে থাকতে আর ওর সাথে কথা না বলতে।"
--"আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো ভেবেছিলাম আপনি হতে পারেন। তাই রিসিভ করেছিলাম। আমি জানিতাম না ওটা তুষার ভাইয়ার নাম্বার।"
আহিয়ান দু আঙুলে কপাল ঘঁষে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। পরপর জোরে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো ক্ষানিকটা।
--"আহিয়ান শুনছেন?"
--"হুম বলো।"
--"সরি আর এমন হবে না।"
--"বাদ দাও এসব কথা।"
--"আচ্ছা।"
--"আচ্ছা ফাইয়াজ আজকে হুট করেই বাসায় ফিরলো কেন? সবাই ঠিক আছে তো?"
--"হ্যাঁ না মানে__"
--"আমতা আমতা করছো কেন এভাবে? ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে তো?"
--"হ্যাঁ হ্যাঁ স্ সব ঠিকই আছে। আসলে হ্ হয়েছে কি ফুপ্পি ফোন করে বলেছিলো ভাইয়াকে বাসায় আসতে। ত্ তাই এসেছে।"
--"হুম ঠিকাছে। এই কথাটা বলতে এত তোতলাচ্ছো কেন?"
--"কই না তো। আম্ আমি তো ঠিকই আছি।"
--"হুম বুঝলাম।"
--"ঘুমাবেন কখন আপনি? সকালে আবার অফিস আছে না? কটা বাজে খেয়াল আছে?"
আনিতার কথায় আহিয়ান কান থেকে ফোন নামিয়ে সময় দেখে নিলো একবার। পৌনে বারোটা বাজে। আনিতার মুখ থেকে ঘুমানোর কথা শুনে বেশ অবাক হলো আহিয়ান। ফোন কানে নিয়ে বলল,
--"আমি ঠিক শুনলাম তো? নাকি ভুল শুনেছি?"
--"কেন ঠিকই শুনেছেন। ভুল শুনবেন কেন?"
--"না মানে যে কিনা ভোর হয়ে গেলেও বলে আর একটু কথা বলি। সারারাত কথা বলেও যার মন ভরে না। সেই কিনা আজ পৌনে বারোটায় আমাকে ঘুমোতে বলছে? তুমি ঠিক আছো তো আনিতা? জ্বর-টর হয়নি তো আবার?"
--"ফাজলামো করেন আমার সাথে? ওকে আজ আর ফোন রাখছি না আমি। সকাল হয়ে গেলেও না। অনেক অনেক কথা বলবো। তখন ঘুমোতে চাইলে কিন্তু ফোনের ভিতর দিয়েই ঢুকে আপনাকে একেবারে জানে মেরে ফেলবো।"
--"হয়েছে বুঝছি।"
--"কি?"
--"ঘুমাও। কাল কথা হবে।"
--"নাহ। আমি ফোন রাখবো না। কথা বলবো।"
--"কাল বলবো তো।"
--"বললাম না এখন বলবো।"
--"সারাদিন খুব চাপে ছিলাম ঘুম আসছে আমার। সকালে আবার অফিস আছে।"
--"কেন তখন আমি এই কথাটা বলিনি? আপনিই তো উলটো হাসলেন আমার কথায়। তাহলে এখন ফোন রাখার কথা বলছেন কেন? হুয়াই? রাখবো না আমি ফোন।"
--"আনি জেদ করে না।"
কিছুটা ধমকের সুরেই কথা বলল আহিয়ান। তাই আনিতা একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছে। আহিয়ান বুঝতে পারলো আনিতার অভিমান হয়েছে। কিন্তু ও সেটা ভাঙালো না। আনিতার অভিমান হয়েছে বুঝতে পেরে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো। এখনো পুরো বাচ্চা মেয়েটা। এই মেয়েটার রাগ অভিমান দেখলে কে বলবে ও এবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে? রাগে অভিমানে যখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকে তখন আনিতাকে দেখতে পুরো বাচ্চা বাচ্চা-ই লাগে।
--"পিচ্চি-পাখি।"
--"বলুন।"
--"কথা বলবে না? চুপ করে আছো কেন?"
--"ঘুমাবো।"
--"সত্যি?"
--"হ্যাঁ।"
--"ভালোবাসি আমার পিচ্চি-পাখিটাকে।"
--"হুম ভালোবাসি। রাখছি।"
আহিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা ফোন কেটে দিলো। আনিতার বাচ্চামোতে আহিয়ান আপনমনেই ক্ষানিকটা সময় হাসলো। তারপর শুয়ে পড়লো। অন্যদিকে আনিতাও গাল ফুলিয়ে কিছুটা সময় বসে থেকে কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]