Bangla Golpo - তোমায় পাওয়া - bangla choti |
"নিজ রুমে বসে ব্যবসার হিসাব করছিলাম। পাশের রুমে স্ত্রী একটা মেয়ের সাথে কথা বলছেন।
মেয়েটি আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে বেশ কয়েক দিন থাকছেন। তারা নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। ওনাদের কথাগুলো স্পষ্ট আমার কানে ভেসে আসছে। নিজ কাজের দিকে একটু মনোযোগ দিলাম। কিন্তু কিছুতে’ই হিসেব মেলাতে পারছিনা। সবকিছু রেখে দিয়ে বিছানায় শুয়ে একটি বই পড়বো বলে মত পূষন করলাম। কিন্তু ওনাদের কথা বলার কারণে ঠিক মন দিয়ে বই পড়া হলোনা। তাই ভাবলাম কি নিয়ে কথা বলছেন ওনারা তা শুনি।
পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটি বলছেন, ‘আচ্ছা ভাবি আপনার স্বামী সারা দিন বাইরে থাকেন এবং আপনি ত সারাদিন একা বাসায় থাকেন, এতে আপনার খারাপ লাগে না। আপনি চাইলে ত আমার মত একটা ছোটখাটো জব করার মাধ্যমে সময়টা পার করতে পারেন। আমিও ঠিক আপনার মত সারাদিন বাসায় একা থাকতাম। কখনো টিভি দেখতাম, কখনো গান শুনতাম নয়ত ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকতাম। হঠাৎ করেই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম যে একটা জব করলেই ত সময়টা পার করা যাবে। স্বামীর কাছ থেকে নিজের হাত খরচের জন্য টাকা চাওয়াটা নিজের সম্মানে লাগে। বিয়ের পূর্বে তো একেবারে স্বাধীন ছিলাম। আর বিয়ের পর ঘরকুনো হয়ে গেলাম। তাই এখন আর তেমন একাকীত্বের অনুভব হয়না। মাঝে মধ্যে রাতের খাবার বাইরে খেয়ে নেই। চিন্তারও অবসান হল। আপনি চাইলে আমি যেখানে জব করি, সেখানে জবের ব্যাপারে বসের সাথে কথা বলতে পারি। বেতনের দিক দিয়েও ভাল। মাসিক পঁচিশ হাজারের মতন।’
পাশের ফ্ল্যাটের ভাবির কথা শোনার পর আগ্রহ বেড়ে গেল। দেখি এ ব্যাপারে আমার স্ত্রীর মতামত কি!
আমার স্ত্রীর কথা গভীর মনে শুনে যাচ্ছি। তিনি বললেন, ‘আসলে আমার স্বামী বাসায় থাকা অবস্থায় যেমন আমি একাকীত্বের অনুভব করিনা, ঠিক তেমনি তিনি বাসায় না থাকলেও উনার অবর্তমানে
একাকীত্ব অনুভব করিনা।’
ভাবি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘মানে?’ আমার স্ত্রী শান্ত ভাবে বললেন, ‘আপনাকে ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। শুরুতে আমার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পর্কে একটু বলি। আমার রুটিন অনুযায়ী রাতের শেষ ভাগে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরুর ঘণ্টা খানেক পূর্বে ঘুম থেকে জেগে ওযু করে স্বামীর ওয়ুর পানি উঠিয়ে রাখি। তারপর স্বামীকে জাগিয়ে দিয়ে প্রথমে তওবা করি পরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে অল্প কিছুক্ষণ কয়েকটা সূরা তেলাওয়াত করি। আমার স্বামিও তেলাওয়াত করেন। তারপর ফজরের আযানের পূর্বে’ই আমার স্বামীকে মসজিদে পাঠিয়ে দেই। তার কারণ হল সবার প্রথম আযানের পূর্বে মসজিদে গেলে খুব বেশি সওয়াব মিলে। ফজরের আযান হয়ে গেলে সালাত আদায় করি ও আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি। সালাত আদায় করবার পর যিকির করি। মসজিদ হতে স্বামী বাসায় এসে গভীর মনে আমার কোলে মাথা রেখে কোরান তেলাওয়াত শুনেন। সূর্যোদয়ের বারো মিনিট পর আমরা একসাথে ইশরাকের সালাত আদায় করি। সালাতের পর তিনি আমার সঙে রান্নার কাজে যথেষ্ট সাহায্য করেন। শুরুতে এক কাপে চা বানিয়ে আমরা দুজন খাই। তারপর এক চুলায় আমি তরকারি ও অন্য চুলায় তিনি ভাত রান্নার পাশাপাশি অনেক গল্প করি। ভাত রান্না শেষ হয়ে গেলে ওনাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেই। তারপর তিনি ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুল নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি খুব যত্ন সহকারে মাথা মুছে দিয়ে ফ্রেশ হতে যাই। তিনি সুন্দরভাবে সকল খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে দিয়ে রুমে চলে আসেন। আমাকে কোলে করে খাবার টেবিলে নিয়ে আসেন। আসলে টেবিল বলতে আমি নিচের দিকটা বুঝিয়েছি। আমরা রাসূলের সুন্নাহ্ অনুযায়ী যতটুকু পারি সেটা মেনে চলতে চেষ্টা করি। তারপর তিনি নিজে আমাকে খাইয়ে দেন ও খাওয়া শেষে তিনি তৈরি হতে রুমে যান। এর ফাঁকে আমি অল্প একটু গুছিয়ে নিয়ে দুপুরের খাবার গরম করে টিফিন নিয়ে নিজ রুমে আসি। তিনি তৈরি হয়ে টিফিন হাতে করে নিয়ে ব্যবসার কাজে চলে যান। তারপর দরজা বন্ধ করে সবকিছু গুছিয়ে নেই। সারে নয়টা বা দশটার দিকে জায়নামায বিছিয়ে চাশতের সালাত আদায় করে গোসল করে নেই। যেই যুহরের আযান হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায় করে কোরান পাঠ করি এবং যাওয়ালের সালাত পড়ে নেই। কোরান তেলাওয়াত সমাপ্ত করে স্বামীকে ফোন দিয়ে সালাতের ব্যাপারে কথা বলি। তারপর খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। সারে তিনটার দিকে আমার স্বামী ফোন দিয়ে আমাকে জাগিয়ে দেন। নয়ত আমি জেগে যাই। হাত মুখ ধোঁয়ে শ্বাশুরির সাথে ফোনে কথা বলার পর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলি, ননদের সাথে ফোনে কথা বলা সমাপ্ত করে একটু বই পড়ি। আসরের সালাত আদায় করার পর কয়েকটা সূরা পাঠ করে বাসার সকল জানালা লাগিয়ে নেই। ঠিক মগরীবের সালাত আদায় করে,অল্প কয়েকটা সূরা তেলাওয়াত করবার মধ্যখানে স্বামী ফোন দিয়ে বলেন আমার কিছু লাগবে কিনা। অবশ্য বাজারের দিকটা আমার স্বামীকে আজ পর্যন্ত বলতে হয়নি। কেননা তিনি নিজ থেকেই যা কিছু লাগবে তা আসার সময় নিয়ে আসবেন। কোরআন তেলাওয়াত সমাপ্ত করে রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করি। ঈশার সালাত আদায় করে তওবা করার পর ইস্তেখারা সালাত পড়ি। তারপর দুটি সূরা তেলাওয়াত করি। ঈশার সালাতের পর তিনি খুব ক্লান্ত ভাব নিয়ে আসেন। পূর্বে সালাম দিয়ে মুখের ঘামগুলো খুব যত্নসহকারে মুছে দেই। হাত থেকে ব্যাগটা নেই। এক গ্লাস পানি নিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে দেই। আমার স্বামি গ্লাসের অর্ধেক পানি পান করে আমার দিকে বাড়িয়ে দেন। বাকিটুকু আমি পান করি। ওনার দিকে টাওয়ালটা এগিয়ে দেই। তিনি ফ্রেশ হতে গেলে আমি এক কাপ চা তৈরি করে নিয়ে আসি। তারপর চা খেতে খেতে গল্প করি। শেষে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি।
আপনাকে এতোকিছু বললাম এই জন্যই যে, আমি কখনোই নিজেকে একা ভাবিনা। আমার স্বামী বাসার বাইরে থাকলেও ওনার ভালোবাসা আমাকে সবসম’য়ই উৎসাহ দেয়। সেই সাথে আমি ওই সময়টাতে সালাত ও কোরআন তেলাওয়াতকে দিনটার একাকীত্বের সঙ্গী হিসেবে গ্রহন করি। এতে করে পরকালের কিছুটা সঞ্চয় করতে সক্ষম হই ও এমন সুযোগ করে দেবার জন্য আল্লাহর দরবারে স্বামীর কল্যাণ কামনা করি। এরকম একটা ভাল সুযোগ থেকে আমি কখনোই বাদ পড়ে যেতে চাইনি কখনো। আমার হাত খরচের সবকিছু তিনি নিজের হালাল উপার্জন থেকে দেন। বিয়ের দিন তিনি আমাকে একটা বাক্সের মতন জিনিস দিয়েছিলেন। রাতের বেলা তিনি বাসায় এসে সেই বাক্সে দশ টাকা পাঁচ টাকা করে দেন। এতে করে অল্প অল্প করে অনেকটা টাকা জমা হয়ে যায়। কি প্রয়োজন বাইরে বের হয়ে পরপরুষের ওই চোখের খোরাক মেটানো। আমার কাছে স্বামী এবং ইবাদাত’ই পরম বন্ধু। আলহামদুলিল্লাহ এই বন্ধুদের নিয়েই বেশ আড্ডা দেই প্রতিদিন। আল্লাহর রহমতে বেশ ভাল আছি।’
দ্বীনি পরিবার থেকে সংগ্রহীত ও পরিমার্জিত,আমাদের দ্বীনি গল্পগুলো আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে....