Bangla Golpo - বন্ধন পর্ব ৪৮ - bangla choti |
বন্ধন
পর্ব_৪৮
আয়ান স্টেজ থেকে নেমে সিটে এসে মায়রাকে দেখতে না পেয়ে তিথির কাছে গেল।
-কি রে তিথু? মায়রা কোথায়?
-তোকে ধরে--। বেয়াদ্দপ ছেলে। কথা বলবি না।
-আরে! আশ্চর্য! আমি কি করলাম?
-কি করলি তুই জানিস না বেয়াদ্দপ ছেলে? তুই কিসব বলছিলি স্টেজে গিয়ে? আর আরুপুকে এভাবে জড়িয়ে ধরলি কেন? তোরা সবগুলো ছেলেই হারামি-----।
-আরে! হোয়াদ্দা হেল! কি সব বলছিস? তুই জানিস না আরুর সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন? সি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড ড্যাম ইট।
-সেটা গিয়ে এখন ভাবিরে বুঝা অসভ্য ছেলে--।
-মায়রা কোথায় সেটা বল তুই।
-ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেছে--।
-ওহ আল্লাহ! এই মেয়েগুলোর মাথায় কি চলে?
আয়ান আর তিয়াশ দুজনেই হলরুমটা থেকে বেরিয়ে এলো। আশেপাশে কোথাও মায়রা নেই। তাওহীদ আর আরিশাও বেরিয়ে এসেছে ততক্ষণে। আয়ানকে দেখে আয়ানের সাথে হ্যান্ডশেক করলো তাওহীদ।
-সরি ভাই। আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। বাই দা ওয়ে কংগ্রাচুলেশনস। আর ভাবি কই? উনার সাথে তো আমার দেখাই হলো না এখনো---।
-মায়রাকেই তো খুঁজছি। মেয়েটাকে পাই একবার। ওর খবর আছে। উল্টাপাল্টা বুঝে কান্নাকাটি করা আমি ওকে বোঝাবো---।
-কিছুক্ষণ আগে কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেলেন, উনিই কি ভাবি ছিল?
-কখন?
-এই যে আমি যখন আসলাম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ধাক্কা লাগলো। মেয়েটা কাঁদছিলো। কি হয়েছে আয়ান? আর আন্টিকেও দেখলাম পিছনে আসছিলো--।
-মা? মা কোথায়?
আয়ান মায়ের খোঁজে আবার হলরুমের ভিতরে চলে গেল। তাওহীদ কিছুই বুঝতে পারছে না। আরিশার দিকে তাকালো।
-আরু? কি হয়েছে বলো তো? মায়রা ভাবির সাথে কি আয়ানের কিছু হয়েছে?
-আসলে--। প্রজেক্টের উইনারের নাম ঘোষণা করার পর আয়ান নিজেকে সামলাতে পারে নি। খুশির চোটে আমাকে--- আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। আর সমস্ত ক্রেডিটও আমাকে দিয়ে দিয়েছে--। তাই মায়রা কষ্ট পেয়েছে হয়তো--।
-হায় রে! তোমরা দুই ফ্রেন্ড একটু সামনের মানুষটার অনুভূতিগুলো একটু বুঝো না কেন বলো তো? অন্য কেউ তোমাকে জড়িয়ে ধরছে বা তুমি তাকে জড়িয়ে ধরছো দেখলে তো আমারও কষ্ট হতো। মায়রাকে দোষ দিয়ে আর কি হবে?
-এটাতেও আমার দোষ?
-অবশ্যই তোমার দোষ। তুমি যদি আমাকে বিয়েটা করে ফেলতে তাহলে আর আজকে আয়ান আর মায়রার মধ্যে তোমাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিটা হতো না৷ ওদের কথাটা চিন্তা করে হলেও এবার প্লিজ বিয়েটা করি চলো? প্লিজ?
-অসভ্য ছেলে! কথায় কথায় খালি বিয়ে করতে চাও না?
তিয়াশ মায়রাকে আশেপাশে খুঁজেও না পেয়ে আবার ফিরে এসে দেখলো তিথি চুপ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তিয়াশ এসে তিথির পাশে দাঁড়ালো।
-তিথি? আয়ান ভাই কই?
-নিজে খোঁজো গে যাও। আমাকে জিজ্ঞেস করতে আসছ কেন?
-আরে? এবার আমি কি করলাম?
-তোমরা সবগুলাই খারাপ। মেয়েদের মনের কষ্টটা বুঝোই না। শুধু নামেই ভালোবাসো। তুমিও খারাপ---।
-আরে বাবা? আমি কি করেছি?
-বললাম না যাও সামনে থেকে?
-উফফফ। এদের নিয়ে আর পারি না সত্যি---।
-হুহ--। যাও তো যাও। বাড়িতে কল দিয়ে দেখো ভাবি গেছে কিনা।
-মনে হয় না যাবে। তবু একবার কনফার্ম হয়ে নিই। দাঁড়াও---।
আয়ানও হলরুমে গিয়ে মা আর বাবাকে খুঁজে বের করলো। অনুষ্ঠান শেষ। তাই এতো মানুষের ভিড়ে খুঁজে পেতে বেচারার অবস্থা বেহাল। সবাই ততক্ষণে গেইটের কাছাকাছি একসাথে হয়েছে।
-মা? মায়রা কোথায়? ও তোমার সাথে ছিল নাকি?
-আমি বাইরে এসে আর ওকে দেখতে পাই নি-।
-শিট! মেয়েটা একা একা কোথায় গেল?
-গেছে বেশ করেছে। এখন গিয়ে খুঁজে আন আমার বউমাকে। নইলে তোর একদিন আর আমার একদিন।
-আরে? কি আজব! ধ্যাত!
তিয়াশ বাড়িতে কথা বলা শেষ করে আয়ানের দিকে তাকালো।
-মায়রা ও বাড়িতেও যায় নি।
-কোথায় গেল মেয়েটা? ও একা কখনো কোথাও যায় না। চিনেও না রাস্তাঘাট কিছু--।
-হয়তো বাসায় চলে গেছে--। চলুন বাসায় গিয়ে দেখি--।
-হ্যাঁ হয়তো---। বাবা! তোমাদের গাড়ি কই?
-আছে আশপাশে কোথাও।
-ড্রাইভারকে কল করে বলে দিচ্ছি বাসায় চলে আসতে। চলো আমরা একসাথে বাসায় চলে যাই--।
-ওকে ওকে---।
আয়ান, তিথি, তিয়াশ, আয়ানের বাবা মা, তাওহীদ, আরিশা, সবাই আয়ানদের বাসায় এলো। বাড়ির দারোয়ান জানালো মায়রা আসেনি। আয়ান কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে গেল। মেয়েটাকে এখন কোথা খুঁজবে ও? যদি রাস্তায় কোনো বিপদ হয়? সবাই মিলে ড্রইংরুমে বসলো। মায়রা কোথায় যেতে এটা নিয়েই কথা বলছে সবাই। তাওহীদ আর আরিশা আয়ানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
-ওকে আমি একবার খুঁজে পাই। তারপর বুঝাবো হুট করে এভাবে কোথাও চলে যাওয়ার ফল কি হয়। আমাকে একটুকু বিশ্বাস করা যাচ্ছিল না?
-আয়ান? জাস্ট রিল্যাক্স। ওর মনে কি চলছিল সেটা তো আর তুই বুঝবি না? আর তাছাড়া--। এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা আসছে না।
-তো কিসের কথা আসছে আমাকে একটু বুঝা তুই। ও জানে না আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি? কাজটা মায়রা একদিন ঠিক করোনি তুমি। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
-আচ্ছা আয়ান তুই মায়রাকে কখনো বলেছিস তুই ওকে কতোটা ভালোবাসিস?
-হোয়াট! বলতে হচ্ছে কেন? ও জানে-----।
-সবসময় জানা দিয়ে জীবন চলে না আয়ান। কিছু কথা মুখেও বলে বোঝাতে হয়। মায়রা কি কারণে তোকে বুঝতে পারে নি তার চেয়েও ইম্পর্ট্যান্ট কথা হলো তুই ওকে কতোটা ভালোবাসিস ব্যাপারটা বোঝাতেই পারিস নি।
-বাহ! বাহ! বাহ! একজন অহেতুক আমাকে ভুল বুঝে কোথাও একটা চলে গেল। আর সেটাও এখন আমার দোষ। আমি ওকে ভালোবাসি সেটা বোঝাতে ব্যর্থ? বাহ! ওয়ান্ডারফুল!
-আয়ান?
আয়ান রাগ করে উঠে রুমে এসে ধুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। বাকিরা সবাই থতমত খেয়ে ড্রইংরুমেই বসে রইলো। মায়রাকে খুঁজতে যাবে নাকি পুলিশ কমপ্লেইন করবে সেটাই কেউ ডিসাইড করতে পারছে না। আয়ানও রুমে এসে দেয়ালে জোরে একটা ঘুষি মারলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে বেচারার। মায়রার উপরে এতো রাগ হচ্ছে যে ইচ্ছে করছে সামনে পেলে চড় লাগাতে। কতোদিন ধরে মেয়েটা এসব মাথায় নিয়ে ঘুরছে কে জানে? আয়ান ওকে আগেই বলেছিল কোন ব্যাপারে কিছু জানার হলে, প্রশ্ন থাকলে বা কিছু উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় এলেও কথা বলে ব্যাপারটা সর্টআউট করে নিতে। কিন্তু মেয়েটা কি করলো?
আয়ান রাগের চোটে বিছানার চাদর, বালিশ সব ফ্লোরে ফেলে দিলো। রাগটা কিছুতেই কমছে না তবুও। খাটের সামনে ফ্লোরেই ধপ করে বসে পড়লো আয়ান। রাগের চেয়েও বেশি হচ্ছে টেনশন। ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে। মেয়েটা কোথায়, কি অবস্থায় আছে, কোন বিপদ হলো কিনা এসব ভেবে চিন্তাগুলো আরো জেঁকে বসছে আয়ানের মাথায়। এভাবে বসে না থেকে মায়রাকে খুঁজতে হবে। কথাটা মনে আসতেই বিছানায় আলতো চাপ দিয়ে উঠতে গিয়েই হাতে শক্ত কিছু একটা লাগলো আয়ানের। তাকাতেই দেখতে পেল নীল মলাটের একটা ডায়েরি বিছানায় পড়ে আছে। সম্ভবত বালিশের নিচে ছিল ডায়েরিটা। আয়ান হাত বাড়িয়ে ডায়েরিটা নিল। কি ভেবে ডায়েরিটা খুললো আয়ান। বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠায় লেখা আছে। ডায়েরিটা পড়ে চমকে গেল আয়ান। মায়রার বাবা মায়ের আচরণের বর্ণনা শুনে একেবারে থ হয়ে গেল আয়ান। মায়রা কখনোই ওকে এসব কিছুই বলে নি। মায়রা কেন বাবার বাসায় যেতে চায় না, এসব নিয়ে আয়ান কখনোই মাথা ঘামায় নি। কিন্তু তার পিছনে যে ওর পরিবারের এমন নিষ্ঠুর ব্যবহার ছিল সেটা জেনে আয়ান কিছু ভাবার মতোই পেল না৷
কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে একটা চিঠি পেল আয়ান। চিঠিটা ওকেই লেখা।
"আয়ান,
আপনাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছি নি। দুটো পরিবারের সম্মতিতে আর একটা মাস পরেই আমাদের বিয়ে। অথচ আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো জানি না এখনো। আজব না ব্যাপারটা?
জানেন? ছোটবেলা থেকেই সবসময় বাড়ির বাকিদের মতামতে আমার জীবনটা চলেছে৷ আঁকতে ভিষণ ভালোবাসতাম জানেন? বাবার পছন্দ না বলে আঁকাআঁকিটা ছুটে গেল আমার। গানের গলাটাও নেহাত মন্দ ছিল না। তবে মা ঠিক করে দিলেনঃ- বনিয়াদি মুসলিম পরিবারের মেয়ের গান! প্রশ্নই ওঠে না। হ্যাঁ স্কুল, কলেজ আর এখন ভার্সিটি-কোথাও কিছুতে কমতি রাখে নি বাবা, মা বা ভাইয়া। তবে ভাইয়ার মতো স্টাডি ট্যুরগুলোতে যাওয়ার পারমিশন কখনো মিলে নি। অথচ জানেন? পাহাড়গুলো, নদী, সাগর দু হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকে। আমি কিন্তু পারমিশন পাই না একবারও। এগুলোকে হারানো বলে কিনা জানি না। তবে আমার প্রাপ্তির খাতায় এদের নাম কখনো ওঠে নি।
জানেন? আপনার সম্বন্ধটা যখন এলো বাড়িতে আমি সারাটা দিন কেঁদেছি। কেউ একবারের জন্যও এসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে নি আমি কি চাই। মা এসে মায়ের নীল রঙা জামদানিটা ধরিয়ে দিয়ে বললো রেডি হয়ে সাজগোজ করে নিতে। জাস্ট এইটুকুই। মায়ের শাড়িটা পড়ে আপনার সামনে যখন গেলাম আর আপনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তখন এতো ভালো লাগছিল বলে বোঝাতে পারবো না। এই প্রথমবার কারো চোখে নিজের জন্য এতোটা মুগ্ধতা দেখেছি আমি। উহু, কারো চোখে নয়। এমন একজনের চোখে যার সাথে আমার নামটা আজীবনের জন্য বন্ধনে বেঁধে যাবে। ভাবতে অন্যরকম একটা খুশি লাগছে আমার।
আর জানেন? ছোটবেলা একা একা যখন পুতুল দিয়ে ঘর ঘর খেলতাম, তখন থেকেই ছোট্ট একটা স্বপ্ন দেখে আসছি আমি৷ আমার পুতুলের মতো আমারও একটা সংসার হবে। প্রিয় মানুষটার কাঁধে মাথা রেখে কোলের পুঁচকিটাকে আদর করতে করতে বিকেলের সময়টা কাটবে। আর বড় দুটো দুষ্টু পিচ্চি নিজেরাই নিজেদের মতো করে ছুটোছুটি খেলবে কখনো। বা কখনো 'বাবা' বলে চেঁচামেচি করতে করতে প্রিয় মানুষটার হাত ধরে পিচ্চি দুটিতে টানাটানি করবে। আর আমি? আমি কোলের পুঁচকিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাদের তিনজনের খুনসুটি দেখব অবাক চোখে। ইদানিং মনে হয় স্বপ্নটা একটু বদলেছে। কারণ মুখ তুলতেই প্রিয় মানুষটার আবছা অবয়বের জায়গায় আপনার চেহারাটা দেখতে পাই। অদ্ভুত না?
আচ্ছা? বিয়ের পরও আমাকে এভাবে শাড়ি পড়া দেখলে আমার চোখে সেদিনের মতো অবাক মুগ্ধতা খেলা করবে? আজীবন? আমার না ভিষণ জানতে ইচ্ছে করে জানেন? এই প্রথমবার আমি অধীর আগ্রহে এই একটা মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছি। একটা নতুন বন্ধনে বাঁধার অপেক্ষায় প্রত্যেকটা দিন গুনছি।
অনেক বকবক করলাম। আশা করি জবাবে বলে দিবেন সম্বোধনের জায়গাটায় কি লিখব।
ইতি,
মায়রা।"
চিঠিটা রেখে ডায়েরির বাকি লেখাগুলো পড়া শুরু করলো আয়ান।
"আজ উনার সাথে দেখা করে এসে মায়ের অনেক বকা খেয়েছি। বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছে বলে। তার উপরে মা বলেছে উনি যদি কিছু করে বিয়েটা না করে তখন? কথাগুলো শুনতে এতো খারাপ লেগেছে। উনি তো এমন না। উনি কাল আবার বের হওয়ার কথা বলায় জ্বর বলে মানা করে দিয়েছি। উনি ভেবেছে রোদের কারণে--। আসলে তো গালে মারের দাগগুলোর জন্যই--।"
"আজ দুদিন দেখা হয়না বলে উনি সোজা বাসার নিচে চলে এসেছে। মানুষটা এতো পাগল কেন?"
"গত চারটা দিন একেবারে স্বপ্নের মতো কেটেছে। বাগান বাড়িতে উনাকে যেন আরো নতুন করে চিনলাম। উনার বলা কথাগুলো এখনো কানে ভাসছে।
মায়রা? তুমি কি আমার সমস্ত পাগলামির সঙ্গী হবে? যতটুকু ভালোবাসা যায় তারচেয়েও বেশি ভালোবাসতে চাই তোমাকে। সেই সুযোগটা দিবে প্লিজ? তোমার এই মায়াবী চোখ দুটোয় খুশির ঝিলিক দেখতে তোমার পাশে থাকতে চাই। তোমার আর আমার-দুজনের মনের সবগুলো ইচ্ছে পূরণের সময়গুলোতে পাশাপাশি হয়ে হাতে হাত ধরে চলতে চাই। একটা সূক্ষ্ম ভালোবাসার বন্ধনে তোমার সাথে বাঁধা থাকতে চাই। ভুল বুঝে, বা রাগ করেও যেন এই বন্ধনটা না ছিঁড়ে সেজন্য পাকাপাকি করে তোমাকে নিজের মধ্যে ডুবিয়ে নিতে চাই। তুমি কি আমার সাথে সেই পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাও মায়রা?
এই মানুষটার সাথে একটা আজীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হবো ভাবতেই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমার এই জীবনটা থেকে আসলেই কি মুক্তি পেতে যাচ্ছি! "
"আজ আমার গায়ে হলুদ। উনার মতো একটা মানুষকে পেয়ে খুশি হওয়ার কথা। হ্যাঁ! আমি খুশিই। একটু আগে বলা মায়ের কিছু কথা কানে ভাসছে। এই কি-
হুট করে যোগ্যতার চেয়ে বেশি কিছু হাতে পেয়ে গেলে বুঝে নিতে হয় জিনিসটায় সাংঘাতিক রকমের কোন ঘাপলা আছে। তোর মতো একটা মেয়েকে কোন দেনাপাওনা না করে একেবারে বিনা খরচে ঘরে তুলছে-এটা তোর মনে খুশিট জোয়ার তুলতেই পারে--। তবে একটা কথা মাথায় রাখবি-এখন যতটা মাথায় তুলছে তেমনি ততটাই জোরে মাটিতে আছড়ে ফেলতে তাদের দেরি নাও হতে পারে। সেদিন আবার পোড়া মুখ নিয়ে এ বাড়িতে এসে জুটিস না। বহু বছর তোকে পায়ের উপর পা তুলিয়ে গিলিয়েছি। আর পারব না--। গেলে একেবারের জন্যই যা, যাতে তোর এই অলক্ষী মুখটা আর দেখতে না হয় কখনো--।
হ্যাঁ! একেবারের জন্য যাবো। কখনো ফিরবো না আর এই অলক্ষীর মুখটা দেখাতে। এখন বিয়ের পর উনারা মেরে ফেলুক বা যাই করুক- একটা কথাও বলবো না। অবশ্য বলবোটাই বা কাকে!"
"অবাক কান্ড না! মনে হাজার সংশয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চললাম। যেখান থেকে যাচ্ছি সেখানে আর ফিরা হবে না হয়তো কোনদিন। আর সেখানে যাচ্ছি সেখানে তাদের মন জয় করতে না পারলে!"
"আয়ানের পাশে কারো উপস্থিতি আমার অসহ্য লাগছে। আরিশাকেও। উনি আয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড। তবুও অসহ্য লাগছে। মেয়েটার ওর কেবিনে কোন যাবে? ও কেন আরিশার জন্য এতো ব্যাকুল হয়ে ছুটবে? কেন কেন কেন?"
"আজকে তিথির সাথে শপিংয়ে গিয়ে আয়ানকে আরিশার সাথে দেখলাম। ও আরিশার হাত ধরে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। মেয়েটা বোধহয় কাঁদছিল। কিন্তু আমার সব এতো অসহ্য লাগছে। কে এই আরিশা? উনি মিটিংয়ের কথা বলে ওর সাথে কেন কফিশপে এলো?"
"জানো আয়ান? আজকে ডক্টর কি বলেছে? তুমি বাবা হবে। আমার ভিষণ খুশি লাগছে। তোমাকে কল করেছি কতোবার। তুমি আসবে বলেছিলে। এলে না। তুমি তো আরিশার সাথে ব্যস্ত!
জানো! রাতে তুমি যখন এসেছ আমি জেগেই ছিলাম। তুমি অন্য দিনের মতো আজ একটুও ডেকে জিজ্ঞেস করোনি কি হয়েছে, খেয়েছি কিনা। একবারও বুকে টেনে নাও নি। আমাকে কি আগের মতো ভালোবাসে না আর? তুমি কি সত্যি আরিশার-----। তাই আর বাবুর কথা বলি নি। কি বলবো তুমি যদি বাবুটা না চাও?"
আয়ান মায়রার ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠাটা পড়ে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েটা এতো কিছু মনে চেপে ছিল? একবারও বুঝতেও দেয়নি কি চলছে ওর ভিতরে। তার চেয়েও বড় কথা মায়রা প্রেগনেন্ট! এই কথাটা শুনে আয়ান বুঝতে পারছে না ওর খুশি হওয়া উচিত নাকি মায়রা এই খবরটা ওকে দেয়নি বলে রাগ করা উচিত। আজব দ্বিধায় পড়েছে আয়ান। কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারা।